আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 44

এদিকে অনু মিষ্টি কে নিয়ে বেশ আরামে আছে বাপের বাড়িতে।আহা তাদের মেয়ে যে রাতে জামাই ছাড়া একা বাড়িতে চলে এসেছে এদিকে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
মিষ্টি তো ফুপু মণিকে পেয়ে খুব মজাই আছে।
কতোদিন সে ফুপির কোলে চড়ে ঘুরাঘুরি করে না।আজ সে সবাটা উশুল করে নিবে।
তাই সকালে মিষ্টিকে নিয়ে সারাদিনের প্লানিং করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ে।
এদিকে আয়েশা বেগম রাজের মা কে বলে,”এই রাজের মা এখন কি করবো?মা যে রাগী যা বলেছে তার কথা মতো কাজ না করলে সে তো আমাদের আস্তা চিবিয়ে খাবে।”
রাজের মা বলে,”জ্বি ভাবী আমিও সেই একি কথা ভাবছি।”
রিনা বেগম বলে,”এই তোমরা তোমাদের মা কে এতো ভয় করো কেনো?সে কি বাঘ না ভাল্লুক?”
রাজের মা বলে,”আমার মা বাঘের থেকে কোনোদিক দিয়ে কম না বুঝলেন। তাই তার সম্পর্ক না জেনে শুনে কথা কম বলাই ভালো।”
আয়েশা বেগম বলে,”শেষ পর্যন্ত কি না অনুকে ফিরিয়ে আনতে ওর বাবার বাড়িতে যেতে হবে।”
রাজের মা বলে,”ভাবী কিছু করার নেই যেতে তো হবেই তাই দেরি করে লাভ নেই।
যতো তাড়াতাড়ি এই ঝামেলা মিটে যায় তাতে আমাদের জন্য ভালো।”
কি আর করার ননদ ভাবী মিলে বাড়ির বউ কে ফিরিয়ে আনার জন্য অনুদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
এদিকে গাড়ি এসে একটা বড় বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে যায়।তা দেখে আয়েশা বেগম ড্রাইভার কে বলে,”কি হলো গাড়ি এখানে দাঁড় করিয়েছো কেনো?
অনুদের বাড়িতে নিয়ে চলো আমাদের। ”

ড্রাইভার বলে,”ম্যাডাম এটা অনু ভাবীর বাবার বাড়ি।”
আয়েশা বেগম বলে,”রাজের মা তুমি যে আমাকে বলেছিলে অনু বস্তির মেয়ে।”
রাজের মা বলে,”আরে ভাবী আমি কি জানতাম ওর বাবার বাড়ি এতো সুন্দর? আমি তো ঐ মেয়ের কথা বার্তা শুনে আন্দাজ করেছিলাম।”
আয়েশা বেগম বলে,”তোমার আন্দাজের কথা আমাকে কে বলতে বলেছিল?তুমি তো ভেজাল পাকিয়ে দিয়েছো এখানে।এখন তো মনে হচ্ছে আম্মার কথা ঠিক তুমি একটা কুটনি বুড়ি।”
রাজের মা বলে,”ভাবী তুমিও মায়ের বলা কথা গুলো বলে আমাকে কষ্ট দিচ্ছ কিন্তু। ”
আয়েশা বেগম বলে,”থাক জুতা মেরে আর গরু দান করতে হবে না। এবার বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখি সেখানো কি অবস্থা। ”
রাজের মা এবং আয়েশা বেগম অনুদের বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই রিমা তাদের দেখতে পেয়ে ছুটে তাদের সামনে এসে সালাম দিয়ে তাদের ড্রয়িংরুমে বসার ব্যবস্থা করে দেয়।
এবং সে তার শাশুড়ি মা এবং শ্বশুর আব্বা কে ডেকে তাদের সামনে নিয়ে আসে।
অনুর মা এসে সালাম দিয়ে বলে,”আপনারা ভালো আছেন বিয়ান। ”
আয়েশা বেগম একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে তার সালামের উওর দিয়ে বলে,”আসলে আমরা এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই ভাবলাম অনু যখন এ বাড়িতে আছে তখন তাকে সাথে করে নিয়ে যায়।”

অনুর মা বলে,”বিয়ান সাহেবা আপনিও যে কি বলেন না।অনু আপনার মেয়ে এখন তাকে নিতে যখন ইচ্ছা এ বাড়িতে আসবেন সে কথা আমাদের বলতে হবে না।আমাদের বাড়িটাও তো এখন থেকে আপনাদের তাই না বলেন।”
আয়েশা বেগম আবারো হাসি মুখ করে বলে,”জ্বি আপা অনু তো এখন থেকে আমাদের মেয়ে।
তবে কি জানেন মেয়েটা বড্ড বেশি দুষ্টু।
সে সমাজ পরিবারের পরোয়া করে না।”
অনুর বাবা বলে,”আসলে আমার মেয়েটা খুব আত্মসম্মান বেশি সাথে সে কোনো অন্যায় সহ্য করতে পারে না।
সে ভাবে আমরা সবাই যদি নিজেদের মতামত বদলে ফেলি তাহলে না কি পুরো পৃথিবী খুব সুন্দর হবে।
না থাকবে ঝগড়াঝাঁটি,
না থাকবে হিংসা, গণ্ডগোল ইত্যাদি।
তবে আমার বোকা মেয়েটা এসব বোঝে না যে
সবাই ওর মতো করে ভাবতে পারে না।
কেউ হয়তো ওর কথাটা বুঝতে চেষ্টা করবে না।
ওকে উল্টা ভুল ভাবতে পারে।
আমরা অনুকে বদলানোর অনেক চেষ্টা করেছি এমন কি তাকে দু বছর নিজেদের থেকে দূরে রেখেছি। তবুও আমার মেয়েটা তার চিন্তা ভাবনার মাঝে কোনো পরিবর্তন করতে পারে নাই।
মাঝে মাঝে তো আমাদের ওকে নিয়ে খুব ভয় করতো না জানি এই সবের জন্য কোনো বড় বিপদে না পড়ে কোনোদিন।
আপনাদের মতো পরিবারে আমার মেয়ে গিয়েছে বলে আপনারা ওকে বুঝতে পারছেন।
নয়তো আল্লাহ জানে আমার মেয়ের ভাগ্যে কেমন পরিবার জুটত তারা কেমন ভাবে মেনে নিতো তা আল্লাহ জানে।”
আয়েশা বেগম এইসব কথা শুনে খুব লজ্জা পেয়ে যায়।আসলে সে তো অনুর সাথে কোনো ভালো ব্যবহার করে নাই।
তার বাড়ির মানুষ তাদের সম্পর্কে যা ভাবছে তারা কি সত্যি ততোটা ভালো ব্যবহার করেছে অনুর সাথে?কোনদিক দিয়ে তো তারা অনুর সাথে ভাল ব্যবহার করে নাই।তারপর ও এতো সম্মান দিচ্ছে তাদের।

রাজের মা ফিসফিস করে আয়েশা বেগমের কাছে বলে,”কেমন বাবা মেয়ের কু-কীর্তির আবার গুণগান করছে আমাদের কাছে।”
আয়েশা বেগম রাজের মায়ের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,”তুমি তোমার মুখটা বন্ধ রাখো।”
আয়েশা বেগম তার খারাপ ব্যবহারের জন্য সত্যি আজ লজ্জিত।
আয়েশা বেগম অনুর মা কে বলে,”অনু মা কোথায় তাকে তো দেখতে পাচ্ছি না কোথাও? ”
এমন সময় রিমি সেখানে এসে বিষম খায়।
তার শাশুড়ির মুখে অনু মা ডাক শুনে।
রিমা বলে,”আন্টি অনু তো বাড়িতে নেই।
মিষ্টিকে সাথে করে সে ঘুরতে বেড়িয়ে গেছে।
কখন আসবে তাও বলে যায় নি।

এমন কি সে ভুল করে তার মোবাইল ফোনটাও বাড়িতে রেখে গেছে।”
আয়েশা বেগম মনে মনে বলে,”এখন যদি অনুকে ছাড়া বাড়িতে ফিরে যায় তাহলে আমার শাশুড়ি মা আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দিবে না।”
অনুর বাবা বলে,”আজ আর মনে হয় আপনাদের অনুর সাথে দেখা হবে না।তাতে কি হয়েছে আমরা সবাই গল্পগুজব করি কি বলেন। ”
আয়েশা বেগম বলে,”আমি যখন এসেছি তখন তো অনু মা কে সাথে করে নিয়ে যাবো।
তাকে সাথে না নিয়ে আমি বাড়িতে যাচ্ছি না।”
অনুর শ্বাশুড়ির মুখে এমন কথা শুনে তারা বিপদে পড়ে যায়।
অনুর মা বলে,”আরে বউমা আজ তো অনু গাড়ি নিয়ে বাহিরে গেছ। তাহলে ড্রাইভার কে কল দাও ওদের সাথে নিয়ে চলে আসবে।”
রিমা বলে,”তাই তো মা আমি তো সেই কথা ভুলে গেছি। তোমারা অপেক্ষা করো আমি কাকু কে কল দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে আসতে বলছি।”
রিমা কল করে ওদের তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে আসতে বলে।
তার কিছু সময় পর অনু মিষ্টিকে কোলে করে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।
অনু তাদের ড্রয়িংরুমের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।
এখানে এনারা না কি আমি স্বপ্ন দেখছি।
রিমি পেছন থেকে এসে অনুর কানের কাছে মুখ রেখে আস্তে করে বলে,”এটা কল্পনা নয় এটাই সত্যি!
তারা দু জন অনেক সময় ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা
করছে তোমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে।”
অনু বলে,”আচ্ছা সমস্যা নেই।আমিও ফিরে যেতে চাই।ও বাড়িতে আমার ক্রাশ বর যে আছে।
তাকে আমি অনেক ভাগ্য করে পেয়েছি। ”

রিমি বলে,”এতো ভাগ্য করে পেয়েছিস বলে কি একা রেখে চলে আসতে হবে?
কেউ যদি তাকে সাথে করে নিয়ে চলে যায় তখন কি হবে? ”
অনু বলে,”যদি কেউ আমার ক্রাশ বরের দিকে কু নজর দেয় বা তার সাথে লাইন মারার চেষ্টা করে তাহলে সেই শাঁকচুন্নির কলিজা কেটে টুকরো টুকরো করে বেশি করে কাচা মরিচ দিয়ে ভাল করে রান্না করে রাস্তার পাশের কুকুরদের খাওয়াই দিবো।”
রিমি বলে,”থাক থাক এতো যত্ন করে রান্না করতে হবে না।এখানে দাঁড়িয়ে মনের সুখে গল্প করতে হবে না।চলেন শাশু মার সাথে সাক্ষাত করে আসবেন আগে।”
অনু বলে,”ওনার সাথে দেখা করার কোনো শখ নেই।কিন্তু আমার কলিজার জন্য ওনার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। ”
অনু তার শাশু মা’র পাশে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ে।এমন ভাব করছে যেনো কারো কোনো সমস্যা নেই।
এটাকে বুঝি বলে আগলা পিরিত।
আয়েশা বেগম অনুকে বলে, “বৌমা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আসো আমাদের তো আমার বাড়িতে ফিরে যেতে হবে।”
অনু আর রিমি বাধ্য মেয়ের মতো রেডি হয়ে নিচে নেমে চলে আসে।
অনুর বাড়ির সবার থেকে বিদায় নেওয়ার সময়
অনুর মা আয়েশা বেগম কে বলে,”বিয়ান অনু আর জামাই এর তো ফিরুনির অনুষ্ঠান বাকী আছে।”
আয়েশা বেগম বলে,”আপনাদের চিন্তা করতে হবে না।কিছুদিনের মধ্যে ওদের পাঠিয়ে দিবো।”
এরপর ওরা সবাই গাড়িতে গিয়ে বসে।
গাড়ি চলতে শুরু করে চৌধুরী ভিলার উদ্দেশ্যে।
এর মাঝে কেউ কারো সাথে কোনো রকম কথা বলে না।একদম নিরবতা পালন করে।
অনেক সময় পর গাড়ি এসে চৌধুরী ভিলার সামনে থেমে যায়।
অনু গাড়ি থেকে নেমে সামনে তাকিয়ে একটু অবাক হয়ে যায়।
(সবার কাছে থেকে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি)




চলবে…..