আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর !! Part- 32

আয়াত বলে,”সবাই তো কাল নিচে ছিলো, তাহলে ধাক্কা কে দিয়েছে আপনাকে? ”

অনু বলে,”তাহলে হয়তো আমার মনের ভুল।”

আয়াত বলে,”আপনাকে কেউ ধাক্কা দিয়েছে এটা কখনো মনের ভুল হতে পারে না।”

অনু বলে,”আজব কাহিনী শুরু করে দিলেন তো।
শুনেছি এ অবস্থায় না কি হ্যালুসুলেশন হয়। আমার ও হয়তো তা হয়েছে।”

আরিয়ান বলে,”আয়াত বাদ দে এটা অনুর হ্যালুসুলেশন ছাড়া কিছু না।চল আমরা নিচে যাই।আর তুমি রুমে থাকবে আমি নাস্তা নিয়ে আসবো।”

নিচে এসে আয়াত আরিয়ান কে বলে,”আমার মোটেই বিশ্বাস হয় না ধাক্কা খাওয়াতে কারো ধোকা হতে পারে।”

আরিয়ান :আমি জানি তুই কি বলতে চাইছিস।কিন্তু একবার ভাব ওখানে অনুর সব আপন মানুষ ছিলো,তারা সবাই অনুকে ভালবাসে।
কেউ অনুর ক্ষতির কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারে না।

আয়াত :ভাইয়া আপন মানুষ গুলো কিন্তু স্বার্থপর হয়ে যায় এ কথা ভুলে যেওনা কিন্তু।

আরিয়ান :তুই কি বলতে চাইছিস আমি বা তুই এ কাজ করেছি?

আয়াত :আমি বা তুমি এ খারাপ কাজ করি নাই।কিন্তু কেউ তো করেছে তাকে খুঁজে বাহির করবো।

পেছন থেকে মৌ এসে বলে,”আয়াত ভাই তুমি কাকে খুঁজে বাহির করবে গো? ”

আয়াত বলে,”বাড়ির কেউ তো আমার বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজে না,তাই নিজের বিয়ের জন্য বউ নিজে খুঁজবো।”

মৌ :বাব বাহ কি অবস্থা তোমার ভাইয়া! নিজের বউ নিজে খুঁজবে।

আরিয়ান বলে,”এতো খোঁজা খুঁজির কি আছে।সামরের মেয়েটার সাথে তোকে ঝুলিয়ে দিই।”

আয়াত বলে,”ভাই দ্বিতীয় বার যদি তোমার বিয়ের শখ থাকে তো মৌ কে বিয়ে করতে পারো।
কিন্তু আমার জন্য কখনো মৌ কে ঠিক করো না।”

আরিয়ান :যদি সে সুযোগ থাকতো অবশ্যই মৌয়ের মতো মেয়েকে বিয়ে করতাম। তুই তো ফাঁকা আছিস করে নে বিয়েটা।

মৌ বলে,”সত্যি আরিয়ান ভাই আপনি আমাকে বিয়ে করতে? ”

আরিয়ান বলে,”হুম, অবশ্যই।”

আয়াত :রাখ তোর বিয়ে যা ভাবী কে আগে নাস্তা খাওয়াই আসেন স্যার।

আরিয়ান অনুর জন্য নাস্তা নিয়ে সোজা রুমে চলে যায়।রুমে এসে দেখে অনু জানালার পাশে বসে এক মনে কিছু ভাবছে।

আরিয়ান বলে,”এই যে বেবিদের আম্মু তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।নাহলে তাদের কষ্ট হবে।”

অনু আরিয়ানের হাতে নাস্তার ট্রে দেখে নাক সিটকে মুখ ঘুড়িয়ে নেয়।

আরিয়ান বলে,”চেহারার এমন বারোটা বাজিয়ে লাভ নাই।এই সব তোমাকে খেতে হবে বুঝেছ।”

অনু বলে,”এসব ডিম দুধ রোজ রোজ খেতে ভালো লাগে না।আমার জন্য নাস্তায় ফুসকা,ঝালমুড়ি, আইসক্রিম, চকলেট এসব আনবে না কি সব ফালতু খাবার প্রতিদিন সামনে আনে।এসব দেখে আমার বিরক্তি লাগে।

আরিয়ান :ফুসকা, ঝালমুড়ি, চকলেট, আইসক্রিম এসব কোনো পুষ্টিকর খাবার না।যে সেসব তোমাকে খাওয়াবো।আচ্ছা বেবি হয়ে গেলে তারপর তোমার যতো ইচ্ছে হয় ঐ সব খাওয়াবো এবার খুশি তো।

অনু একগাল হেসে অনেক কষ্টে খাবার গুলা খেয়ে নেই।

এরপর আরিয়ান রেডি হয় অফিসে যাবার জন্য।
অারিয়ান রুম থেকে বাহিরে যাবে।

তার আগে অনু আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমি তোমাকে অফিসে যেতে দিবো না।”

আরিয়ান অনুকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমা দিয়ে বলে,”এবার কি বেবির আম্মু খুশি? ”

অনু :বেবির আম্মু খুশি কিন্তু বেবি খুশি না। ”

আরিয়ান নিচু হয়ে বসে অনুর হালকা উঁচু পেটে চুমা দিয়ে বলে,”এবার বেবিরা খুশি বেবির মা ও খুশি। ”

অনু লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

আরিয়ান: আরে এতো দেখি নতুন বউয়ের মতো লজ্জা পাচ্ছে।

অনু :এই আমি কি পুরাতন বউ না কি যে লজ্জা পাবো না? আমার বিয়ের এখনো এক বছর হয় নি সামনে মাসে হবে।ততোদিন আমি নতুন বউ বুঝলে।

আরিয়ান :জ্বি ম্যাডাম বুঝলাম আপনি নতুন বউ।

এরপর আরিয়ান চলে যায়।আর অনু ড্রয়িং রুমে এসে বসে সবার সাথে কথা বলে দিন কাটিয়ে দেয়।

সময়ের সাথে সাথে অনুর মানুষিক শারীরিক পরিবর্তন হচ্ছে আস্তে আস্তে।



এভাবে দেখতে দেখতে অনুর বিবাহবার্ষিকী চলে আসে।

এদিকে অনুর যে যমজ বেবি হবে সে কথা কেউ অনুকে বলে নাই।

কারণ এটাই ওর বিবাহবার্ষিকীর সব থেকে বড় উপহার হবে।

এদিকে অনু দিনে দিনে খুব খিটখিটে মেজাজি হয়ে যাচ্ছে।

কেউ কিছু বলেই ঝগড়া করে,আর না হয় কান্না শুরু করে।

মাঝ রাতে উঠে সে কতোশত বায়না করে।

এইদিকে আয়াত আরিয়ান বুঝতে পারছে যে অনুর বিবাহবার্ষিকীর কথা মনে নেই। সে ভুলে গেছে যে কিছুদিন পর তাদের বিবাহবার্ষিকী।

আয়াত আরিয়ান সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনুর অগোচরে বাড়িতে একটা বড় পার্টির আয়োজন করে।

সবাইকে দাওয়াত দেওয়া থেকে শুরু করে বাড়ি কি ভাবে সাজাবে,, কি খাবার মেনু করবে।
অনুর জন্য কি করবে সব কিছু রেডি করে।

কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে অনু বাড়িতে থাকলে এসব কি করে করবে।

তখন হঠাৎ আবির এসে বলে,”আমি থাকতে তোমাদের অনুকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।”

আরিয়ান :কি করবেন অনুর সাথে??

রিমা বলে,”কিছু করবো না,অনুকে সাথে নিয়ে ঘুরতে যাবো সারাদিন। ততোটুক সময়ে আপনাদের কাজ হয়ে যাবে।

আরিয়ান :রিমা তুমি আমাকে বড় বিপদ থেকে বাঁচালে।

রিমা :দুলাভাই টেনশন নট,শালিকা থাকতে এতো চিন্তা করতে হয় না।

আবির রিমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,”কোনদিক দিয়ে শালি হও তুমি? ”

রিমা বলে,”অনুর দিক দিয়ে শালি হই আর আপনার দিক দিয়ে ভাবী। এখন তো আমি অনুর সাইডে। আমাদের বিয়ের পর আপনার পক্ষের হয়ে কথা বলবো। ”

আবির পুরা আহম্মক হয়ে গেলো,নিজের হবু বউ কি ভাবে দল বদলায়তে পারলো।

আয়াত বলে,”এই না হলে আমার ভাবীর বান্ধবী মতো কথা।”

আবির :আর আমার কি?? আমার হবু বউ আর হবু বউ থাকলো না।

রিমা এসে বলে,”জানু চিন্তা করবা না,,এখন বান্ধবীর দায়িত্ব পালন করবো,এর পর তোমার হবু বউয়ের দায়িত্ব পালন করবো এবার তুমি খুশি তো।”

আরিয়ান :আরে বাদ দিন তো,বোনের জন্য কতো বেশি খুশি তা সবাই জানি।

আবির বলে,”তাহলে সবার প্লানিং রেডি তো।কাল রিমা অনুকে নিয়ে যাবে তারপর আমরা আমাদের কাজ শুরু করে দিবো।”

সবাই এক সাথে বলে,”আচ্ছা কাজ ডান।”


পরেরদিন সকালে,রিমা অনুদের বাড়িতে চলে আসে।

অনু প্রতিদিনের মতো রুমে থেকে বাহিরে এসে দেখে ড্রয়িংরুমে রিমা বসে আছে।

অনু :আরে রিমা তুই এখানে হঠাৎ করে,কি মনে করে?

রিমা :আজব কথা তো,তুই আমার বান্ধবী +হবু ননদ তোর বাড়িতে আসার জন্য যে এপয়েটমেন্ট নিয়ে আসতে হবে।

অনু কান ধরে বলে,”আমার কথার ভুল হয়েছে মাফ করে দেন ভাবী। ”

রিমা বলে,”মাফ করবো এক শর্তে তুই এখন রেডি হয়ে আমার সাথে বাহিরে যাবি,আমি সবার থেকে অনুমিত নিয়েছি। ”

অনু বলে,”এই অবস্থায় কোথায় ঘুরাঘুরি করবো বলতো,দেখতে কেমন কেমন জানি লাগে।”

রিমা :তোমাকে কি বলছি ঘুরাঘুরি করবো সারাদিন? বেশি কথা না, কাজ তাড়াতাড়ি।

তারপর রিমা অনুকে রেড়ি করে অনুর শাশুড়ি মাকে বলে বাহিরে বেড়িয়ে পড়ে।
উদ্দেশ্য অনুকে সন্ধ্যার আগে বাড়িতে আসতে দেওয়া যাবে না।

এদিকে অনু আর রিমা বেড়িয়ে যাবার পর, বাড়ির সাবই সারপ্রাইজ প্লানিং এর কাজে লেগে পড়ে।।



অন্যদিকে রিমাও বুঝতে পারছে,অনুকে নিয়ে এইভাবে বেশি ঘুরাঘুরি করা যাবে না।

রিমা আজ অনুকে, অনুর পছন্দমত সব খাবার খাওয়াই।

ওদের কলেজের কাছে গিয়ে,ফুসকা, ঝালমুড়ি, চকলেট খাওয়ায়।

তারপর দু জন গিয়ে নদীর পাড়ে বসে গল্প করতে শুরু করে।

অনু রিমার সাথে শেয়ার করতে শুরু করে,দেখ তোর জন্য আরিয়ানের সাথে প্রথম দেখা।

প্রথম দেখাতে ড্রাইভার ভেবেছি,
দ্বিতীয় বার রহিমা খালার ভাইয়ের বাড়িতে তার গায়ে মুখের পানি ফেলে দিয়েছি।
তৃতীয় বার অফিসের বস রুপে পরিচয়।
আর সব থেকে মজার বেপার দেখ রিমি আপুর বিয়ের দাওয়াত খেতে গিয়ে তার হবু বরের বউ হয়ে গিয়েছি।
আর সর্ব শেষ এখন তার বাচ্চা মা হবো।
ভাবা যায় ভাগ্য কোনদিক দিয়ে কাকে কার সাথে মিলিয়ে দেয়।

এসব কথা বলতে বলতে সন্ধে হয়ে যায়।
আবির রিমাকে টেক্সট দিয়ে বলে,”অনুকে এবার বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য।এখানে সব কিছু রেডি।”

তারপর রিমা অনুকে বলে,”অনেক সময় হয়ে গেছে আমাদের এবার বাড়ি ফেরা উচিৎ। ”

দুজন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

(দেখা যাবে কার জন্য কতোটা সারপ্রাইজ থাকে)



চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *