তোকে চাই !! Part- 21
উনি আমাকে বসিয়ে আমার কোলে খুব যত্নসহকারে একটা বালিশ রাখলেন,,,তারউপর বই রেখে বললেন,,”পড়ো”।।আমি তো পুরাই “হা”,, এমনিই আমি অসুস্থ আর উনি কি না বলছেন পড়ো,,এটা কোন ধরনের টর্চার??
।
কি হলো পড়া শুরু করো,,,কিছু জায়গা আমি মার্কস করে দিসি,,ওগুলো কমপ্লিট করে দেন ঘুমাবে,,,স্টার্ট।।
।
আমি উনার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছি,,কিন্তু তাতে তার কোনো ভাবান্তর হলো বলে মনে হচ্ছে না।।।আরেকটা ধমক দিয়ে সোফায় লেপটপ নিয়ে বসে পড়লেন।।বুইড়া জামাই হলে এই এক সমস্যা,,,আর কিছু খুঁজে না পেলে বই-খাতা নিয়ে টর্চার করতে চলে আসে।।।ছোকরা টাইপ কাউকে বিয়ে করলে নিশ্চয় রোমান্টিক টর্চার করতো,,,ওটাই ভালো হতো,,,এই সুযোগে এটলিস্ট রোমান্সটা তো হতো।।।কিন্তু এখানে তো,,,
কি হলো???তোমার পড়া আমার কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না কেন??(ধমক দিয়ে)
।
শালা খাটাস,, পড়লে তো পৌঁছাবে,,বা পড়লে কেমনে পৌঁছাবে??হুহ(বিরবির করে)
।
কিছু বললে??(ভ্রু কুঁচকে)
।
নাহ,,পড়,,ছি,,পড়ছি(শুকনো হাসি দিয়ে)
।
ওহ,,,,আচ্ছা পড়ো।।
।
উনি আবার লেপটপের মধ্যে ডুবে গেলেন আর আমি বিরক্তিকর বই-খাতায়।।পড়তে পড়তে কখন যে চোখ লেগে গিয়েছিলো বুঝতেই পারি নি,,,হঠাৎ কারো ধাক্কায় চোখ মেলে তাকালাম,,,শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে,,,তার ঠোঁট ক্রমাগত নড়ছে,,,বুঝতে পারছি উনি কিছু একটা বলছেন কিন্তু হঠাৎ ঘুম ভাঙায় মাথা যেনো হ্যাং মরেছে যার কারনে আমার কান পর্যন্ত কিছু পৌঁছাচ্ছেই না।।।চোখটা আবার বন্ধ করে মাথায় হালকা একটা চাটি দিয়ে,, চোখ খুলতেই দেখলাম শুভ্র আমার দিকে একটা কাপ এগিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন,,,কাপ থেকে ধোয়া উড়ছে ক্রমাগত,,,
।
এই যে মিসেস,,,কফিটা খাও,,ঘুম কেটে যাবে,,এন্ড আবার স্টার্ট করো।।।
আজ ঘুমিয়ে পড়ি,,কাল থেকে পড়বো(মুখ কালো করে)
।
জি না,,,আজ কমপ্লিট করেই ঘুমাবা,,নয়তো ঘুম নাই।।।
।
মুখ গোমরা করে কফি কাপে চুমুক দিলাম,,বাহ,,বেশ টেস্টি তো।।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সাড়ে বারোটা বাজে,,,এতো রাতে কফি কে বানালো?আরিফ চাচা তো ঘুমিয়ে পড়ার কথা।।।
।
আচ্ছা?এতো রাতে কফি কে বানালো??(কৌতুহল নিয়ে)সবাই তো ঘুমিয়ে পড়েছে,,
।
কে বানিয়েছে সেটা ইম্পর্টেন্ট নাকি খাওয়াটা ইম্পর্টেন্ট??(ভ্রু কুঁচকে)
।
দুটোই ইম্পর্টেন্ট,,বলুন না প্লিজজ,,কে বানালো কফি??
।
আমি,,
।
হোয়য়য়াটটট?(চিৎকার করে)
।
কেনো কি হয়েছে??চেঁচালে কেন??(অবাক হয়ে)
আপনি এত্তো ভালো কফি বানান??(অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে)কিভাবে??
।
নীলিকে বানিয়ে খাওয়াতে খাওয়াতে শিখে গেছি,,,ও কফি খুব বেশি পছন্দ করতো।।আমাকে তো রীতিমতো শর্ত দিয়েছিলো,,,যদি ওর জন্য স্পেশাল কফি বানানো শিখতে পারি তবেই ও আমার প্রোপোজাল একসেপ্ট করবে,,নয়তো টাটা বাই বাই,,,এই জন্য পুরো একমাস রান্না ঘরে মাকে কতই না বিরক্ত করেছি আর আম্মুর চামিচের দাগ পিঠে নিয়ে নিজেকে কতোবার যে ধন্য করেছি তার ইয়াত্তায় নাই,,,
।
বলেই উনি ঘর কাঁপিয়ে হুহু করে হেসে উঠলেন,,আমিও হেসে দিলাম।।উনি হাসলে খুব প্রানবন্ত লাগে,,,কি সুন্দর একটা হাসি,,, হঠাৎই উনি হাসি থামিয়ে দিয়ে আমাকে পড়তে বলেই বারান্দায় চলে গেলেন।।।হয়তো বুকের কষ্টটা আবারও চাড়া দিয়ে উঠেছে।।।আর কিছু না ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পড়তে শুরু করলাম।।
।
।
কোচিং -এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি,,,মাত্রই ছুটি হলো।।।কালকের এক্সিডেন্টের পর মামুর কঠিন নির্দেশ শুভ্রর সাথেই আসা-যাওয়ার ব্যাপারটা সম্পন্ন করতে হবে।।।আর আমি তো বরাবরই বাধ্য মেয়ে,,,তাই ঘাড় দুলিয়ে মেনেও নিয়েছি।।ডানের রাস্তার দিকেই আমার নজর,,,ওইদিক থেকেই শুভ্র আসবে,,,চোখদুটো অপেক্ষার প্রহর গুনছে,,এই অপেক্ষা জিনিসটা কিন্তু খুবই বাজে,,,হঠাৎই কারো ডাকে পাশ ফিরে তাকালাম,,,
।
হেই,,রোদ??
।
জি,,আপনি??
।
হুমম,,আজও রিকশার জন্য ওয়েট করছো??(মুচকি হেসে)
।
না ভাইয়া,,আজ আপনার বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছি।।(শুকনো হাসি দিয়ে)
।
আচ্ছা,,কাল শুভ্র ওভাবে রেগে গিয়েছিলো কেনো??মনে হলো রাগের কারনটা আমিই,,,
।
আমি একটা হালকা হাসি দিলাম,,কিছুই বললাম না,,,কিছু বলারও নেই,,,
তোমার হাসিটা খুব সুন্দর।।আচ্ছা,,শুভ্রর সাথে,,
উনার আর কিছু বলার সুযোগ হয়ে উঠলো না।।তার আগেই শুভ্র গাড়ি নিয়ে এসে সামনে দাঁড়ালেন,,,সাহেল ভাইয়াকে দেখে যে উনি রেগে গেছেন তা উনার চেহারায় স্পষ্ট।।।তবু ঠোঁটে একটা বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলেন,,
।
কি রে,,,সাহেল??তুই এখানে??
।
ওহ,,রাহুল ভাইয়ের,সাথে দেখা করতে আসছিলাম৷।। রোদকে দেখে থেমে গেলাম।।।বেচারী একা দাঁড়িয়ে ছিলো,,,তাই ভাবলাম একটু কোম্পানি দেই,,
।
খুব ভালো ভাবনা,,তবে ওকে নিয়ে কম ভাবলেও চলবে,,,রোদ উঠে আসো।।ভালো থাকিস সাহেল,,,
।
সাহেল ভাইয়া উনার কথাটা হয়তো ঠিক ধরতে পারলেন না।।।আমাদের দিকে “হা” করে তাকিয়ে থাকলেন বেশ কিছুক্ষন।।।গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে,,,উনাকে দেখে খুব মনমরা লাগছে,,, কিছু জিজ্ঞেস করার সাহসও হয়ে উঠছে না।।।গাড়িতে উঠার পর থেকে এই পর্যন্ত শুধু এটাই বলেছেন,,,”সাহেল থেকে দূরে থেকো,,আই থিংক হি লাইকস ইউ,,,বাট ইউ আর নট ফর হিম।।”ব্যস তারপর থেকে চুপপ।।।গাড়িটা একটা পার্কের সামনে এসে থামলো।।আমাকে নামতে বলেই উনি হাঁটা দিলেন,,,শত শত প্রেমীযুগলদের প্রেমলীলাকে না দেখা করে পার্কের এক কোনায় এসে দাঁড়ালাম,,,ভাবছিলাম এখানে আসার কারন কি হতে পারে??তখনই একটা মেয়ে বিদ্যুৎ বেগে ছুটে এসে উনাকে জড়িয়ে ধরলেন,,মেয়েটা কাঁদছে,,দেখে মনে হচ্ছে জামাই মরে গেছে,, হুহ যত্তোসব আজাইরা,, ,আমি রীতিমতো বরফ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।।এসব কি??আমার জামাই আরেকজনের সাথে প্রেম করার জন্য আমাকে সাথে এনেছে???কি অদ্ভুত ব্যাপার।।
।
#চলবে,,