তোকে চাই !! Part- 25
রাস্তার পাশের রেস্টুরেন্টে বসে আছে শুভ্র,,পাশে একটা মেয়ে।।মেয়েটাকে চিনতে আমার খুব বেশি কষ্ট হলো না।।এই সেই তিতা লাউ,,আই মিন মিথিলা।।।শুভ্র তাকে কিছু একটা বলছে আর মিথিলা শুভ্রর হাত চেপে ধরে বসে আছে।।ব্যাপারটা দেখে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো।।এটাই উনার ইম্পর্টেন্ট মিটিং যার জন্য আমাকে ড্রপ করার মতো টাইম তার হলো না।।আমার থেকে এই মেয়েটা উনার কাছে বেশি ইম্পোর্টেন্ট??হবেই না বা কেন,,,আমার তো মনে হয়,,,,আমি ছাড়া এই পৃথিবীর সবাই উনার কাছে ইম্পোর্টেন্ট।।।আমার থাকা না থাকা আসলেই কি উনাকে বিন্দুমাত্র ভাবায়??আমার তো মনে হয় না।।।।মাথা ব্যাথাটা আবার নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে,, ইচ্ছে করছে দুজনের মাথা খুব জোড়ে ঠুসে দিই।।
।
ড্রাইবার চাচা??গাড়ি ঘুরান,,,বাসায় যাবো।।
।
কেন মা??কোচিং যাবেন না?
।
না চাচা,,শরীরটা ভালো লাগছে না,,বাসায় যাবো,,
আইচ্ছা মা।।।
।
বাড়ির দরজায় পা দিতেই মামানি হাজির,,,তার চোখে-মুখে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ স্পষ্ট,,,,
।
কি রে??চলে এলি যে??(অবাক হয়ে)
।
ভালো লাগছিলো না,তাই চলে এলাম,,,একটু ফ্রি স্পেস দরকার,,আম বোর।।
।
তাহলে এক কাজ কর,,আমার সাথে শপিং এ চল।।।
।
হঠাৎ শপিং এ কেন মামানি?
।
ভাইজানের বাসায়,যাবো।।কতোদিন পর যাচ্ছি,, তাই ভাবলাম ওদের জন্য কিছু কেনাকাটা করবো,,,তুই আমাকে হেল্প করবি চল।।।তাছাড়া,মাইন্ডও ফ্রেশ হয়ে যাবে,,,চল না,, মা।।
।
আচ্ছা চলো,,,(হালকা হেসে)
।
লক্ষী মেয়ে,,চল… ….(গালে হাত রেখে)
।
।
প্রায় দু’ঘন্টা ধরে শপিং মলে ঘুরে বেড়াচ্ছি এখনো একটা শাড়ি পছন্দ করতে পারে নি মামানি।।।তার ধারনা তার ভাবিমা কে যেনতেন জিনিস দেওয়া যাবে না,,অবশ্যই স্পেশাল শাড়ি দিতে হবে।।তাই এতো ঘুরাফেরা।।একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছি,,আমার চোখে মুখে বিরক্তি স্পষ্ট,,হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো,,,”এই শাড়িটা কেমন??”।।কথাটা শুনে আমি আর মামানি দুজনেই ফিরে তাকালাম।।।সাহেল ভাইয়া ফিরোজা রংয়ের একটা শাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।।।শাড়িটা দেখে মামানি বেশ খুশি হলেন বলেই মনে হলো,,খপ করে শাড়িটা নিজের হাতে নিয়ে তৃপ্তির হাসি দিলেন,,,
।
থেংকিউ বাবা,,,,শাড়িটা আসলেই সুন্দর।।
।
চাচিমনি তুমি আমাকে থেংকিউ বলছো??(মুখ গোমড়া করে)
।
তুমি কে??আমায় চেনো??(কনফিউজড হয়ে)
।
দেখছো চিনতে পারো নি??আমি সাহেল,,,(মন খারাপ করে)
।
সাহেল??আরে,,,তুই তো তালগাছের মতো লম্বা হয়ে গেছিস??
।
শুধু লম্বা?(ভাব নিয়ে)
।
হ্যান্ডসামও হয়েছিস,,,,
।
উনাদের কথা শুনে আমি হেসে দিলাম,,,তখনই মামানি আমাকে ইশারা করে বলে উঠলেন,,” ও রোদ,,শুভ্রর……”
।
রোদের সাথে পরিচয় হয়েছে,,সেদিন শুভ্র আর রোদের সাথে দেখা হয়েছিলো(মুচকি হেসে)
।
ওহ,,তাহলে তো ভালোই,,চল তাহলে এবার আমাকে হেল্প করবি,,,
।
আচ্ছা চলো,,
।
সাহেল বেশ মজার মানুষ,,পুরোটা সময় আমাকে আর মামানিকে হাসিয়েছে,,,একদম লাঞ্চ করে তবেই বাসায় ফিরেছি।।সাহেল মামানিকে একটা শাড়ি গিফ্ট করেছে,,,আমাকেও দিতে চেয়েছিলে বাট আমি নেই নি।।কিন্তু গাড়ি থেকে নামার সময় সাহেল এক প্রকার জোড় করেই হাতে একটা গিফ্ট বক্স ধরিয়ে দিয়েছে,,,মামানি নিতে বলাই আমিও আর মানা করি নি।।।গিফ্ট বক্সটা খুলে বেশ অবাক হলাম,,,বাক্সে খুবই সুন্দর একটা পায়েল,,,একদম নিউ কালেকশান।।।সারাদিনের ঘুরাঘুরিতে একদম টায়ার্ড হয়ে পড়েছি,,,বিছানার উপর উনার ফোনটা পড়ে থাকতে দেখে আমার ফোনের কথা মনে পড়লো,,সারাদিনে একবারও চেক করা হয়নি।।ব্যাগ খুঁজে ফোন বের করেই চরম অবাক হলাম,,,একটা আননোন নাম্বার থেকে ৬৪ মিসড কল।।কার এতো দরকার পড়লো যে এতোবার কল দিয়েছে।।।এসব ভাবতে ভাবতেই ফোন আর গিফ্ট বক্সটা বিছানার উপর রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।।।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আবারো অবাক হতে বাধ্য হলাম,,,বিছানায় রাখা আমার পায়েলটার পুঁতি-পাথর সব ঘরের মধ্যে ছিটাছান হয়ে পড়ে আছে,,আমার ফোনটারও সেম অবস্থা,,,ফ্লোর থেকে চোখ উঠিয়ে উপরে তাকাতেই মেজাজ গরম হয়ে গেলো,,,,শুভ্র সোফায় বসে খুব মনোযাগ দিয়ে লপটপে কাজ করে চলেছে,,,,আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে,,, কাজটা কার।।।উনার সামনে কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে রাগী গলায় জিজ্ঞেস করলাম,,,
।
এসব কে করেছে???
।
আমি কিভাবে জানবো??(লেপটপের দিকে তাকিয়ে)
।
নেকামু করবেন না,,,আমি জানি এসব আপনিই করেছেন,,,
।
তো??
।
তো মানে?এসবের মানে কি???
।
করেছি বেশ করেছি।।
।
বেশ করেছেন মানেটা কি??আমি যেহেতু আপনার কোনো জিনিস টাচ করি না,,আপনারও উচিত আমার জিনিস টাচ না করা,,,আমি আপনাকে সেই অধিকার দেই নি।।।
।
আমার কথাটা শুনেই উনার চোখদুটো লাল বর্ণ ধারন করলো,,হুট করে দাঁড়িয়ে,,আমাকে শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরলেন,,,মনে হচ্ছে আমার হাড্ডি মাংস এক হয়ে যেতে বেশি দেরি নেই।।।
।
আমাকে অধিকার দাও নি??তো কাকে দিয়েছো সাহেলকে???(দাঁতে দাঁত চেপে)
।
বাজে কথা বলা বন্ধ করুন আর ছাড়ুন আমাকে,,,,
।
কেনো ছাড়বো হ্যা??আমার টাকা নেই??নাকি আমার কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই যে সাহেল থেকে তোমার জিনিস নিতে হবে,,,,,নাকি ওর দেওয়া জিনিসে মধু আছে??(আরো জোরে চেপে ধরে)
।
থাকলেই আপনার কি???উনি জিনিসটা মন থেকে ভালোবেসে দিয়েছেন মধু তো থাকবেই,,,আর আপনার দেওয়াতে থাকে শুধু দায়বদ্ধতা,,, ছাড়ুন আমায়,,,(চিৎকার করে)
।
তাই?ভালোবাসা???এত্তো ভালোবাসা??ওর ভালোবাসায় ডুবে গিয়েই বুঝি আমার ফোন রিসিভ করার টাইম পাওনি,,হ্যা??(রাগী চোখে)
।
আপনার যা মনে হয় তা ভাবতে পারেন,,আই ডোন্ট কেয়ার।।
।
বলে উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে গিয়ে উল্টো দুজনেই খাটে গিয়ে পড়লাম।।।উনার জন্য বেশ সুবিধায় হলো বলে হচ্ছে,,,,আমাকে বিছানার সাথে শক্ত করে চেপে ধরলেন,,,
ইউ ডোন্ট কেয়ার না???তোমার কোনো ধারনা আছে,,,,ড্রাইভার চাচা যখন ফোন দিয়ে বললো,,তুমি অসুস্থ তাই মাঝ রাস্তা থেকে ঘুরে আসছো,,আমি কতোটা,টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম।।।ছুটে এসেছি বাড়িতে।।।আর এখানে এসে তো দেখি,,অসুস্থতার নামে রংলিলা চলছে,,,,,,(দাঁতে দাঁত চেপে)
।
আপনাকে বলেছি আমাকে নিয়ে টেনশন করতে??আপনি আপনার ইম্পোর্টেন্ট মিটিং নিয়ে টেনশন করুন সাথে আপনার জাস্ট ফ্রেন্ড মিথিকে নিয়ে,,,,আমি রংলিলা করছি না প্রেমলিলা করছি,,সেটা নিয়ে আপনাকে না ভাবলেও চলবে,,,
।
চুপপ একদম চুপপ,
।
ছোট ভাই -ভাবি,,,খালাম,,,,আআআআআআআ(দুহাতে মুখ ঢেকে)আমি কিছু দেখি নাই।।মাফ করবেন ছোট ভাইজান,,আসলে দরজা খোলা ছিলো ত,,,তাই আর নক করি নাই।।।
।
রাহেলার হঠাৎ আগমনে আমি ভীষন লজ্জায় পড়ে গেলাম,,,সে তো ভাবছে অন্যকিছু কিন্তু এখানে তো হচ্ছে অন্যকিছু,,,,আমি আবারও ছুটাছুটি শুরু করলাম,,কিন্তু উনি ছাড়ার বিন্দুমাত্র প্রয়োজন মনে করছেন বলে মনে হচ্ছে না।।আমাকে আগের মতোই চেপে ধরে রেখে রাহেলাকে বললেন,,,
।
এসে তো গেছিসই এখন আর সরি বলে কি লাভ??তুই নিচে যা আমরা আসছি,,,
।
রাহেলা আইচ্ছা বলেই লজ্জারাঙা মুখ নিয়ে একপ্রকার ছুটে বেরিয়ে গেলো।।।উফফফ,,কি লজ্জার ব্যাপার।।।এই খাটাস টাকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে এই মুহুর্তে,,,
।
কি সমস্যা আপনার??ছাড়ুন বলছি,,,আর হ্যা,,,আপনার জন্য একটা খুশির সংবাদ,,,আমি কালই বাসায় চলে যাবো,,,
।
বাসায় চলে যাবা মানে??(ভ্রু কুঁচকে)
।
বাসায় চলে যাবো মানে বাসায় চলে যাবো।।এখানে আর আমি থাকছি না,,কারো জীবনে অপ্রয়োজনীয় আর অবহেলার বস্তু হয়ে থেকে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।।।
।
এত্তো সাহস??এই বাসা থেকে বের হয়ে দেখাও পা ভেঙে রেখে দিবো।।।
।
কেন??সমস্যা কি আপনার??আপনি তো এটাই চান যে আমি আপনার,জীবনে না থাকি,,তো থাকবো না।।এতে আপনার সমস্যা থাকুক বা না থাকুক,, আমার কোনো যায় আসে না।।।আমি কালই চলে যাবো,, মানে চলে যাবো।।
।
না তুমি যাবে না,,,আমি যেতে দিবো না।।।আজ থেকে কোচিং ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোনোই বন্ধ।।কিভাবে যাও,, সেটাই আমি দেখবো।।।
।
কথাটা বলেই উঠে গেলেন।।আমার মধ্যেও জেদ চেপে বসলো,,,আমি তো যাবোই,,,
।
।
ডায়নিং এ বসে আছি,,,সবাই যার যার মতো খাচ্ছে আর আমি ভাবছি কিভাবে বাড়ি যাওয়া যায়???উনি তো কিছুতেই এলাও করবে না।।হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো,,,
।
মামানি,,, আমিও তোমার সাথে যাবো,,,
।
কোথায়??(অবাক হয়ে)
।
তোমার বাপের বাড়ি,,নিবে না আমায়??
।
তা নিবো,,কিন্তু তোর কোচিং??
।
দুই/তিনদিনেরই তো ব্যাপার,,কিছু হবে না।।।আমায় নিয়ে চলো না প্লিজ,,
।
না,,তোমার কোথাও যাওয়া হবে না,,,,(গম্ভীর মুখে)
।
না না আমি যাবো,,,,
।
আমি না করেছি মানে না,,,
।
মামু???উনাকে একটু বলো না,,,, আমি যাবো(নেকা কান্না করে)আমার মোটেও কিছু ভালো লাগছে না,,,
।
শুভ্র থাক যেতে দে,,,বাচ্চা মেয়ে,
বাবা??তুমি ওকে আস্কারা দিও না প্লিজ,,,এমনি ফাজিল একটা,,
।
এই তুই চুপ কর,,,রোদ মা,,তুই আমার সাথে যাচ্ছিস,,হ্যাপি???
।
হুমমম অন্নেক,,,,
।
উনি আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছেন,,তাতে আমার কি??আমার কাজ তো হয়ে গেছে।।।এবার দেখি শুভ্র বেবি,, তুমি আমাকে কই পাও,,,,,
।
#চলবে…..