জীবন !! লেখাঃ স্পৃহা ঢালী
জীবন
আমি যখন ক্লাস টেন এ পড়ি।একদিন পাশের বাসা থেকে খুব চিল্লাচিল্লি আর ভাঙচুর এর শব্দ শুনতে পাই। আমাদের বাসা থেকে আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিলো কারণ একবারে পাশের বাসা টাই যে সেই জন্য।
আম্মু দৌড়ে সেই বাসায় গিয়ে দেখে,পাশের বাড়ীর ভাইয়া টা তাদের ঘরে যা কিছু আছে সব ভেঙে ফেলছে।আম্মু দেখেই বল্লো,কি হইছে বাবা তুমি এমন করতেছো কেন?
ভাইয়া তাদের বাসার কারো কথা শুনতেছিলোনা।থামতেছিলোনা।
আম্মু হঠাৎ দেখে ভাইয়ার হাত থেকে রক্ত বেরুচ্ছে।হাত কেটে নাম লিখেছে যেন কার।আম্মু ভালো মত খেয়াল করে তাকাতেই দেখে পৃনয়ী।
অথচ তার সাথে আমার কোন রকমের কোন সম্পর্ক ছিলোনা বা তার সাথে আমি কোন দিন একা আড়ালে কোন কথাও বলিনি।
ভাইয়া ডিরেক্ট আম্মুকে বলে দিলো,
আমি পৃনয়ীকে বিয়ে করতে চাই কাকী।আমি ওকে ভালবাসি।
(বিঃ দ্রঃ “( জীবন !! লেখাঃ স্পৃহা ঢালী )” গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)
সেদিন আম্মুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিলো।কারণ আব্বু আম্মু ভাইয়াকে মেয়ের জামাইর নজরে কোন দিন দেখেনি বা সম্ভবওনা কোন দিন এটা।
আব্বু আম্মুর স্বপ্ন আমাকে পড়াশোনা শেষ করাবে।আর ভাইয়া ছিলো ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়া।
আব্বু আম্মু সব সময় পড়ালেখাকে গুরুত্ব দেয়।
ভাইয়াদের সাথে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো।খুব ই ভালো।
প্রতিবেশী বলে কথা।এত ভালো সম্পর্ক ছিলো যে আম্মু যা ভালো কিছু রান্না করতো তাদের না দিয়ে খেতোনা।
তারাও সেইম।
সেদিনের পর থেকে ধীরেধীরে কাকাদের সাথে মানে ওই বাড়ীর সাথে সম্পর্ক টা নষ্ট হতে থাকলো।ভাইয়ার আপুরা কেউ আমার সাথে কথা বলতোনা।খুব কান্না পেতো।কাঁদতাম।আম্মুকে বলতাম,আম্মু আপুরা কেউ কথা বলেনা কেন আমার সাথে?
আমার কি দোষ?
কাকা কাকী সবাই আমাদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলো।
s.s.c পাশ করলাম।
আম্মু মিষ্টি পাঠালো রেখেছিলো তারা।একটা আপুর বিয়ে হলো দাওয়াত দিলোনা আমাদের।এলাকার সবাই গেলো বিয়েতে।শুধু আমরা ছাড়া।
অথচ বাড়ীর পাশে বাড়ী।সব দেখা যাচ্ছে আমাদের বাসা থেকে।
দু বছর কেটে গেলো আমি ইন্টার পরীক্ষা দিলাম,
এর মধ্যে এলাকার দুইটা ছেলে বিয়ের প্রস্তাব দিলো।
পরে শুনি ভাইয়া ওদের গিয়ে না করে দিয়ে আসছে।
যদিও আব্বু আম্মুও দিতোনা।
ইন্টারের বন্ধ থাকা অবস্থায় আরেক প্রতিবেশী আপুর বিয়ে হয়।
বিয়েতে আমরা সবাই যাই।হলুদের অনুষ্ঠানে ভাইয়ার ই চাচাতো ভাই আমার পিছু পিছু ঘুরতে থাকে কি যেন বলতে।
আমি দেখেও না দেখার ভান করে সরে যাই।
শেষমেস যখন আমি আপুকে হলুদ দিতে যাই।তখন ভাইয়াটার চাচাতো ভাই দৌড়ে এসে আমার অপর সাইডে বসে।
এগুলো দূর থেকে ভাইয়া সব দেখছে।
তো ছেলেটা আস্তে আস্তে আমাকে বলছে,
পৃনয়ী,একটু কথা ছিলো।প্লিজ একটু আসবা?
আমি যাইনি।
আমি আমার এক ফ্রেন্ডকে নিয়ে বাসায় চলে আসি।
বিয়ের দিন শুনি ভাইয়া ওই ছেলেটাকে প্রচুর মেরেছে।
কারণ ওকে ভাইয়া জিজ্ঞেস করেছে ও কেন আমার পিছু ঘুরঘুর করছে, ভাইয়াকে তখন ও বলেছে ও আমাকে ভালবাসে।
আর কি কথা হয়েছে জানিনা।
খুব মারামারি হয়েছে সেদিন রাতে।
এবার পুরো এলাকা জানাজানি হলো।আমার জন্য মারামারি হইছে।
অথচ অযথা এই ঝগড়া মারামারি করেছে তারা।তাদের না আমি কাউকে পছন্দ করি বা কিছু।
ওদের বাবারা এসে সেদিন আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
আমি কাকে বিয়ে করতে চাই?
বা কাকে ভালবাসি।আমি সবার সামনে বললাম,আমি এদের কাউকে ভালবাসিনা।
আমার আব্বু তখন বাসায়।
আব্বু গেলো রেগে,
ছেলে দুইটারেই জিজ্ঞেস করলো আমার মেয়ে কি তোমাদের কোন দিন বলছে ও তোমাদের ভালবাসে?
ওরা উত্তর দিলো,
না।
কোন দিন বলছে তোমাদের বিয়ে করবে?
ওরা উত্তর দিলো,
না।
তাহলে কেন এরকম আজাইরা কাম কাজ করতেছো?আমার মেয়েকে তো বিয়ে দিতে হবে নাকি?
সবাই বলবে আমার মেয়ে ভালোনা।
কাকা উত্তর দিলো,
ও ভালোনা কেউ বলবেনা।কারণ সবাই জানে এলাকার,ও কেমন।
-তা জানে,কিন্তু আপনার ছেলে আর ভাতিজা যা করতেছে এগুলো তো এলাকা ছেয়ে গেছে।যে আমার মেয়ের জন্য মারামারি হইছে।এগুলা কি ভালো কথা?
ভাইয়া বল্লো,কাকা আমি পৃনয়ী কে ভালবাসি।যখন ও ক্লাস টেন এ পড়ে তখন থেকে।
ভাইয়ার কথা শুনে মনে হইছিলো তার মাথায় গিয়ে একটা ইট দিয়ে বারি দিয়ে আসি।কত্ত বড় সাহস,আমার আব্বুর সম্মুখে কথা বলে।
এদিকে ওই ছেলেও বল্লো সে আমাকে বিয়ে করতে চায়।
আব্বু সোজা বলে দিলো,
আমি আমার মেয়েকে তোমাদের দুজনের কারো কাছে বিয়ে দিবোনা।
ভাই আপনারা এখন নাস্তা করেন।
আর আপনাদের ছেলেরা যেন আর এমন কিছু না করে।তাহলে আমি থানায় জানাতে বাধ্য হবো।
কাকারা সেদিন চলে গেলেন,
ভাইয়ার বাবা পরের দিন ই ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখা শুরু করলেন।
যেই মেয়েই দেখায় ভাইয়ার পছন্দ হয়না।
সে বিয়ে করবেনা।
আবার কেটে গেলো অনেক অনেক দিন।
আমি আবার ভর্তি হয়ে পড়তেছি।
একদিন কাকী আমাদের বাসায় আসলো,
এত বছর পর।
এসে আমাকে বল্লো,দেখ মা।সালমান তোরে খুব ভালবাসে।তুই কি ওরে বিয়ে করবি?
আর যদি না করস তাহলে একটু ওরে বুঝাইয়া বল,ও যেন অন্য কাউরে বিয়ে টা করে নেয়।
নয়তো এভাবেই ঝামেলা চলতে থাকবে।
ও কোন মেয়েই পছন্দ করেনা।
ভাইয়া আমাকে এত ভালবাসার পরও তার প্রতি কেন যেন আমার কোন ভালবাসাই আসেনি কোন দিন।
আমি কাকীকে বললাম,কাকী আমি ভাইয়াকে শুধু ভাই এর নজরে দেখেছি।আর কিছু সম্ভব না আমার দ্বারা।
কাকী বল্লো,তাহলে তুই ওরে বিয়ে করতে বল।
আমি কাকীকে বললাম,আচ্ছা আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলবো।
এই প্রথম আমি ভাইয়ার সাথে একা কথা বলি।
-এসব কি ভাইয়া?আপনি কেন এখনো এমন পাগলামো করতেছেন?একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিন।
সে আপনাকে খুব ভালো রাখবে।
আমি অন্য একজনকে ভালবাসি।
আসলে তখন আমি কাউকেই ভালবাসিনা।
তো ভাইয়াকে খুব ভালো ভাবে বুঝালাম আমি যে তাকে কোন দিন বিয়ে করবোনা।
আর সে যেন বিয়ে করে নেয়।
ভাইয়া আমাকে প্রশ্ন করলো,
এটাই কি তোর শেষ কথা?
আমি বললাম,হ্যাঁ।এটাই আমার শেষ কথা।
আরপর ভাইয়া আমাকে তার শেষ কথা বল্লো,
.একদিন তুইও কাউকে ভালবাসবি,আর তাকে যখন পাগলের মত চেয়েও পাবিনা।
সেদিন বুঝবি আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি তোকে ভালবেসে।
এরপরের দিনই ভাইয়ার পরিবার একটা মেয়ে দেখে আর ভাইয়া হ্যাঁ বলে দেয়।
ফাইনালি ভাইয়ার গায়ে হলুদ হয়ে গেলো।আজ।
এবারও আমরা দাওয়াত পাইনি।
সবাই গেছে হলুদে।
শুধু আমরা ছাড়া।
মনে মনে ভাবলাম।
যাক বাবা,শেষ পর্যন্ত তো বিয়েটা হচ্ছে।
এটাই অনেক।
এখন বুঝি সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু আমার ধারণা পুরাই চেঞ্জ করে দিয়ে হলুদের রাতে ভাইয়া আম্মুর নাম্বারে ফোন দিয়ে আমাকে চাইলো।
আম্মু অনেক বার না করলো,বল্লো আজ আর কথা বলতে হবেনা।
কিন্তু ভাইয়া বল্লো,
কাল তো বিয়েই করে ফেলতেছি কাকী।এখন আর কি সমস্যা?
দিন ওকে একটু।
আম্মু আমাকে ফোন টা হাতে দিলো।আর আম্মু আম্মুর রুমে চলে গেলো।
-হ্যাঁ ভাইয়া বলেন।
-তুই কি আজ রাতে আমার সাথে পালিয়ে যাবি?নাকি আমি ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আমার জীবন দিয়ে দিবো?
সিদ্ধান্ত তোর হাতে।
ভেবে দেখ কি করবি।
ভাইয়ার কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেলো।
হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো।
রাত পেরুলেই ভাইয়ার বিয়ে।
আর ভাইয়া এসব কি বলছে?
আর আমিই বা এখন কি করবো?
চলবে