গল্প- ফাঁদ !! Part- 04
সাইন করে দিলে ছেলেটি চলে যায়। আহেলী বক্সটা হাতে নিয়ে ভাবতে থাকে এর মধ্যে কি আছে।
“কে এসেছিলো? ”
এই কথা শুনে আহেলী তাকাতেই দেখলো আদিত্য ফোনের দিকে তাকিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে।
“আমি জানি না এটা কে পাঠিয়েছে, কেন পাঠিয়েছে, কি আছে এর মধ্যে, উনি এটা নিয়ে নিশ্চয়ই বড়ো কোন ঝামেলা বাঁধাবেন। ওনাকে বলা যাবে না। ”
নিজের মনে মনে কথাগুলো বলে হাতে থাকা বক্সটা আদিত্যর চোখের আড়ালে সোফার পেছনে ফেলে দিয়ে এগিয়ে গেলো।
“কই কেউ না তো। ”
“কেউ না মানে? বেলের আওয়াজে তো তুমি নীচে এলে, দরজা খুললে। আওয়াজ তো আমিও পেলাম। কেউ যদি না আসে তাহলে ভূতে এসে কি কলিংবেল বাজিয়ে গেলো? (চিৎকার করে)
আহেলী কিছুটা চমকে উঠে বললো,,
“না.. মানে.. ইয়ে,, আসলে ওই একজন একটা ঠিকানা জিজ্ঞাসা করছিলো,, তাই আপনাকে বলছিলাম কেউ না”।(ঠোঁটের কোণে হাসি এনে)
আদিত্য আহেলীর আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে নিলো।
“হুমম.. আচ্ছা, নাস্তা দাও বেরোবো তো”।
“এই তো তৈরি করে ফেলেছি আসুন”।
আদিত্যকে নাস্তা দিলে আদিত্য খাওয়া শুরু করে। জুসের গ্লাস টা ওপর থেকে আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে,,
“আজব ব্যাপার! এতো বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতেই আসতে হলো ঠিকানা জানার জন্য? সামনেই তো দুটো বাড়ি আছে আমাদের এই ভিতর বাড়িতেই কেন এলো বলোতো?”
“হুমম.. আমি কি জানি এলো এখানে তো। ”
” তা তুমি বাড়ির ঠিকানা বলতে পারলে? ”
আহেলী হাতে নিয়ে শাড়ির আঁচলের খুট টা ধরে টানতে লাগলো। সে যে আবার এক বিপদে পড়লো।
“চুপ করে আছো কেন? ”
“হ্যা বললাম তো।”
“তা কোন বাড়ির ঠিকানা চাইছিলো”?
“হু,, ও, ওই,, ওই তো মল্লিক বাড়ির ঠিকানা। আপনি খেয়ে নিন। আমি কাপড় ভিজিয়ে রেখে এসেছি।”
আহেলী চলে যেতে চাইলে আদিত্য হাত ধরে নেয়। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়।হাতে থাকা কাটা চামচটাকে আহেলীর কপাল থেকে গালের এক সাইডে নিয়ে আসে। আহেলী ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। চামচটা দিয়ে গালে চাপ দিয়ে ধরে। আহেলী আদিত্যর হাতটা ধরে নেয়।
“তুমি যে চালাক তা তো আমি জানি। তাই বলে আমার সাথে চালাকি কোরো না। জানো তো অতিচালাকের গলায় দড়ি,কে বলতে পারে হয়তো তোমার গলাতেই.”
আহেলীকে ছেড়ে দিয়ে আদিত্য বেরিয়ে যায়। আহেলীর চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে, এক অজানা ভয়ে সে কাঁপতে থাকে। এবার সে সোফার পেছনে গিয়ে বসে। হাতে বক্সটা তুলে নেয়। বক্সটা কালো প্যাকেটে মোড়া, না আছে কারুর নাম, না আছে কোন ঠিকানা, একটা অজানা ভয় মনের মধ্যে বাসা বাঁধতে থাকে। বক্সটা খুলে আহেলী বেশ অবাক হয়। বক্সটার মধ্যে একরাশ গোলাপের পাপড়ি। আহেলী বেশ অবাক হলো। বক্সটা এবার উল্টে দিয়ে, পাপড়ি গুলো মেলে দেখলো একটা চেইন। হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো। চেইনটা আহেলীর খুব চেনা লাগছে কিন্তু মনে পড়ছে না। মাথায় হাত দিয়ে ভাবার চেষ্টা করে কিন্তু না মনে পড়ছে না।
“এইরকম কে পাঠাতে পারে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না?”
আবার কলিং বেলের আওয়াজ হয়। আহেলী চমকে ওঠে।
“এখন কে আসতে পারে? আবার কোন পার্সেল আসেনি তো? না কি উনি ফিরে এলেন?”
নিজের সাথে কথাগুলো বলে পুনরায় চেইন সমেত পাপড়ি গুলো বক্সে ঢুকিয়ে সোফার পেছনে রেখে উঠে দাঁড়ায়। দরজা খুলে তো আহেলী অবাক।
“মামণি তুমি “?
আদিত্যর মা আহেলীকে জড়িয়ে ধরে,
“কেমন আছিস মা? ”
আহেলী মুখ তুলে চোখের পানি মুছে বলে,
“আমি খুব ভালো আছি মা”।
“তোর চোখে পানি কেনো? তুই যে ভালো আছিস!”
“হ্যা আমি ভালো আছি তো। তোমাকে অনেক দিন পর দেখছি তো তাই হয়তো,”
আদিত্যর মা আহেলীকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আহেলীর গালে হাত দিয়ে বলে,
“তোর চোখ মুখ এতো শুকনো লাগছে কেনো?আদি কি তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করে বলতো?”
“মা তুমি যে কি বলো না, উনি আমার অনেক কেয়ার করেন, আমি ঠিক সময়ে খাইছি কি না, ঘুমাই কি না, জানো মামণি উনি আমার জন্য অনেক কাজের বুয়া নিয়ে এসেছিলো, আমি বলেছি আমার নিজের সংসার এর কাজ আমি নিজেই করতে ভালোবাসি, উনি রাগ করেছিলেন কিন্তু পড়ে মেনে নিয়েছেন।”
আহেলী মুখে হাসি এনে একটানা কথাগুলো বলে থামে।
“মামণি তুমি কি এভাবে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবে না কি! আসো ভিতরে। ”
আদিত্যর মা মুচকি হেসে আহেলীর গাল টিপে বলে পাগলী,,।
আহেলী আদিত্যর মাকে চেয়ারে বসিয়ে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দেয়।
“জানিস তো মা আমি এইটাই চেয়েছিলাম, যে তোরা সুখে থাক, শান্তি তে থাক, “।
“হুম মামণি অনেক সুখী,, মামণি আমি অনেক সুখী। ”
“যাক কারুর মুখে তো হাসি ফোটাতে পারলাম। ভাগ্যিস কি মনে করে আজকে থ্রীপিছ পড়েছিলো তাই তো ভালো থাকার নাটক টা করতে পারলাম”।
নিজের মনে কথা গুলো আহেলী বলে।
/
/
/
/
“দেখলে মা ভাবীর কান্ডটা। ভাইয়ার অনুমতি না নিয়েই ছুটে চলে গেলেন, কার কাছে না কি মেয়ের কাছে,, হুমম মেয়ে, আরো যদি না,,,, ”
আদিত্যর ফুফু কথাগুলো বলে আদিত্যর দাদীর দিকে তাকালেন। তিনি চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসেছেন। তা দেখে আদিত্যর ফুফু সামান্য রেগে গিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো।
“মা তুমি নিশ্চিন্তে আছো বলো আমার কষ্টটা আমার ছেলের কষ্টটা দেখতে পারছো না? খুব তো বলেছিলে কাজ করে দিয়ে এসেছো ওদের সম্পর্ক না কি ভেঙ্গে যাবে। তা কোথায় মা কোথায় সম্পর্ক ভাঙ্গলো বলো। এখন ভাবীও চলে এসেছে এবার দেখো আর কিছু হবে না ওই মেয়েটা এই চৌধুরী বাড়ির বউ হয়েই রয়ে যাবে আর ওদিকে আমার ছেলেটা,, (জোরে জোরে কাঁদতে থাকে)
“আহহ তুই থামবি কি সব কিছুতে এতো তাড়াতাড়ি করা ভালো না। শোন আগুন যখন লেগেছে তখন সবকিছুই পুড়ে ছাই হবে। ”
“থামো তো মা তোমার আগুন, সব কিছুই ঠিক থাকবে। মাঝখান থেকে আমার ছেলেটার জীবনটা পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, আমাকেই কিছু একটা করতে হবে। আমার ছেলের কষ্ট আমি কিছুতেই দেখতে পারবো না।
/
/
/
/
“মামণি তুমি কখন আসলে? আর সিলেট থেকেই বা কবে আসলে ? ”
“আমি আসছি সেই সকালে, বাড়িতে গিয়েই আমার মেয়েটাকে দেখতে ইচ্ছা করছিলো তাই চলে আসছি। কিন্তু তুই আজকে তাড়াতাড়ি চলে আসলি যে! ”
“হ্যা মামণি চলে আসলাম মিটিংটা ক্যন্সেল হয়ে গেল বলে। ”
“ও আচ্ছা, বাবা এবার আমাকে ফিরতে হবে।”
“মা তুমি আজকে থাকতে পারো তো।”
“না রে আজ আসি। বাবা তোকে একটা কথা বলি, ফিরে চল না বৌমাকে নিয়ে আমরা সবাই একসাথে থাকি। ”
“ওফহহ মা! কেনো বার বার এক কথা বলো বলতো। আমি তো বলেছি একবার। আমার না হ্যা হবে না বুঝেছো।”
“আচ্ছা রাগ করিস না তুই যেটা ভালো বুঝিস করিস।”
“আচ্ছা চলো আমি তোমাকে দিয়ে আসছি। ”
“না তোকে যেতে হবে না, ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসছে। আর তাছাড়া আহী আমার সাথে যাচ্ছে, ও একটু মার্কেটে যাবে।”
“ওহ আচ্ছা যাও তাহলে”।
আহেলী আর আদিত্যর মা দুজনেই চলে গেলো। মার্কেটে এলে আদিত্যর মা আহেলীকে সাবধানে যাওয়ার কথা বলে চলে যায়।
/
/
/
/
আদিত্যর মা বাড়িতে চলে আসে। বাড়িতে ঢুকতে গেলে দেখে ড্রয়িং রুমে কিছু একটা নিয়ে জটলা চলছে। আদিত্যর ফুফু আদিত্যর মাকে দেখে।
“কি ভাবী তুমি চলে এসেছো! তারপর তোমার ওই মেয়েরূপী বৌমাকে আনলে না?এমনি চলে আসলে? ”
“এই সব কি হচ্ছে ? আমি তোমাকে বারণ করা সত্ত্বেও তুমি চলে গেলে? ”
আদিত্যর বাবা আদিত্যর মাকে কথাগুলো বলে। আদিত্যর দাদী বলেন,,
” ও কে আর কিছু বলে লাভ নেই, তুই শুধু শুধু বলছিস, দেখ হয়তো কোনো জাদু টোনা করে রেখেছে ওই মেয়ে, ওই মেয়েতো সব পারে। ”
“মা দয়া করে আপনি চুপ করুন। মেয়েটার যখন কোন দোষ নেই তখন বারবার কেন মেয়েটাকে অপরাধী করছেন বলতে পারেন”।
“বাহ ভাবী দারুণ কথা বলছো তো তুমি। ওই মেয়ের কোন দোষ নেই তুমি কি করে বলতে পারো? আমার ছেলের জীবন টা নষ্ট করে দিয়েছে আর তুমি বলছো.. কি বলোতো ছেলেটাতো আমার আমি তো মা আমাকেই ভাবতে হবে। আমার ছেলেকে নিয়ে ভাবার মতো কেউ নেই আমি জানি “।
এই বলে আদিত্যর ফুফু কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো।
“শোন আমি যখন তোমায় মানা করেছি তখন তুমি ওই মেয়ের সাথে কোন সম্পর্ক রাখবে না বোঝা গেছে”।
আদিত্যর বাবা কথাগুলো বলে উঠে চলে যায়। আদিত্যর মা নিজের মনেই বলে,,
“সবাই ভুল বুঝছে মেয়েটাকে ,কষ্ট পাচ্ছে যে মেয়েটা কেউ বুঝছে না তাকে”।
/
/
/
/
মার্কেট থেকে বাড়ি ফিরছে। হাটতে হাটতে আহেলী একবার পিছনে তাকালো, কেনো জানি তার মনে হচ্ছে তাকে কেউ ফলো করছে। কিন্তু কাউকে পেছনে দেখতে না পেয়ে আবার হাটতে শুরু করে। ঠিক একি ভাবে আবার তার মনে হচ্ছে কেউ তো তার পিছু নিয়েছে কিন্তু বরাবরের মতোই আবার সেই এক। এই ভাবে তিন চার বার পেছনে তাকিয়ে দেখে, মনের ভেতর ভয় চেপে বসে সন্ধ্যা নেমেছে তাই দ্রুত পায়ে বাড়ি আসে। বাড়িতে দরজা খোলা আছেই তাই দ্রুত ঢুকে পড়ে দরজা আটকায়। আদিত্য ড্রয়িং রুমেই বসে ছিল।
“কি হয়েছে?এতো দেরী হলো কেনো?”
“মা,,মার্কেটে গিয়েছিলাম তো বাড়িতে আসার পথে মনে হল কেউ আমাকে ফলো করছে। ”
এই কথা বলে করুণ দৃষ্টিতে আদিত্যর দিকে তাকালো।আদিত্য হেসে বললো,
“এতো সাজ সিঙ্গার পড়ে গেলে যে কেউ তোমার পিছনে আসবে। এতো সাজের বাহার কিসের তোমার? ”
“আহেলী এই কথা শুনে মুখটা নিচু করে নেয়।
“আর দাঁড়িয়ে না থেকে যাও চা নিয়ে আসো”।
/
/
/
/
“মামণি…”
“ও তুই, আয় বস আমার কছে।”
“তুমি ভাইয়ের কাছে গিয়েছিলে শুনলাম,
“হুম রে গিয়েছিলাম, ”
“ওদেরকে নিয়ে আসতে পারলে না মা,”
“না রে তোর ভাই আসবে না রে,জানিস তো মেয়েটাকে সবাই ভুল বুঝছে’.
“হ্যা গো মা আমি তো ভাইকে বললাম কিছু একটা ভুল হচ্ছে, সামলে চলিস।”
“রাত হয়েছে গিয়ে ঘুমিয়ে পর যা”।
আদিত্যর বড়ো ভাইয়া তার মা এর সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে এলে আদিত্যর ভাবী বলে,
“শোন তুমি কিন্তু এইসব ব্যপারে নিজেকে জড়াবে না, বাবা দাদী এরা যা ভালো বুঝবেন তাই করবেন.”
আদিত্যর ভাইয়া কিছু না বলে শুয়ে পড়ে।
/
/
/
/
আহেলীর মনে হচ্ছে কেউ তাকে জড়িয়ে ধরেছে। তার চোখে মুখে কারুর গরম নিশ্বাস পড়ছে। জোর করেই চোখ খুলে হাল্কা চেঁচিয়ে উঠে পড়ে। না তো কেউ কোথাও নেই,, আদিত্য বেডে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ কি মনে করে গলাতে হাত দিয়ে দেখে সেই বক্সে থাকা চেইনটা তার গলায়। ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়,, ও বুঝতে পারছে না ওর গলায় এই চেন কি করে আসতে পারে…
.
.
.
.
.
চলবে….. ….