আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 26

রিদি অনুকে সাথে করে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে চলে আসে।
অনু বলে,”আপু আমি তো ভাবছিলাম তুমি আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে এখন তো দেখি রেস্টুরেন্ট খেতে নিয়ে আসছো এটা কি ঠিক কাজ করেছো? ”
রিদি বলে,”আরে তুই থাম তো!পুরো কাহিনী না জেনে শুনে হাঁসের মতো পকপক করা একটু কম কর তো প্লিজ।”
অনু বলে,” আমাকে তোমার কোন দিক দিয়ে হাঁস মনে হচ্ছে আপুনি?(একটু অভিমানের সুরে কথাটা বলে) ”
রিদি বলে,”আমার

যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে এখানে মিট করতে আসতে বলেছে।তাই তোকে সাথে করে নিয়ে আসছি একা কেনো মিট করবো।যুগ ভাল না কাউকে বিশ্বাস নেই।”
অনু বলে,”তোমরা করবা রোমান্স! আমি কাবাবের মাঝে হাড্ডি হয়ে কি করবো শুনি?
আর বিশ্বাস নেই মানে? যার সাথে দু দিন পর বিয়ে তাকে এখনো বিশ্বাস করো না কেনো? ”
রিদি বলে,”আমি মরে গেলেও ঐ ডাক্তার বেডার লগে রোমান্স করতাম না। আমার কি পোড়া কপাল তুই জানিস? ”
অনু বোতল থেকে পানি খেতে খেতে বলে,”আমাকে কিছু না বললে জানবো কি করে?”
রিদি বলে,”আমার পাঁচ বছর আগের প্রাক্তন রাজের বড় ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।”
এ কথা শোনার সাথে সাথে অনুর মুখের সব পানি রিদি গায়ে ফেলে দেয়।
কারণ রিদি অনুর সামনে বসে ছিলো।
অনুর কাছে এবার ক্লিয়ার হয়েছে কেনো রিদি তাকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
রিদি বলে,”অনু রে এটা কি করেছিস তুই? ”
অনু বলে,”সরি আপু ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দাও।”
রিদি কিছু না বলে টিস্যু বক্স নিয়ে বাথরুমের দিকে চলে যায়।
অনু মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে থাকে।
আমার বোন দের জন্য কি আর কোনো ছেলে খুঁজে পাওনি আল্লাহ? সব ঐ বাড়ির ছেলেদের হতে হচ্ছে কেনো?আমার জন্য শেষে কি ঐ নষ্ট গুড়ের খাঁজা জুটবে।।
নাহহহহ এটা সম্ভব না।

আরিয়ান আমার শুধু আমার।
এমন সময় আয়াত সেখানে এসে দেখে অনু মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
আয়াত বলে,”মিস অনু এখানে কি করছেন? ”
অনু বলে,”দুলাভাই আপনার হবু বউকে পাহারা দিচ্ছি আর কি করবো! ”
আয়াত বলে,”মানে কি? আপনার মাথার সব নাট বল্টু ঠিক আছে তো? ”
অনু বলে,”সব ঠিক ছিলো! এখন আর নেই এতো কাহিনী আর নিতে পারছি না! ”
আয়াত অনুকে বলে,”আপনি বাড়িতে গিয়ে রেস্ট করেন।আর নয়তো অফিসে চলে যান কাজ করলে মাথা ঠিক থাকবে।”
অনু বলে,”শুক্রবার কোন কারণে আমি অফিস যাবো? আপনার ঐ মেন্টাল হসপিটাল থেকে পালিয়ে আসা ভাইয়ের সাথে প্রেম করতে বুঝি?”
অায়াত বলে,”তুমি কাকে মেন্টাল হসপিটাল ফেরত রুগী বলছো?”
এমন সময় রিদি এসে আয়াত কে বলে, “ওহ সরি প্লিজ কিছু মনে করবেন না।

আপনাকে অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করিয়ে রাখার জন্য।”
আয়াত বলে,”নাহ সমস্যা নেই চলেন আমরা অন্য কোথাও গিয়ে বসি।”
অনু বলে,”এই তো আমে দুধে মিশে যাবে আমি আঁটি শালা পর হবো এটা জানা কথা ছিলো।”
অায়াত বলে,”মিস অনু আপনার ভালো ডাক্তারের প্রয়োজন। ”
অনু বলে,”আপনার ঐ ভাইয়দের মতো দুই একটা ঘাড়ে চাপলে ডাক্তার না কবিরাজের দরকার হবে।”
রিদি বলে,”সরি আপনাকে তো অনুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ভুলে গেছি।
এ অনু আমার খালাতো বোন।
আমি এখান আসার সময় ওকে সাথে করে নিয়ে এসেছি আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে।”
অনু বলে,”আমি আয়াত ভাইয়া কে অনেক অাগে থেকে চিনি।”
রিদি একটা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,” কি ভাবে চিনিস তুই? ”
অনু বলে,”আরে ঐ ভাবে তাকানোর দরকার নেই।আরিয়ান রাজ চৌধুরীর বড় ভাই আয়াতুল্লাহ চৌধুরী আয়াত। আমার বসের বড় ভাই কে না চিনলে চলে বলো আপু? ”
রিদি বলে,”ওহ আচ্ছা তারমানে সব গুলো শয়তান এক বাড়ির! ”
অনু বলে,”হুম আপি।”

আয়াত বলে,”আপনাদের কোনো কথা আমি বুঝতে পারছি না।”
রিদি বলে,”বেশি বোঝার দরকার নেই চলেন নাস্তা করি।তাই বলে একটা ওয়েটারকে ডেকে রিদি খাবারের অর্ডার দিয়ে দেয়। ”
একটু পর খাবার চলে অাসে ওরা তিন জন একসাথে এমনি কথা বলতে থাকে আর খাবার খেতে থাকে এমন সময় সেখান রাজ ও চলে আসে।
রিদি রাজ কে দেখে আয়াতের সাথে আগলা পিরিতের গল্প করতে শুরু করে দেয়।
রাজ দূরে থেকে দেখতে পাচ্ছে রিদি আয়াতের সাথে হেসে হেসে গায়ে পড়ে কথা বলছে।
আহা কি মাখো মাখো সম্পর্ক সবার।
রাজ রিদির এমন ক্লোজ হয়ে কথা বলা দেখে কেনো জানি খুব রাগ লাগছিল।
তারপর ও রাজ নিজেকে সংযত করে রাখে।কেনো জানি রাজের খুব ইচ্ছা করছিল রিদি কে গিয়ে আয়াতের পাশে থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে।
রাজের এমন বেহাল দশা দেখে রিদি ইচ্ছা করে আয়াত কে নিজের হাতে খাওয়াই দিতে শুরু করে দেয়।
আয়াত বেচারা রিদির এমন আচরণে একটু অস্বস্তিতে পড়ে যায়।
অনু মনে মনে বলে,”রিদি আপুর ঘাড়েভূত চাপছে না কি হঠাৎ করে এমন অদ্ভুত আচরণের মানে বুঝতে পারে না।তাই আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে থাকে হঠাৎ কিছুটা দূরের টেবিলে রাজ বসে আছে তা দেখে অনের আর বুঝতে বাকি থাকে না রিদির এমন অদ্ভুত আচরণের কারণ কি? ”
হঠাৎ করে রিদির হাতে লেগে একটু তরকারির ঝোল আয়াতের ড্রেসে পরে নষ্ট হয়ে যায়।
রিদি তাড়াতাড়ি টিস্যু দিয়ে মুছে দিতে থাকে আর বলে, “সরি আসলে আমি বুঝতে পারি নাই।”
আয়াত বলে,”এখানে সরি বলার দরকার নেই।এমনটা আমার থেকেও হতে পারতো।
এটা তো ভুল করে হয়েছে মাএ।

আমি বাথরুম থেকে পরিষ্কার করে আসছি বলে চলে যায়।”
আয়াত যাবার পর অনু বলে,”বাহ আপুনি তুমি কি নাটক করতে পারো ভাবা যায়।”
রিদি বলে,”আমি একা কেনো আগুনে পুরবো।সবাই কে সাথে নিয়ে আগুনে পুরবো। ”
অনু বলে,”দরকার হলে বলবা আমি না হয় সেই আগুনে একটু ঘি ঢালতে সাহায্য করবো।”
অনু আর রিদিকে একা দেখে রাজ ওদের টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়।
রিদি বলে,”দেখতো অনু ঐ লোকটার কি সাহায্য লাগবে।”
অনু রাজ কে বলে,”আপনাকে আমরা কি ভাবে সাহায্যদান করতে পারি স্যার? ”
রাজ বলে,”রিদি আমার ভাইয়ের সাথে এতো ক্লোজ হয়ে ঢলাঢলি করে কথা বলছে কেনো? ”
রিদি দাঁড়িয়ে বলে,”বেয়াদব ছেলে বড় ভাইয়ের হবু বউয়ের সাথে কি ভাবে কথা বলে তা এখনো শেখো নাই?আর কিসের ঢলাঢলি করছি আমি? যেমন চরিএ আপনার তেমন মুখের ভাষা।”

অনু বলে,”আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন রিদি আপু আয়াত ভাইয়ের হবু বউ।”
রাজ বলে,”হবু বউ! এখনো কিন্তু বিয়েটা হয়নি।তাই আগ বাড়িয়ে বেশি পিরিত না করাই ভালো ।”
রিদি বলে,”কেনো আজ কাজি অফিসে গেলেই এখুনি আমি হবু থেকে পার্মানেন্ট বউ হতে পারবো।”
অনু বলে,”আপু স্টপ! তোমার বিয়ের গাড়ি এখানে দাঁড় করিয়ে দাও।নয়তো শেষে বিয়ের গাড়ি যাএাবাড়ি চলে যেতে পারে।”
রিদি বলে,”তা দেবর জ্বি,,নিজের এক্স কে ভাবী ডাকার জন্য রেডি আছেন তো? ”
রাজ স্টাইলের সাথে বলে,”অবশ্যই হ্যাঁ ভাবী জ্বি।”
রাজের মুখে ভাবী ডাক শুনে রাগে কষ্টে দুঃখে রিদি রেস্টুরেন্ট থেকে চলে যেতে লাগে।
রাজ বলে,”আরে সুন্দরি ভাবী চললে কোথায়? ”
রিদি বলে,”জ্বি জনাব এক্স বি এফ এর বাড়ি যাচ্ছি। দেখি দেবর কে বর বানানো যায় কি না।”
রাজ বলে,”তোমার সে গুড়ে বালি সুন্দরি। ”
রিদি বাহিরে যেতেই আয়াত এসে দেখে রিদি চলে যাচ্ছে। আয়াত রাজ কে খেয়াল না করে রিদির পেছনে পেছনে বাহিরে চলে যায়।
অনু রাজ কে বলে,”কি পরিমাণে ছ্যাঁচড়া আপনি? আপনাকে মেয়েটা ভালবাসে সে কথা বোঝেন না আপনি? ”
রাজ :-হ্যাঁ বুঝি!এখন কি করবো? নিজের বড় ভাইয়ের কাছে গিয়ে বলবো বড় ভাই আপনার জন্য পছন্দ করা মেয়েটাকে আমাকে দিয়ে দেন।মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে। সে আপনাকে ভালোবাসে না।পাঁচ বছর আগে সে আমার এক্স ছিলো।”
অনু নিজের সামে থাকা এক গ্লাস পানি নিয়ে সোজা রাজের মুখের উপর ছুড়ে মেরে বলে,”আপনার মতো ছ্যাঁচড়া কে আমার বোন সেই পাঁচ বছর আগে ভুলে গেছে।
আপনার মতো ফালতু ছেলেকে ভালোবেসে নিজের হৃদয়ে রক্ত অযথা আপু কেনো ঝাড়াতে যাবে।রিদি পাঁচ বছর আগে মুভ অন করেছে তাই আজ আয়াত ভাইয়াকে বিয়ে করার জন্য সে রাজি হয়েছে।আপনি থাকেন আপনার মিথ্যা গৌরব নিয়ে।”
এমন সময় অনু সেখান থেকে উঠে চলে যেতে লাগলে রাজ অনুর হাত ধরে।
অনু পেছনে ঘুরে সোজা রাজের গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”আমাকে স্পর্শ করার সাহস হয় কি করে আপনার? ”
রাজ বলে,”তোমার কালো অতীতের কথা আর কেউ না জানুক আমি তো জানি? ”
অনু বলে,”অতীত নিয়ে খোঁটা দিতে আসছেন? আমি সেই ফালতু অতীত নিয়ে পরোয়া করি না।
যেদিন অতীত সামনে আসবে সেদিন আপনার জন্য খুব বড় সারপ্রাইজ থাকবে চিন্তা করেন না।”
রাজ বলে,”তোমার অতীতে আমার জন্য সারপ্রাইজ?হা হা হা আর হাসিও না। ”
অনু বলে,”সে না হয় পরে দেখা যাবে।
এখন এইসব কথা বাদ দেন তাহলে হবে।”
এইভাবে আরো কিছুদিন কেটে যায়।

তারপর একদিন অফিসে অনু বসে নিজের কাজ করছিল।
এমন সময় অারিয়ান এসে অনুর সামনে একটা ফাইল ছুড়ে দিয়ে বলে,”এখানে একটা ঠিকানা দেওয়া আছে।সোজা সেখানে গিয়ে সব কিছু রেডি করো।”
অনু ফাইলটা হাতে নিয়ে দেখে এটা অফিসিয়াল কোনো কাজ না পারসোনাল কাজ।
অনু বলে,”স্যার আপনার অফিসের পিএ আমি।আপনার বাড়ির পিএ না।”
আরিয়ান বলে,”পারসোনাল মানে পারসোনাল কথাটা মাথায় রাখবে তাহলে হবে।”
অনু মাথা ঝাঁকিয়ে শয়তানি একটা হাসি দিয়ে বলে,”চিন্তা করবেন না স্যার আপনার কাজ আমি কমপ্লিট করে দিবো।”
পরেরদিন,,,,
(রাজের জন্য সারপ্রাইজ আছে ভবিষ্যৎ এ আপনাদের জন্য নাহ কিন্তু 😁😁।
সেই দিনটা খুব তাড়াতাড়ি আসবে😊😊)



চলবে….