নিয়তির সংসার !! Part- 04
-গুড।দিপীকার মতোন হতে চাও? দাড়াও তোমাকে একটা চার্ট তৈরি করে দিই।সেই চার্ট অনুযায়ী খাওয়া দাওয়া করবা।তুমি তো বাচ্চা মেয়ে সকালে শুধু চিপস খাবা। দুপুরে পাউরুটি। আর রাতে একটা আইসক্রিম। ঠিক আছে? একদম দিপীকা হয়ে যাবা।আর শোনো আমি যে এই চার্টটা করে দিয়েছি তোমাকে সেটা কাউকে বলবে না।তোমার বাবাকেও না।
মেয়েটা আহ্লাদী স্বরে বলল,
-এই শীতে আইসক্রিম? বাবাই খেতে দেবে না।
-আরে দেবে দেবে।তোমার বাবাই তো তোমাকে খুব ভালোবাসে।কতো মিস্টি একটা মেয়ে তুমি। যদি না দেয় বুঝবা তোমাকে বাবাই ভালোই বাসে না।আর ঠান্ডা লাগবে বোঝাতে আসলে ঘাঢ়ে উঠে বাইনা করবা।কেমন?
-আচ্ছা।
মেয়েটা কথা মতোন দুপুরে একটা পাউরুটি খেলো।রাতে বাইনা ধরলো উনার কাছে আইসক্রিম খাবে।প্রথমে মেয়েটাকে বোঝানোর চেস্টা করলেন উনি।তারপর যখন কিছুতেই বোঝাতে পারলেন না।তখন কুয়াশা ঘেরা রাতে ছুটলো মেয়েকে নিয়ে আইসক্রিম আনতে।ঘন্টা দুই পরে ফিরলেন উনি।মেয়েটার পায়ে আর উনার হাতে ব্যন্ডেজ করা মনে হচ্ছে। উনার এক হাতে আইসক্রিম আর অন্য হাতে ব্যান্ডেজ।বাড়ির সকলে মিলে ঘিরে ধরলেন দুজনকে।ওদের কাছে যাওয়ার কোনো উপায় নেই আমার। তবুও ভির ঠেলে সামনে আসলে মেয়েটা আইসক্রিমটা আমার হাতে তুলে দিলো আর বলল,
-হতে চাই না আমি দিপীকা।এই আইসক্রিম খাওয়ার জন্যই আজ এমন হলো।এতো বাইনা করলাম যে বন্ধ দোকান খোলাতে আমার বাবাই দোকানির বাড়িতে গিয়ে জাগিয়ে এনে আইসক্রিম কিনালো।তারপর রাস্তায় ওই পঁচা আঙ্কেলগুলো আমার বাবাইকে ভয় দেখালো।আমার মাম্মামের দেওয়া লকেটটা নিয়ে গেলো।
-তুলি কি বলছো এসব?
হ্যাঁ নতুন মা।এই আইসক্রিমটার জন্যই হয়েছে সব।আর খেতে চাইবো না আমি আইসক্রিম কখনো।এটার জন্যই এমন হয়েছে।পঁচা আঙ্কেলগুলো চাকু দিয়ে বাবাইয়ের হাতে আর আমার পায়ে আচড় দিয়েছে।আমার জন্মদিনে মাম্মামের দেওয়া লকেটটাও নিয়ে গিয়েছে।
আমি কিছু বলবো।উনি আমাকে কিচ্ছু বলতে দিলেন না।উঠে এসে হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসলেন।আমার লাগেজটা উঠিয়ে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
-এই মুহূর্তে বেড়িয়ে যাবেন আমার বাড়ি থেকে। আমার মেয়েটার জন্য আপনাকে আমি বিয়ে করেছিলাম।আর আপনি আমার মেয়ের সাথে এমনটা করতে পারলেন? দিপীকা বানাতে চান তাই না? আপনি কখনোই মা হতে পারবেন না।এখনই আপনার বাবার বাড়িতে রেখে আসবো আপনাকে।আসুন।
আমার হাত ধরে টেনে গাড়িতে নিয়ে বসালেন উনি।ড্রাইভ করতে করতে রাগি দৃস্টিতে বাঁকা তাকাচ্ছেন।আর আমি শক্ত গলায় বলে উঠলাম,
-ডিভোর্স পেপারটা পাঠিয়ে দিয়েন।
আমার কথাটা শুনে উনি গাড়িটা থামিয়ে দিলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার ড্রাইভে মনোযোগ দিলেন।গাড়িটা আমার বাড়ির সামনে দাড় করিয়ে নেমে ঘুরে এসে আমার হাত ধরে টেনে গাড়ি থেকে নামালেন।
মেন ডোরের দরজাটা খোলা ছিলো।ভেতরের সবগুলো লাইট বন্ধ। বাবার রুমে এসে দাড়ালে খেয়াল করলাম বাবা ঘুম।আমাকে দূরে রেখে উনি বাবার কাছে গেলেন।বাবাকে ডাকলেন বাবা উঠলো না।মাথার কাছে একটা চিঠি লেখা দেখতে পেয়ে উঠালেন উনি।আমার সামনে এসে চিঠিটা পড়তে শুরু করলেন,
-আদিবা মা।আমি জানি যতোদিন আমি বেঁচে থাকবো তুই তোর বিবাহিত জীবনে সুখি হতে পারবি না।তোকে আমি চিনি।কিছু একটা করে চলে আসবি আমার কাছে।তাই আমি চলে যাচ্ছি।তুই তোর স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে থাকিস।
চিঠিটা পড়া শেষ করে ভালো থাকো আদিবা কথাটা বলে হুড়মুড় করে চলে গেলেন উনি।রাত এখন দেড়টার কাছাকাছি সময়।বাবা নেই এটা যেন আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।তাকিয়ে দেখতে পেলাম বাবার হাতের মুঠোয় ঘুমের ওষুধের শিশিটা।একদম স্তব্ধ হয়ে রইলাম আমি।যেন আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। আবার ভয়ও করছে। কারণ এই মুহূর্তে আমার সামনে বাবার লাশ।এতো রাতে আমি কি করবো? কাকে ডাকবো? কখনো তো কারও সাথে মিশি নি। কোনো প্রতিবেশীদের সাথেও তেমন কথা বলি নি।কোথায় যাবো কি করবো এসব ভাবতে ভাবতেই বাবার দিকে অগ্রসর হলাম।
বাবার কাছে এসে বসে হাত থেকে ঘুমের ওষুধের শিশি ছাড়াতে চাইলাম।বাবার হাতে আমার হাতের ছোঁয়া পরতেই দেখতে পেলাম বাবা ঘুরে তাকিয়েছে আমার দিকে। আমি এক চিৎকার দিয়ে উঠে দাঁড়াতে কারও সাথে ধাক্কা খেলাম। পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম উনি দাড়িয়ে আছেন। আর বাবা উঠে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি চিৎকার জুড়ে খিচে চোখ বন্ধ করে বললাম,
-ভুত ভুত ভুত।
উনি আমার মুখটা টিপে ধরলেন।আমি থামলে বাবা আর উনি হাসতে শুরু করে দিলেন।বাবা হাসতে হাসতে বিছানা ছেড়ে উঠে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বললেন,
-কি কেমন লাগে?
আমি প্রশ্ন সূচক দৃস্টিতে তাকালাম।বাবা আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,
-আমি না থাকলে কেমন লাগবে তোর সেটা বোঝালাম।বিয়েটা ভাঙার জন্য একটা ছোট্ট মেয়েকে কস্ট দিলি তুই? সারাটাদিন মেয়েটা ক্ষুধা লাগলেও খাই নি।কেন জানিস? তুই খুশি হবি তারজন্য। তোর খুশির জন্য তোর একটু মন পাবার জন্য এমন করেছে মেয়েটা তোর কথা রাখতে।বাচ্চারা ফেরেস্তার মতো হয় মা।ওদেরকে কস্ট দিতে নেই।একটু মা হবার চেষ্টা করিস।
-তার মানে সবটা তোমাদের সাজানো নাটক ছিলো?
পাশ থেকে উনি বললেন,
-হ্যাঁ নাটক।বিয়েটা কি খেলা পেয়েছেন আপনি? ইচ্ছা হলে বিয়ে করলেন আর দুদিন পরে ডিভোর্স দিয়ে দিলেন।আমি আপনার মতোন নই।তাই এটা আমার সাথে যায় না।আমার মেয়ে আপনাকে মা হিসেবে চেয়েছে আর যেহেতু আমাদের বিয়েটা হয়েছে সেহেতু আপনি ওর মা।এটা আপনি যতোদ্রুত সম্ভব মেনে নিতে শিঁখুন।আপনার কাছে আমি গেঁয়ো, খেত যেমনই হই না কেন আমি আপনার স্বামী।
চলবে,,,,,,