প্রিয়তমা !! Part- 03
ফজরের আযানের মধুর ধ্বনিতে ঘুম ভেঙে গেলো..এটা আমার প্রত্যেকদিনকার রুটিন..নিজেকে অনেক লাকি মনে হয় যে ফজরের নামাজটা মিস যায় না!!.. ওযু করে মায়ের পাশেই বসে পড়লাম নামাজে.. নামাজ শেষ করে দাদীর কাছে গেলাম কিন্তু দাদী নামাজ শেষে ঘুম!!..একবার চিন্তা করলাম ছাদ থেকে ঘুরে আসি কিন্তু একা যাওয়ার সাহস আমার নেই বাপু!!!..ঘড়িতে মাত্র সাড়ে ছয়টা তাই ভাবলাম ঘুমে পড়াটাই ভালো কারণ কলেজ আমার দশটা থেকে..সো নয়টায় উঠলেই হবে..ফ্রেশ হতে দশ মিনিট,রেডি হতে দশ মিনিট আরো বাকি চল্লিশ মিনিটের অনেক আগেই সাদিফ ভাইয়ার স্কিলফুল ড্রাইভিং আমাকে কলেজ এ পৌঁছায় দিতে সক্ষম হবে এটা আমার বিশ্বাস..!!যাক হিসাব নিকাশ শেষ এবার ঘুমানোর পালা…ঘুম মানেই সুখ আর সুখ!! আহহা…!
*
*
🌸
“শেফা ফুল উঠে যা না দেখ সাদিফ এসে বসে আছে..ছেলেটা আর কতক্ষণ ওয়েট করবে বল তো মা?! উঠ উঠ”!!.. সাদিফ ভাইয়ার নাম শুনে এক লাফে উঠে বসলাম..সকালটাই এই হিটলারের নামটা শুনতে হইলো .. আল্লাহ্ জানেন আজ কপালে কি আছে!!..
উফ মা তোমার এই বোনের ছেলের কি আর কোনো কাজ নেই ..প্রত্যেকটা দিন কেমনে পারে আমাকে আনা নেওয়া করতে!!.তার উপর উনার এতো বড় বিজনেসের চাপ…!!!.উত্তরে মা কিছুই বললেন না মুচকি হেসে চলে গেলেন…হাহ!!মা আমাকে ইগনোর করলো!!! ঘড়িতে দেখলাম মাত্র আটটা ত্রিশ তার মানে এই সাদিফ ভাইয়া এখানেই নাস্তা করবেন..এত বড়লোক মানুষ সাদিফ ভাইয়া তার বাসায় কি নাস্তা নেই??!!যাক আমার কি উনার যেখানে মন চায় সেখানে খাক..ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম..ঘড়িতে ৯.২৭..ইচ্ছা করেই লেট করা নাইলে সাদিফ ভাইয়া আমাকে নাস্তার টেবিলে ইনসাল্ট করবেন আর পরোটা গিলাবেন!!… এরপর ব্যাগটা নিয়ে আস্তে ধীরে বের হয়ে ডাইনিং এর দিকে আগাতে লাগলাম কচ্ছপের গতিতে..
*
*
সাদিফ ভাইয়া গাড়ি চালাচ্ছে আর আমি উনার পাশে বসে আছি গাল ফুলিয়ে…কঠোর মনের মানুষটা আমাকে একটা সম্পূর্ণ পরোটা খাইয়ে তারপরই টেবিল থেকে উঠতে দিলেন..আমিও কম না চেয়ার থেকে উঠার সময় উনার পায়ে একটা জোরে পারা দিলাম!! বাট হি ডিডনট রিএক্ট!! উল্টো উনি মা কে হেসে বললেন..
“ছোট খালা আজকাল দেখি পিঁপড়াও হাতির সাথে লাগতে আসে”..!!
এই কথাটা শুনে একদম মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো….
“লাল টমেটো..তুই ক’টা প্রেম করিস রে!!?”..উনার কথা শুনে মেজাজ একদম বিগড়ে গেলো..একে তো সকালের কাহিনী আবার এখন এই আজব প্রশ্ন..!!আসেলেই উনি একটা গন্ডার…!
উত্তরে বললাম….
“এইতো টাইম পাস দুইজনের সাথে করি..এমনি ফোনে কথা বলে চারজনের সাথে লাইন করি আর রিয়েল লাভ টার জন্যে ওয়েটিং লিস্টে পাঁচজন রেখেছি ….!! স্পিডে এই কথা গুলা বলে দম ফেলার আগেই সাদিফ ভাইয়া অনেক জোরেই ব্রেক করলেন আর আমার মুখটা শক্ত করে চেপে ধরে বললেন.. “এত চালাকি করার চেষ্টাও করবি না.. গলা টিপে মেরে ফেলবো একেবারে বেয়াদব”
আমার মনে হচ্ছিলো দাঁত গুলা সব ভেঙে যাচ্ছে… রাগে ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি পরতেই আছে..এত নির্দয় এই লোকটা!!
*
*
“নাম.. গাড়ি থেকে”!! উনার চিল্লানিতে আত্মা কেঁপে উঠলো..কোথায় আছি না আছি দেখলাম না নেমে পড়লাম গাড়ি থেকে নেমে দেখি কলেজেরই সামনে..!
আর পিছে ফিরে তাকালাম না হেঁটে চলে যাচ্ছিলাম.. কিন্তু পিছন থেকে আবির আমার ক্লাসমেট, ও ডাক দিলো..আমি ওর সাথে কথা বলতে বলতে কলেজের ভিতর চলে গেলাম…
*
*
🌸
আর এদিকে শেফালীকে অন্য ছেলের সাথে দেখে সাদিফের মাথায় হাই পাওয়ারে রাগ উঠে গেলো……
“এত সাহস তোমার শেফা!!..আমার সামনে অন্য ছেলের সাথে কথা বলার শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে!!”..কথাগুলা নিজে নিজে বলে জেল দিয়ে সেট করা চুলগুলো ঠিক করে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে অফিসে চলে গেলো….!!
*
সারাদিন ক্লাসে একটুও ভালো লাগলো না শেফালীর..এত অপমান এই লোকটা কেন করে আমাকে!!!আর কলেজ টা থেকে একা একা ছুটির আগে বেরও হওয়া যায় না!!!কিন্তু আজকে লাস্ট ক্লাসটা হবে না ভেবেই আনন্দে মন নেচে উঠলো…যাক আজকে ঐ মি. সাদিফ এর সাথে যেতে হবে না..মা কে বলবো কলেজ শেষ হয়ে গিয়েছিলো আর্লি.. তাছাড়া আজকে সারাদিনই ফোন অফ রেখেছিলাম রাগে সো মা কে আলাদা মাসআলা এড করে বলবো মোবাইল এ চার্জ ছিল না.. তাই সাদিফ ভাইয়াকে আর কল ও দিতে পারি নাই।।!!নিজের কাধে নিজেই চাপড় দিয়ে বললাম..” ইউ আর সো ট্যালেন্টেড শেফা”… যেই ভাবা সেই কাজ..একা একা হাঁটতে লাগলাম..কারণ এদিকে রিক্সা পাওয়া যায় না আর আমার বান্ধবীদের সবার বাসা অন্য দিকে..
” ধুর আজকে কি সব রিক্সাওয়ালা ভাই কি সব শ্বশুর বাড়িতে নাকি”….
হাঁটতে লাগলাম হঠাৎ সামনে খেয়াল করলাম… কলেজের ফেমাস গুন্ডা ইমরান আর উনার চেলারা.!!!!..অজানা ভয়ে বুকটা ধুক ধুক করে উঠলো… এদেরকেই ত সাদিফ ভাইয়া একদিন অনেক মেরেছিলো আমার সাথে মিসবিহেভ করায়….!!!!
যাক বাবা অনেক নায়িকা সেজেছি কিন্তু আর না..উল্টো দিকে হাঁটতে লাগলাম.!!.হঠাৎ করে পিছনে ব্যাগে টান অনুভব করলাম.!!.ফিরে দেখি ঐ গুন্ডা ইমরান আমার ব্যাগ ধরে আছে আর আমার দিকে কেমন লোভাকাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে….!!!!
“কি শেফালী নায়িকা আজকে তোমার প্রেমিক পুরুষ কই!!??.. নিতে আসলো না!!? ঐ দিন তো অনেক বড় বড় কথা বলেছিলো..তোমার দিকে তাকালে নাকি আমাকে এই দুনিয়ায় রাখবে না.. আজ যে আমি তোমার সব দিকটাই দেখবো..তখন সে আমাকে কি করবে”!!??এসব বিশ্রী কথা বলেই বাজে ভাবে হাসতে লাগলো শয়তানটা…এদিকে আশে-পাশের সবাই আমাদেরকে দেখে মজা নিতে লাগলো কেউ সাহায্য করবে তো দূরের কথা… এই গুন্ডা কে সবাই ভয় পাই….!!
আমার তো ভয়ে জান যায় যায় অবস্থা তাও সাহস এনে বললাম ..”প্লিজ ভাইয়া…এসব কি ধরনের কথা!?..আমার পথ ছাড়ুন..
কি করছেন কি!! হাত ছাড়ুন আমার… প্লিজ.. হাত ছাড়ুন..!!”ব্যাথায় আমার প্রাণপাখি উড়ে যাচ্ছে..”কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে??.. ছাড়েন..!!
🌸
হঠাৎ খেয়াল করলাম আমাকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছেন ঐদিকে একটা কার জোরে থেমে গেলো.. কার দেখে চিনতে কষ্ট হলো না কার গাড়ি এটা….কান্না করা অবস্থায়ও মুখে শান্তির হাসি ফুটলো আমার……
সাদিফ ভাইয়া কে গাড়ি থেকে নামতে দেখে ইমরান তাড়াতাড়ি শেফালীর হাত টা ছেড়ে দেয়..আর সাদিফ কে দেখেই ইমরানের চেলারা ভৌঁ দৌড় দিলো…
সাদিফ এসে শেফালীর দিকে একবার তাকালো তারপর তার বাম হাতের দিকে যে হাতটা ইমরান ধরে রেখেছিলো…শেফালীর ফর্সা হাতটাতে লাল রক্ত জমাট বেঁধেছে যা একদম স্পষ্ট…শেফালীর বাম হাতের তালুতে সাদিফের হাতটা হালকা ভাবে প্রবেশ করালো… সাদিফের ছোয়া পেয়ে শেফালী উপরে তাকিয়ে দেখলো সাদিফের চোখ ভয়ংকর লাল।।।!!কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই সাদিফ সজোরে একটা লাথি মেরে দিল ইমরান কে..লাথি একদম পেট বরাবর লাগায় এক লাথিতেই ইমরান মাটিতে লুটিয়ে পড়লো…আর শুরু হলো সাদিফের মাইর..শেফালীর হাত ধরে রেখে অনবরত লাথি দিচ্ছে ইমরানকে আর বলতে লাগলো…”তোকে আমি সাবধান করি নি??বল…!!শেফার দিকে আর কখনো চোখ তুলে তাকাতে মানা করি নি!!?? বললল …!!!! সাদিফের চিৎকারে শেফালী সাদিফের হাত জড়িয়ে ধরলো দ্রুত আর সাদিফের বাহুতেই মুখ লুকিয়ে কান্না করতে করতে বললো… প্লিজ ছেড়ে দিন উনাকে উনার মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে…শেফালীর এমন অবস্থা দেখে সাদিফ ইমরানকে মাইর দেয়া স্টপ করে ইমরান কে চিল্লিয়ে বললো..”লাস্ট দিন.. আজকেই শেষ দিন তোকে ছেড়ে দিলাম!!..আজকে যদি না থামাতো আমাকে এই মেয়েটা তাহলে আজকেই তোর লাস্ট দিন ছিল এই দুনিয়ায়”…!!
এরপর আমার হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো সাদিফ ভাইয়া…
*
*
🌸
“বেশি চালাক তুই?আজকে যদি এই জানো** বা* তোকে কিছু করতো ভাবতে পারছিস আমার কি হতো!!!??আর কোনো দিন যদি এমন পাকনামি করিস তাহলে তোকেই আমি দুনিয়া থেকে আউট করে দিবো..ভাগ্যিস আজকে খালা ফোন করছিল আগে তোর ফোন অফ থাকায়..!!আর তাই আমি আর্লি রওনা দিলাম…এসে দেখি এই কাহিনী…ইচ্ছা করেই এমন করেছিলি তাই না???আমাকে কষ্ট দিতে..!বদলা নিচ্ছিস সকালের জন্যে!??..আজ আমি টাইম মত না আসলে”…. উনি বাক্যটি শেষ করলেন না…চুপ করে ড্রাইভিং করতে লাগলেন…
চুপ করে উনার কথা শুনতে লাগলাম…আসলেই আমার উচিত হয়নি উনাকে এভাবে কষ্ট দেয়া..উনিও তো কত বিজি মানুষ!!!…আমিও না জোশে হুশ হারিয়ে ভালো করিনি..কিন্তু উনিই তো আমাকে সকালে এত অপমান করলেন… নাহ এবার একটু চোখটা বন্ধ করি অনেক মাথা ব্যথা করছে কান্না করার ফলে…
চুপচাপ সিটে হেলান দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকলাম…হঠাৎ মাথায় উনার স্পর্শে উনার দিকে ফিরলাম…সবুজ চোখটা কেমন লাল হয়ে আছে..সকালের সেট করা চুল গুলাও এখন এলোমেলো…গায়ে খয়েরি রং এর কোটটাও নেই শুধু শার্ট আর ব্লেজার টা….অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম..আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে উনি ড্রাইভ করতেই লাগলেন.. ঐ এক নজর তাকানোটাতে আমি উনার চোখটা ভালোই পর্যবেক্ষণ করতে পারলাম….
এতক্ষণ ট্রাফিক!! একদম বাজে অবস্থা লাগছে আমার.. তাও চুপচাপ বসে রইলাম হেলান দিয়ে চোখ অফ করে..উনার কথায় চোখ খুলে তাকালাম..!!
“পানি খেয়ে নে একটু…আর হিজাবটা খুলে ফেল.. মাথায়ও একটু পানি দে.. ভাল্লাগবে তোর..!!!উনার নরম ভয়েসের কথাগুলা শুনে আমি অবাক!!!না বলার ইচ্ছাও নেই কারণ এই মুহূর্তে আমার মাথায় পানি দেয়া অনেক দরকার…মাথা হাত চোখ প্রচণ্ড ব্যথা..!!!
কি আর করার..উনার কথা মত সব করলাম.!!.আর আমি জন্মগতই রোগা…!!
কিন্তু আমার মাথায় একটা কথা আসছে না।!!! সকালে আর একটু আগে উনি একদম রেগে বোম্ব!!!..আর এখন একদম শীতল লাইক এ কোল্ড ড্রিংক..!!
এত মুড সুইং কেমনে হয় একটা মানুষের..!!! ইয়ে মানে …উনি এমন কেন..!!??
চলবে….♥️
কেমন লেগেছে গল্প আমাকে অবশ্যই জানাবেন কমেন্ট করে…হ্যাপি রিডিং♥️