আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর !! Part- 08

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিজের রুম থেকে বাহিরে সবার সামনে যেতে অনুর ভয় করছে।
যে বিপদজনক মা যদি দেখে কপাল কেটেছে তাহলে হাজার প্রশ্ন করবে,
সাথে বাবার কথা,,ভাইয়ের শাসন।
অনুরে তোর জীবন শেষ। 😣😣

তারপর ও অনু নিচে চুপচাপ এসে ডাইনিং টেবিলে নাস্তা করতে বসে।

রহিমা :ভাবী জান দেখেন অনু আম্মাজানের কি হয়েছে??

সবাই রহিমার কথা শুনে, অনুর দিকে তাকিয়ে দেখে ওর কপালে ব্যান্ডেজ করা।

অনু সবার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে,
ভয়ে একটা ঢোক গিলে বলে,,
“দেখো আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে দেখার মতো কিছু হয়নি”।

অনুর মা :কিছু হয়নি, তাহলে কপাল কাটছে কি এমনি এমনি? আর তুই রাতে কখন বাহিরে গেলি,,আবার বাড়িতে আসছিস কখন?

রহিমা :আম্মাজান রাত তিনটার সময় বাড়িতে আইছে।আমি দরজা খুলে দিছি।

অনু :একটা রাগী লুক নিয়ে রহিমার দিকে তাকায়।😡😡
(শালা কিছু তো বলে বেপার টা ধামাচাপা দিবো ভাবছিলাম, সব এই বেআক্কেল মহিলা শেষ করে দিলো।মনে মনে)

আবির রেগে গিয়ে বলে,,কি হলো অনু,
এতো রাত হয়েছে কেনো বাড়িতে আসতে??কোথায় গিয়েছিলি তুই?

অনু চুপ করে আছে কিছু বলে না।

অনুর বাবা :কি হলো অনু,আবির তোমাকে প্রশ্ন করেছে উওর দিচ্ছ না কেনো??

অনু এবার ভে ভে করে কান্না করতে করতে রিমার বাড়ি থেকে বাহির হবার পরের সব কথা বলে,,
শুধু আরিয়ানের সাথে ঝগড়া করছে সে কথা আড়াল করে রাখে।
কিন্তু তাকে যে তার বস বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গেছে তা বলে।

আবির :যদি তোর বস সাহায্য না করতো তাহলে কি হতে পারতো, ভাবা যায়।
কোন সাহসে তুই একা ওদের বাড়ি থেকে বাহিরে আসছিস?
রিমার ফোন দিয়ে তো কল করে জানাতে পারতিস আমাদের।

অনু :আসলে তখনো তো জানতাম না যে ব্যাগে আমার ফোন নাই।আর এমন বিপদ হতে পারে।

আবির :তুই মর্ডান মেয়ে হয়ে এ কথা কি করে বলতে পারিস,,
যে জানতি না বিপদ হতে পারে।
যেখানে দিনে মেয়েরা নিরাপদ নয়,
সেখানে তুই রাতে একা বাহিরে ছিলি,,
বিষয় টা ভাবতেই মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে আমার।

অনুর বাবা,অনুর মাকে বকা দেয়,তোমার মেয়ে রাতে কোথায় যায় কি করে সে সম্পর্কে আমাদের জানানোে প্রয়োজন মনে করো না,,কাল আমাদের কেনো বলো নাই ও রিমাদের বাড়িতে গিয়েছে।

অনুর মা :অনু আমাকে বলে যায় নি,,আমি জানতাম না,যে অনু বাহিরে গেছে রুমে নাই।

অনুর বাবা : বাববাহ তুমি কেমন মা,,তোমার মেয়ে বাড়িতে আছে কি না তুমি সে খবর রাখো না??
আমি তোমার উপর ভরসা রাখতে পারি না?
যদি মেয়েটার কিছু হয়ে যেতো তাহলে তো রাস্তার মানুষের থেকে খবর নিতে হতো।

অনুর খুব খারাপ লাগছিল যে, ওর ভুলের জন্য মাকে এতো কথা শুনতে হচ্ছে।
আসলেই অনেক খারাপ কিছু হতে পারতো।

অনু :বাবা প্লিজ দেখো আমার ভুলের জন্য মা কে এমন করে বলো না প্লিজ।আমি আর এমন করবো না।

আবির :থাক তোকে অনেক বেশী ভালবাসি বলে এমন কাজ করতে পারছিস।

অনুর বাবা :তোমাকে চাকুরী করার স্বাধীনতা দিয়েছি তারমানে এই না যা ইচ্ছে করবা।দ্বিতীয় দিন এমন হলে।।যাকে পাবো তার সাথে তোমার বিয়ে দিয়ে দিবো।
বলে বাবা আর আবির উঠে অফিসের জন্য তারা চলে যায়।

অনুর মা :তোর জন্য আজ আমাকে এতো কথা শুনতে হলো,,মেয়ে বড় করা যে কি জ্বালা তা তুই কোনোদিন বুঝবি না।

অনু ওর মার সাথে কথা বলতে যায়, ওর মা কথা না বলে চলে যায়।তাই অনু চুপচাপ অফিসের জন্য বেড়িয়ে যায়।



এদিকে অফিসে এসে অনুর কোনো কাজে মন বসছে না।কি করবে অনু বুঝতেছে না।

এমন সময় অারিয়ান ওর পেছনে এসে ওর কাঁধে হাত রাখে

অনু পেছনে না দেখে বলে,এই কোন বজ্জাতের এতো সাহস আমার কাধে হাত রাখে,এরপর পেছনে তাকিয়ে দেখে আর কেউ না আরিয়ান।

আরিয়ান :তা আপনি আজ অফিসে আসছেন যে??

অনু :কেনো অফিস কি ছুটি, যে আসবো না?

অারিয়ান : নাহ, তা নয়,আপনি অসুস্থ তো তাই।

অনু :কোথাও লেখা আছে কপাল কাটলে সে অসুস্থ হয়ে যায়??

আরিয়ান :না,লেখা নাই!

অনু : তাহলে কোনো কাজ আছে থাকলে বলুন,,না হলে এখান থেকে যান,,??

আরিয়ান :আমার অফিসে আমাকে যেতে বলছেন,এটা কেমন কথা।

অনু :তো কি করবো,,,কাজের কথা থাকলে বলুন,না হলে কি এখানে বসে প্রেম করবেন?

আরিয়ান :প্রেম করার জন্য যদি পৃথিবী তে মেয়ের অভাব পড়ে তাও আপনার সাথে প্রেম করতে যাবো না।

অনু কিছু বলবে তার আগে ওর ফোনে কল আসে,,
ফোন হাতে নিয়ে দেখে আবির,,তাড়াতাড়ি রিসিভ করে বলে,,

অনু :হ্যালো ভাইয়া বলো,,কি হলো হঠাৎ ফোন করেছ যে?

আবির :তেমন কিছু না,,তোর শরীর কেমন আছে?

অনু :এই তো ভালো ভাইয়া।

আবির :তুই না কি অফিসে গেছিস?না গেলে তো পারতিস?

অনু :আরে ভাইয়া তেমন কিছু হয়নি,,চিন্তা করো না,, তাড়াতাড়ি চলে আসবো।

আরিয়ান পুরা অবাক 😱

অনু :ফোন রেখে বলে,কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?

অারিয়ান :এতো দামী ফোন আপনি ব্যবহার করেন কি ভাবে??

অনু : দামী ফোন কি শুধু বড়লোকেরা ব্যবহার করতে পারবে এমন কথা কোথাও বলা আছে??

আরিয়ান :ঠিক তা নয়,,কিন্তু আপনার ফোনটা অনেক দামী।

অনু :শুনুন,, আজ কাল রিক্সা চালকের কাছেও ভালো দামী ফোন থাকে,,
সেখানে তো আমি বস্তীর মেয়ে,
আমার কাছে থাকা কি স্বাভাবিক না??

আরিয়ান শুধু মাথা নেড়ে হ্যাঁ সম্মতি দেয়।

অনু : আপনি কি ভিন্ন গ্রহের প্রাণী??

আরিয়ান :মানে কী??

অনু :বড় লোকেরা কিপটা হয় বেশী,, টাকা খরচ করার ভয়ে,,এক পুরাতন মোবাইল দশ পনেরো বছর ব্যবহার করে।😂😂

আরিয়ান :পাগলে কি না বলে,,,ছাগলে কি না খায়।আপনি বললেই তো দশ পনেরো বছর মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না।

অনু : কি জানি!! এটা নিয়ে ভাবি নাই তো!!😥

অারিয়ান :আপনি কোন কথা বলার আগে ভাবেন বলবেন 😐

অনু :আসলে স্যার,, পুরা দেশের মানুষ জানে,,
বড় লোকদের থেকে গরীব মানুষের শখ বেশী। তাদের টাকা না থাকলেও মনটা বড় আর উদার।

অারিয়ান :তাই বুঝি??

অনু :হুম,,তাছাড়া বেশি আজারে শো ওফ করতে পছন্দ করে,,পেটে ভাল থাক বা না থাক।

অারিয়ান :তাদের প্রশংসা করছেন না কি অপমান করছেন বুঝতেছি নাহ।

অনু :আপনি কেন,,কেউ আমার কথা বোঝে না।

আরিয়ান বিড়বিড় করে বলে,,”পাগলের কথা কেউ কানে তোলে না”।

অনু: স্যার কিছু বলছেন আমাকে??

আরিয়ান :কই কিছু বলি নাই, আর কিছু বলবেন??

অনু :আজ যদি আমার কোনো কাজ না থাকে তাহলে আমি কি বাড়ি যেতে পারি?!

আরিয়ান :হুম,,যান,, কাল সময় মতো কাজে আসবেন,, এবং মনোযোগ দিয়ে কাজ করবেন।

অনু খুশি হয়ে বলে অবশ্যই স্যার,,,বলে একটা মনমাতানো হাসি দিয়ে চলে যায়।

আরিয়ান, অনুর যাবার পথে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।



অনু আজ দুপুরবেলা বাড়িতে আসে,,ও বাবা আর ভাইাকেও বাড়িতে আসতে বলায়,,তারাও চলো আসে।

অনু তার বাবা কে জড়িয়ে ধরে রাতের জন্য সরি বলে।
কোনো বাবা তো তার মেয়ের উপর বেশী সময় রাগ করে থাকতে পারে না,অনুর বাবারো সেম কাহিনী,, তিনিও মেয়েকে বুকে টেনে মাফ করে দেয়।

অনুর মা এসে বল,আমে দুধে মিলে যায়,,আমি আটি পর হলাম।

আবির মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমি তো আছি তোমার জন্য।

তারপর পুরা পরিবার এক সাথে দুপুরবেলা খাবার খায়,, আর সারাদিন আড্ডা দেয়।

এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়।আরিয়ান আর অনুর ঝগড়া তো প্রতিদিন হতেই থাকে।

এসবের মাঝে আরিয়ানের ফুপু আরিয়ানের বিয়ের জন্য মেয়ে ঠিক করেছে।
এবং বিয়ের তারিখ ও ফাইনাল করে আসছেন।

আরিয়ানের মা :তা বড় আপা আরিয়ানের জন্য যে মেয়ে ঠিক করছেন,,তা আরিয়ান কে বলবেন না।

ফুপু আম্মা :আরিয়ান কে না জানালেও চলবে।কারণ ও আমার মতের উপর দিয়ে কখনো যাবে না।

আরিয়ানের মা :তাই বলে,,যে বিয়ে করবে তাকে জানাবেন না??

ফুপু আম্মা :এটা আমার বিষয়,,আমি বুঝবো,,তোমাকে এ নিয়ে না ভাবলেও চলবে।
বলে সে আরিয়ানের অফিসে মিষ্টি নিয়ে যায়।

এমন সময় অনু আরিয়ানের কেবিন থেকে বাহিরে এসে কারো সাথে ধাক্কা খায়।

অনু বলে ওঠে,,কোন কানা রে,,যে চোখ বাড়িতে রাখে আসছে,, বেদ্দপ কোথাকার 😤😤

(খুব তাড়াতাড়ি আরিয়ানের বিয়ে দিয়ে দিবো ভাবছি,,😒😒
অনু তো এ জীবনে বিয়ে করবে না তাই আরকি 😐।নিয়মিত গল্প পাবেন আশা করা যায়।কিন্তু
নেক্সট চাহিয়া আমাকে লজ্জা দিবেন না 😇)




চলবে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *