ঘৃণার মেরিন

ঘৃণার মেরিন Season 2 !! Part- 08

মেরিন আর হসপিটালে না গিয়ে বাসায় চলে এলো। মেরিন বাসায় ফিরেছে শুনে নীড়ও দৌড়ে বাসায় ফিরলো। হাপাতে হাপাতে রুমে ঢুকলো। দেখলো মেরিন বারান্দায় রকিং চেয়ারে বসে আছে। কপালে হাত দিয়ে। নীড় ১টা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো।
নীড় : তুমি এখানে?
মেরিন : কেন?
নীড় : হসপিটাল থেকে বেরিয়ে কোথায় গিয়েছিলে…
মেরিন : আপনাকে বলতে বাধ্য নই । মেরিন বন্যা কাউকে কোনো কৈফিয়ত দেয়না।
নীড়: আমাকেও বলতে বাধ্য নও?
মেরিন: না। তবে যেদিন আমার স্বামী হয়ে,,, অধিকারের সাথে কোনো কিছু জানতে চাইবেন সেদিন বলবো।
.
পরদিন…
মেরিন রেডি হয়ে office যাচ্ছে।
নীলিমা : এই শরীর নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
মেরিন : কেন আমার কি হয়েছে?
নীলিমা : কিচ্ছু হয়নি…. but চুপচাপ রুমে যা। rest কর।
মেরিন : rest? ২দিন rest করে পিঠ ব্যাথা করছে। আর office এ কতো কাজ পরে আছে যানো?
নিহাল : কাজের tension না নিয়ে কেউ নিজের খেয়াল রাখলেই বেশি ভালো হবে।
মেরিন : কাজ না করলে মেরিন বন্যাকে খাওয়াবে কে?
নিহাল : নীলা কাউকে বলে দাও যে চৌধুরী empire খান empire এর মতো বড় না হলেও কাউকে ২বেলা ২মুঠো খাওয়ানোর তৌফিক ঠিকই আছো।
মেরিন : আমি কি বলেছি যে তা নেই? আমি তো বলেছি কার ঠ্যাকা পরেছে আমাকে খাওয়ানোর ? আজকে কারোটা খাবো ২দিনপর কথা শুনবো… বসে বসে অন্ন ধমব্স করতে মেরিন শেখেনি।
আর হ্যা মামনি “কেউ” এর শশুড়কে “কেউ” এর তরফ থেকে thank you দিয়ে দিয়ো।
বলেই মেরিন চলে গেলো।

২দিনপর….
মেরিন: hello my ফুপাতো ভাই…. জ্বালা পোরাটা কমেছে? একটু মনে হয় কমেছে। তাই তো আবার জ্বালাতে এসেছি । জন,,, একে পেট ভরে খাইয়েছো তো?
জন: জ্বী ম্যাম।
মেরিন : good… আমার ছুরিটা দাও।
জন দিলো।
মেরিন : আচ্ছা জন সেদিন এই হাতটা যেন কেন কেটেছিলাম?
জন: ম্যাম ইয়ে মানে….
মেরিন : আমতা আমতা আমার ভালো লাগেনা।
জন: ম্যাম যখন আপনি ছোটো ছিলেন তখন….
মেরিন: তখন ….?
জন: আপনাকে molest করেছিলো।
মেরিন: right …molest করেছিলো। সেদিনের পর থেকে সেই ছোট্ট ভীতু মেরিন পুরোপুরি মরে গিয়েছিলো। সেদিন কবির ফয়সাল খান আমাকে বলেছিলো আমি নাকি আমার মায়ের মতো হয়েছি। characterless…
আমি নাকি তোকে provoke করেছি অমন টা করার জন্য… কি হাস্যকর… সেদিন তোর ওপর আমার ১টা ভয় লাগা কাজ করে। সেই ভয় কাটানোর জন্যেই….
যাই হোক…
কাজটা complete করি।
বলেই মেরিন অন্যহাত টা কেটে ফেলল।
মেরিন: আমার মা যে চরিত্রহীনা নয় সেটা কেবল ১জনই জানে। আর সে আছে তোর কব্জায়। আর সে হলো আমার দীদা। তাকে তুই লুকিয়ে রেখেছিস । ১টা বয়স্ক মানুষকে লুকিয়ে রেখে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছিস। সে তো তোরও কিছু লাগে। তোরই নানিমা । অবশ্য তোর দোষ দিয়ে কি লাভ বলতো? তোর মা ই তো নিজের মায়ের মুখ বন্ধ করিয়ে দেয়ার জন্য কতো কি করেছে।
যাই হোক এখন দেখ কেমন লাগে।
বলেই মেরিন চলে গেলো।

নীড়ের কিছুই ভালো লাগছেনা। কারন এখন মেরিন আগের মতো ওর সাথে আগের মতো কথা বলেনা। আর না আগের মতো পাগলের মতো জরিয়ে ধরে, কিস করে। আগে তো নীড় জবাব দিতো আর না দিতো মেরিন আপন মনে বকবক করতো। এখন অমন করেনা। কেবল চুপচাপ নীড়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমায়। নীড় বেশ বুঝতে পারছে যে সেদিনের আচরনে মেরিন যথেষ্ট কষ্ট পেয়েছে।
.
পরদিন….
ভোরের দিকে নীড়ের ঘুমটা ভেঙে গেলো। দেখলো মেরিন নেই। তারাতারি উঠে বসলো। খুজতে লাগলো। দেখলো মেরিনের গাড়ির চাবিটা জায়গা মতোই আছে। রুম থেকে বেরোলো। নামাযের রুমের ওখান দিয়ে যাওয়ার সময় নীড় খুব মিষ্টি সুরে কোরআন শরীফ পড়ার শব্দ পেলো। ভেতরে তাকিয়ে দেখে মেরিন পড়ছে। সাদা রঙের ১টা থ্রীপিছ পরে আছে।
নীড় মনে মনে: মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর করে পড়ে তো।
মেরিনের পড়া শেষ করে ঘুরতেই দেখে নীড় দারিয়ে আছে।
মেরিন : আপনি?
নীড় : হামম। ঘুমটা ভেঙে গেলো।
মেরিন : কিছু লাগবে?
নীড়: না।
মেরিন : হামম। আচ্ছা শুনুন।
নীড় : বলো।
মেরিন : না মানে আমি না আজকে office যেতে পারবোনা।
নীড় : হামম। কিন্তু কেন?
মেরিন : একটু কাজ আছে।
নীড় : কি কাজ?
মেরিন : আছে কোনো কাজ।
বলেই মেরিন রুমে গেলো।

নীড় fresh হয়ে এসে দেখে যে মেরিন চুল গুলো ছেরে দিয়েছে। সেই সাদা থ্রীপিছটাই পরে আছে। ওরনাটা অন্যদিনের মতো গলায় না পেচিয়ে সুন্দরভাবেই নিয়েছে। অন্যরকম সুন্দর লাগছে।
নীড়: আমিই কি সাথে যেতে পারি?
মেরিন : ….
নীড় : নাকি এর জন্যেও স্বামি হয়ে অধিকার নিয়ে বলতে হবে?
মেরিন: …..
হ্যা না কিছু না বলে মেরিন নিচে নেমে এলো। নীড় এর মানেটা বুঝলো । তাই নীড়ও সাথে সাথে নিচে নামলো। ২জন মিলে বের হলো। একটু সামনে থেকে দাদুভাই pick করে নিলো। নীড় আর দাদুভাই কথা বলতে লাগলো। হঠাৎ মেরিন গাড়িতে break মারলো।
.
দাদুভাই: কি হলো দিদিভাই…
মেরিন সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। নীড় আর দাদুভাইও তাকালো। দেখলো কবিরের গাড়ি।
নীড় : আরে বাবা… ভালো আছো?
কবির: হামম।
নীড়: ভালোই হলো। চল আমাদের সাথে।
কবির: কোথায় যাবো?
দাদুভাই: তুই কি জানিস না আজকে কি? আজ যে কনা মায়ের জন্মদিন…. চল আমাদের সাথে।
কবির হা হা করে হেসে উঠলো।
কবির : জন্মদিন? like really… যার জন্মের ঠিক নেই তার আবার জন্মদিন।
দাদুভাই: মুখ সামলে কথা বল।
কবির : আচ্ছা বাবা ওই নষ্টা মেয়েটাকে নিয়ে কোনো কথা তুমি কেন মানতে পারোনা বলোতো?
দাদুভাই: কবির…. বরাবরের মতো আজও ১টা কথাই বলবো পরে আফসোস করোনা।
কবির: আফসোস করার মতো কিছু বলিনি। ওই মেয়েটাকে গাড়ি সরাতে বলো। আমার পথের সামনে থেকে।
কথাটা শুনে মেরিন ১টা devil smile দিয়ে গাড়ি start দিলো। এরপর গাড়ি পিছে নিয়ে প্রচন্ড speed এ এসে কবিরের গাড়িটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। এরপর গাড়ি থেকে নামলো।
নীড় : এটা কি করলা?
মেরিন : মিস্টার খান বললেন না গাড়িটা সরাতে। তাই সরালাম।
কবির : আমি তোমার গাড়ির কথা বলেছি।
মেরিন : correction … আপনার বাক্যে কোথাও “তোমার” কথাটা উল্ল্যেখ ছিলোনা।
কবির : বেশি বার বেরো না ঝড়ে পরে যাবে।
মেরিন : wrong …. ঝরে পরে যাবোনা… বরং আরো প্রসারিত হবো।
বলেই মেরিন গাড়িতে উঠলো।

গাড়িটা থামলো ১টা এতিমখানায়। সেখানে যেতেই বাচ্চারা এসে মেরিনকে ঝেকে ধরলো।
নীড়: দাদুভাই …
দাদুভাই : আজকে কনিকার জন্মদিন। আসলে আজকের দিনেই কনিকা কে কবিরের মা এখান থেকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলো। তাই এই দিনটাতেই কনিকার জন্মদিন পালন করা হয়। কনিকা যখন ছিলো তখন এই দিনটা এখানেই পালন করতো। এখন দিদিভাই করে। ও মনে করে এখানেই ১দিন ও কনিকা পাবে।
.
কিছুক্ষনপর….
নীড় ফোনে কথা বলতে বলতে হাটছে। তখন কারো সাথে ধাক্কা লাগলো। তাকিয়ে দেখে ১টা মহিলা। একদম ঢেকে রেখেছে নিজেকে। মহিলাটির চোখ পানি ভাসছে।
নীড় : sorry আন্টি…
মহিলাটি ৫সেকেন্ডের মতো মায়া ভরা দৃষ্টিতে নীড়ের দিকে তাকিয়ে দৌড় দিলো। দৌড়ে যাওয়ার সময় তার ১পায়ের থেকে নুপুর খুলে গেলো। নীড় দৌড়ে গিয়ে নুপুরটা হাতে নিয়ে মহিলাটাকে ডাকতে লাগলো।
নীড় : এইযে আন্টি আপনার নুপুর…
মহিলাটা ১টা বার পিছে তাকেয়ে আবার দৌড় দিলো।
নীড়কে দৌড়াতে দেখে মেরিন ছুটে এলো।
মেরিন : কি হয়েছে আপনার ?আ….
তখন মেরিন নীড়ের হাতের নুুপুরটা দেখলো। ১টানে নিয়ে নিলো।
অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস
করলো: এএএটা ককককোথায় পপপেলেন?
নীড় : ১টা মহিলার…
মেরিন : কককোথায় সে?
নীড় : দৌড়ে ওই বাইরের দিকটাতে গেলো।
মেরিন আর ১সেকেন্ডও দেরি না করে দৌড় লাগালো। দেখলো দূরে ১জন কালো চাদর পেচিয়ে দৌড়াচ্ছে।
মেরিন : আম্মু….
কিন্তু ডাক দিতে না দিতেই সে চোখের পলকে গায়েব হয়ে গেলো।

মেরিন ওখানেই হাটু গেরে বসে পরলো। দাদুভাই এলো।
দাদুভাই : দিদিভাই….ও দিদিভাই…. কি হয়েছে?
মেরিন দাদুভাইকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদতে লাগলো।
কাদতে কাদতে মেরিনের হিচকি উঠে গেলো। এমন ১টা মেরিনকে প্রথমবার নীড় দেখলো।
মেরিন : দদদাদুভভভাই আআআমার আআআম্মু…. ও দদদাদুভাই আআমার আম্মু…. এএএই দদদেখো আআআম্মুর নননুপুর।
দাদুভাই : কোথায় দেখেছো?
মেরিন : ওও ও….
বলতে বলতে মেরিন অজ্ঞান হয়ে গেলো।
( আসলে নুপুর জোরা কবির কনিকাকে তখন দিয়েছিলো যখন মেরিন হয়েছিলো। আর বলেছিলো এটা সেদিনই পা থেকে খুলবে।
😒😒😒।)
.
মেরিনকে খান বাড়িতে আনা হয়েছে। কারন এতিমখানাটা থেকে খান বাড়ি কাছে।
ডক্টর চেক আপ করে বের হলো।
দাদুভাই : তপু… আমার দিদিভাই?
তপু: ভালোনা দাদুভাই । কতোবার বলেছি ওর bp normal রাখার জন্য? bpএর ঔষধ কি regular খায়না? এই বয়সেই এমন high pressure থাকলে ভবিষৎে কি হবে বলো তো? ভবিষৎ? এই conditionএ কদিন বাচে সেটা দেখো। ওর যে bp… যে কোনোদিন stroke করবে । ওর মেন্টাল প্রেসার , ব্লাড প্রেসার সব control এ রাখার চেষ্টা করো। না হলো অনেক কিছু হয়ে যেতে পারে। আর হ্যা ও কি একেবারেই ঘুম আসেনা? ঘুম না আসলে শরীর কখনোই ঠিক হবেনা। at least ১মাস ওকে পুরো বেডরেস্টে রাখুন। পারলে ওর mental treatmentটাও করান।
দাদুভাই : ওর জ্ঞান কখন ফিরবে?
তপু: কিছুক্ষনের মধ্যেই । ওকে আপাদত disturb করবেন না।
বলেই dr. তপু চলে গেলো।
দাদুভাই : জানিনা ওর কোন গতি হবে।

একটুপর…
দাদুভাই সোফায় বসে আছে। পাশে নীড় বসা।
তখন মেরিন ফোনে কথা বলতে বলতে সিড়ি দিয়ে নামছে।
মেরিন : হ্যা আমি এখনি আসছি।

মেরিন : না না… আমিই আসছি।

মেরিন : রাখছি।।
দাদুভাই :একি দিদিভাই কোথায় যাচ্ছো তুমি?
মেরিন : factoryতে। worker আর ম্যানজারের সাথে ঝামেলা হয়েছে।
দাদুভাই : হোক। কোথাও যাবেনা তুমি।
মেরিন : আরে দাদুভাই…
দাদুভাই : কোথাও যাবেনা মানে যাবেনা। যাও গিয়ে rest করো। এই শরীর নিয়ে সে বের হচ্ছে।
সেতু : অভিনয় অভিনয় সব অভিনয়… মায়ের মতো তো। সব মায়ের মতো।
দাদুভাই : সেতু…
সেতু : কি মিথ্যা বললাম বাবা? আজকে ১টা অশুভ দিন। আজকের দিনেই তো এই খান বাড়িতে ওই মহিলার পা পরেছিলো। সারাবাড়ি অপবিত্র হয়ে গিয়েছিলো।
দাদুভাই: সে….
মেরিন : দাদুভাই… বলতে দাও। দেখি আজকে কতো বলতে পারে। মনেরভাব প্রকাশ করার স্বাধীনতা থাকা দরকার। বল বল সেতু… আজকে তো আর না আমি গান হাতে নিবো আর না ছুরি আর না চাবুক…. আজকে বলে ফেল। তবে মনে রাখিস আমি কান কিন্তু অন্যকোথাও রেখে আসিনি।
সেতু : কি করবি? মেরে ফেলবি? তোর অতো সাহস নেই। তাহলে তো এতোদিনে মেরেই দিতি।
মেরিন : তুই তোরটা ভাব। আর নিজের উল্টা গোনা শুরু কর।
সেতু : আচ্ছা তাই? কি এমন হলো? তোর ওই চরিত্রহ….
আর বলতে পারলোনা। ওপর থেকে ঝুমুরটা ঠাস করে সেতুর মাথায় পরলো।
মেরিন হাতে তালি দিতে লাগলো।
মেরিন : কিছু শাস্তি অলৌকিকও হয়।

কিছুদিনপর…
নীড় : কেমন আছো তুমি?
নীরা : বিন্দাস। দেখোনা সিডনি শহরে আছি আর বিন্দাস থাকবোনা?
নীড় : এভাবে বলছো কেন?
নীরা : তো কিভাবে বলবো? এই জেলখানাতে কেমন থাকবো?
নীড় : …
নীরা : আমার কি মনে হয় জানো তুমি আমাকে কখনোই ভালোবাসোনি। মেরিনের রূপে, অর্থে হারিয়ে গেছো।
নীড় : নীরা… কি বলছো? তুমি এটা বলতে পারলে?
নীরা : তো কি বলবো? কিসের শাস্তি আমি পাচ্ছি বলো তো? তোমাকে ভালোবাসার? তুমি যদি আমাকে মনে রাখতে তাহলে কি এই কয় মাসে ১বারও আমার সাথে দেখা না করে থাকতে পারতে? আজও আসতে না। কেবল ডেকে পাঠিয়েছি বলে এসেছো।
নীড়: ….
নীরা : নীড় … i love you….
নীড় : …
নীরা : যদি আমাকে সত্যি ভালোবেসে থাকো তবে ১টা কাজ করবে?
.
রাতে…
নীড় বাসায় ফিরলো।
মেরিন নীড়ের টি-শার্ট আর ট্রাউজার বের করে দিয়ে। নীড়ের টাই খুলতে লাগলো। এরপর মেরিন নিচে নামতে নিলো।
নীড় : মেরিন…
মেরিন : হামম।
নীড় : আমি আজকে নীরার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। জেলে….
.
চলবে….