ধ্রুবতারা !! Part- 06
আমিঃ আমি পড়তে বসবো। তোকে এখন একা থাকতে হবে।
মোবাইল ঃ না এটা হতে পারে না তুমি আমায় একা ফেলে যেতে পারো না।
আমিঃ আমাকে যেতেই হবে।
মোবাইলঃ নাহহহ এই জীবন আমি আর রাখবো না।
এই বলে মোবাইল আমার হাত থেকে নিজেকে ছুটিয়ে সোফা থেকে ঝাপ দিলো। 🌋🌋🌋।
আমিঃনাহহহহহহ।
ডাক্তার বললো আমার মোবাইলের হাড্ডি ভেঙে গেছে । তাই কয়দিন রেস্টে থাকতে হবে।
আর এজন্য আমি মোবাইল ইউজ করতে পারি নাই আর গল্প দিতে পারি নাই।😢😢😢😢)
.
.
.
.
তারা বাথরুম থেকে বের হয়েই দেখলো ধ্রুব এখনো খাটে বসে আছে।তারা দীর্ঘ একটা শ্বাস নিলো।
তারা ধ্রুবর কাছে গেলো। তারাকে দেখে ধ্রুব বললো- কিছু কি বলবে??
তারা ঃ এই ব্যাটা কি করে বুঝলো?(মনে মনে)
আসলে আমি গোসল করবো।
ধ্রুবঃ হুমম করো। বাথরুমে সব তো আছে। নাকি বাথরুমে ভয় লাগছে। যদি বলো তাহলে আমিও তোমার সাথে যেতে পারি। দুজন একসাথে….. 😝😝😝😝
তারা ঃ হয়সে হয়সে চুপ করেন ( খোদা কি ডেঞ্জারাস মানুষ। আসলেই লুইচ্চা। ) (মনে মনে)
আপনার মাথায় এসব ফালতু কথা কোথা থেকে আসে?
আমি গোসল করবো কিন্তু আমার কোনো ড্রেস এখানে নাই আর এখন যেটা পড়ে আছি এটা তো আপনার শার্ট আর প্যান্ট। এটা পড়ে তো আর নিচে নামতে পারবো না?আর আমি বাড়ি থেকেও কোনো জামা কাপড় কিছু আনার সময়ও পাই নাই।
ধ্রুব কিছু একটা ভেবে বললো আলমিরাহটা খুলো।
তারা ভ্রু কুচকে বললো আমি কি আপনার শার্ট প্যান্ট পড়বো নাকি?😒😒😒😒
ধ্রুবঃ আগে গিয়ে দেখো।
তারা বিরক্ত হয়ে আলমিরাহ এর পাশে গেলো । আলমিরাহ খুলতেই তারা অবাক। কারন আলমিরাহ এর দুপাশের একপাশ শাড়ি, গহনা এসবে ভরপুর আরেকপাশ ধ্রুবর জিনিস।
তারা শাড়িগুলোকে ধরে বললো এগুলা কার শাড়ি?
ধ্রুব তারার পাশে এসে বললো এগুলো আমার প্রথম স্ত্রী এর শাড়ি।
তারাঃ কিহহহ আপনার আগেও বিয়ে হয়েছে। আর সে বউকে রেখে আপনি আমাকে বিয়ে করসেন!!! আপনি কত খারাপ। কিন্তু আপনার প্রথম বউ কই ওকে তো দেখিনাই কোনোদিন। ওর শাড়ি এখানে ও কই??
ধ্রুব ঃ দেখি তুমিই বলো ও কোথায়?
তারা একটু ভেবে বললো আপনি ওকে মেরে ফেলেন নাই তো??ওহহ আল্লাহ কার লগে বিয়া হইলো এই তো খুনি আমারে মাইরা ফেলবো খোদা আমারে বাঁচাও বলে তারা কান্না করা শুরু করলো।
ধ্রুবঃ আরে থামো থামো
তারা তবুও থামছেনা।
ধ্রুবঃ তারা শুনো আমার কথা
তারা তবুও কান্না করে যাচ্ছে ।
ধ্রুবর এবার মাথা গরম হলো আর ও চিৎকার করে বললো -তারা!!!!!!! স্টপ!!!
ধ্রুবর চিৎকার শুনে তারা চুপ হয়ে গেলো।
ধ্রুব তারাকে ওর কাছে টেনে নিলো। তারার বাহু চেপে বললো -আমার কোনো স্ত্রী নেই। আমার আগে কোনো বিয়ে হইনি। তুমিই শুধু আমার বউ । একসাথে বললো ধ্রুব।
তারা চুপচাপ শুনছে।
এবার ধ্রুব একটু থেমে বললো আমি মজা করছিলাম তুমি যে এতো সিরিয়াসভাবে নিবে ভাবতে পারিনি।
তারা একটু ঠাটস্থ হলো। তারা এতক্ষে বুঝতে পারলো তারা ধ্রুবর কাছাকাছি চলে এসেছে।
তারা জলদিই ধ্রুব থেকে সরে গেলো।
তারার এভাবে দূরে চলে যাওয়ায় ধ্রুব একটু কষ্ট পেলো। তবুও কিছু বললো না।
তারাঃএই শাড়িগুলো আপনি কখন আনলেন?
ধ্রুবঃ তুমি এখানে আসার আগেই। এখানের প্রত্যেকটা শাড়ি আমার পছন্দ করা। তোমার পছন্দ হয়েছে তো?
তারাঃ পছন্দ ??শাড়ি আমার পছন্দ হয়েছে কি না তা আপনি জিজ্ঞেসা করেছেন কিন্তু এই বিয়েতে আমার মতামত ছিলো কি না তা আপনি কখনো জিজ্ঞেসা করার প্রয়োজনটুকু বোধ করেননি।
এই কথা শোনার পর ধ্রুবর মনটা অনেকটাই খারাপ হয়ে গেলো।
তারা একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো।
ধ্রুব ঃ জানি তারা তোমাকে কষ্টটা বেশিই দিয়ে ফেলেছি কিন্তু তুমি ভেবো না খুব জলদিই সব কষ্ট আমি শেষ করে দিবো।
১৫মিনিট পর তারা ওয়াসরুম থেকে বের হলো –
ধ্রুব একটা ফাইল দেখছিলো। দরজা খুলার শব্দ শুনতেই ধ্রুব পিছনে তাকালো।
আর পিছনে তাকাতেই ধ্রুবর হাত থেকে ফাইলটা পড়ে গেলো।
তারাকে দেখেই ধ্রুব অবাকের চরম পর্যায়ে। তারা একটা লাল শাড়ি পড়েছে। শাড়ির সাথে মেচিং ব্লাউজ, খোলা ভেজা চুল যা থেকে এখনো এক দুই ফোঁটা পানি পড়ছে। তারার সারা মুখে কেমন যেনো এক স্নিগ্ধতা বিরাজ করছে। তারাকে পবিত্র দেখাচ্ছে। খুব ইচ্ছে হচ্ছে তারাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে আর ওর চুলের সুবাস নিতে। কিন্তু আমার জন্য এমন চাওয়াও এক মস্ত বড় অপরাধ হবে।
ধ্রুব তারার দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে। তারা ধ্রুবর সামনে এসে বললো – কি হয়সে এভাবে গুলগুলার মতো চোখ করে রাখসেন কেনো?
😒😒😒😒
ধ্রুবর ধ্যান ভেঙে গেলো।
ধ্রুবঃ না না তেমন কিছু না। বলে ধ্রুব ওয়াসরুমে চলে গেলো।
তারা কিছু বুঝতে পারলো না কি হলো।
তারা আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে একবার দেখে নিলো। তারা নিজেকে কেমন জানি অন্য রূপে আবিষ্কার করছে। কেমন জানি অন্য রকম সুন্দর দেখাচ্ছে। এর কারণ কী বিয়ে?? অনেকের কাছে তো শুনতাম বিয়ের পর মেয়েদের সৌন্দর্যটা বেড়ে যায় আমারও কি তেমন হলো??
কিন্তু এটা কি বিয়ে???
নিজের মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো তারা।
ধ্রুব ওয়াসরুম থেকে বের হয়েই দেখলো তারা আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে।
ধ্রুব তারার কাছে গিয়ে বললো কি দেখছো?
তারাঃকিছু না।
আয়নায় তারা আর ধ্রুবর প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে। একসাথে দাড়িয়ে আছে কিন্তু আসলে কি একসাথে দুজন????
ধ্রুবঃকোথায় যাচ্ছো?
তারাঃনিচে। আংকেল এর সাথে দেখা করতে।
ধ্রুবঃতারা তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।
তারাঃবলুন
ধ্রুবঃবাবা আসলে জানে না তোমার আমার বিয়েটা কিভাবে হয়েছে। যদি সত্যিটা জানে তাহলে খুব কষ্ট পাবে তাই তুমি যদি…
তারাঃআমি আংকেলকে কিছু বলবো না। উনাকে এসব বলে কষ্ট দিতে চাই না।
সো এসব নিয়ে ভাববেন না।
এই বলে তারা চলে গেলো।
ধ্রুবঃ তুমি আমার বলার আগেই সব বুঝে যাও। কিন্তু আমি তোমাকে কখনও বুঝিনি। তোমার সাথে অনেকটা অন্যায় করে ফেলেছি।
হটাৎ ধ্রুবর একটা কল আসে।
ধ্রুবঃহ্যালো!!
অপরপাশ…………
ধ্রুবঃখুজো ওকে যেখান থেকে পারো। আমার ওকে চাই যেকোনো মূল্যে
অপরপাশঃ…
ধ্রুবঃওকে এখন রাখছি। কোনো খবর পেলে আমাকে ইমিডিয়েটলি জানাবে।
ধ্রুব ফোনটা রেখে দিলো।
.
.
.
.
.
.
.
ডাইনিং টেবিলে বসে আছে ফরিদ সাহেব তার পাশে তারা আর ধ্রুব অপরপাশে।
ফরিদ সাহেবঃএটা তোরা কি করলি বলতো?তোরা যখন একে অপরকে এতোই ভালোবাসতি আমাকে বলতে পারতি আমি তারার বাবা মায়ের সাথে কথা বলতাম। পালিয়ে বিয়ে করা তো কোনো সমাধান না।
ধ্রুবঃআসলে বাবা….
বাবাঃতোমার সাথে কোনো কথা বলছি আমি??তারা মা তুমি বলো।
ধ্রুব চুপ হয়ে গেলো।
তারাঃআসলে আংকেল…
বাবাঃতারা মা তুমি এখন আমার ঘরের লক্ষী। আমার ছেলের বৌ। তার থেকেও বড় কথা তুমি আমার মেয়ের মতো। তাই তুৃমি আমাকে বাবা বলেই ডাকবে। মনে থাকবে তো?
তারাঃওকে বাবা😊
আসলে আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তাই এমন কাজ করেছি। আমাদের মাফ করে দাও।
বাবাঃআরে,মাফ চাওয়ার কিছুই,নেই। আমি তোমাদের বিয়েতে অনেক,খুশিই হয়েছি,কিন্তু আমি চাই বিয়েটা ঠিক,করে হোক। কিন্তু তার আগে তোমার মা বাবাকে মানাতে হবে। ধ্রুব আমাকে বলেছে তোমার বাবা মা রেগে আছে। কিন্তু চিন্তা করো না আমি আছি সব ঠিক করে দিবো।
তারা ও ধ্রুবঃ😊😊😊😊
…
সবাই নাস্তা করে চলে যাওয়ার পর তারা সব ঠিক,করছিলো। এমন সময় ধ্রুব এলো।
তারাঃকিছু লাগবে?(জিনিস গুছাতে গুছাতে)
ধ্রুবঃনা আসলে তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।
তারাঃ বলেন
ধ্রুবঃথ্যান্কস। বাবাকে মিথ্যা বলে আমাকে বাঁচানোর জন্য।
তারাঃ দেখুন এটা আপনার ভুল ভাবনা যে আমি আপনাকে বাঁচাতে এমন করেছি। আসল কথা আমি বাবাকে কোনো কষ্ট দিতে চাইনি কারণ আমি ওনাকে সম্মান করি। তাই নিজের মাথা থেকে এসব ভুল ধারণা মুছে ফেলুন। এই বলে তারা চলে গেলো।
ধ্রুব দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিলো।
চলবে………..