প্রেমের পাঁচফোড়ন

প্রেমের পাঁচফোড়ন !! Part- 65

কি?এমন করে চেয়ে আছো কেন?এটা কি নতুন নাকি?
.
দরজা নক হলো তখনই
শান্ত গিয়ে দরজা খুলে চা আর বিসকিট নিয়ে আসলো
.
আহানা এখনও রোবটের মত তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে

চা খাওয়া শেষ করে সবাই এবার বের হলো ভূতের বাড়ি যাবে
আইডিয়াটা রুপার,সে তার গুগলে সার্চ করে বের করেছে রিসোর্টের আশেপাশে নাকি একটা প্রাচীন ভূতের বাড়ি আছে,রাতে গেলে মজা বেশি পাওয়া যাবে,রাত করে নাকি কিসব সাউন্ড আসে সেখানে
শান্ত তো এসব শুনে এক পায়ে খাড়া,সে ভূতের বাড়ি যাবেই যাবে
রইলো নওশাদ আর আহানা,তারা দুজনে ভয়ে শুধু ঢোক গিলছে
চা বিসকিট খেয়ে সন্ধ্যা হতেই ৪জন মিলে বেরিয়ে পড়লো,বিরাট এই মাঠ শেষ হলে একটা জঙ্গল পড়বে,সেটার মাঝ বরাবর ভূতের বাড়ি আই মিন জমিদার বাড়িটা অবস্থিত

শান্ত আহানার হাত ধরে হেঁটে চলছে আরেকহাতে টর্চ
আর পিছন পিছন নওশাদ রুপার হাত ধরে আসতেসে তাদের কাছেও টর্চ আছে
ঘুটঘুটে অন্ধকার,পিচ্ছিল মাটির সরু পথ,চারপাশে ঘাস,সেগুলো ভিজে আছে কারণ আজ সারাদিন ধরে গুটিগুটি বৃষ্টি হয়েছে
ভেজা ঘাস পায়ে লাগলেই মনে হয় এই বুঝি জোঁকে ধরলো
আহানা প্লাজো একটু উঠিয়ে হাঁটতেসিলো কিন্তু যখন শুনলো জোঁকের কথা আবার নামিয়ে ফেললো
খালি পায়ে না লেগে জোঁক যদি প্লাজোয় লাগে তাহলে মন্দ কি?
একটা বাদুড় উড়ে সামনে দিয়ে গেলো এটা দেখে আহানা আর নওশাদ এমন চিৎকার করলো বাদুড় নিজেই ভয় পেয়ে তার পথের দিশা হারিয়ে কোনদিকে না কোনদিকে চলে গেলো
এটা সিউর!! সে মানুষের চিৎকারে এমন ভয় পেয়েছে যে আজ তার পরিবারের কাছে ফিরেই অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পড়ে থাকবে
কিসের যেন আওয়াজ আসতেসে সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আওয়াজটা বুঝার চেষ্টা করছে অবশেষে বুঝতে পারলো আওয়াজটা হলো পেঁচার
যাই হোক মাঠ পেরিয়েছে তারা এবার জঙ্গলে ঢুকবে,আহানা তো শান্তর হাত যত শক্ত করে ধরতে পারে তত শক্ত করে ধরে রেখেছে
জঙ্গলে ঢুকতেই মনে হলো আশেপাশে ভূত আর ভূত,অথচ ভূতের নিশানাও নেই
.
শুধু পথ চেয়ে চেয়ে তারা জমিদার বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়ালো
ইয়া বড় এক পুরোনো রাজবাড়ি,,শতে শতে শেকড় দ্বারা আবৃত যা বাড়িটাকে প্রাচীন হওয়ার পরিচয় বহন করে
শেউলা জমে আছে,লাইট মেরে মেরে সব দেখতেসে ওরা
শান্ত তো আর অপেক্ষা না করেই ঢুকেই পড়লো
ভিতরে
কোথাও পুরনো একটা জিনিসপাতিও নেই,এলাকাবাসী সব লুটেপুটে নিয়ে গেসে,এখন খালি বাড়িটা রয়ে গেসে
নওশাদ আর রুপা নিচের তলা ঘুরে দেখতেসে
আর শান্ত আহানাকে টেনে দোতলায় নিয়ে গেসে
.
শান্ত প্লিস চলুন ফিরে যাই,আমার খুব ভয় করতেসে,প্লিস চলুন😭
.
আরে আমি আছি না?এত ভয় পাচ্ছো কেন??
.
ভয় পাবো না? কি বলেন,যদি এখন ভূত এসে পড়ে বা পাগল ছাগল ও তো থাকতে পারে এখানে তাই না?

মেরে তাহলে ওদের সত্যিকারের ভূত বানাই দিবো😎
.
উফ আপনি বুঝতেসেন না কেন?
.
শান্ত আহানার কোমড় জড়িয়ে টান দিয়ে কাছে নিয়ে এসে ওর মুখ চেপে ধরলো
.
চুপ, একদম চুপ,এত কথা কি করে বলতে পারো তুমি?তোমার না অসুখ?অসুখের মাঝেও এত এত কথার জোর তোমার??
.
তো কি করতাম আমি?কি দরকার ছিল এত রাত করে এখানে আসার,শান্তিতে রুমে থাকা যেতো না নাকি?
.
যেতো তবে এরকম সুযোগ বারবার আসেনা বুঝলা
আমরা নিউ কাপল,আমাদের উচিত এসব ইঞ্জয় করা আর তুমি কিনা আমাকে বকেই যাচ্ছো?
.
আমি কাল সকালে ঢাকায় ফিরতে চাই ব্যস
.
না কাল না,পরশু,পরেরটা পরে দেখা যাবে

হেহে হেহে,কারা তোরা??এখানে কি করিস?
.
লোকটার কথা শুনে আহানা চোখ বড় করে শান্তর পিছনে লুকিয়ে পড়লো
.
একটা পাগল লোক দাঁড়িয়ে আছে ওদের সামনে,হাতে লাঠি আর পরনে সাদা ময়লা পাঞ্জাবি
লোকটা আহানাকে দেখে এগিয়ে আসতে ধরতেই শান্ত হাত দিয়ে আটকালো উনাকে
.
কি??
.
লোকটা ব্রু কুঁচকে বললো “তোরা এখানে কেন এসেছিস?সুখে থাকতে তোদের ভূতে কিলায়,যা চলে যা”
.
আহানা শান্তর জ্যাকেট চেপে ধরে মুখ লুকিয়ে রেখেছে

শান্ত কিছু বললো না আর,আহানাকে নিয়ে দোতলা থেকে নেমে আসলো,লোকটা এগিয়ে এসে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বললো”চলে যা তোরা,আমি আমার বউরে এই বাড়িতে হারিয়েছি,তোরাও হারাবি দেখিস!”
.
শান্ত থেমে গিয়ে আহানার হাত শক্ত করে ধরে নওশাদ আর রুপাকে ডাক দিলো
.
কি হলো ভাইয়া??
.
আচ্ছা রুপা!!অনেক দেখা হইসে,চলো আমরা ফিরে যাই,রাত বেশি হয়ে গেলে বিপদ বাড়বে,আর এই লোকটাকে সুবিধার মনে হচ্ছে না আমার
.
ভাইয়া কি বলো,পুরো বাড়িটা তো দেখাই হলো না
.
লাগবে না থাক
.
হ্যাঁ শান্ত ঠিক বলতেছিস তুই,চল যাই
.
রুপা মন খারাপ করে সেও সাঁই জানালো নওশাদ আর শান্তর সিদ্ধান্তে
সবাই মিলে আবার রিসোর্টের উদ্দেশ্যে হেঁটে চলেছে
অবশেষে তারা জলদি পা চালিয়ে রিসোর্টে পৌঁছেই গেলো
.
আহানা হাত পা ধুতে ধুতে বললো”আমার কথায় কানই দেন না আপনি,দিলে আজ এত কষ্ট করে জমিদার বাড়ি গিয়ে সন্ধ্যাটা বরবাদ করতে হতো না
ঘুরলেই মন ভালো হয় না,আপন মানুষের পাশে বসে থাকলেও মন ভালো হয়ে য়ায়
কে বুঝাবে আপনাকে,আপনি তো আমার কথা বুঝতেই চান না!!”
শান্ত জ্যাকেট খুলে,টিশার্টটাও খুলে আয়নায় নিজের পিঠ দেখতেসে,জঙ্গলের মাঝ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার ফলে পোকামাকড় কিছু একটা মনে হয় কামড় দিয়েছে, তাই তোয়ালে নিয়ে গোসল করতে চলে গেলো সে,আহানার কথায় কান দিলো না
আহানা বিছানায় এসে বসে আছে,চাদর মুড়ি দিয়ে বারান্দার দিকে তাকালো,পাগল লোকটার কথা মনে পড়ে ভয় লাগলো ওর
যদি এখন সেই লোকটা এই বট গাছ ধরে এখানে এসে যায়,কি করবো তখন আমি??
শান্ত তো এমনিতেও বিকাবেলায় সব বন্ধ করে দিয়েছিল আমি গাছে উঠেছিলাম বলে
আমি তাও খুলসি বারান্দার দরজা বটগাছটা দেখার জন্য,হুমমম বটগাছ দেখতে হবে না আর
আহানা উঠে গিয়ে বারান্দার দরজাটা লাগিয়ে দিলো,পর্দাও টেনে দিলো,লাগবে না বারান্দায় যাওয়া,গা এখনও গুলিয়ে আসতেসে আমার
আবার এসে বিছনার মাঝখানে বসে চাদর গায়ে পেঁচিয়ে গাপটি মেরে বসে রইলো সে,যত দোয়াদরুদ আছে সব পড়া শেষ,শান্ত বাথরুম থেকে বের হলে ওকে জড়িয়ে বসে থাকবো তাহলে ভয় যাবে
.
শান্ত কয়েক মিনিট বাদেই বের হলো,বেরিয়ে দেখলো আহানা চাদর মুড়ি দিয়ে ঢুলতেসে
.
কি হইসে?ভূতে ধরলো নাকি তোমাকে?
.
না যদি ঐ লোকটা এসে যায়?
.
আরে কিছু হবে না,ঐ লোকটা ওখানেই থাকে,তুমি এখনও ওসব নিয়ে ভাবতেসো??
বাদ দাও ওসব,এখন আমরা রুই মাছ খাবো,পুকুরের টাটকা মাছের তরকারি সেই লাগবে খেতে,আমি রুম সার্ভিসে কল করতেসি, বসো তুমি
.
প্লিস এখন না আরেকটু পর,আমার খিধা নেই এখন,আপনি প্লিস এখানে এসে বসুন না
.
শান্ত এসে আহানার পাশে বসে পড়লো,তারপর ফোন নিয়ে গেমস খেলায় মনোযোগ দিলো সে
.
আহানা শান্তকে ধরে ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে বোকার মতন,বিয়ের আগে এত রোমান্টিক ছিল আর এখন কিনা বিয়ের পর পুরো আনরোমান্টিক?হাউ?হাউ?
.
শান্ত গেমস খেলতে খেলতে বললো”বিকালেও তো কিস করলাম,আনরোমান্টিকের কি দেখলা তুমি?আর তোমার শরীরের অবস্থার কথা মাথায় আছে তোমার??এত কিছুর পরও তুমি আবার এত কিছু আশা করো,মাই গড!!,তুমি এত…।
.
এই!! এই!! কি বলতে চান কি আপনি??আমি এত মানে??আমি কি কিছু বলসি আপনাকে?আর কখনও কিস ও করতে দিব না,আপনি খুব খারাপ!

আহানা আরেকদিকে ফিরে শুয়ে পড়লো
১৬সেকেন্ড বাদে গলার কাছে শান্তর খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির স্পর্শ পেতেই উঠে বসে পড়লো সে
.
কি??কি হইসে?এত ঢং করতে হবে না আর হুহ!!
.
তুমি এত রাগ করো কেন?আমি তো মজা করসিলাম
.
রাখেন আপনার মজা,আমার ভাল্লাগতেসে না
আমি ঘুমাবো,রাতে খাবো না,ঘুম থেকে উঠাবেন না আমাকে
.
মানে কি বলতেসো তুমি?তোমাকে আমি খালি পেটে ঘুমাতেও দিব না
.
আমি খাবো না আপনার কি তাতে?
.
আমার কি??
দেখাচ্ছি আমার কি
.
শান্ত আহানার গাল টিপে ধরে বিছানার সাথে লাগিয়ে ধরলো
.
আচ্ছা সরি আর বলবো না আপনার কি,বলবো আপনার কিছু না
.
কিহহহ?আহানা!তুমি অনেক দুষ্টু হয়ে গেসো!!
.
কবে বুঝি শান্তশিষ্ট ছিলাম?
.
ওহ তাহলে এটা আগেরই স্বভাব ছিল?আমাকে দেরি করে দেখাইলা এই তো?
.
হুম,মুখ থেকে আপনার হাত সরান আমার মুখ ব্যাথা হয়ে গেসে
.
আহানা!
.
কি?
.
অনেক ভালোবাসি তোমায়,কখনও ভুল করেও আমাকে ছেড়ে যাবা না তো?
.
না
.
শান্ত আহানাকে জড়িয়ে ধরে ওর গলায় মুখ গুজলো
আহানা হালকা চোখ বুজে শান্তকে ধরে রাখলো
তারপর শান্তর ভেজা চুলে হাত বুলাতে লাগলো সে
.
আমাকে চুল মুছার জন্য বকা দিয়ে এখন নিজেই চুলে সব পানি রেখে দিসে
কথাটা বলে আহানা হাত বাড়িয়ে নিজের ওড়নাটা পাশ থেকে নিয়ে শান্তর চুল গুলো মুছতে লাগলো
শান্ত আহানার গলায় বারবার খোঁচা দিচ্ছে দাঁড়ি দিয়ে
.
আহানা নড়তে নড়তে অনেক কষ্টে চুল মুছে নিলো ভালো করে
একটা সময় শান্ত আহানার গলা থেকে মাথা উঠিয়ে ছোঁ মেরে ওড়নাটাই নিয়ে নিলো আহানার দিকে
.
কি?

এত মুছে কি হবে?এমনিতেও শুকায় যাবে,তুমি যেভাবে মুছতেসে যেন আর শুকাবে না
.
চুলে পানি থাকা ভালো কথা নয় হুমমম
.
তুমি প্লিস আমার আম্মুর সব ডায়ালগ মেরো না
.
আমি আপনার আম্মুর কাছে বিচার দিব কিন্তু
.
আমার মায়ের সাথে আমি কথা বলতে পারি কিন্তু তুমি না
.
আমিও পারি,কারন এখন থেকে তো আমি ও আপনার অংশ হলাম তাই না?তাহলে আমিও তো কথা বলতে পারবো আর মা আমাকে বেশি ভালোবাসে 😎
.
তাই নাকি?কে বললো তোমায়?
.
কে আবার মা বললো,তুমি মাকে জিজ্ঞেস করিও
.
এক মিনিট,তুমি??তুমি আমাকে তুমি বললা?
.
🙈সরি মুখ ফসকে বলে দিসি
.
ইটস ওকে,তুমি শুনতে ভালোই লাগে
.
তুমি/ আপনি/ তুমি /আপনি,একবার একটা বলবো,পুরোপুরি বলার সাহস নেই আমার
.
কেন?আমি কি তোমায় খেয়ে ফেলবো নাকি?
.
হ্যাঁ

“”হ্যাঁ””শুনে শান্ত ব্রুটা নাচিয়ে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে
আহানা দাঁত কেলিয়ে জিভে এক কামড় দিয়ে চুপ করে রইলো
মাঝে মাঝে যতসব উল্টা পাল্টা বলে ফেলি
.
আজ তোমাকে ছাড়বো না আহানা দ্যা পাতানো বউ টু রিয়েল বউ!
.
এইটা আবার কি নাম,সুন্দর একটা নাম দেন
.
আহান্ত!!
.
বাহ!!কিউট নাম
.
এখন আমার দিকে তাকাও
.
কি জন্যে?
.
দেখাচ্ছি কি জন্যে
(ছোট করে দেওয়ার জন্য সরি, ব্যস্ত থাকাই এইটুকুই লিখতে পারলাম,ব্যস্ততা থাকবে আরও কদিন,তাও গল্প দিবোই,আকারে ছোট হবে এই আর কি)
চলবে♥