পূর্ব রোদ !! Part- 15
“গার্ল অর্থ মেয়ে ফ্রেন্ড-বন্ধু তাহলে তো মেয়ে বন্ধুই না?”
“ওহ।”
সুযোগ বুঝে রোদ পূর্বের পায়ে পায়ের চাপা দিয়ে সে স্থান থেকে পালালো।পূর্বের মাথায় রোদের বলা কথাগুলা ঘুরতে থাকলো।
।
।
রোদ নিজের রুমে বারান্দায় দাঁড়িয়ে টবের দিকে তাকিয়ে আছে।দু’মাস আগে রোদ টবে করে “অপরাজিতা” ফুলের গাছ লাগিয়েছে।অপরাজিতা ফুল লতা বেয়ে এদিক-ওদিক ছড়িয়েছে।রোদের যখনই মন খারাপ হয় সে এসে নীল রংয়ের অপরাজিতা দিকে তাকিয়ে থাকে।এটি নীল রংয়ের ফুল বলে একে নীলকন্ঠ নাম দেওয়া হয়।তবে এর রং সাদা বা হালকা গোলাপিও হয়।যখন কোনো নারী’কে অপরাজিতা’ নামে ডাকা হয় তখন সেটা শুনতে ভালো লাগলেও মানতে নয়।মনে প্রশ্ন জাগে তাহলে কর মেয়েরা সবসময় পরাজিত?অপরাজিতা নামটা নারীর সাথে তুলনা করেই রাখা।রোদের এই ফুল গাছটা ভিষন ভালো লাগে।
রোদ মন দিয়ে গাছে ফুটা নীলকন্ঠ’ ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে।তার চোখের সামনে বার বার পূর্বকে নাবিলা’র জড়িয়ে ধরার দৃশ্য ভেসে উঠছিলো।কেনো জানে না রোদের একটুও ভালো লাগছে না।এখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে।বাড়ির নিচ তলায় সবাই আড্ডা দিচ্ছে।রোদ অযুহাত দেখিয়ে রুমে চলে এলো।তখনি বারান্দা থেকে দরজা খুলার আওয়াজ পেলো।রোদ ভাবলো হয়তো পূর্ব এসেছে।কিন্তু তাকে ভূল প্রমানিত করে মেয়েলী কন্ঠ শুনা গেলো।
“কী রে কখন থেকে উপরে এসেছিস?নিচে চল।”
“হু।”
“মন খারাপ তোর?”
“নাহ।”
“পূর্বের সাথে ঝগড়া করেছিস নাকি?”
রাফিয়া’র কথা শুনে রোদ ভাবনায় ডুব দিলো।পূর্বের সাথে লাস্ট ঝগড়া দিছিলো ঘর ঝাড়ু দেওয়া নিয়ে।তিন দিন হয়ে গেলো ঝগড়া দে না।রোদের মনে হলো পূর্ব’কে শিক্ষা দেওয়া দরকার।
“ভালো কথা মনে করে দিলি।চল আজকে হরিচন্দনের ব্যবস্থা করবো।”
“মানে?”
“চল না।”
রোদ রাফিয়া’কে টেলে টুলে নিচে নিয়ে আসলো।নিচে নেমে দেখলো নাবিলা হাসতে হাসতে একবার পূর্বের গায়ের উপর পড়ছে আরেকবার তিহানের গায়ের উপর।কেনো জানে না দৃশ্যটা রোদের ভালো লাগছে না।রোদের দৃষ্টি গেলো তার পাশে থাকা রাফিয়া’র দিকে।রাফিয়া দিব্যি হাসছে দেখে রোদ অবাক হলো।তিহানের সাথে অন্য মেয়েকে দেখলে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।আর আজকে কি’না হাসছে?
“রাফিয়া তুই হাসছিস?”
“হুম।ক্যান?”
“তিহানের সাথে নাবিলা আপু…”
“আমি বুঝছি তুই কী বলতে চাইছিস।তিহানের একজন ভালো বন্ধু নাবিলা আপু।অন্য কেউ হলে এতোক্ষনে মেরে হালুয়া বানাতাম।তবে নাবিলাপু ওদের ফ্রেন্ড আর একজন বন্ধু কোনোদিনও গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ডের মাঝে আসে না।তাই আমার কিছু যায় আসে না।”
“ওহ।”
“আরে তোমরা ওখানে দাঁড়িয়ে কী করছো?এখানে আসো।”
নাবিলা’র ডাক শুনে রোদ একটু অসস্তিতে পরে গেলো।চোখের সামনে আবারো সেই দৃশ্য ফুটে উঠলো।বুক’টা ধক করে উঠলো।কেনো যেনো পূর্বে’র পাশে নাবিলা’কে এক্সপেক্ট করতে পারছে না।তবুও ভদ্রাতা রক্ষার্থে নাবিলা’র ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের পাশে বসলো।রোদ যথা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখছে।
“ইশ!ঝালমুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে।”(নাবিলা)
“ইন্না-লিল্লাহ!এখন ঝালমুড়ি কই পাবো?”
“রাফিয়া,বস আমাকে একটু বলবে এই ইন্না-লিল্লাহ ম্যান’কে কী কারণে ভালোবাসলে?এরকম আকাম মার্কা!”
“হাহাহাহা!’ভালোবাসা’ কে কেমন সেটা কী দেখে আপু?”
“তবুও।একে ইন্না-লিল্লাহ বলাটা বন্ধ করতে বলো।”
“তিহান’কে যখন ওর সব আচরণের সাথে ভালোবেসেছি তাহলে আবার পাল্টাবে কেনো?থাক আমার জন্য ওর কিছু পাল্টাতে হবে না।”
“আরে বাহ!কেয়া লাভ হে!” (নাবিলা)
“পাবলিক প্লেসে ভালোবাসা’র রচনা না দিলে হয়না?”(তিহান)
” কেনো?ভালোবাসি সেটা লুকিয়ে কেনো ভাসবো?”
“আচ্ছা?যাও তাহলে গিয়ে তোমার বাবা-মা আর আমার বাবা-মা’কে বুঝাও।যাও!”
“এই রে অতো টিচার তো আমি নই যে বাবা-মা’র সামনে প্রেমের রচনা বলবো।”
রাফিয়া’র কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।পরক্ষণে আগের কথা মাথায় আসতে রোদ বললো,
“আমি বানিয়ে নিয়ে আসি ঝালমুড়ি?”
“কেউ বানিয়ে আনলে আমি খেতে পারি।”
নাবিলা’র কথায় রোদ মুচকি হেসে রান্না ঘরে গেলো।রান্না ঘরে রোদ পেয়াজ কাটছিলো।আর বিনা বাঁধায় চোখের জল পরছে।অবশ্য পেয়াজ কাটার কারণে জল পরছিলো।তখনি কানে পূর্বের আওয়াজ ভেসে এলো,
“কাঁদছো কেনো?”
“কাঁদছি না কাটছি।আই মিন পেয়াজ কাটছি।চুইংগাম পাইনি ব্যাগে তাই চিবোতে পারছি না।”
কথা শেষ হতেই রোদ নাক টানলো।কাঁদতে কাঁদতে সার্দি টাইপ হয়ে গেছে।পূর্ব ফিক করে হেসে দিলো।এমনিতে রোদ আগে থেকে রেগে ছিলো তারওপর পূর্বের হাসি দেখে প্রচন্ড রেগে গেলো।রেগে গিয়ে বাটিতে থাকা পেয়াজের সাথে মরিচ কুচি পূর্বের মুখে ছুঁড়ে মারলো।সাথে সাথে পূর্ব চোখে মুখে হাত দিয়ে হালকা চিৎকার দিলো।পূর্বের চিৎকার শুনে রোদের বুক কেঁপে উঠলো।বসা থেকে উঠে তাড়াতাড়ি পূর্বের মুখে হাত দিয়ে বললো,
“পূ..পূর্ব সরি সরি।আমি দেখি…”
“আহহ!”
“আ’ম সো স..পূর্ব দেখি।”
রোদের গলা ভেঙ্গে আসছে।রোদ বুঝতে পারলো তার কান্না আসছে।সে বারবার পূর্বের মুখে হাত দিচ্ছে।কিন্তু পূর্ব হাত সরিয়ে দিচ্ছে।রোদ নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরলো।বিনা বাঁধায় তার চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে।রোদ তাড়াতাড়ি পানি এনে পূর্বের চোখে ছিটালো।পানি দেওয়ার পূর্বের চোখের জ্বালা কিছুটা কমলো।একহাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে রোদের দিকে তাকিয়ে রোদ কাঁদছে।রোদের কান্নায় পূর্ব অবাক হলো।পূর্ব কিছু বলার আগে রোদ বলে উঠলো,
“আ’ম সরি পূর্ব।আ’ম র্যলি সরি।আমি রাগের মাথা…”
রোদ নিজের ঠোঁট কামড়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ব্যার্থ হয়ে সে জল ঠিকই গড়িয়ে পড়ছে।পূর্ব সে চোখের জলে হাত দিতে যাবে তখনি রোদ রুমের দিকে দৌড়ে পালালো।পেছন থেকে পূর্ব বুঝলো রোদ নিজের হাতের পিট দিয়ে চোখের জল মুছচে।রোদের এমন ব্যবহারে পূর্ব হতবাক।
রুমে ঢুকেই রোদ দরজা বন্ধ করে দিলো।আজকের অনুভূতি’টা সেদিনের মতো যেদিন পূর্বকে সে ঝাল খাইয়ে ছিলো।বার বার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।মনের ভিতর খচখচ করছে।রোদের ইচ্ছে করছে নিজের গালে চড় দিতে।পূর্বকে অমন অবস্থায় রেখে সে রুমে চলে এসেছে।না জানি অবস্থা।রোদ তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বেরুতে যাবে তখন ফোন বেজে উঠলো।রোদ মোবাইলে তাকিয়ে দেখলো “মেঘ” নামটা ভাসছে।রোদ চোখের জল মুছে কল রিসিভ করলো।
“হ্যালো।”
“হাই রোদ।তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।”
“হুম।বলো”
“কাল ক্লাসে আসছো?”
“হ্যা।কেনো?”
“কাল সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য।”
“সারপ্রাইজ?”
“হুম।কী সারপ্রাইজ তা কিন্তু জিজ্ঞেস করবে না।”
“ওকে।কী কথা বলবে বলছো?”
“থাক!কাল বলবো।”
“ওকে।”
মেঘের কথা শুনে রোদ ভাবতে লাগলো মেঘ কী করবে?কারণ রোদ বেশ ক’দিন খেয়াল করেছে মেঘের আচরণ অন্য।সবকিছু’তে অধিকার দেখায়।রোদের ইচ্ছে করে মেঘকে কিছু কথা শুনিয়ে দিতে কিন্তু বন্ধু মনে করে এড়িয়ে যায়।কল কেটে দিয়ে রোদ রুম থেকে বেরুতে যাবে তখনি মনে হলো তার চোখ ভেজা দেখে সবাই বুঝবে কান্না করেছে।তাই সে ওয়াশরুমে ঢুকলো।
এতক্ষণ ধরে দরজা’র বাইরে দাড়িয়ে পূর্ব রোদের কথা শুনছিলো।রোদের এপাশের কথা শুনে পূর্ব এতোটুকু বুঝলো কাল মেঘ রোদকে সারপ্রাইজ দিবে।এটা ভাবতেই পূর্ব হাত মুষ্টি করে নিলো।ইচ্ছে করছে মেঘের বারোটা বাজাতে।সাথে রোদের ও।রোদের চোখে জল দেখে পূর্ব রুমে আসছিলো কিন্তু এখানে এসে দেখছে দিব্যি মেঘের সাথে কথা বলছে।পূর্ব পাশের দেওয়া ঘুষি দিয়ে নিচে নেমে গেলো।
রোদ নিচে নেমে দেখলো সবাই ঝালমুড়ি খাচ্ছে।কিন্তু সে তো ঝালমুড়ি বানায় নি।তাহলে বানালো কে?রোদ পূর্বের দিকে তাকিয়ে দেখলো বা’পাশের চোখটা লাল হয়ে আছে।রোদ তাদের সামনে না গিয়ে রান্না ঘর থেকে আইস ব্যাগ নিয়ে এলো।রোদ তাকিয়ে দেখলো পূর্বের হাতের বাহু নাবিলা নিজের দুহাতে আবদ্ধ করেছে।রোদ নিজের হাতে থাকা আইস ব্যাগ শক্ত করে ধরলো।এই মুহুর্তে নাবিলা একা থাকলে নিশ্চিত এই আইস ব্যাগ তার মাথায় মারতো।পরক্ষণে পূর্বের চোখের দিকে দৃষ্টি যেতে রাগ কমে এলো।পূর্বের সামনে গিয়ে বললো,
“দেখি।এদিকে ফির চোখে আইস লাগিয়ে দিই।”
“লাগবে না।”
“আমি বুঝবো সেটা।”
“ঠিক আছি আমি।”
“তোর থেকে জিজ্ঞেস করেছি আমি?”
রোদের রাগি কন্ঠ শুনে পূর্ব আরো রেগে গেলো।পূর্ব জেদ ধরেছে কিছুতেই বরফ লাগাতে দিবে না।রোদও জেদ ধরেছে সে লাগাবে।ওদের দু’জনের কথাবার্তা শুনে বাকি তিন মূর্তি অবাক হয়ে এলো।এতোক্ষণে তারা পূর্বের চোখ খেয়াল করে দেখলো হাকলা লাল হয়ে আছে।নাবিলা পূর্বকে ধমক দিয়ে বললো,
“কী করেছিস চোখ এমন কেনো?আইস লাগিয়ে নে।”
“নাবিলা…”
“যা বলছি তা কর।”
“আচ্ছা।রোদ দাও..”
নাবিলা’র এক কথায় পূর্ব রাজী হয়েছে দেখে রোদ রেগে জোরে আইস ব্যাগ চোখে লাগিয়ে দিলো।পূর্ব ব্যাথা পেয়ে “আহহ” শব্দ করলো।মুহুর্তে রোদের হুশ এলো।আস্তেধীরে চোখে ঠান্ডা ভাব দিলো।তখনি রাফিয়া বললো,
“কী করেছিস তোরা রান্না ঘরে?আমি গিয়ে দেখলাম পেয়াজ,মরিচ সব নিয়ে পরে আছে আর বাকি সব রেডি ছিলো তাই নিজে বানিয়ে আনি ঝালমুড়ি।কিন্তু পূর্বের এই অবস্থা কেনো?”
রাফিয়া’র কথা শুনে রোদ-পূর্ব কোনো উত্তর দিলো না।বরং দু’জন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো।দুটো দৃষ্টিতে একই অনুভূতি।বিপরীত জনের জন্য কষ্ট আর রাগ!
[চলবে]