#ধোয়ার-নেশা !! Part- 05
অন্ত্রীশার হাজারও ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটালো অনিকশার আগমনে। রুমে ঢুকেই দরজা আটকিয়ে দিলো। দ্রুত পদে অন্ত্রীশার কাছে এসে ওর হাত থেকে বেনারশীটা কেড়ে নিয়ে তীর্যক কন্ঠে বললো,
“” এই বিয়ে তুই কিছুতেই করতে পারিসনা,অনতি!””
অনিকশার কথায় অন্ত্রীশার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। বেশ অবাক হয়েই বললো,
“” কেন,আপু? কি হয়েছে?””
অনিকশার ভীষন রাগ হচ্ছে! কেন হচ্ছে সে বুঝতে পারছেনা,কার উপর রাগ হচ্ছে এটাও বুঝতে পারছেনা। কিন্তু রাগটা অন্ত্রীশার উপর ঢালতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ওর উপর ঢালাটা কি ঠিক হবে?? একটুও ঠিক হবেনা! অনিকশা নিজের রাগগুলোকে বড় করে ঢুক গিলে খেয়ে ফেললো। চোখ বন্ধ করে রাগী লুকটাকে ঢেকে নিয়ে শান্ত হয়ে বললো,
“” এটা কোনো বেনারশী হলো,অনতি? এতো বড় ঘরের ছেলে অথচ তার পছন্দ দেখ,কি নিচু? দেখে তো মনে হচ্ছে হাজার টাকাও হবেনা। এমন নিচু মনের ছেলে আমার বোনের হাসবেন্ড হবে? কিছুতেই না। তুই তো আরো ভালো কিছু ডিজার্ভ করিস। হ্যা তোর গায়ের রংটা আমার তুলনায় একটু কালো,কিন্তু অন্য সব দিক দিয়ে আমার থেকে এগিয়ে!””
অন্ত্রীশা আপুর কথায় এবার বেশ বিরক্ত হলো। সামান্য শাড়ী দেখেই বুঝে ফেললো পালকের মন নিচু? শুধু কালার আর দাম দেখেই সব কিছু বুঝা যায়? সে যে এটা নিজ থেকে পছন্দ করেছে এটা দেখলোনা? এটাতে যে তার স্পর্শ আর ভালোবাসা মিশে আছে। ইশ! আপুটা যে কেন ভালোবাসাগুলো দেখতে পাইনা। না অরিদ ভাইয়ার ভালোবাসা দেখতে পায়, না পালক ভাইয়ার! ছি! ছি!!ছি!!! উনি কি আমার ভাই লাগে নাকি? অনলি পালক!
অন্ত্রীশা পালক নামটা উচ্চারন করাতে লজ্জায় ঠোটদুটো নড়ে উঠছে। অনিকশা কপালটা কুচকিয়ে বললো,
“”তুই হাসছিস কেন? এমন ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে তোর হাসিটা কেমন লাগছে,জানিস?””
“” আপু ব্লাউজটা কেমন টাইট টাইট লাগছে! বোতাম খুলে যাবে নাতো?””
“” আমি তোকে একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলছি আর তুই কিনা বোতাম নিয়ে পড়ে আছিস? দেখি এগুলো সব খোল। অমন নিচু মনের মানুষের সাথে তোর বিয়ে হতে পারেনা৷ আমি বেঁচে থাকতে তো নাই।””
অনিকশা অন্ত্রীশার কাছে ঘেষে ব্লাউজে হাত দিতেই বললো,
“” আপু,তোমাকে খুব অশান্ত লাগছে। কি হয়েছে বলবে? তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?””
অন্ত্রীশার এমন কথায় অনিকশা ওর ব্লাউজ থেকে হাত সরিয়ে নিলো। কিছুক্ষন বোনের দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে থেকে ওর বাহু চেপে ধরলো। ড্রেসিং টেবিলের কাছ থেকে টেনে নিয়ে অন্ত্রীশাকে ওর বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজে মেঝেতে হাটু ঘেরে বসেছে। অন্ত্রীশার থুতনিতে হাত দিয়ে বললো,
“” এ বিয়েটা করিস না,বোন।””
“” কিন্তু কেন?””
“” কারন…. কার… পালক তোর থেকে বয়সে অনেকটা বড়!””
“” উফ! আপু মাত্র ৪ বছরের বড়।””
“” ৪ বছর তোর কাছে মাত্র মনে হচ্ছে? এটা অনেক বড়! এত বড় ছেলেকে তোর বিয়ে করতে হবেনা। আমি তোর জন্য ওর থেকেও ভালো ছেলে এনে দিবো।””
“” আপু,অরিদ ভাইয়াও তোমার থেকে ৪ বছরের বড়। তাহলে তুমি কেন অরিদ ভাইয়াকে বিয়ে করেছো? তুমি করতে পারলে আমি করতে পারবোনা?””
“” আমি আর তুই এক? আমিও তো তোর থেকে ৪ বছরের বড়। আমার থেকে তুই বেশি বুঝিস?””
অন্ত্রীশা এবার আপুর হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোতে নিয়ে বললো,
“” এসব ছোটখাটো কারন দেখিয়ে তুমি আমাকে বিয়ে করার থেকে বিরত রাখতে পারবেনা। আমার আজকে তোমার কথা রাখতে ইচ্ছে করছে আপু,তুমি একটা বড় কারন দেখাও তাহলে আমি বিয়ে করবোনা,প্রমিস!””
অন্ত্রীশার কথায় অনিকশার মুখটা চুপসে গেলো। কি বলতে এসে কি বলছে সে? ভেতরের কথাগুলো আর কতদিন অন্ধকারে বন্দী করে রাখবে? এবারও কি সে মুক্তি দিতে পারবেনা??
অন্ত্রীশা বিছানা ছেড়ে উঠে আবার আয়নার সামনে দাড়ালো। ব্লাউজ আর পেটিকোটে নিজেকে কেমন দেখাচ্ছে তাই দেখার জন্য। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ভাবলো,খুবই বিচ্ছিরি লাগছে,কিন্তু মুভিতে নায়িকাদের তো এমন বিচ্ছিরী লাগেনা। তার ও তো ওদের মতো মেদহীন পেট!
“” তোর কি মনে হয় পালক তোকে পছন্দ করে?””
অনিকশার কথায় অন্ত্রীশা আয়না দিয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে বললো,
“” অবশ্যই,নাহলে অমন পাগলামি করবেন কেন?””
“” উফ! তুই বুঝতে পারছিসনা। পালক ওগুলো তোকে ভালোবেসে নয়,অন্য কারনে করছে!””
অন্ত্রীশা বোনের কাছে এসে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরলো। অনিকশার কাঁধে নিজের থুতনিটা ভর করে রেখে বললো,
“” আমি জানি,আপু! উনি এ রকম পাগলামী করার ছেলেই নয়। উনার আরেকটা রুপ আছে,যেটা আমার খুব পরিচিতি। ওটাকে কাছ থেকে দেখতে হলে যে উনাকে বিয়ে করা জরুরী!””
এসব কি বলছে অনতি? ও জানে মানে? কি জানে ও? আর কিসের সাথে পরিচিত বলছে? কি বুঝাতে চাচ্ছে ও? তাহলে কি পালককে ও আগে থেকে চিনে? ওর সাথে কি পালকের কোনো কানেক্ট আছে? কিন্তু এটা কি করে হতে পারে? সে রকম হলে তো আমার জানার কথা! অনিকশার মাথা ঝিম ধরে আসছে। এই মুহুর্তে ও কোনো ঝিমে ডুকতে চাইনা তাই পাল্টা প্রশ্নো করে বসলো,,,
“” তুই কি পালককে আগে থেকে চিনিস অনতি?””
অনিকশার প্রশ্নের উত্তরে অন্ত্রীশা ছোট্ট একটা হাসি উপহার দিতেই দরজায় কড়া নড়ে উঠে।
“” পার্লারের মেয়েরা এসে গেছে,আপু!””
অন্ত্রীশা দৌড়ে দরজা খুলে দিতেই ৫/৬জন মেয়ে রুমে ঢুকে গেলো। হাতে বড় বড় বক্স! হয়তো এগুলোর মধ্যে সাজসরন্জাম লুকায়িত!
অন্ত্রীশা বেশ উৎসাহে ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারটাতে বসে পড়লো। এতক্ষনে পার্লারের মেয়েগুলোও অন্ত্রীশাকে নিয়ে বিজি হয়ে পড়েছে। অনিকশা বেশ কিছুক্ষনের বোনের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে যেতে নিলেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,
“” আপু,বাবাকে একটু পাঠিয়ে দিবে প্লিজ? বলবে উনি আমার শাড়ীর কুচি ধরে না দিলে আমি কুচি খুলে রেখেই শাড়ী পড়বো। আর অমন খুলা কুচি নিয়েই বিয়ের পিড়িতে বসে পড়বো!””
লিয়াকত খন্দকার মেয়ের দিকে না তাকিয়েই মেঝেতে বসে পড়লেন। মেয়ের শাড়ীর কুচিতে হাত দিতেই অন্ত্রীশা বললো,
“” বাবা,আমার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে তুমি একবারও আমার সাথে কথা বলোনি। রাতের বেলা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেও আসোনি। এখন দেখ,আমাকে দেখতে কেমন লাগছে সেটাও দেখলেনা,আমি কি দেখতে অনেক পচা হয়ে গেছি?””
লিয়াকত সাহেব অশ্রুসিক্ত নয়নে অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে বললো,
“” কি করবো,বল! তোর দিকে তাকালেই শুধু চোখে পানি চলে আসছে। কি যে হলো! মনে হয় কঠিন ব্যমো হয়েছে। তোকে বিদেয় করেই চক্ষু হসপিটালে যেতে হবে!””
অন্ত্রীশা এতক্ষন দাড়িয়ে থাকলেও এবার বাবার কাছ ঘেষে বসে পড়লো।
“” দেখি চোখে কি হয়েছে?””
অন্ত্রীশা চোখে হাত দিতেই লিয়াকত সাহেব নিশব্দে কেঁদে উঠলেন।
“” তুমি কি চাচ্ছো আমার এতো সুন্দর সাজটা নষ্ট হয়ে যাক?””
লিয়াকত সাহেব চোখের পানি মুছে অন্ত্রীশার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
“” আমার ছোট্ট রাজকন্যাটাও তার নতুন রাজ্যে পাড়ি দিবে। সুখে থাকিস! নতুন রাজ্যের রানী হলেই চলবেনা,সেখানকার সবার সুখদুখের সাথী হবে কেমন? সব থেকে ভালোরানী হয়ে দেখাবে!””
অন্ত্রশা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“” তুমি আমার বেস্ট বাবা! আর বেস্ট বাবার মেয়ে অবশ্যই বেস্ট রানী হবে!””
বড় মেয়ের হুট করে বিয়ে হওয়ার কারনে তেমনভাবে বড় করে অনুষ্ঠান করা হয়নি লিয়াকত সাহপবের। তাই ছোট মেয়ের বিয়েতে কোনো কিছুর কমতি হোক সেটা উনি চাননা। নিজে এই বুড়ো বয়সেও দাড়িয়ে থেকে দুহাতে সব সামাল দিচ্ছে। এই মুহুর্তে ছেলের অভাব বুঝতে পারছেন লিয়াকত সাহেব। অরিদ যদিও জামাই হিসেবে একটা চমৎকার ছেলে। হাতে হাতে সব দিক দিয়েই সামলে দিচ্ছে। কিন্তু দুদিন পর তো সেও তার রাজ্যে পাড়ি দিবে। বাড়িটা একদম শুন্য হয়ে যাবে। এত বড় বাড়িতে দুজন বুড়াবুড়ি বন্দী হয়ে থাকাটা কতটা কষ্টকর হবে এখন বুঝতে পারছেন! চোখের কোনে জমে থাকা পানিটা মুছে নিজের অর্ধাঙ্গিনীর খোজে গেলেন।
বরপক্ষ চলে এসেছে শুনে অনিকশা অন্ত্রীশার পাশ থেকে উঠে এসেছে। পাশের রুমেই পালকদেরকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। বিয়ের কাজটা শেষ করেই স্টেজে নেওয়া হবে। তারপর খাওয়া দাওয়া বাকি কাজ সারা হবে।
অনিকশা দুর থেকেই বরকে দেখতে লাগলো,সেও হালকা মিস্টি কালারের মধ্যে সেরওয়ানি পড়েছে। অনিকশার কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকেই শরীরটা রাগে রিরি করছে। এটা কি বিয়ে বাড়ি নাকি মিস্টির দোকান যে সবাই নিজেরাই মিস্টি সেজে বসে আছে? অনিকশার ইচ্ছে হলো বড় করে হা করে পালক আর অন্ত্রীশাকে টুপ করে খেয়ে নিতে। খেতে নিশ্চয় বিচ্ছিরী স্বাদ হবে। ভাবতেই অনিকশার বমি বমি পেলো।
“” অনি,চলোনা আমরাও দ্বিতীয়বারের মতো বিয়েটা সেরে ফেলি!””
অরিদের কন্ঠ পেয়ে অনিকশা পেছন ঘুরতেই ওর চোখ আটকে গেলো অরিদের দিকে! অরিদও মিস্টি কালারের পান্জাবী পড়ে আছে,দেখতে কোনো অংশে তামিলের নায়কের চেয়ে কম লাগছেনা! টিন এজের যে কোনো মেয়ে আজ অরিদকে দেখলে প্রেমে পড়ে যাবে। শতশতবার প্রেমে ডুবে ডুবে বলবে,তোমার প্রেমে আমি হাবুডুবু খেতে চায়,তুমি কি আমাকে পারমিশন দিবে,মিস্টি বালক??? তার তো টিন এজ না,তাহলে ওর ও কেন আজ অরিদের প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছে??
অরিদ অনিকশার চোখের সামনে হাতের আংগুলের সাহায্যে তুরি বাজাতেই ওর হুশ এলো।
“” কি মজা!কি মজা!পাপাই,মামনিকে বিয়ে কলবে! আমি আজ দুতো বিয়ে দেখবো!””
অরিদ্রার হাততালির আওয়াজে অনিকশার মন ভালো হয়ে উঠলেও পরক্ষনেই রেগে গেলো।
“” তোমরা বাপ বেটি আজ মিস্টি কালারে মাতিয়েছো কেন? কি কুৎসিত লাগছে। আমার মেয়েটার গায়ে যদি মশা বসে?””
“” কি করবো বলো! তুমিতো তোমার রঙে আমাকে রাঙাতে দাওনা। তাই ভাবলাম তোমার পছন্দের রঙে নিজেকে সাজিয়ে মনটাকে শান্তনা দেই।””
অনিকশা অরিদ্রাকে কোলে নিতে নিতে বললো,
“” বাড়িটাকে তোমরা সবাই মিলে মিস্টির দোকান বানিয়ে ফেলেছো! যত্তসব!””
পাপড়িকে দেখতেও আজ ভারী সুন্দর লাগছে। কিন্তু যার জন্য এত কষ্ট করে সাজলো সেই তো এলোনা। তাহলে কি লাভ এই সাজ রেখে? পাপড়ির ইচ্ছে হলো নিজের নামের মতো নিজের সাজগোজগুলোকে জড়িয়ে ফেলে দিতে! চোখের পানি দিয়ে সব ঘেটে দিতে। মানুষটা এত কেনো অবহেলা করে আমাকে? কিচ্ছু ভালো লাগছেনা আমার। কিচ্ছুনা!
ভাইয়ের পাশে মুখ গোমড়া করেই বসে রইলো পাপড়ী। আর ক্যামেরাম্যান তার সেই গোমড়ামুখের ছবি তোলাই ব্যস্ত!
বিয়ের রীতিনীতি শেষ করে অন্ত্রীশাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দশ্যে বেড়িয়ে পড়লো বরপক্ষ!
বাড়ীর কাছে গাড়ী থামতেই সবাইকে ফেলে পাপড়ি নেমে আসলো। দৌড়ে ছাদে উঠে আতিশের নাম্বারে ডায়াল করলো। রিং বেজেই যাচ্ছে কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো রেসপন্স আসছেনা। এদিকে পাপড়িও দমে যাচ্ছেনা। কলের পর কল তো মেসেজের পর মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে ওপাশ থেকে কল আসতেই পাপড়ি চট করে রিসিভ করে বললো,
“” আপনি আসেননি কেন?””
“” আমার ইন্টারভিউ ছিলো,পাপড়ি!””
“” আপনার সবসময় ইন্টারভিউ থাকে। পৃথিবীর সব ইন্টারভিউ কি আপনি একাই শেষ করবেন? ভাইয়া তো আপনার ছোটবেলার বন্ধু তাও আসলেননা? ভাইয়ার কত মন খারাপ হয়েছে জানেন?””
“” তোমার ভাইয়ার মন খারাপ হয়েছে আর জানাচ্ছো তুমি?””
“” ভাইয়াতো বিজি তাই আমি…””
“” এতগুলো কল কেন দিয়েছো? তোমাকে মানা করেছিনা আমাকে এত কল দিবেনা? আমি ডিস্টার্ব ফিল করি। কথা শুনোনা কেন? তোমার জন্য শান্তিমতে ঘুৃমাতেও পারলামনা। তুমি শুধু পালকের বোন বলে কিছু বলতে পারছিনা নাহলে থাপড়িয়ে সোজা করে দিতাম! সব কিছুতে বাড়াবাড়ি!””
আতিশের ধমক খেয়ে পাপড়ি ফুপাতে লাগলো। উনি কি জানেননা আমি কেন কল দেই? নাকি জেনেও না জানার ভান ধরে থাকেন???
“” অমনি শুরু করে দিলে? মানুষকে ডিস্টার্ভ করা আর ফুপানি ছাড়া আর কি কিছু শিখনি? পড়াও তো মাথায় ঢুকেনা। পালকের বোন বলে তোমাকে আমার এত কষ্ট করে পড়াতে হচ্ছে! নাহলে কবেই ছেড়ে দিতাম। এরকম গোবর মার্কা স্টুডেন্ট আতিশ কখনোই পড়ায়না!””
বেশ বিরক্ত আর তাচ্ছিল্যভাবেই কথাগুলো বলে আতিশ কলটা কেটে দিলো। আমি দিনে হাজারটা ইন্টারভিও দিয়েও এতোটা টায়ার্ড হয়না যতটা না তোমার ফুপানি শুনে হই। পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্টের জিনিস কি জানো পাপড়ি? ভালোবাসার মানুষের চোখের পানি! আর তুমি সেটাই বারবার করো,আমাকে কষ্ট দাও খুব কষ্ট!! তোমার চোখের পানি মুছার কোনো যোগ্যতাই আমার নেই। আমি চাইনা তোমার চোখের পানি মুছতে গিয়ে আমি আমার আর পালকের সম্পর্কটা নষ্ট করতে!
অন্ত্রীশা বেশ কিছুক্ষন পালকের রুমের বিছানার ঠিক মাঝখানটাই বসে ছিলো। বসে থাকতে থাকতে কোমড় ধরে এসেছে। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো ভিড়ানোই আছে। কেউ আসবেনা ভেবে পালকের রুমটা ঘুরে ঘুরে ছুয়ে ছুয়ে দেখছে। প্রতিটা জিনিসের গন্ধ নিতে নিতে ঘড়ির দিকে চোখ পড়লো। ৩ টা বেজে ২৫ মিনিট। এতো রাত হয়ে গেলো উনি এখনো এলেননা?? কখন আসবেন উনি?? হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে অন্ত্রীশা দৌড়ে বিছানার মাঝে গিয়ে বসে পড়লো। বড় করে ঘোমটা দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। বুকটা ঢিপঢিপ করছে! নিশ্বাসটা বন্ধ করে অন্ত্রীশা পায়ের আওয়াজ শুনতে লাগলো।
চলবে