00

বা‌লিকা বধূবা‌লিকা বধূ পর্বঃ–৫ (শেষ)

© শারমীন আক্তার সাথী
তনয়‌াঃ আজ থে‌কে আমি মুক্ত মা! আয়াত না‌মের কেউ আর আমার জীব‌নে অধিকার খাটা‌তে পার‌বে না।
মাঃ বু‌কে হাত রে‌খে বল‌তো তনয়া আয়াত কি কখ‌নো তোর উপর অধিকার খা‌টি‌য়ে‌ছে? ওর য‌দি অধিকার খাটা‌নোরই থাক‌তো তাহ‌লে সেটা অনেক আগেই খাটা‌তে পার‌তো ! কিন্তু ছে‌লেটা সেই ছোট বেলা থে‌কে তো‌কে পাগ‌লের মত ভা‌লোবা‌সে। আর ওর ভা‌লোবাসার প্র‌তিদান হিসা‌বে তোর কা‌ছে ঘৃনা ছাড়া কিছু পায়‌নি। তারপরও তো‌কে ভা‌লো‌বে‌সে গে‌ছে। একবার চিন্তা ক‌রে দেখ‌তো আয়াত চাই‌লে তোর থে‌কে হাজার গুন ভা‌লো মে‌য়ে বি‌য়ে কর‌তে পা‌রে কিন্তু কেন ক‌রে‌নি? তোর জন্য? তোর প্র‌তি ওর ভা‌লোবাসা এতটা যে তোর ঘৃনাটা‌কেও ও ভা‌লো‌বে‌সে গে‌ছে। কিন্তু তুই কি কর‌লি?
তনয়াঃ আমার এখন এসব শুন‌তে ভা‌লো লাগ‌ছে না। আমার মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা কর‌ছে। তনয়া নি‌জের রু‌মে গি‌য়ে চুপচাপ ব‌সে রই‌লো। কা‌রো সা‌থে কোন কথা বল‌ছে না।
প‌রের দিন বিকা‌লে——
তনয়া নি‌জের রু‌মে শু‌য়ে ছি‌লো। তখন তনয়ার ভা‌বি (রি‌মি) আস‌লো। তারপর তনয়ার সা‌থে টু‌কিটা‌কি কথা বলতে বল‌তে একসময় ব‌লে?
‌রি‌মিঃ তনয়া তু‌মি কি অন্য কাউ‌কে ভা‌লোবা‌সো!
তনয়াঃ ছিঃ ভা‌বি তেমন কিছু না!
‌রি‌মিঃ না মা‌নে আমার বি‌য়ের বয়স দুবছর কিন্তু তু‌মি ব‌রিশাল থা‌কো কেবল একবছর ধ‌রে। এর আগে‌ তো তোমার মামার কা‌ছে চট্টগ্রাম থাক‌তে তাই‌তো? শু‌নে‌ছি গত ছয় বছর যাবত তু‌মি সেখা‌নেই থাক‌তে। লেখা পড়াও সেখা‌নে ক‌রে‌ছো। খুব বে‌শি জর‌ু‌রি কারন ছাড়া ব‌রিশাল আস‌তে না। আর ছয় বছ‌রে তু‌মি আয়া‌তের সা‌থে তেমন কথা ব‌লো‌নি। যখন ব‌রিশাল আসতে তখন। তাও বে‌শির ভাগ টাইমই খারাপ ব্যবহার কর‌তে। গত বছর মামা মারা যাবার পর তোমা‌কে জোড় ক‌রে ব‌রিশাল ক‌লে‌জে ট্রান্সফার ক‌রে আনা হয়। তাও প্রায় একবছর। তার মাসখা‌নেক পরে মা মিথ্যা ব‌লে তোমার আর আয়া‌তের বি‌য়ে দি‌য়ে দেয়। বাধ্য হ‌য়ে তু‌মি গত ছয় মাস ধ‌রে আয়া‌তের সা‌থে সংসার কর‌লে। আ‌মি বল‌তে চা‌চ্ছি চট্টগ্রাম থাকাকালীন তোমার কি কাউ‌কে——? দে‌খো নিসং‌কো‌চে বল‌তে পা‌রো। আমি মা আর তোমার ভাইয়ার সা‌থে কথা বল‌বো।
তনয়াঃ তেমন কিছু না ভা‌বি। আয়াত‌কে যে ম‌নে জায়গা দি‌য়ে‌ছিলাম কেন যে‌নো সে ম‌নে প‌রে কেউ জায়গা কর‌তে পা‌রে নি। কোন একটা কিন্তু থে‌কে যে‌তো। ওকে মন থে‌কে যত ঝে‌ড়ে ফেল‌তে চাইতাম ও শাকচু‌ন্নি ভ‌ূ‌তের মত ম‌নের ম‌ধ্যে তত ‌বে‌শি ব‌সে থাক‌তো। তাই চে‌য়েও নি‌জের ম‌নে কাউ‌কে বসা‌তে পা‌রি‌নি। ইনফ্যাক্ট কোন ছে‌লে বন্ধু দুষ্ট‌মি হাত ধর‌লেও মেজাজ গরম হয়ে যে‌তো।
‌রি‌মিঃ তাহ‌লে তু‌মি আয়াত‌কে ছাড়‌লে কেন?
তনয়াঃ ভা‌বি এটা জর‌ু‌রি না যে বিবাহ বিচ্ছেদ কেবল নি‌জে‌দের ম‌ধ্যে তৃতীয় পক্ষ আসার কার‌নে হ‌বে?
‌রি‌মিঃ কি জা‌নি বাপু! তোমা‌দের এত মোটা মোটা কথা আমার ছোট মাথায় ঢু‌কে না।
এর ম‌ধ্যে তনয়ার রু‌মে তনয়ার ভাই (তামিম), আর ওর মা এলো।
তা‌মিমঃ তনয়া তোর সা‌থে কিছু কথা ছি‌লো!
তনয়াঃ হ্যা ভাই ব‌লো?
তা‌মিমঃ আজ তোর কা‌ছে কিছু জান‌তে চাই‌বো বল না কর‌বি না। তো‌কে আজ বল‌তেই হ‌বে?
তনয়াঃ আমি কেন আয়াত‌কে ঘৃনা ক‌রি? এটাই তো?
তা‌মিমঃ হুমমম।
তনয়াঃ ভাইয়া তোমরা সবাই জা‌নো বাবার মৃত্যু একটা এক‌সি‌ডেন্ট কিন্তু না? বাবাকে খুন করা হ‌য়ে‌ছে আর খ‌ুনটা আয়াত ক‌রে‌ছে!
তা‌মিমঃ কি! (সবাই যে‌নো বড়সড় ধাক্কা খে‌লো।) তনয়া তুই এটা কি বল‌ছিস? তোর মাথা ঠিক আছে?
তনয়াঃ হ্যা ভাইয়া আমি স‌ত্যি বল‌ছি। সে‌দিন বাবা যখন ছাদ থে‌কে প‌ড়ে যায় তখন ছা‌দে আয়াতও ছি‌লো। বাবা ঠিক যেখানটা দি‌য়ে প‌ড়ে যায় ঠিক সেখানটায় দাড়া‌নো। ও বাবার প‌ড়ে যাওয়ার দি‌কে তাকি‌য়ে ছি‌লো । তু‌মিই ব‌লো বাবা শুধু শুধু ছাদ থে‌কে কি ক‌রে পড়‌বে? কেউ ধাক্কা না দি‌লে এমনি প‌ড়ে যাওয়া সম্ভব?
তা‌মিম, ‌রি‌মি, তনয়ার মা আশ্চর্য্য হ‌য়ে তনয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে রই‌লো।
মাঃ এই কার‌নে তুই আয়াত‌কে ঘৃনা কর‌তিস? এই কারনে তুই আয়াতের থে‌কে দূ‌রে চ‌লে এলি?
তনয়াঃ হ্যা মা!
তনয়া মা তনয়ার কা‌ছে গি‌য়ে তনয়ার গা‌লে ক‌ষে একটা চড় মা‌রে। তনয়া গা‌লে হাত দি‌য়ে চোখ বড় বড় ক‌রে ওর মা‌য়ের দি‌কে তা‌কি‌য়ে ছি‌লো।
মাঃ এ কি কর‌লি হতভাগী? নিজের সাজা‌নো গোছা‌নো সংসারটাকে নিজের হা‌তে এভা‌বে ভে‌ঙে দি‌লি? নিজের সর্বনাশ এভা‌বে নি‌জে কর‌লি? তাও একটা মিথ্যা ভুল ধারনার জন্য!
তনয়াঃ মিথ্যা না মা এটাই স‌ত্যি।
মাঃ কি স‌ত্যি বল! সে‌দিন তুই ছা‌দে আয়াত‌কে দেখ‌লি আর আমাকে দেখ‌লি না? সে‌দিন ছা‌দে তোর বাবা, আমি আর আয়াত তিন জনই ছি‌লাম। তোর বাবা পা স্লিপ ক‌রে প‌রে যায়। নি‌চে প‌রে মাথাটা পাথ‌রের উপর পড়ায় তা‌কে বাঁচা‌নো সম্ভব হয়‌নি। আয়াত দৌ‌ড়ে তোর বাবা‌কে বাঁ‌চা‌তে গি‌য়ে‌ছি‌লো। তোর বাবা‌কে ধাক্কা দি‌তে নয়।
তনয়াঃ মা আমি স্পষ্ট দে‌খে‌ছি আয়াত বাবা‌কে ধাক্কা দি‌য়ে স‌রি‌য়ে দি‌য়ে‌ছে। তাল সামলাতে না পে‌রে বাবা ছাদ থে‌কে নি‌চে প‌ড়ে গে‌ছে।
মাঃ তুই এটা দেখ‌লি আয়াত তোর বাবা‌কে ধাক্কা দি‌য়ে স‌রি‌য়ে দি‌য়ে‌ছে কিন্তু কেন স‌রি‌য়ে‌ছে সেটা দেখ‌লি না।
তনয়াঃ কি বল‌তে চাই‌ছো মা তু‌মি?
মাঃ ছোট বেলা থে‌কে তোরা তো‌দের বাবা‌কে খুব ভা‌লো জে‌নে এসে‌ছিস তাই না? কিন্তু তোরা ভুল জান‌তিস! হ্যা তো‌দের বাবা তো‌দের খুব ভা‌লোবাস‌তো। কিন্তু আমার সা‌থে জা‌নোয়া‌রের মত ব্যবহার কর‌তো। উঁচু‌তে ওঠার স্বপ্নটা তার বরাব‌রেই। তার জন্য সে যে কোন কাজ কর‌তে পার‌তো। আয়া‌তের সা‌থে তোর বি‌য়েটাও সে জন্যই দি‌য়ে‌ছে যা‌তে আয়া‌তের বাবার থে‌কে সবরকম সু‌ব‌িধা পে‌তে পা‌রে। সে‌দিন খুব সকা‌লে তোর বাবা ছা‌দে গি‌য়ে ফো‌নে কার সা‌থে যে‌নো কথা বল‌ছি‌লো যে, সে আয়া‌তের বাবার সব কিছু নি‌জের না‌মে ক‌রে নি‌বে। আরো কিছু কথা। কথ‌া গু‌লো আমি শু‌নে ফে‌লি। তোর বাবার সব কথা আয়া‌তের বাবা‌কে ব‌লে দেয়ার কথা বল‌তেই তি‌নি অনেক ভা‌বে আমা‌কে ভয় দেখায়। যখন তার কথা শু‌নি‌নি তখন ছা‌দে ব‌সেই তি‌নি আমার গলা চে‌পে ধ‌রে। তখন আয়াত ওদের বা‌ড়ির ছাদ থে‌কে আমা‌দের বা‌ড়ির ছা‌দে আসে। হয়‌তো তোর সা‌থে দেখা কর‌তে আস‌ছে। এসে দে‌খে তোর বাবা ছা‌দে পাতা চেয়া‌রে সাথে আমা‌কে চে‌পে ধ‌রে আমার গলা চে‌পে ধ‌রে রে‌খে‌ছে। আমার প্রান তখন যায় যায় অবস্থা। আয়াত তোর বাবা‌কে ছাড়া‌নোর চেষ্টা ক‌রে কিন্তু তার সা‌থে পে‌রে উঠে না। তারপর কোন রকম তা‌কে ধাক্কা দি‌য়ে আমার থে‌কে দুরে ঠে‌লে দেয়। তোর বাবা ব্যা‌লেন্স ঠিক রাখ‌তে না পে‌রে প‌ড়ে যায়। আয়াত দৌ‌ড়ে ছা‌দের পা‌শে যায়। কিন্তু ততক্ষ‌নে অনেক দে‌রি হ‌য়ে যায়। সে‌দি‌নের ঘটনাটা একটা এক‌সি‌ডেন্ট ছি‌লো।
আয়াত য‌দি সে‌দিন তোর বাবা‌কে আমার থে‌কে দূরে না কর‌তো তাহ‌লে সে‌দিন তোর বাবা আমা‌কে মে‌রে ফেল‌তো। তোর বাবা প‌ড়ে যাবার পর আয়াত মানু‌ষিকভা‌বে ভিষন ভে‌ঙে পরে। ও নি‌জেই পু‌লিশের কা‌ছে সব ব‌লে। পু‌লিশ সব তদন্ত ক‌রে দে‌খে আয়াত স‌ত্যি বল‌ছে। আর আমিই পু‌লিশ ক‌মিশনার‌কে অনু‌রোধ ক‌রে‌ছিলাম যে‌নো বিষয়টা নীরবভা‌বে তদন্ত ক‌রে। এ কথা গু‌লো আমরা সবাই জা‌নি। তো‌দের জানাই‌নি কারন আমি চাই‌নি তুই আর তা‌মিম তোর বাবা‌কে ঘৃনা ক‌রিস। চাই‌নি তোরা যখন তোর বাবা‌কে ম‌নে কর‌বি তখন ঘৃনা স‌হিত ম‌নে ক‌রিস। অনেক বছর তো‌দের কথা ভে‌বে তোর বাবার অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য কর‌ছি। কিন্তু সেই তুই কিছু না বু‌ঝে শু‌নে আয়াত‌কে——। আয়াত এখ‌নো আমার কা‌ছে এসে কাঁ‌দে। কারন ও এখ‌নো নি‌জে‌কে অপরধী ম‌নে ক‌রে। যে অপরাধটা ও ক‌রে‌নি তার জন্য ও রোজ অনুতপ্ত হয়। আমরা তোর বাবার কবর জেয়ারত কর‌তে যে‌তে ভুল কর‌লেও আয়াত ক‌রে‌ না। তোর বাবার কব‌রের পা‌শে গি‌য়ে পাগলের মত কাঁ‌দে ছে‌লেটা। তো বাবা মারা যাবার পর আমাদের প‌রিবা‌রের সব কিছু আয়াত আর আয়া‌তের বাবা দে‌খে‌ছে। তোর ভাই তা‌মিম যে আজ এত বড় ব্যবসায়ী তাও কেবল আয়া‌তের কার‌নে।
যাক এসব কথা না হয় বাদ দিলাম। তোর শত ঘৃনা অপমান সহ্য ক‌রেও নিঃশ্বার্থভা‌বে তো‌কে ভা‌লো‌বে‌সে গে‌ছে। তো‌কে আয়াত অনেক আগেই স‌ত্যিটা বল‌তে চে‌য়ে‌ছি‌লো। আমিই ওকে কসম দি‌য়ে‌ছিলাম ও যে‌নো তো‌কে না জানায়। আমি কখ‌নো ভাব‌তে পা‌রি‌নি যে তুই এই কার‌নে আয়াত‌কে ঘৃনা ক‌রিস। জান‌লে অনেক আগেই তো‌কে স‌ত্যিটা জানাতাম। আজ আমার ভু‌লের কার‌নে তুই আয়া‌তের মত ছে‌লে‌কে হা‌রি‌য়ে ফেল‌লি। এটা তুই কি কর‌লি তনয়া? একটা কথা কি জা‌নিস তনয়া সবসময় চোখ যা দে‌খে কান যা শো‌নে তা কিন্তু সত্যি হয় না। চো‌খের আড়া‌লেও একট‌া সত্যি থা‌কে । কিন্তু সবসময় আমরা সেটা দেখ‌তে পা‌বো এমন কোন কথা নাই।
মা‌য়ের কথা শু‌নে তনয়া যে‌নো বোবা হ‌য়ে গে‌লো। কথা বলার মত কোন ভাষা পা‌চ্ছে না। কি বল‌বে? কিই বা বলার আ‌ছে? সব কিছু তো শেষ! নি‌জের হা‌তে নিজে শেষ ক‌রে দি‌ছে। অতি‌রিক্ত শো‌কে যেমন মানুষ পাথর হ‌য়ে যায় তনয়াও তেমন হ‌য়ে গে‌ছে। চোখ থে‌কে কোন জল পড়‌ছে না। চো‌খে শুধু দেখা যা‌চ্ছে একরাশ আফসুস। এখন শুধু পা‌রে আয়া‌তের কা‌ছে মাফ চাই‌তে। খুব কষ্টে তা‌মিম‌কে বল‌লো
তনয়াঃ ভাইয়া আমাকে একটু আয়া‌তের কা‌ছে নি‌য়ে যা‌বে?
সবাই মি‌লে আয়াত‌দের বা‌ড়ি গে‌লো। আয়া‌তের মাকে দে‌খে তনয়া বল‌লো
তনয়াঃ মা আয়াত কোথায়?
আয়া‌তের মাঃ নি‌জের রু‌মে আছে। তো‌দের মা‌ঝে কি কিছু হ‌য়ে‌ছে? কাল অনেক রা‌তে আয়াত বাসায় ফির‌ছে। সেই থে‌কে রু‌মে ব‌সে আছে। কা‌রো সা‌থে ঠিকভা‌বে কথা বল‌ছে না। কাল থে‌কে এখন কিছু খায়‌নি। কি হ‌য়ে‌ছে তো‌দের মা‌ঝে?
তনয়া ম‌নে ম‌নে বল‌ছে তার মা‌নে আয়াত ডি‌ভো‌র্সের ব্যাপা‌রে কাউ‌কে কিছু ব‌লে‌নি।
তনয়াঃ আমি দেখ‌ছি মা।
তনয়া রু‌মে গি‌য়ে দে‌খে আয়াত বেলকু‌নি‌তে দাড়া‌নো। তনয়া দৌ‌ড়ে গি‌য়ে আয়াতের পা‌য়ের কাছে ব‌সে পরে পা দু‌টো জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কান্না কর‌তে শুরু কর‌লো। তনয়ার এমন করায় আয়াত অনেকটা হতবাগ হ‌য়ে গে‌লো। তারাতা‌ড়ি তনয়া‌কে ধ‌রে দাড় করা‌লো। তারপর বল‌লো
আয়াতঃ কি কর‌ছো তনয়া! আমার পা‌য়ে হাত দি‌ছো কেন?
তনয়াঃ কারন আমি তোমার পা‌য়েরও যোগ্য নই। এতটা বছর একটা মিথ্যা কার‌নে আমি তোমা‌কে ঘৃনা ক‌রে এসে‌ছি। আজ স‌ত্যিটা জানলাম কিন্তু স‌ত্যিটা জান‌তে বড্ড দেরী ক‌রে ফেললাম। বড্ড দেরী। আমা‌কে মাফ ক‌রে দাও আয়াত। তু‌মি মাফ না করা পর্যন্ত আমি যে শা‌ন্তি পা‌বো না।
আয়াতঃ এখন মাফ চে‌য়ে কি লাভ তনয়া? সব তো শেষ! ইউ ডিসট্রয় এভ‌রিথিংক। এখন ফেরার কোন পথ নাই।
তনয়াঃ কেন নাই আয়াত! ব‌লো? আমরা আবার বি‌য়ে ক‌রে নি‌বো!
আয়াতঃ সেটা সম্ভব নয় তনয়া। তু‌মি জা‌নো ইসলা‌মের বিধা‌নে স্ত্রী‌কে তালাক দেয়ার পর তা‌কে আবার বি‌য়ে কর‌তে হ‌লে ঠিক কি কি নিয়ম মান‌তে হয়? সেটা কি তু‌মি মান‌তে পার‌বে?
তনয়াঃ তনয়া কোন কথা বল‌ছে না শুধু বল‌লো কেন আই হাগ ইউ?
আয়াতঃ নো! ইউ লস্ট দ্যা রাইট।
আর কোন কথা না ব‌লে তনয়া চুপ ক‌রে শুধু নীরব কান্না কর‌ছে।
আয়াতঃ আমি ছাড়া অন্য কা‌রো সা‌থে কবুল বল‌তে পার‌বে? অন্য কেউ তোমায় ষ্পর্শ কর‌বে তা মে‌নে নি‌তে পার‌বে? ব‌লো?
তনয়াঃ আমি কিছু জা‌নি না আয়াত। আমি শুধু জা‌নি আমি তো‌মা‌কে ছাড়া থাক‌তে পার‌বো না। আর এটাও জা‌নি তুমি ছাড়া অন্য কেউ আমাকে ষ্পর্শ করার আগে আমি নি‌জে‌কে শেষ ক‌রে দি‌বে‌া। আয়াত প্লিজ কিছু ক‌রো। আমি আর নি‌তে পার‌ছি না। আমার ম‌রে যে‌তে ইচ্ছা কর‌ছে।
আয়াতঃ আমার কিছু করার নাই তনয়া। নিজের ধ‌র্মের বিরু‌দ্ধে আমি কি ক‌রে যা‌বো? আল্লাহর কা‌ছে কি জবাব দি‌বো? ধর্ম যেমন সত্য ঠিক তেম‌নি তুমি ছাড়া আমার জীব‌নে আর কেউ কখ‌নো আস‌বে না। কিন্তু ডি‌ভোর্স পেপা‌রে সাইন ক‌রে তু‌মি সব শেষ ক‌রে দি‌ছো। ফেরার সব পথ বন্ধ তু‌মি নি‌জেই শেষ ক‌রে দি‌ছো।
মা‌টি‌তে লু‌টি‌য়ে কাঁদছে তনয়া। কাঁদ‌ছে আয়াতও।
আয়াতঃ তোমার ভুলটা য‌দি দুদিন আগে ভাঙ‌তো ত‌বে কিছু করার ছি‌লো। কিন্তু এখন সব শেষ তনয়া সব।
তা‌মিমঃ কিছুই শেষ হয়‌নি আয়াত!
তা‌মি‌মের কথায় তনয়া আয়াত অবাক দৃষ্টি‌তে তাকা‌লো।
আয়াতঃ কি বল‌ছেন ভাইয়া!
তা‌মিমঃ আয়াত কাল‌কে দুজন যে ডি‌ভোর্স পেপা‌রে সাইন ক‌রে‌ছি‌লে সেটা কি একবার প‌ড়ে দেখবা?
তনয়াঃ মা‌নে?
তা‌মিমঃ প‌ড়ে দেখনা কি লেখা তাতে !
আয়াত আলমা‌রি থে‌কে পেপারটা বের ক‌রে পড়া শুরু ক‌রে। পড়‌তে গি‌য়ে চোখ দু‌টো বড় বড় ক‌রে তা‌মি‌মের দি‌কে তাকায়। আর ব‌লে
আয়াতঃ এটা কি ভাইয়া। এটা‌তো ডি‌ভোর্স পেপার না। উপ‌রের কাগজটা নকল। আর প‌রের কাগজ গু‌লো তো——? তাহ‌লে?
তামিমঃ হ্যা ওটা ডিভোর্স পেপার না। তোরা দুজন গত কাল ডি‌ভোর্স‌ পেপারে না। আমার বানা‌নো এগ্রি‌মেন্ট পেপা‌রে সাইন ক‌রে‌ছিস। যেখা‌নে লেখা তুই আয়াত চাই‌লেও কেউ কাউ‌কে ছে‌ড়ে যে‌তে পার‌বি না। আর উপ‌রের একটা নকল ডি‌ভোর্স পেপা‌রের মত কাগজ দেয়া। আমি জানতাম তোরা দুজন মানু‌ষিক ভা‌বে অনেক ক‌ষ্টে থাক‌বি যার করে‌নে পেপার পড়া‌তো দূ‌রে থাক ঠিক ভা‌বে দেখ‌বিও না যে, কি‌সে সাইন কর‌ছিস।
তনয়ার চো‌খে মু‌খে আনন্দ ফু‌টে উঠ‌লো। চোখ মুছ‌তে বল‌লো
তনয়াঃ ভাইয়া তার মা‌নে আমা‌দের ডি‌ভোর্স হয়‌নি?
তা‌মিমঃ না‌রে পাগ‌লি। তিন মাস আগে যখন তুই বাসায় এসে তোদের ডি‌ভোর্স এর ব্যাপা‌রে সব খু‌লে বল‌লি তখন তোর কথায় সায় মিলা‌লেও প‌রে গি‌য়ে উকি‌লের কা‌ছে সব ব‌লে কাগজ বদ‌লে দি। কেউই চায় না একটা সংসার ভাঙুক। আর তুই তো আমার বোন। আর ভাই হ‌য়ে নিজের বো‌নের এত সুন্দর সংসার ভাঙ‌তে কি ক‌রে দে‌খি বল?
আয়াত তা‌মি‌মকে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বল‌লো
আয়াতঃ স‌ত্যিই ভাইয়া আজ আপ‌নি বড় ভাই‌য়ের মত কাজ কর‌ছেন।
আয়াত তা‌মিম‌কে ছাড়‌তেই তনয়া ঝ‌ড়ের বে‌গে আয়াত‌কে শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বল‌লো
তনয়াঃ এখন তোমা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধরার অধিকার আমার আছে।
তা‌মিমঃ সব কাজ আমি করলাম আমা‌কে এক‌লিস্ট একটা ধন্যবাদ‌তো দি‌বি তনয়া?
তনয়াঃ ভাই তুই এখান থে‌কে য‌া‌বি? বোন বোনাই প্রেম কর‌ছে আর ও র্নিল‌জ্জের মত দা‌ড়ি‌য়ে দেখ‌ছে যা ভাগ!
তা‌মিমঃ তাই‌ তো ব‌লে উপ‌রের দাম নাই। হায়‌রে পৃ‌থিবী! আমি দরজা বন্ধ ক‌রে গেলাম। নয়‌তো আবার অন্য কেউ আস‌তে পা‌রে।
অ‌কেক্ষন পর——
আয়াতঃ তনয়া!
তনয়াঃ হুমম
আয়াতঃ অনেকক্ষন ধ‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে আছে‌া! এবার‌ তো ছা‌ড়ো!
তনয়াঃ এত বছর পর তোমায় কা‌ছে পেলাম এত সহ‌জে ছাড়‌ছি না।
আয়াতঃ ঘন্টার বে‌শি সময় ধ‌রে তুমি জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে আছো। আমার পা ব্যাথা কর‌ছে?
তনয়াঃ করুক।
আয়াতঃ আর ভুল বুঝ‌বে না‌তো?
তনয়াঃ কখ‌নো না। আয়াত!
আয়াতঃ হুমমমম
তনয়াঃ আই লাভ ইউ!
আয়াতঃ আই লাভ ইউ মোর দ্যান ইউ।
তনয়াঃ আগে করতা এখন না।
আয়াতঃ রি‌য়ে‌লি! #বা‌লিকা_বধূ
তনয়াঃ ইয়েস!
একে অপর‌কে আ‌রো শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌লো। ম‌নে হয় একে অপ‌রের মা‌ঝে মি‌লে যা‌বে।
#সমাপ্ত
ভুলত্রু‌টি ক্ষমার চো‌খে দেখ‌বেন
গল্পটা কেমন লাগ‌লো জানা‌বেন