তোকে চাই

তোকে চাই – Season 2 ! Part- 75 (Last-Part)

সারাদিন হৈ-হুল্লোড় করে খেতে বসেছে সবাই। জেনি খাওয়ার থেকে এদিক-ওদিকই তাকাচ্ছে বেশি। দ্বিতীয় সারির এক কোণায় বসে আছে অসম্ভব মিষ্টি একটি মেয়ে। তারপাশে বসে আছে পাঁচ / ছয় বছরের একটি ছেলে। জেনি অবাক হয়ে খেয়াল করলো ছেলেটি খুব যত্ন করে মেয়েটির মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। ছেলের কান্ড দেখে মেয়েটি হাসছে তারসাথে চোখদুটোতে টলমল করছে স্বচ্ছ জল। মুখে হাসি, চোখে জল কি অদ্ভুত সৌন্দর্য! জেনি চোখ ঘুরিয়ে শুভ্রর দিকে তাকালো। শুভ্র শেরওয়ানির হাতা কনুই পর্যন্ত গোটিয়ে নিজে খাচ্ছে সাথে সাথে মেয়েকেও খাওয়াচ্ছে। রোদ খাওয়া ছেড়ে পাশে বসে একদৃষ্টিতে বরের দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র এক-দুইবার আড়চোখে তাকাচ্ছে পরমুহূর্তেই নিজের কাজে মন দিচ্ছে। তাদের পাশেই বসেছে সাহেল, নাবিলা আর সাদাফ। বাবা-মার মাঝখানে বসে নিজের মতো করে চুপচাপ খাচ্ছে সাদাফ। যদিও টেবিল পর্যন্ত পৌঁছোতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাকে। নাবিলার পাশে বসেছে রুহি,অভ্র আর আদ্র-রোদ্র। জেনি বেশ খেয়াল করে দেখেছে আদ্র-রোদ্র হাজার দুষ্টামি করলেও কখনোই একজন আরেকজনের বিপক্ষে কথা বলে না। তাদের কাজ, কথা সব একদিকে। মাথায় হালকা কুকরানো চুলের ছেলেটা হলো রোদ্র। আদ্র থেকে কয়েক ধাপ বেশিই দুষ্টু সে। সারাদিন উল্টোপাল্টা কাজ করতেই বেশি পছন্দ তার। আদ্র ঠিক তার উল্টো। সবসময় ভাইয়ের সাথে সাথে থাকলেও বেশ ঠান্ডা মেজাজের ছেলে সে। ভাইকে বকার হাত থেকে বাঁচানোই তার প্রধান কাজ। জেনির ডানপাশে বসেছে চিত্রা, শিশির। চিত্রা খাওয়া ছেড়ে বসে আছে। ক্ষুধা পেলেও খেতে পারছে না সে, কেমন একটা গা গুলাচ্ছে। শিশির স্ত্রীর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে এটা ওটা জিগ্যেস করছে। জেনিদের পাশের টেবিলে বসেছে সাকিব,রাতুল,শ্রেয়া, শ্রেয়ার হাজবেন্ড,আহান,রুহোন,সাব্বির সহ তাদের বউ । সবার ছোট্ট ছোট্ট বিষয়গুলোও খেয়াল করে দেখছে জেনি যেন ইউএস চলে যাওয়ার পর এই মিষ্টি স্মৃতি আর খুঁনসুটিগুলো লেগে থাকে তার মনের কোণায়। খাওয়া শেষ করে হাত ধুতে গিয়ে বাঁধলো এক বিপত্তি। একটা বাচ্চার হাতের আইসক্রিমে মাখামাখি হলো শুভ্রর শেরওয়ানি। বাচ্চাটি ভয়ে মুখ কালো করে বলে,
— সরি স্যার। আমি বুঝতে পারি নি।

জেনি খেয়াল করে দেখে, এটাই সেই ছেলে যে ছেলেটা খাবার সাইডে মায়ের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছিলো। শুভ্র বাচ্চাটির মাথায় হাত রেখে চুলগুলো হালকা ঝাঁকিয়ে দিয়ে বলে উঠে,
— ব্যাপার না চ্যাম্প। বিয়ে বাড়িতে এমন একটু আধটু হয়। কিন্তু তোমার আইসক্রিমটা যে নষ্ট হয়ে গেলো…..
ছেলেটি চোখ তুলে তাকায়। শুভ্রর স্নেহভরা কন্ঠে ভয়টা অনেকটাই কেটে গেছে তার। শুভ্র হাসিমুখে জিগ্যেস করে,
— নাম কি বাবু?
— শুভ্রব আহমেদ।
শুভ্র চমকে উঠে বললো,
— আরে, তোমার নামটা তো দেখি আমার নামের জমজ ভাই।
শুভ্রব উৎসাহ নিয়ে বলে,
— আপনার নাম কি, স্যার?
— আমার নাম শুভ্র। আর স্যার বলছো কেন?আমি কি গণিতের রাগী টিচার? স্যার শুনতে একদমই ভালো লাগছে না। তুমি বরং আমাকে চাচ্চু বলতে পারো।
ছেলেটি হাসিমুখে বলে,
— আমার বাবার নামও শুভ্র। শুভ্র আহমেদ।
শুভ্র কিছু বলবে তার আগেই হন্তদন্ত হয়ে অনেকটাই ছুঁটে আসে একটি মেয়ে। ছেলের হাত ধরে শুভ্রর শেরওয়ানির দিকে তাকিয়ে অপরাধী গলায় বলে,
— আই এক্সট্রেমলি সরি ভাইয়া। ও হয়তো বেখেয়ালিতে এমনটা করেছে। সরি…
শুভ্র হেসে বলে,
— ইট’স ওকে। বাচ্চায় তো। আপনাকে কোথাও যেনো দেখেছি আমি। কিন্তু কোথায় দেখেছি তা এই মুহূর্তে ঠিক মনে পড়ছে না।
শুভ্রর পেছন থেকে হুট করেই বলে উঠে জেনি,
— নীরা? শুভ্র আহমেদের স্ত্রী নীরা আহমেদ আপনি?
নীরা বেশ অবাক হয়। বিস্ময় নিয়ে বলে,
— হ্যাঁ কিন্তু আপনি কিভাবে…
জেনি হাসে। শুভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— শুভ্র সাহেব? আপনি আর রোদ উনাকে হসপিটালে দেখেছিলেন। বিয়ের কিছুদিন পর যখন আপনার এক্সিডেন্ট হয় তখন। মনে পড়েছে?
শুভ্র অবাক হয়ে জেনির দিকে তাকায়। পরমুহূর্তেই হেসে উঠে বলে,
— হ্যাঁ মনে পড়েছে। আমাদের থেকে আমাদের লাইফের ঘটনাগুলো আপনারই বেশি মনে আছে দেখছি। এনিওয়ে, মিসেস নীরা, আমি আবরার আহমেদ শুভ্র। আপনার হাজবেন্ড আর আমার একইদিনে এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। আমার ভাগ্য ভালো ছিলো তাই হয়তো আমি বেঁচে গিয়েছি। তখন হয়তো চ্যাম্প পৃথিবীতে আসে নি। মাত্র দু’মাসের ছিলো। তাই না?
স্বামীর কথা মনে পড়তেই চোখ ভিজে এলো নীরার। তবে কারো চোখে পড়ার আগেই নিজেকে সামলে নিয়ে হাসি ফুটালো মুখে। এই হাসিটা নিয়েই তো বেঁচে আছে সে। শুভ্রর মৃত্যুর পর কতো ঝড়ঝাপটায় না গিয়েছে তার উপর। একদিকে বিয়ের চাপ অন্যদিকে এভোরশন করার চাপ। সবার এক কথা বাপ ছাড়া বাচ্চা পালা এতো সহজ নয়। তার থেকে
বাচ্চাটা ফেলে দিয়ে নতুন করে জীবন সাজাও। সারাজীবন কি বাপের বাড়ি বা শশুড়বাড়ির বোঝ হয়ে থাকবে? নীরা বোঝ হয়ে থাকে নি। বাচ্চাও নষ্ট করে নি তবে বাবা-মা, আত্মীয় সবাইকে ছেড়ে দিয়েছে। ফ্রেন্ডের সাহায্যে প্রাইভেট ফার্মে জব নিয়ে একা চলতে শিখেছে। তার শুভ্রর চিন্হকে বুকে আগলে কষ্টের মাঝেও হাসতে শিখেছে। আজ শুভ্রবের দিকে তাকালে শুভ্রর প্রতিচ্ছবিই দেখতে পায় সে। মায়ের প্রতিটি দুঃখের সঙ্গী হয়েছে সে। এই ছোট্ট বয়সেই বুঝে নিয়েছে তাদের কেউ নেই। সে ছাড়া তার মার আর কেউ নেই। কেউ না। নীরা মুচকি হেসে ছেলের মাথায় চুমু দিয়ে বলে,
— সরি! আসলে, আমি সেদিন খেয়াল করি নি আপনাদের।
— আপনি যে পরিস্থিতিতে ছিলেন তাতে খেয়াল না করাটাই স্বাভাবিক। বাদ দিন সেসব কথা। তো চ্যাম্প? কোন ক্লাসে পড়ো?
— ক্লাস ওয়ান।
— গুড। আমার জন্য যে তোমার আইসক্রিমটা নষ্ট হলো তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে আমি কি তোমায় একটা আইসক্রিম কিনে দিতে পারি?
শুভ্রর কথার মাঝেই দৌঁড়ে আসে শুভ্রতা। তার পিছু পিছু রোদ। শুভ্রতা বাবার শেরওয়ানির কোণা ধরে টেনে নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়। শুভ্র হেসে শুভ্রতাকে কোলে তোলে নিয়ে শুভ্রবকে ইশারা করে বলে,
— আম্মু? ওটা তোমার ভাইয়া হয়।
শুভ্রতা অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,
— আলেকতা ভাইয়া?
— হু। আরেকটা ভাইয়া।
— ভায়ো ভাইয়া না পঁতা ভাইয়া?
— অনেক ভালো ভাইয়া। ওর নাম শুভ্রব। ভাইয়াকে হ্যালো বলো।
শুভ্রতা শুভ্রবের দিকে তাকিয়ে হাসে। হাসিমুখে বলে,
— হ্যায়ো ভাইয়া। আমি শুভ্ভতা।
নীরা হাসে। দু’পা এগিয়ে শুভ্রতার সামনে এসে দাঁড়ায়। ডান গালটা টেনে দিয়ে বলে,
— অনেক কিউট তো। একদম আপনার মতো হয়েছে।
শুভ্র হেসে বলে,
— সবাই তাই বলে তবে আমার মনে হয় ও ওর মায়ের মতো হয়েছে।
নীরা হেসে শুভ্রতাকে জিগ্যেস করে,
— মামনি? তোমার কয়টা ভাইয়া?
শুভ্রতা কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
— এতুগুলা।

— আচ্ছা? নাম কি তোমার ভাইদের?
— অাদ্দ ভাইয়া,রোদ্দ ভাইয়া, সাতাপ ভাইয়া আর এই নুতুন ভাইয়া।
নীরা হেসে আবারও গাল টানে। শুভ্র পাশে তাকিয়ে রোদকে ইশারা করে বলে,
— মিট মাই ওয়াইফ, রোদেলা।
ইরা রোদের সাথে কুশল বিনিময় করে হাসিমুখে বলে,
— কি মুশকিল! বাচ্চার মাকে দেখলে মনে হয় বাচ্চা তার মার মতো হয়েছে আবার বাবাকে দেখলে মনে হয় বাচ্চা তার বাবার মতো হয়েছে…. আসলে কার মতো হয়েছে বলুন তো?
নীরার কথায় শব্দ করে হেসে উঠে সবাই। নীরাকে বাড়িতে আসার নিমন্ত্রণ জানিয়ে বউ নিয়ে বিদায় নেয় তারা। বাসায় ফিরে বউকে ড্রয়িং রুমে বসানো হলে বেশ কয়েকটা ছবি তোলে নেয় জেনি। বউয়ের নাম আফসানা রূপ। বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সে। শান্ত মেজাজের গোলগাল মিষ্টি একটি মেয়ে। রাত ১২ টার দিকে বাসর ঘরের দরজায় ভীর জমায় সবাই। দরজায় উঁকিঝুঁকিতে মেতে উঠে রোদ-রুহিসহ রাতুল- সাকিবও। হ্যারিও দু’একবার কান পেতেছে। রোদরা যে উদ্দেশ্যে কান পেতেছে সেজন্য নয় ছেলে-মেয়েরা কি শোনার চেষ্টা করছে তা বোঝার জন্যই কান পেতেছে সে। কিন্তু আফসোস! কিছুই কানে আসে নি তার। অভ্র,শুভ্র, শিশির আর সাহেল কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। শালার বিয়ে হলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করা গেলেও রাহাতের বিয়েতে তা সম্ভব নয়। রাহাত সম্পর্কে ওদের দু’জনেরই বড়। বউয়ের বড় ভাই বলে কথা! শিশির সবসময়ই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ, তাই এসব বিষয় থেকে দূরে থাকাটাই বেশি পছন্দ করে সে। তার বউ দরজার সামনে কান পেতে দাঁড়িয়ে আছে বলেই এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে তাকে। শুভ্র,অভ্র এগোয়নি বলে সাহেলও আর যায় নি সেদিকে। ঘুমন্ত ছেলেকে কোলে নিয়ে চুপচাপ নাবিলার জন্য অপেক্ষা করছে সে।
🍁
রাত একটার দিকে রুমে ঢুকে শুভ্র। রোদ জানালার গ্রিল ধরে তাকিয়ে ছিলো আকাশে। শুভ্র পা টিপে রোদের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। দু’হাতে কোমর জড়িয়ে ঘাড়ে মুখ লুকায় । সাথে সাথেই কেঁপে উঠে রোদ৷ শুভ্র ধীর গলায় বলে,
— কাহিনী কি রোদপাখি? আজ সারাদিন চুপিচুপি দেখছিলে আমায়। নতুন করে প্রেমে পড়ছো নাকি?
রোদ ঘুরে দাঁড়ায়। শুভ্রর গলা জড়িয়ে ধরে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়। টলমলে চোখে বলে,
— ছেলেদের এতো বেশি সুন্দর মানায় না শুভ্র সাহেব। সৌন্দর্য মেয়েদের জন্য… প্রকৃতি কিন্তু এই অবিচার মানবে না জাহাপনা।
শুভ্র হাসে। কোমরের বাঁধন আরো শক্ত করে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,
— না মানলে নেই। সুন্দরী বউয়ের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য একটু আধটু অবিচারে ক্ষতি নেই বেগম সাহেবা। কিন্তু মহারাণীর গাল বেয়ে পানি গড়ালেই মহারাজের ক্ষতি হয়ে যাবে খুব।
রোদ হাসে। সাথে সাথেই গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে জল। শুভ্র বিরক্ত হয়ে বলে,
— কাঁদছো কেন? এটা কাঁদার মতো কিছু হলো?
— আপনি আমায় এতো ভালো কেন বাসেন মাস্টারমশাই? একটু কম ভালোবাসতে পারেন না? ভয় লাগে খুব৷ মার ঘরের পাশ থেকে আসার সময় শুনলাম আমি কোমায় থাকতে খুব রাগারাগি করেছিলেন ওদের সাথে।
শুভ্র রোদকে ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। বিছানায় বসে গম্ভীর মুখে বলে,
— রাগারাগি কিছুই করিনি। শুধু বলেছি আমার বউ-বাচ্চা থেকে দূরে থাকুন। তাদের জন্য আমি একাই যথেষ্ট।
রোদ শুভ্রর পাশে বসে কাঁধে মাথা রাখে। ডানহাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
— আমি খুব করে চাই শুভ্রতা আপনার মতো হোক। কঠিন পরিস্থিতিতে শক্ত হতে শিখুক।আপনার জায়গায় আমি থাকলে ভেঙে পড়তাম। কেঁদে কেটেই শেষ হয়ে যেতাম।
শুভ্র রোদের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে হাসে। বলে,
— একদম না। তুমি আরো বেশি পারতে রোদু। কারণ মেয়েদের সহ্য শক্তি ছেলেদের থেকে ঢের বেশি। কঠিন পরিস্থিতিতে দুর্বল মেয়েটাও হুট করেই কঠিন হয়ে ওঠে। আমি শক্ত ছিলাম না রোদপাখি, তোমাতে সিক্ত ছিলাম মাত্র। শুভ্রতাকে ঘুম পাড়িয়ে রাতে তোমার ঘুমন্ত মুখটা দেখলেই ঠান্ডা হয়ে যেতো বুক৷ তবুও মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে উঠতাম। তোমার কন্ঠ শোনার জন্য পাগল হয়ে উঠতাম। তখন নিজেকে খুব অসহায় লাগতো। খুব বেশি অসহায়। তখন তোমার বুকে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকতাম। তোমার হৃদস্পন্দনের তালে তালে যেন তোমার কন্ঠ ভেসে বেড়াতো। হাজারও কথা বলতো কানে কানে।
এটুকু বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুভ্র। রোদকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে কাঁপা গলায় বলে,
— তোমার হৃদস্পন্দন সবসময় একটা ধ্বনিই করতো “তোকে চাই” “তোকে চাই” এবং “তোকেই চাই”। আমিও শুধু তোকেই চাই রোদপাখি। জীবনের শেষ মুহূর্তেও তোমার হৃদস্পন্দনের তালে এই শব্দটাই শুনতে চাই।
রোদের চোখ জলে ভেসে উঠে। সাথে সাথেই করাঘাত পড়ে দরজায়। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে দরজা খুলতে পা বাড়ায় রোদ। শুভ্রতাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রোদর মা। রোদকে দেখে ইতস্তত গলায় বলেন,
— হঠাৎ জেগে ওঠে বলে, আম্মু যাবো। কিছুতেই রাখতে পারছিলাম না রে…
রোদ হেসে মায়ের কোল থেকে শুভ্রতাকে নিয়ে বলে,
— আগেই বলেছিলাম,থাকবে না। শুনলে না তো।
মাকে বিদায় দিয়ে দরজা লাগিয়ে মেয়েকে নিয়ে বিছানায় আসে রোদ। নানুকে এতো জ্বালিয়ে মায়ের কোলে আসা মাত্রই ঘুমিয়ে পড়েছে মেয়েটা।মেয়েকে শুইয়ে পাশে শুতেই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলে উঠে শুভ্র,
— আমারও ঘুম পাচ্ছে। আমাকেও ঘুম পাড়াও রোদপাখি।
রোদ হেসে ওঠে। শুভ্রও মুচকি হেসে মুখ ডুবায় তার ঘাড়ে।
রাত প্রায় তিনটা৷ ঘড়ির আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় রোদেলার। দু’পাশ থেকে দুজন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে তাকে। মেয়ের হাত সহজে ছাড়ানো গেলেও মেয়ের বাপের হাত ছাড়ানো মহামুশকিল। অনেক কৌশলে হাত ছাড়িয়ে উঠে বসে রোদেলা। জানালার হালকা গোলাপী পর্দাটা সরিয়ে দেয় সে। বাইরের ঝিরিঝিরি বাতাস এসে লাগছে মুখে-চোখে। জানালার পাশে থাকা টেবিলে চেয়ার টেনে বসে রোদেলা। প্রাণভরে শ্বাস টেনে নিয়ে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দেয়। ব্যাগ থেকে ডায়েরীটা বের করে আবারও লিখতে বসে সে। হাজারও জল্পনা-কল্পনা আর অনুভূতিগুলো সাজাতে থাকে সাদা কাগজে। হয়তো অনেক অনেক বছর পর এই অনুভূতিগুলোই হয়ে উঠবে ভালোবাসাময় কিছু স্মৃতি। মনে করিয়ে দিবে যৌবনের হাজারও বাসনা আর লাজুক ভালোবাসাকে। ছোট্ট ছোট্ট খুনশুটি, আবেগের তাড়নায় ভাসা ফোঁটা ফোঁটা কান্না।

_______________সমাপ্ত ________________
(এতোটা ধৈর্য ধরে পাশে থাকার জন্য প্রত্যেকটা পাঠককে লেখিকার সুপ্ত ভালোবাসা। কল্পনা,জল্পনা আর ভালোবাসাময় এই গল্পের অনেককিছুই অনেকের মনকে ছুঁয়ে দিতে পারে নি। কারো কাছে মনে হয়েছে এটা নিছকই একটা সিরিয়াল। তাদেরকেও অসংখ্য ভালোবাসা পাশে থাকার জন্য। বাস্তব জীবনটা আসলেই এতোটা সুন্দর হয় না তবে আমরা চেষ্টা করলে জীবনটা একটু হলেও নিজের মতো করে, ভালোবাসায় পূর্ণ করে সাজিয়ে তুলতে পারি। সবার সাথে হাসিতে মেতে ওঠে কষ্টগুলোকে দূরে ঠেলে দিতে পারি। আপনার অন্যকে বোঝার একটু চেষ্টাও এনে দিতে পারে অনেক প্রশান্তি। “তোকে চাই” অনেকটাই রূপকথার মতো। রূপকথার আদলে লেখা ভালোবাসার গল্প। সবাই ভালো থাকবেন। ভালোবাসাময় এই জীবনটাকে ভালোবেসে সবটা উপভোগ করবেন। এই আশায় বিদায় নিচ্ছি। ধন্যবাদ❤)

বিঃ দ্রঃ “ লেখাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা ” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন !!

👉 আমাদের ফেসবুক পেজ