পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 05
______________________
ওয়াসেনাত বইয়ের স্তুপ অরিত্রানের হাতে তুলে দিয়েছে।অরিত্রান ঘোমুট মুখে শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।আর নিজের ধৈর্যের পরীক্ষা নিজেই নিচ্ছে। সব বই নিয়ে ওয়াসেনাত দীর্ঘশ্বাস নিয়ে একটু হাসলো।অরিত্রান ভাবছে মেয়েটা যদি একবার যানতো সে কে তখন ভয়ে আত্না কেঁপে উঠতো।ভাগ্য খুবই ভালো এই মেয়ের।তা না হলে অরিত্রানকে দিয়ে কাজ করানোর শাস্তি শরীর খণ্ডবিখণ্ড করে বুঝিয়ে দিতো।ওয়াসেনাত টাকা জমা দিতে যাবে এমন সময় একটা পিচ্চি মেয়ে তার জামা টেনে ধরে।ওয়াসেনাত ঘাঁড় ঘুড়িয়ে তাকালো।ভ্রুকুচঁকে প্রশ্ন করবো,
—” কি চাই বাবু??”
বাচ্চাটা হাতের বেলী ফুলের মালা দেখিয়ে বললো,
—” নিবেন আপু??”
ওয়াসেনাত তাকিয়ে থাকে।পাঁচ বছরের একটা মেয়ে।কোথায় এখন মায়ের কলে ঘুমানোর কথা।তা না করে এই কড়া রোদে দাঁড়িয়ে মালা বিক্রি করছে।ওয়াসেনাতের চোখেমুখে মায়া ফুটে উঠে।অরিত্রান ভ্রু বাঁকিয়ে কপাল কুঁচকে আছে।একবার বাচ্চা মেয়েটাকে তো একবার ওয়াসেনাতকে দেখছে।সাথে বিরক্ত আর রাগ উপচ পড়ছে।তবে দেখাতে পারছে না।ওয়াসেনাত নিজের বিশাল স্তুপের বই গুলো থেকে কিছু বই খুঁজে খুঁজে বের করলো।অরিত্রান হাঁসফাঁস করছে।তার এখন রাস্তার ওই ময়লা পানির গর্তে সব গুলো বই ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে।ওয়াসেনাত কিছু বই দোকানে ফিরত দিলো।তা থেকে যে টাকা বেচেঁ গেছে সেগুলো পিচ্চি মেয়েটার হাতে দিয়ে সবগুলো মালা নিয়ে নিলো।পিচ্চি বাচ্চাটার সাথে সাথে অরিত্রানও অবাক।পরক্ষনেই ফালতু নাটক বলে সে মুখ ঘুড়িয়ে নিলো।রাগে তার চোখ লাল হয়ে উঠছে।এই মেয়েকে এখানেই পুতে দিতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু সে ঝামেলা চাচ্ছে না।তাই চুপ করে আছে।বাচ্চাটা মুচকি একটা হাসি দিলো।তারপর বললো,
—” সবগুলো তুমি নিবে??”
ওয়াসেনাত একটা মালা হেজাবের উপর বিছিয়ে দিলো।গোল মালা তার হেজাবের উপর সুন্দর করে লেপ্টে গেছে।চকলেট রং এর সাথে সাদা।মনোমুগ্ধকর একটা দৃশ্য।বাচ্চাটার মাথায় হাত বুলিয়ে ওয়াসেনাত বললো,
—” হুম।নিলাম তো।আমার অনেক বন্ধুবান্ধব আছে ওদের দিবো।তুমি সোজা বাড়ি চলে যাও।”
মেয়েটা আবার মিষ্টি করে হাসে।ওয়াসেনাত গাল টেনে দেয় আর মনে মনে ভাবে টাকাও গুনতে পারে না এই মেয়ে ফুল বিক্রি করছে।টাকা গুনতে পারলে আবশ্যই তার বেশি টাকা দেওয়ার ব্যাপারটাও ধরতে পারতো।অরিত্রান বাঁকা চোখে তাকায়।আড়াআড়ি ভাবে ওয়াসেনাতকে দেখে।সূর্যের আলো ঝক করেই এসে চোখে মুখে পড়ছে।আর ওয়াসেনাত হাত দিয়ে আলো প্রতিরোধ করছে।অরিত্রানের প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে।একেই রোদে তার স্কিন প্রবলেম হয় তার উপড় এত বই।অনেকগুলো বছর পড়ে আজ সে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে তাও মাঝ রাস্তায়।এই মেয়েকে তার খুন করতে ইচ্ছে করছে।ওয়াসেনাত অরিত্রানের দিকে মোড় ঘুড়িয়ে তাকালো।মিষ্টি একটা হাসি দিলো।চোখমুখ কুঁচকে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে সে বললো,
—” মালা পড়ায় সুন্দর লাগছে না খুব!! জানি তো।আপনি তো আর মাথা দুলিয়ে হ্যা বুঝাবেন না।তাই আমিই বলে দিলাম।বাই দ্যা ওয়ে মাথা নাড়াবেন না একদম।”
কথাটা বলেই ওয়াসেনাত অরিত্রানের সাদা চশমায় নিজেকে দেখতে শুরু করলো।অরিত্রান না চাইতেও তার চোখ ওয়াসেনাতের নীলাভ চোখে বিচরন করছে।মুগ্ধ করা একজোড় চোখ।কারো চোখ এত সচ্ছ কি করে হতে পারে??সচ্ছ নীল পানির মত চোখ।জ্বলজ্বল করছে।রোদের কিরনে চিকচিক করছে।ওয়াসেনাতের কথায় অরিত্রানের ঘোড় কাঁটলো। সে তো নিজের প্রতিই অবাক।ওয়াসেনাত খুশি হয়ে বললো,
—” বাহ্ দাড়ুন লাগছে তো আমাকে!!আমি কিন্তু এত সুন্দর না।আর নিজের তারিফও নিজে করছিনা।আপনি কথা বলতে পারলে নিশ্চুই এভাবেই বলতেন।তাই আমিই আপনার হয়ে বলে দিলাম।হিহি।”
অরিত্রান মনে মনে বিড়বিড় করে পাগল নাকি?? ওয়াসেনাত আবার নিজের কথার ঝুলি খুলে বসলো।বললো,
—” আপনার এই নুহাশশশশশ নামে আমার বিশাল গাফলা মনে হয় বুঝলেন??”
অরিত্রান চমকে তাকালো।সাথে বিরক্ত।এমন টেনে নামটা বলে মনে হয় কানের মাঝে ঝনঝন করে বাজে।জাস্ট বিরক্ত কর।পরক্ষনেই ভাবে মেয়েটা কি তাকে চিনতে পেরেছে??কথাটা ভাবতে ভাবতেই নিচের দিকে চোখ রাখলো।ওয়াসেনাত সামনে হাটতে হাটতে বললো,
—” নুহাশশশ নামটা প্রাণবন্ত নাম।আপনি তো নির্জীব টাইপের লোক।তাই এই নামটা আপনার সাথে মানায় না।আকড়ু টাইপের করে সব সময় এমন মুখের হাসিতে তালা বদ্ধ করে রাখেন কেনো বলেন তো??মাঝে মাঝে হাসবেন।হাসির চাইতে বিকল্প ভালো থাকা আর কিছু নেই।”
অরিত্রান কথা গুলো মনযোগ সহকারে শুনলেও কানে নিলো না।কিছুদূর আসতেই ওয়াসেনাত বললো,
—” চলে এসেছি।দাড়ান আমি নি।”
ওয়াসেনাত বই গুলো নিতে গিয়েই অরিত্রানের হাতের উপড় হাত পড়ে।অরিত্রানের হাতে পাতা নড়ে উঠে।ওয়াসেনাত বই গুলো টেনে নিয়ে একটা বই বের করে।অরিত্রানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
—” নেন।এটা আপনার জন্য।পড়ে আবার ফিরিয়ে দিয়েন।বইটা আমি এখনো পড়ি নি।বাবলি নাম।সুন্দর হবে মনে হয়।আসি।”
অরিত্রান বইটা হাতে নিতে চাইলো না।তবুও ওয়াসেনাত জোর করে হাতের ভাজে দিলো।অরিত্রান বই হাতে হা করে তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাত মালা গুলো ঠিক করে নিতে নিতেই হলের গেটের ভিতরে ডুকে গেলো।আবার গেট থেকে অর্ধেক দেহ আর মাথা বের করে পিছনে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো।হাত নাচিয়ে বললো,
—” থ্যাংকু।”
অরিত্রানে কিছুসময় ঝুম ধরে দাড়িয়ে থাকে।তারপর হাতের বইটি নাড়াচাড়া করে দেখে।কি মনে করে গাড়ির ভিতরে ছুঁড়ে দেয়।রাগে শরীর কাপঁছে তার।এইটুকু বাচ্চা একটা মেয়ে অরিত্রানকে পিএর মত খাটালো।হোয়াট দ্যা হেল??অরিত্রান চেঁচিয়ে নিজের গাড়িতে একটা জোড়ে লাথি মারে।গাড়িটা মুহূর্তেই কেঁপে উঠে।আজ অরিত্রানের রাগ তুঙ্গে আছে।
_________________________
অরহাম অরিত্রানের সাথে দেখা করতে তার হোটেল রুমে এসেছে।কিন্তু এসেই এমন কিছু দেখবে ভাবতে পারেনি।অরিত্রান নিজের বডি গার্ডসদের মেরে নিচে ফেলে রেখেছে।রিমন পাশেই কাপঁছে। তার কাপাঁ কাপিঁ দেখেই তিনি বিস্তারিত বুঝে গেছে।অরিত্রান রেগে আছে।আর তার কারন যে ওই বাচ্চা মেয়েটা তাও তিনি বুঝে গেছে।এই ছেলের গতি হবে না কখনোই।কথাটা নিজের মনে কয়েকবার আওড়ায়।ধীর পায়ে রিমনের পাশে দাড়িয়ে পরে তিনি।ফিসফিসে রিমনের কানের কাছে বললো,
—” কি হয়েছে রিমন??”
রিমন একটু পিছনে ঝুঁকে আড়চোখে অরিত্রানকে দেখে নিয়ে আবার সোজা হয়ে বললো,
—” কোন মেয়ের উপড় জানি রেগে আছে??কিছু বলছে না।মেয়েটা মনে হয় এমন কিছু করেছে যা তার পছন্দের বাহিরে তাই এমন করছে।জানোইত অরিত্রানের রাগ কেমন??”
অরিত্রান খুবই শান্ত হয়ে বসে আছে।তাকে দেখে কেউ বুঝবেইনা যে কিছুক্ষণ আগে সে নিজেই এদের মেরে ফ্লোরে ফেলে দিয়েছে।সে এখন সোফায় দু হাত মেলে বসে আছে।সামনে ল্যাপটপ। তার স্কিনে চোখ বুলিয়ে চলেছে সে।হাতে wine এর গ্লাস ।কিছুক্ষণ পরে নিজেই বললো,
—” দাদাজান বসে পরো।”
অরহাম নিজেও ভীতূ হয়ে আছে।এই অরিত্রান রাগলেও বুঝা যায় না খুশি হলেও বুঝা যায় না।এমনকি মারার সময়ও তার চেহারার পরিবর্তন হয় না বিন্দু পরিমান। তাই বুঝাই যায় না সে আসলে কোন মুডে আছে।অরিত্রান গ্লাসে চুমুক দিয়ে পা নাচিয়ে বললো,
—” তা তুমি এখানে কেনো??”
অরহাম জবাব দিলো না।তাকিয়ে আছে অরিত্রানের দিকে।অরিত্রান গ্লাস পাশে রাখে।কাঁচের টেবিলের সাথে গ্লাসের ঘর্ষনেও শব্দ হয়।সেই হালকা শব্দেও উপস্থিত সবাই কেঁপে উঠে।ল্যাপটপে একটা ইমেইল পাঠিয়ে সে অরহামের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
—” কিছু একটা প্রশ্ন করেছিলাম মনে হয়??”
অরহাম হুরমুড়িয়ে বললো,
—” এএএমনেই দেখা করতে এসেছি।তোমার সাথে দেখা করতে আমার কোনো কারন লাগে বলে মনে হয় না।”
অরিত্রান একটু পিছনে ঝুঁকে। দাদার দিকে ক্ষিণ চোখে তাকিয়ে বললো,
—” তা লাগে না।আফটার অল ইউ আর মাই গ্রেনফ্যাদার।দাদা হও বলে কথা।তা কি নিবে বলো, wine চলবে??”
অরহাম একটু সহজ হলো। অরিত্রানের মেজাজ ভালো।তাই তিনিও খুশ মেজাজে বললো,
—” অবশ্যই। ”
অরিত্রান দাদার হাতে এক গ্লাস ধরিয়ে দিলো।অনেক্ষন দু’জনেই চুপ থাকলো।অরহাম ভণিতা না করে বললো,
—” মেয়েটা বাচ্চা।তোমাকে চিনি না।তাই ওভাবে ব্যবহার করেছে।আর তুমি কেনো ভার্সিটিতে গিয়েছ আমি তা জানি না।কিন্তু মেয়েটা ভালো একটা মেয়ে।তোমার সাথে সে কিছুতেই যায় না।তাই নিজের সাথে ওকে জড়াবে না।তোমার ক্রদের ঝাঁঝ যাতে ওকে না ফোয়াতে হয়।আশা করি ইউ হ্যাভ টু আন্ডাস্ট্রেন্ড।”
কথাটা বলেই তিনি উঠে গেলেন।ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে চান না তিনি।কিছু তেই না।অরিত্রান কিছুই বললো না।সেও গ্লাস রেখে দিলো।
_________________________
ওয়াসেনাত জানালার পাশে হেলান দিয়ে বসে আছে।দক্ষিণের দিকের জানালা এটা।বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে ঝুম ধরে।থেকে থেকে বজ্রপাত হচ্ছে আকাশে।নীল বিশাল রেখা চমৎকার করে আকাশে ফুঁটে উঠছে।দারুন সে দৃশ্য। কালো আকাশ মুহূর্তেই ফর্সা পরিষ্কার হয়ে উঠছে।ওয়াসেনাতের হাতে একটা বই।প্রেমিক উপন্যাসের বই।তার পড়তে ভালো লাগে।রোম্যান্টিক ওয়েদার সাথে রোম্যান্টিক উপন্যাস।মনে মনে এক কাপ গরম কফি আবেদন করছে।কিন্তু যে দেওয়ার সে কই??ওয়াসেনাত জানালার দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালো।রিমি অলরেডি দু’টো মগ হাতে দাড়িয়ে আছে।ওয়াসেনাত তাকাতেই মিষ্টি করে হালকা মোটা ঠোঁট জোড়া প্রশারিত করে হেসে উঠে।ওয়াসেনাতও হাসে।হেসে বললো,
—” তুই কি ভাবে বুঝলি কফির দরকার??”
রিমি ওয়াসেনাতের পাশে বসে ভাব নিয়ে বললো,
—” সবজান্তা রিমি বলে কথা।”
দুজনেই হাসে।জানালা ভেদ করে বৃষ্টির ফোঁটা দু’জনেরই গায়ে মুখে এসে আছঁড়ে পড়ছে।ওয়াসেনাত নিজের কালো প্লাজুর নিচটা একটু উঁচিয়ে পা বৃষ্টি পানিতে মেলে দেয়।যাতে জানালা ভেধ করে আশা বৃষ্টি তার পায়ে পরে।ওয়াসেনাত মগে চুমুক দেয় আর ভাবে।সেই সবুজ চোখের ব্যক্তির কথা।কে ছিলো সে??কোথায় তার গন্তব্য?? কেনো বাঁচিয়ে ছিলো তাকে??কোথাইবা আবার চলে গেলো??নানা চিন্তায় তার মাথা নড়ে উঠে।তার যে একবার বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে সেই সবুজ চোখের অধীকারি লোককে।ওয়াসেনাতকে অন্যমনস্ক দেখে রিমি হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো,
—” কিরে কার কথা ভাবস??”
ওয়াসেনাত আনমনে বললো,
—” সবুজ চোখের সেই লোকটার কথা।কই গেলো বলতো??”
—” আমি কিভাবে বলবো??তুই জানছ আর আল্লাহ জানে।ভুতটুতও হতে পারে বুঝলি!!সবুজ চোখ ভূতেদেরও হয়।”
ওয়াসেনাত বিরক্তি নিয়ে বললো,
—” ধ্যৎ।ভূত বুঝি আমাকে বাঁচাবে?? ঠেকা পড়লো নাকি??”
—” তা পড়ে নাই।তবে মানুষ বলে তো মনে হয় না।বিলুপ্ত প্রানী না হলে কি বাঁচিয়ে ক্রেডিট না নিয়ে চলে যাবে বল??মানুষ হলে পাক্কা ক্রেডিট নিতে চলে আসতো।”
ওয়াসেনাত জবাব দিলো না।দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে তাকালো।কত সুন্দর বৃষ্টি। ইশশশ্ একটু ভিজাতে পারলে ভালো হতো।কিন্তু তা পড়বে না ভেবে খারাপ লাগছে ওয়াসেনাতের।তাদের এই রুমটাতে চারজন থাকার কথা।কিন্তু রিমির বাবা আর তার বাবা কথা বলে দুজন বাদে কাউকে এলাউ করলো না।তাই তারাই এই রুমে থাকে।একা।ওয়াসেনাত আবার নুহাশের কথা ভেবেও কিছুসময় অবাক হয়ে বসে ছিলো।একটা লোক এতটা নিশ্চুপ প্রাণহীন হয়ে কিভাবে থাকতে পারে।এতটা চুপচাপ।যেনো নিঃশ্বাসেরও শব্দ নাই।কিন্তু কিভাবে এটা সম্ভব।হাউ??”
_________________________
ব্যালকুনির রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে অরিত্রান।রেলিং এর উপড় তার দু’হাত।মাথায় কি চলছে বলা যাচ্ছে না।কালো টিশার্টের হাতাটা তার বাহুর সাথে লেপ্টে লেগে আছে।বাহিরের বৃষ্টিতে তার শরীর ভিজে যাচ্ছে। সে নড়ছে না।একদৃষ্টিতে বৃষ্টির ফোঁটা দেখছে।মনে হচ্ছে সে গণনা করছে ফোঁটা গুলো।রিমন ভীতূ হয়ে পাশে দাড়ায়।বন্ধু হলেও সে অরিত্রানকে জমের মত ভয় পায়।এত হিংস্র কেনো ছেলেটা তা রিমনের মাথায় আসে না।ভার্সিটি লাইফেও এতটা হিংস্র, রাগী ছিলো না।তবে চুপচাপ থাকার স্বাভাব বহু দিনের।রিমনের পায়ের শব্দে অরিত্রান বললো,
—” ছোঁয়া কি হৃৎপিন্ড কাঁপানোর শক্তি রাখে??”
রিমিন হতবাক। এমন একটা আজব প্রশ্ন সে মোটেও আশাবাদী নয় তাও অরিত্রান থেকে তো জীবনেও না।এটা কেমন প্রশ্ন।এই প্রশ্ন করছেটা কে??অরিত্রান??আর হৃৎপিন্ড??ছোঁয়া?কি সব বলছে সব গুলিয়ে যাচ্ছে তার।সে কিছু বলতে পারছে না।অনেক ভেবে বললো,
—” ভাই ডিকশনারিতে থাকতে পারে।একটু খুঁজে দেখি দাড়া।”
অরিত্রান সামনে থেকে চোখ সরিয়ে রিমনের দিকে তাকালো।দৃষ্টিতে ঠান্ডা ভাব।রিমনের মনে হচ্ছে সে আবার কিছু ভুল বলেছে।কিন্তু কি??ডিকশনারিতে তো সব অর্থই পাওয়া যায়।এটার অর্থও থাকবে।ওও পরক্ষনেই তার মাথায় এলো এটা তো ওয়ার্ড না।তাই চেঁচিয়ে বললো,
—” সরি দোস্ত সরি।গুগলে সার্চ দিয়ে বলছি দাড়া।গুগলমামার কাছে সব প্রশ্নের উত্তর আছে।তোর টাও থাকবে নো চিন্তা দোস্ত।আমি আসি।এই গেলাম এই আবার টুপ করে চলে এলাম।দাড়াও।”
কথাটা বলেই রিমন দেয় এক দৌড়।ভয়ে তার বুক কাঁপে ধুরু ধুরু করে।সিংহের সামনেও নিজেকে তার সেফ মনে হয়। অরিত্রান খানের চাইতে সিংহ ভালো।
অরিত্রান গভীর ভাবে বৃষ্টি দেখছে।ভালো লাগা বলতে তার জীবনে কিছু নাই।সে সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌছাতে চায়।সে শুধু উচ্চস্তরে যেতে চায়।যেখানে পৌছালে তার সমকামী কেউ থাকবে না।দুনিয়ার সব অধিপত্য সে নিজের করে পেতে চায়।উপরওয়ালাও তাকে বেশ সাহাস্য করছে।এটার জন্য মাঝে মাঝে সে খুবই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তার প্রতি।চোর হলেও ইমান্দার আছে ঠিক এই কথাটার মত। সেই গন্তব্যে যাওয়ার পথে যে যে বাধা হয়ে দাঁড়াবে সবাইকে সরিয়ে দিবে সে।তার হৃদয়ের প্রতিটি খাঁজ পাথরের তৈরি।দয়ামায়া নেই।সত্যিই নেই।কারো প্রতি দয়ামায়া কাজ করে না তার।আর করবেও না।অরিত্রান ঠোঁট কামড়ে বৃষ্টির দিকে চোখ রাখে।ঘন বর্ষন হচ্ছে।
__________________________
অপেক্ষাটা কষ্টের,বেদনার,আকুতি ভরা,তবে মিষ্টি মধুর।আমি অপেক্ষায় আছি সবুজ চোখের হৃদয়বান মানবী আপনার জন্য।হয় তো আমাদের দেখা হবে।হুম হবে যদি উপরওয়ালা চান।আবশ্যই হবে।কোনো বর্ষার ধাড়ালো স্রোতের বাঁধভাঙা বর্ষনে।হয় তো বা গ্রীষ্মের পরন্তু বিকেলে।নয় তো বা কনকনে শীতের বাতাসে ডাকা কোনো শহরের গলীতে।হতেও পারে বসন্তের কোনো ফুলের পরকে।তবে দেখা হবে।আমি অপেক্ষায় আছি সবুজ চোখের হৃদয়বান মানবী আপনার জন্য।এই নীল চোখ আপনার দেখা পেতে আকুল হয়ে আছে।
কথাগুলো নিজের মনে বিড়বিড় করে বলে ওয়াসেনাত হাসে।চোখ আবার বৃষ্টির দিকে।একটি শহরের দু’প্রান্তে দুটি মানুষের হৃদয় কথা বলছে।তবে ভিন্ন তাদের চেওয়া,আকাঙ্ক্ষা, অনুভুতি।এত ভিন্নতার মাঝে এক হওয়া কি যায়??
.
.
#চলবে___________________