তোমাকে খোঁজে

তোমাকে খোঁজে !! Part- 13 (শেষ)

আদিবা সায়ানের মাকে টেনে মিতির পাশ থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে আসে। তারপর বলে, এসব আপনি কি করছেন আন্টি? আপনি জানেন কাল আমার আর সায়ানের বিয়ে।দেখুন আন্টি, আমাকে এখানে আপনি আসতে বলেছিলেন আমি এসেছি।কিন্তু আর না।আমি চলে যাচ্ছি এখান থেকে। কাল সায়ান আর আমার বিয়ে। আমি চাই না এইবার আর কোনো গন্ডগোল হোক।বলেই আদিবা ঘুরে চলে যাবে পিছনে ফিরতেই দেখে সায়ান দাড়ানো।

সায়ান তুমি এখানে? আদিবা প্রশ্ন করে সায়ানের কাছে। সায়ানও ঠিক একই প্রশ্ন আদিবাকে করে! তারপর সায়ানের মা এগিয়ে এসে সায়ানকে বোঝায় যে সে নেহালের এক্সিডেন্ট হয়েছে তাই আদিবাকে নিয়ে হসপিটালে এসেছে।কথাটা শুনেই সায়ান রেগে যায়। বলে, কাল আদিবার সাথে আমার বিয়ে হবে।এটা যেনেও কেন আদিবাকে নিয়ে হসপিটালে আসলে মা? টিভিতে যদি তোমাদের না দেখতাম তাহলে তো আমি জানতেই পারতাম না তোমরা কোথায় এসেছো।সায়ান অনেককিছু বলে তার মাকে।তাই বাধ্য হয়ে সায়ানের মা বলে দেয় নেহালের সাথে আদিবার সম্পর্কটার কথা।আদিবা নেহালের স্ত্রী কথাটা শুনে সায়ান যেন বড়সড় একটা ধাক্কা খায়।

এখন তুই বল সায়ান! এর পরেও আদিবাকে বিয়ে করবি?

সায়ান চুপ করে থাকে।পাশ ফিরে দেখে মিতি এগিয়ে আসছে তাদের দিকে।মিতি এসে সায়ানকে দেখে একদম নিরব হয়ে যায়।সায়ানকে তার মা আবার বলে, মিতিকে বিয়ে করবি সায়ান?

সায়ান কিছুক্ষণ পর নিরাবতা কাটিয়ে উঠে মায়ের কথায় সম্মতি জানায়। বলে, হ্যাঁ করবো।

সায়ানের মুখে হ্যাঁ শুনে মিতি যতোটা খুশি হয় তারচেয়েও বেশি আদিবা রেগে যায়।রাগে আদিবা চিৎকার করে সায়ানকে বলে, সায়ান তুমি আমাকে ভালোবাসো বলেছিলে।কাল তোমার আর আমার বিয়ে আর আজ এমন কথা বলতে পারো না।সায়ানকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় আদিবা।

সায়ান আদিবাকে বলে, হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালোবাসি।কিন্তু তোমার তো নেহালের সাথে আরও আগেই বিয়ে হয়ে গেছে।এই কথাটা কি তুমি আমাকে আগে বলতে পারতে না?

বললে কি হতো? তখন কি তুমি আমাকে মেনে নিতে?

তাই বলে এতোটা স্বার্থপর হবে তুমি? তোমার এই সত্যিটা জেনে আমার খুব কস্ট হচ্ছে আদিবা।

বিশ্বাস করো সায়ান আমি জানতাম না নেহাল কবে আমাকে দিয়ে ওই বিয়ের রেজিষ্ট্রি পেপারে সিগনেচার করিয়েছে।

নাটক বন্ধ করো আদিবা।আমার ভালো লাগছে না।বলে সায়ান তার মাকে নিয়ে হসপিটাল থেকে চলে যায়। আদিবা সায়ানকে অনেকবার ডাকে কিন্তু সায়ান পিছনে ঘুরে আদিবাকে আর একবারও দেখে না।

কিছুক্ষণ পর আদিবাকে হসপিটালে এসে তার বাবা-মা নিয়ে যায়। আদিবা সারা রাত কাঁদে আর ভাবে, সায়ানের ভালোবাসা এতোটাই ঠুনকো যে সামান্য একটা মিথ্যা গোপন করায় আমাকে ছেড়ে চলে গেল? ওর থেকে তো নেহাল ভালো ছিলো।যে এতো অপমান, আঘাত দেওয়ার পরও শুধু আমাকেই চেয়েছে।বারবার আমার কাছে ফিরে এসেছে।সায়ান আর নেহালের কথা চিন্তা করে সারাটা রাত অনেক বিরহের মধ্যে কাটায় আদিবা।একা একা কথা বলে।নিজে নিজেকেই প্রশ্ন করে কতোটা কস্ট দিয়েছে নেহালকে।

সকাল হতেই আদিবা ছুটে হসপিটালে চলে যায় নেহালের কাছে।সেখানে গিয়ে দেখে নেহালকে কেবিনে রাখা হয়েছে।আর কেবিনের বাইরের বেঞ্চে বসে সায়ানের বাবা-মা আর কাজি বিয়ে পড়াচ্ছে সায়ান আর মিতির।আদিবা তাদের সাথে কোনো কথা না বলেই ছুটে কেবিনের মধ্যে ঢুকে যায়। তারপর নেহালের পাশে বসে নেহালের বুকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে কাঁদতে থাকে।আর হেচকি তুলে তুলে নেহালকে ডেকে বলে, আমার সত্যিই খুব ভুল হয়ে গেছে নেহাল।আমি বুঝে গেছি আপনার চেয়ে বেশি ভালো আর কেউ আমাকে বাসতে পারবে না।আমার এখন নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছে। প্লিজ নেহাল আপনার জীবনে আমাকে একটু জায়গা দিন।

আদিবার ঝাঁকানিতে নেহাল ব্যাথা পেয়ে আহ্ করে ওঠে।আস্তে করে চোখদুটো মেলে দেখে আদিবা।

নেহালের আহ্ করে উঠাই আদিবা বুঝতে পারে যে নেহাল ব্যাথা পেয়েছে।আদিবা নেহালের বুকে হাত দিয়ে বলে, ব্যাথা পেয়েছেন? বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছা করে ব্যাথা দিতে চায়নি আপনাকে।

আদিবা আর কিছু বলার আগেই নেহাল সরে যাও আদিবা বলেই এক ধাক্কা দিয়ে আদিবাকে দূরে সরিয়ে দেয়। আর আদিবা নিচে পরে যায়। নেহাল আদিবাকে পরে যেতে দেখে উঠাতে যাবে তখন সামনে মিতিকে দেখে আর পারে না।শুধু কান্না জড়িত কন্ঠে দুই হাত আদিবার সামনে জোড় করে বলে, প্লিজ আদিবা চলে যাও এখান থেকে।

আদিবা নিচে সেভাবেই বসে থেকে কাঁদতে লাগে। যা দেখে মিতি এসে আদিবাকে ধরে উঠিয়ে নেহালের পাশে নিয়ে বসায়।আর বলে, আমি জানি ভাইয়া সেদিন আমি তোমাকে নিষেধ করেছিলাম আর কখনো ভাবির কাছে না আসতে।কিন্তু আমি এটাও জানি তুমি ভাবিকে কতোটা ভালোবাসো।আর তাই আজ যখন ভাবি নিজের থেকেই ভুল বুঝতে পেরে তোমার কাছে ফিরে এসেছে তখন মেনে নাও ভাবিকে।হ্যাঁ ভাইয়া আমি আমার মাথার দিব্যি তুলে নিচ্ছি। তুমি সুখে থাকো এটাই আমি চাই।

মিতির বলা শেষ হলে নেহাল তাকিয়ে দেখে আদিবা এখনও কাঁদছে। আদিবার কান্না নেহালের যেন সহ্য হচ্ছে না।নেহাল আদিবাকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে নেয় তারপর আদিবার মুখটা তুলে কপালে একটা ঠোঁটের পরস ছুঁইয়ে দিতেই আদিবা ঝাপিয়ে নেহালের বুকের সাথে মিশে যায়। আর শব্দ করে কাঁদে। নেহালের কাছে ক্ষমা চায় সব অন্যায়ের জন্য। আর নেহাল আদিবার এমন কান্ড দেখে অবাক হয়ে যায়। ভাবে সেকি স্বপ্ন দেখছে নাকি সবই বাস্তব।নেহাল আদিবার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ওঠে, আদিবা?

হুমমমম! বলুন।

তুমি আমার সাথে আবার অভিনয় করছো নাতো? আবার বাজি ধরে খেলছো নাতো আমাকে নিয়ে?

নেহালের এমন কথা শুনে আদিবা নেহালের বুক থেকে নিজের মাথাটা সরিয়ে নিয়ে আসে।সত্যিই নেহাল আমি এতোটাই খারাপ যে চাইলেও আজ আমার আমিকে আপনাকে বোঝাতে পারবো না।হ্যাঁ, আমি আপনার যোগ্য না।চলে যাবো আমি।মিতি তোমার ভাইকে একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে দিয়ে দিও।কথাটা বলে আদিবা উঠে যাবে।নেহাল আদিবার হাতটা ধরে বসে।

আমার অন্য কোনো মেয়ের প্রয়োজন নেয়। আমার মন শুধু #তোমাকে_খোঁজে সেটা বোঝো না? তুমি ছাড়া আর কেউ কখনো আমার জীবনে আসবে না।তুমি আছো, তুমি ছিলে আর তুমিই থাকবে।তুমি চাইলেও আমি তোমাকে আমার থেকে দূরে যেতে দিবো না।দরকার হলে বেঁধে রাখবো।বন্দী করে রাখবো।

নেহালের কথা শুনে আদিবা হেসে ওঠে।এমন সময় আদিবাকে বাড়িতে কোথাও খুঁজে না পেয়ে আদিবার বাবা-মা হসপিটালে চলে এসেছে।তারা আদিবাকে নিয়ে যেতে চাইলে আদিবা যেতে চায় না।তারপর সায়ানের বাবা-মা আর সায়ান তাদেরকে বোঝালে তারা আদিবা আর নেহালকে মেনে নেয়। আর তারা সিদ্ধান্ত নেয় নেহাল-আদিবা আর সায়ান-মিতি বিয়ে আবার হবে। খুব ধুমধাম করে।

এখন সবাই খুব খুশি। নেহাল-আদিবা আর সায়ান-মিতির দুই জুটিই একে অপরকে মেনে নিয়েছে।সায়ানের প্রথমে একটু কস্ট হয়েছিলো আদিবাকে ভুলতে।কিন্তু মিতি তার ভালোবাসা আর ব্যবহার দিয়ে সায়ানের মনে নিজের জন্য জায়গা তৈরি করে নিয়েছে।নেহাল সুস্থ হলে খুব ধুমধাম করে আবার তাদের বিয়ে হবে।সকলে ওদের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ হাফেজ।।।

।।।।।সমাপ্ত।।।।।

(বিঃ দ্রঃ “ তোমাকে খোঁজে !! লেখাঃ মস্ত লিজা ” গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)

 

বিঃ দ্রঃ ” লেখাঃ মস্ত লিজা ” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন…………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *