চন্দ্রাবতী আসছে ! Part- 05
প্রফেসর বিশ্বাস বললেন
-সুখী ছিল রাজ পরিবারের রাজকন্যা।সুখীর তার বাবা মায়ের একটা কন্যায় ছিল।তার কোন ভাই বোন ছিল না।কিন্তু সুখী ছিল অসাধারণ গুণে গুণান্বিত।অল্প বয়সেই সুখী অস্র এবং যুদ্ধ বিদ্যায় পারাদর্শী হয়ে পড়ল।কিন্তু রূপকথার রাজকন্যার গল্পের মত সুখী এত সুন্দরী ছিল না।যেহুত সুখীর কোন ভাই ছিল না তাই খুব অল্প বয়সেই সুখী তার বাবার রাজ্যের দায়ভার নিজের কাঁধে নিল।অত্যন্ত ন্যায় নিষ্ঠার সাথে সুখী রাজ্য পরিচালিত করতে লাগল।যুদ্ধের বিভিন্ন কৌশল দিয়ে একের পর এক রাজ্য দখল করতে লাগল।
ঠিক একই ভাবে একদিন পাশের রাজ্য থেকে সুখীর রাজ্য দখলের জন্য হামলা করা হয়।কিন্তু সুখী তার যুদ্ধবিদ্যার নতুন কৌশল গুলো অবলম্বন করতে থাকে।পাশের রাজ্যের রাজা যখন বুঝতে পারল সুখীর কাছে পরাজিত হবে অচিরেই তখন তিনি সন্ধি করার জন্য সুখীর সাথে সেই রাজ্যের রাজপুত্র অর্জুনের বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।এবার সুখী বেশ চিন্তায় পড়ে গেল সে বিয়ে করবে কি না।বিয়ে করে সন্ধি করাটা ঠিক হবে কিনা।কারন সুখী তেমন সুন্দরি ছিল না অপরদিকে রাজপুত্র অর্জুন ছিল অনেক সুন্দর সুপুরুষ।বিভিন্ন রাজ পুত্রের মধ্যে যদি কখনও সুন্দরের প্রতিযোগিতা হয় তাহলে রাজপুত্র অর্জুন অনায়েসে সেটাতে জয় লাভ করবে।এবার সুখী বেশ দুটানায় পড়ে গেল।বুঝতে পারছিল না এত সুন্দর যুববকে বিয়ে করলে যুবক মানতে পারবে কি না।সুখী ভেবে কোন উপায় না পেয়ে রাজ্যের রাজ পিতার সন্নিকটে শরণাপন্ন হল আর বলল
-পিতা আমি কি আপনার রুমে প্রবেশ করতে পারি?
রাজপিতা বললেন
-আস মা।
সুখী রাজপিতার সন্নিকটে এসে বলল
-পিতা আপনি নিশ্চয় সব শুনেছেন এ রাজ্যে কি হচ্ছে।আপনার অজানা কিছু নেই হয়ত।হয়ত এটাও জেনেছেন পাশের রাজ্য সন্ধি করতে চেয়েছে।আর সন্ধির চিন্হ স্বরূপ আমার সাথে রাজপুত্র অর্জুনের বিবাহের প্রস্তাব প্রদান করেছেন।এখন আমি কি বিবাহের প্রস্তাবে রাজি হব কি না বেশ দুটানায় পড়ে গিয়েছি।
এবার রাজপিতা সুখীর প্রশ্নের জাবাবে উত্তর দিলেন
-এত বেশ উত্তম প্রস্তাব।রাজি না হওয়ার কারন তো দেখছি না।দুটি রাজ্যের বন্ধুত্ব দৃঢ় হবে এতে।আর তোমারও যথেষ্ট বিয়ের বয়স হয়েছে।এতে দুটানায় পড়ার কোন কারন দেখছি না।
এবার সুখী কিছুটা চুপ হয়ে থেকে রাজপিতাকে বলল
-পিতা আপনি তো জানেন আমি কোন রূপবতী মেয়ে না।অপরদিকে অর্জুন একজন সুপুরুষ সুন্দর যুবক।তার সাথে বিয়ে হলে সে কি আমার মত কালো একটা মেয়েকে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে?আমি সে চিন্তা করেই দুটানায় আছি।আপনি একটু ভেবে বলুন আমার কি করা উচিত।কারন একমাত্র আপনিই এ রাজ্যের সবচেয়ে বয়স্ক একজন মানুষ।নিশ্চয় আপনার চিন্তা ভাবনার মাপ কাঠির তুলনায় আমার চিন্তা ভাবনার মাপকাঠি অতি নগন্য।আমাকে একটু সুপরামর্শ দিয়ে সাহায্য করুন।
রাজপিতা এক রাশ হাসি দিয়ে সুখীকে জবাব দিল
-এতে ভাবার কিছু দেখছি না মা।তুমি এ প্রস্তাব নির্দ্বিধায় গ্রহণ করতে পার।আর বাহ্যিক সৌন্দর্য কারও গুণ নির্ধারণ করতে পারে না।সুন্দর তো সে যার ভিতরটা সুন্দর।আর আমি জানি সে সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা হলে আমার সুখী মা সেখানে প্রথম হবে।মা তোমার চিন্তা করার কোন কারন নেই।তুমি পাশের রাজ্যের প্রস্তাব গ্রহণ করতে পার অনায়েসে।
রাজপিতার কথা শুনে সুখী যেন একটু ভরসা পেল।রাজ পিতার সাথে কথা শেষ করে সুখী রাজ পিতার রুম থেকে প্রস্থান নিল।নিজের রুমে গিয়ে সুখী আরও কিছুক্ষণ ভাবল।তারপর পাশের রাজ্যে বার্তা পাঠাল যে সুখী তাদের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে।
এ বার্তা পাঠানোর কিছুদিনের মধ্যেই রাজপুত্র অর্জুনের সাথে সুখীর বিবাহ সম্পন্ন হয়।বিবাহের প্রথম দিকে সুখী আর অরর্জুনের সম্পর্ক ভালোই কাটতে লাগল।বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই সুখী জানতে পারল যে সে মা হতে চলেছে।এ সংবাদটা পেয়ে সুখী বেশ খুশি হল।কারন একটা মেয়ের কাছে মাতৃত্বের চেয়ে বড় সুখ আর কিছু হতে পারে না।সুখীর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তার একটা মেয়ে সন্তান হবে তাই সে স্থির করল যে, সে তার মেয়ের নাম রাখবে চন্দ্রাবতী।
কিন্তু এ মুহুর্তে সুখীর রাজ্যের দায়িত্ব পালন করাটা বেশ মুশকিল হয়ে পড়ছিল।তাই সুখী চিন্তা করল সমস্ত রাজ্যের দায়িত্ব সে অর্জুনের হাতে দিবে।যা ভাবল সেই কাজ করল সুখী তার রাজ্যের সমস্ত দায়িত্ব তার স্বামী অর্জুনকে প্রদান করল।আর সুখী ঠিক এ জায়গাটায় বেশ বড় একটা ভুল করে বসল অর্জুনকে সমস্ত দায়িত্ব দিয়ে।
কারন অর্জুনকে দায়িত্ব প্রদান করার পর অর্জুনের মধ্যে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করল সুখী।খেয়াল করল অর্জুন আগের মত সুখীকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে না।রাজ্যের দায়িত্ব ও ঠিক মত পালন করছে না।সুখীর প্রতি অর্জুনের এ উদাসীনতা দেখে সুখী বেশ অবাক হল।বুঝতে পারল না সে কি করবে?তার কি করা উচিত?কি করলে সে অর্জুন এর মনের কথা বুঝতে পারবে।সুখী বারবার চিন্তা করে যে অর্জুনকে সে সবটা জিজ্ঞেস করবে কেন অর্জুন তাকে অবহেলা করছে।কিন্তু অর্জুন কি ভাববে এটা চিন্তা করে আর কিছু বলতে পারছে না সুখী।কিন্তু একদিন সাহস করে সুখী অর্জুনকে বলল
-অর্জুন আমি জানতে চাই তুমি আমার সাথে হুট করে এমন ব্যবহার কেন করছ?কেন আমার প্রতি তুমি এত উদাসীন?তুমি তো জান আমাদের কিছুদিনের মধ্যে একটা বাচ্চা আসবে।এখন তো তোমার আমাকে বেশি খেয়াল নেওয়া দরকার।তাহলে কেন তুমি আমাকে এখন কষ্ট দিচ্ছ।আমি কি এর কারন জানতে পারি?
অর্জুন এবার একটা বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলল
-সুখী তুমি তো খুব বুদ্ধমতি মেয়ে তোমার তো এত দিনে সব বুঝে যাওয়ার কথা।তোমার মত বুদ্ধিমতি মেয়ের এমন বোকার মত প্রশ্ন করাটা বেশ অদ্ভূত লাগছে।হাস্যকর ও লাগছে বটে।
সুখী অর্জুনের কথা শোনে বেশ অবাক হল আর বলল
-মানে?কি বলতে চাচ্ছ তুমি?
এবার অর্জুন যা বলল সুখী যেন তা শোনে চমকে গেল।সুখীর মাথাটা যেন ঘুরে গেল।সুখী বুঝতে পারছিল না সুখী এখন কি করবে কারন অর্জুন বলল
-তোমার কি মনে হয় সুখী, আমি তোমার মত দেখতে কুৎসিত মেয়েকে এমনি এমনি বিয়ে করেছি।তোমার কি মনে হয় আমার মত একজন যুবক তোমার মত মেয়েকে বিবাহ করার উপযোগী ছিল।কিন্তু কেন করেছি জান?
সুখী কিছুটা হতাশ হয়ে প্রশ্ন করল
-কেন?
জবাবে অর্জুন বলল
-আমি তোমাকে বিয়ে করেছি শুধু মাত্র রাজ্য দখল করার জন্য।আমি জানতাম তুমি যুদ্ধবিদ্যায় আর অস্র বিদ্যায় অনেক পারাদর্শী সুতরাং তোমাকে পরাজিত করা আমার পক্ষে অনেক কঠিনতর হয়ে যেত।তাই এভাবে পরাজিত করলাম তোমাকে।তোমার সাথে বিয়ের বিষয় টা ছিল শুধু মাত্র স্বার্থের জন্য।বিয়ের পর এত নাটক করেছি যেন তুমি নিজে থেকে আমাকে রাজ্যের দায়িত্ব দাও।আর তুমি সেটাই করলে।এখন এ সব রাজ্যের মালিক একামাত্র আমি।এখানে তোমার মতের কোন গুরুত্ব কেউ দিবে না।আর তোমার মত কদাকার একটা মেয়েকে আমার আর দরকার হবে না।আমি তোমাকে মন থেকে ঘৃনা করি।আর বাকি রইল তোমার সন্তানের কথা।সে ও নিশ্চিত তোমার মত কুৎসিত দেখতে হবে।শুনে রাখ তোমার আর তোমার সন্তানের প্রতি আমার কোন মায়া বা ভালোবাসা নেই।আমাকে এসব প্রশ্ন করে বিরক্ত করবে না আশা করি।
সুখী হতাশ হয়ে বলল
-শুধু মাত্র রাজ্যের জন্য তুমি আমার সাথে এত বড় নাটক করলে অর্জুন।আমি সবসময় সততা দিয়ে রাজ্য পরিচালনা করেছি।আর তুমি সে সততার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করছ।লজ্জা করছে না তোমার এত নোংরা একটা নাটক করতে।
অর্জুন একটা কর্কশ হাসি দিয়ে বলল
-আমি আমার স্বার্থের জন্য সব পারি।
এ বলে অর্জুন চলে গেল।আর সুখী নিজেকে এ অবস্থায় বেশ অসহায় মনে হতে লাগল।ভিতরে ভিতরে সুখী ভেঙ্গে পড়ল।কি করবে সুখী বুঝতে পারছিল না।দিন যেতে লাগল অর্জুনের পরিবর্তন বেশ বাড়তে লাগল।সুখীর প্রতি অবহেলার মাত্রা যেন আরও বাড়তে লাগল।শরীরের প্রয়োজনে অর্জুন সুখীর কাছে আসত আর সুখীর উপর নরপশুর মত ঝাপিয়ে পড়ত আর বাকি সময় থাকত মদের আর নেশার আড্ডায়। সে সাথে রাজ্যের অবস্থাও বেশ খারাপ হতে লাগল।কুমারী মেয়ে গুলাকে অর্জুন ভোগের বস্তু হিসেবে ব্যবহার করতে লাগল।এসব যেন সুখীকে আরও হতাশ করে তুলল।
অপরদিকে সুখীর পেটের বাচ্চাটাও বেশ বড় হতে লাগল।৭ মাস পার হয়ে গেল।সুখী বেশ বুঝতে পারল সুখীর কোলে চন্দ্রাবতী আসবে।সুখীর ইচ্ছা ছিল চন্দ্রাবতী যেন মোমের পুতুলের মত সুন্দর হয়।তাই সুখী মোম দিয়ে একটা পুতুল বানাল যা দেখতে একদম মানুষের মত ছিল।সুখী তার মনের সব শখ দিয়ে পুতুলটা বানিয়েছিল আর মনে মনে চেয়েছিল যে চন্দ্রাবতী দেখতে ঠিক এ পুতুলটার মত হোক।সুখী ভাবল চন্দ্রাবতী জন্ম নিলে হয়ত সুখীর জীবনের গল্পটা পাল্টাবে কিন্তু চন্দ্রাবতী জন্মানোর আগেই সে স্বপ্নটা সুখীর নিঃশ্বেষ হয়ে গেল।
কারন অর্জুন একদিন মদের নেশায় আসক্ত হয়ে সুখীর উপর ঝাপিয়ে পড়ল।সারা শরীরটায় নরপশুর মত খুবলে খুবলে খেতে লাগল আর আঘাত করতে লাগল।সুখী চেঁচাতে চাইলেও চেঁচাতে পারছিল না কারন অর্জুন তার মুখটা আটকে দিয়েছিল হাত দিয়ে।অমানবিক যন্ত্রণায় আস্তে আস্তে সুখী নিস্তেজ হয়ে গেল আর সুখীর মৃত্যু ঘটল।সে সাথে সুখীর সাত মাসের চন্দ্রাবতীর ও মৃত্যু ঘটল।সে থেকেই সুখীর আত্নাটা সে প্রসাদে আটকে গেল আর প্রতিশোধের জন্য ছটফট করতে লাগল।
কাহিনীটা বলে প্রফেসর বিশ্বাস এক গ্লাস পানি খেল।আমি আর অরন্য গল্পটা শুনার পর কেন জানি না চোখের কোণে জল জমে গেল দুজনের।আমি প্রফেসর বিশ্বাসকে বললাম
-আপনি তো জানেন অর্জুন মারা গিয়েছে আর এটা অনেক বছর আাগের কাহিনী।তাহলে সুখী কাকে মেরে প্রতিশোধ নিবে?
জবাবে প্রফেসর বিশ্বাস বললেন
– সুখী এখনও ঐ সময়ে আটকে গেছে।সুখী জানে না অর্জুন মারা গিয়েছে।আর আপাদত চন্দ্রাবতী জন্ম নেওয়ার আগে কোন উপায় বের করা সম্ভব না।কি হবে তাও জানা সম্ভব না।চন্দ্রাবতী জন্ম নেওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।আর এখন আপনারা যান।ঠিক চারমাস পর যখন চন্দ্রাবতীর ৭ মাস হবে তখন সে এ দুনিয়ায় ভূমিষ্ঠ হবে।আমি তখন আপনাদের সাথে দেখা করে নিব।এর মধ্যে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় ঘটলেও কেউ ভয় পাবেন না।
প্রফেসর বিশ্বাসের কথা শুনে আমরা বাসায় চলে আসলাম।বাসায় আসার পর খেয়াল করলাম আমার পেট থেকে একটা…