আড়ালে ভালোবাসার সংসার

আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 09

সকালে উঠতেই বিথী নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো আবদ্ধ অবস্থায়। নিজের উপরে ভারি কিছু অনুভব করায় সে লাফ দিয়ে উঠার চেষ্টা করলেও উঠতে পারে না সেই ভারি বস্তুর কারণে। বিথী ভালোভাবে চোখ মেলে দেখলো বিধান তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে। বিধানের মুখ বিথীর গলায় থাকায় অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিলো যা শুধু বিধানের স্পর্শ পেলেই অনুভূত হয়। বিথী ঘড়ির দিকে চোখ গেলে দেখলো দশটা বাজে প্রায়। তাই বিধানকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করলে বিধান হালকা জেগে যায়। বিধান বিথীর গলা থেকে মুখ উঠিয়ে বালিশে মাথা রাখলেও বিথীকে জড়িয়েই ধরে রাখলো। আর বিথী বিধানের কিউট চেহারাখানা দেখতে লাগলো।
বিথীঃ দেখতে তো বিড়াল ছানার মতো লাগছে ঘুমন্ত অবস্থায় মনে হচ্ছে একটা চুমু দিয়ে দেই। কিন্তু জাগলে পুরোই পাতালপুরের রাক্ষসের মতো লাগে। ( বিরবির করে )
বিধানঃ এই মেয়ে কি বিরবির করছো! সকাল সকাল ধাক্কাধাক্কি করছো কেন! ( বিরক্তিকরভাবে )
বিথীঃ সকাল এখন দশটা বাজতে চলল প্রায়! ( ভ্রু কুচকে। )
বিধানঃ কিহ! এতো লেট আমার তো মিটিং আছে বেলা এগারোটায়!
বিথীঃ এই কেমন বউ তুমি আমাকে সকাল সকাল জাগাতে পারতে না! এতোটুকুও পারে না করছে বিয়ে! ( রাগী কণ্ঠে )
কথাগুলো বিধান রাগের মাথায় বললেও বিথীর বুকে ছুড়ির মতো লাগে। আবার বেহায়া অশ্রু গুলো দুচোখ বেয়ে পড়তে লাগলো। বিধান ওয়াসরুমে চলে যাওয়ায় তার নজরে বিথীর অশ্রুসিক্ত নয়ন জোড়া চোখে পড়লো না।
,
,
বিথী বিধানের রুমের সাথে এ্যাটাচ স্টাডিরুমের বাথরুমে স্নান করে আসলো। বিথী আজ লাল পাড়ের অফ হোয়াইট শাড়ি পড়েছে। ভিজা চুলগুলো পিঠে ছড়িয়ে আছে। বিথী তার হালকা টানা চোখে একবিন্দু কাজল লাগালো ও কোমল গাড় গোলাপি ঠোঁটে ভেজলিন লাগালো। ব্যাস তার সাজ শেষ। পিছনে ঘুরেই বিথী আতঙ্কগ্রস্ত হলো কারণ তার পিছনে বিধান দাঁড়িয়ে আছে এবং নেশাগ্রস্ত প্রেমিক পুরুষের ন্যায় তাকিয়ে আছে। বিথীর এই চাহনিতে কেন যেন তাকাতে পারছে না। মনে হচ্ছে সে কোনো ঘোরে চলে যাবে।
,
বিথী যেই বিধানকে পাশ কাটিয়ে বাহিরে যেতে নিলো বিধান হেচকা টানে তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে গলায় মুখ ডোবালো। বিথী বুঝতে পারছিল না কি করবে। সেই অনুভূতি আবার তাকে গ্রাস করছিল কিন্তু পরক্ষণেই কিছু সময় আগে বলা বিধানের কটু বাক্যগুলো মনে পড়ল। বিথী এক ধাক্কায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো এবং বিধান যেহেতু ঘোরে ছিল তাই ধাক্কা সামলাতে না পেরে খাটের কোণায় লেগে কপাল কেটে গেলো। বিথী বিধানের কপালে রক্ত দেখে দৌড়ে গেলো বিধানের কাছে। কিন্তু বিধান বিথীকে সরিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
বিধানঃ তুই কেনো বারবার অপমান ভুলে এই মেয়ের কাছে যাস! ভালোবাসিস বলে ওর অপমান মেনে নিবো! নাহ কিছুতেই নাহ! বিধান চৌধুরীকে অপমান করে শাস্তি তুমি পাবেই মিসেস বিথী বিধান চৌধুরী! (মনে মনে)
অন্যদিকে বিধান যাওয়ার পর বিথীও কাঁদছে অপরাধ ভোগে।
বিথীঃ আল্লাহ তুমি তো জানো আমি এটা চাইনি! ( বলে কাঁদতে লাগলো )
,
,
কিছুক্ষণ পর বিথী নিজেকে শান্ত করে চোখ মুখ ঠিক করে নিচে নামলো। নিচে নেমে দেখে সবাই লিভিং রুমের সোফায় বসা।
মিসেস চৌধুরীঃ কিরে মামনি আজ এতো দেরি করে উঠলি! আজও কি শরীর খারাপ লাগছে! ( চিন্তিত সুরে )
বিথীঃ না মানে…..
ইফতেখারঃ এটা তো বাবার বাড়ি না শ্বশুরবাড়ি এখানকার নিয়ম মেনেই চলতে হবে। আমি তো শুনেছি মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়েরা এসব নিয়ম বেশি জানে সবার মন গলাতে। তারা তো সব কাজ মানুষের মন গলিয়েই করে। ( বিথীকে কিছু বলতে না দিয়ে গরগর করে কথাগুলো বলে ফেলল)
বিথীর চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে। অনেক কষ্ট আটকে রেখে। বিধান এসব কথা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিল শুনতে কষ্ট হলেও বিথীর প্রতি তার ক্ষোভে সব কথা হজম করে নিল।
মিসেস চৌধুরীঃ বেশি বুঝবি না ইফতেখার আমার বউমা আমি বুঝবে এ ব্যপারে তোর কথা বলার দরকার দেখছি না।
ইফতেখারঃ আমি তো…..
মিসেস চৌধুরীঃ আর কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না! ( গম্ভীর কণ্ঠে ) বিথী মামনি তুমি ব্রেকফাস্ট করে নেও! ( হাসিমুখে )
বিথীঃ না মামনি ক্ষুধা নেই! ( মাথা নিচু করে )
মিসেস চৌধুরীঃ তা বললে হবে না! আস আমি খায়িয়ে দেই!
বলে মিসেস চৌধুরী বিথীকে পরম আদরে খায়িয়ে দিতে লাগলো। বিথী এক পলক বিধানকে দেখলো। বিধানের ক্ষততে বেন্ডেজ দেখে বিথী কিছুটা স্বস্তি পেলো। বিধান খাওয়া শেষ করে অফিসে চলে গেলো এবং বিথীকে মিসেস চৌধুরী রুমে পাঠিয়ে দিলো পড়ার জন্য।
,
,
বিথী পড়ছিলো এমন সময় দরজায় নক হলে বিথী দরজা খুলতেই অবাক। কারণ গতকালের সে মেয়েগুলো ও ইফতিকা সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তারা সকলে বিথীর কাছে ক্ষমা চায় গতকালের আচারণের জন্য এমনকি ইফতিকাও। যদিও ইফতিকার চোখে, মুখে, অঙ্গভঙ্গিতে অপরাধবোধের ছিটে ফুটোও দেখতে পারছে না তারপর সরল মনে তাদের ক্ষমা করে দিলো।

চলবে,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *