অন্ধপ্রেম !! Part- 18
.
ভোর হয়েছে আজও শীতল রাজকে নিজের পাশে দেখতে পেলো না ..
শীতল মাথায় হাত দিয়ে বলে ..
_আল্লাহ ,,,কবে আমি উনাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পাবো …
সেই সৌভাগ্য আমার কবে হবে ??
রাজ সকাল সকাল রিপোর্ট কালেক্ট করতে গিয়েছে ..
অন্য কাউকে পাঠায়নি কারণ হয়ত বাবা হওয়ার খবরটা নিজেই সবার আগে জানতে চায় …
.
.
.
শীতল বারান্দায় দাড়িয়ে থেকে রাজের অপেক্ষা করতে লাগলো …
কখন আসবে রাজ আর কখন সে শুনতে পাবে মা হওয়ার কথা …
কাজল বেশ চিন্তা ভাবনা করে চিঠি লিখে পাঠিয়েছে বিজ্ঞাপনের সেই ঠিকানায় ..
আশচর্যের বিষয় ছিলো চিঠিতে কোথাও লোকের নাম লেখা নেই শুধু কোথায় চিঠি পাঠাতে হবে সেটার ঠিকানা লেখা আছে …
হঠাৎ শীতল রাজের গাড়ি দেখতে পেলো …
রাজ গাড়ি পার্কিং করে মেইন ডোরে ঢুকছে ..
রাজের হাতে ফাইল দেখা যাচ্ছে …
শীতল দৌরে সিরি দিয়ে নামতে নামতে রাজের দিকে তাকালো …
রাজের মুখ দেখে মনে হচ্ছে ..
কিছু ঘটেনি …নরমালি দেখাচ্ছে রাজকে …
শীতলের বুক কেপে উঠলো …
রাজ শীতলের দিকে নরমালি তাকালো আর ফাইলটা দিয়ে উপরে চলে গেলো …
.
.
.
শীতল ফাইলটা আল্লাহর নাম নিয়ে খোলে …
রিপোর্ট দেখেই শীতলের মাথা ঘোরে যায় …
শীতলের বুক যেনো চুরমার ক্ষত বিক্ষত হয়ে গিয়েছে …
শীতল তলিয়ে যাচ্ছে একটা অজানে জগৎতে ..
শীতলের চোখে অন্ধকার নেমে এসেছে …
কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা শীতল ….
হঠাৎ শীতল ফিল করলো কেউ তার হাত ধরেছে …
তাকে যেনো মায়াবি শান্তিনির ফেরেস্তার মতো দেখতে …
যার ছোয়ায় শান্তি লাগছে …
শীতলের জ্ঞান ফিরলো রাতে …
চাচা শীতলের মাথায় হাত রেখে চলে গেলো ..
খালা চোখের পানি মুছতে মুছতে বাহিরে চলে গেলো …
কাজল শীতলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে …
শীতলের এখন কাজলের ছোয়ায় কিছুটা শান্তি লাগছে ….
রাজ নরমালি সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে …
যেনো কিছুই হয়নি …
_বউরানি প্লিজজজ কষ্ট পেয়ো না ..
যা হয় ভালোর জন্যই হয় ..
সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে দেখো …
এখন এই ঔষধটা খাও …
তোমার বিশ্রাম প্রয়োজন …
.
.
.
কাজল ঔষধ খাইয়ে রুম থেকর চলে গেলো ..
যাওয়ার সময় রাজকে উদ্দেশ্য করে বললো …
_দাদা ভাই তুমি ম্যাশিন নও ..
তাই মানুষের মতো ভিহেব করো বউরানি র সাথে …
তোমার নিজেকে পাল্টানো দরকার…
একটাই লাইফ সেটাকে প্রিয়জনের সাথে সাজাও ..
মিথ্যে অহংকার করে প্রতিশোধের নেশায় এই একটা লাইফে ওয়েষ্ট করে দিওয়া প্লিজজজ …
পরে এমন না হয় তুমি অনুতাপে ভু্গবে ..
আজকে যাকে মূল্য দিচ্ছোনা কালকে তার জন্যই বেচে থাকতে চাইবে ..
তার একটু কাছে থাকার জন্য সাত বার মরতেও চাইবে …
তার একটু কষ্টে প্রথিবী ধ্বংস করে দিতে চাইবে …
তাই এখন থেকেই ছোট ছোট সুখ গুলো কে ধরে রাখ …
.
.
.
রাজ সোফা থেকে নরমালি শার্টের হাতা ফোল্ড করে কাজলের সামনে এসে বললো …
_আমার প্রথিবী শুধু আমি ..
আমার বেচে থাকার জন্য কাউকে প্রোয়োজন নেই ….
আমি যা করি তা আমার জন্য ঠিক ..
এই প্রথিবীতে সুখ বলতে কিছুই নেই ..সবকিছুই মায়া ..
সেটা তুমি যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই তোমার জন্য মঙ্গল ..
সাইকোলজিকে নিজের মাথা থেকে তাড়াও …
এটাকে বাস্তবে রুপান্তরিত করতে যেওনা …
.
.
.
কাজল চলে গেলো …
রাজ শীতলের দিকে একবারও তাকালও না পর্যন্ত …
চুপচাপ উপর হয়ে কিছুটা শীতলের গাঁ ঘেষে শুয়ে পড়লো …
শীতলের বুক ফেটে কান্না আসছে ..
সে এতক্ষন কাজল আর রাজের কথা শুনছিলো …
রাজ কত সহজেই বলে দিলো ..
শীতলের কোনো স্থান নেই রাজের কাছে …
.
.
শীতল কান্না করছে ফুপিয়ে যে কান্না কেউ শুনতে পাচ্ছেনা ..
দম বন্ধ হয়ে আসছে তার …
কেনো তার জিবন এমন হচ্ছে ..
কি দোষ করেছিলো সে ..
মিথ্যে একটা প্রতিশোধের কারণে তার জিবনটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে …
সে তো ভাগ্যকে মেনে নিয়েছিলো …
তাহলে ভাগ্য কেনো মানছেনা শীতলকে …
আল্লাহ কি তাকে দেখছেনা সে কতটা কষ্টে আছে ..
একবারও তার ভালোবাসা তাকে শান্তনা পর্যন্ত দিলোনা …
.
.
.
সে কি এতটায় নিকৃষ্ট তার স্বামির কাছে …
সে তো সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে রাজের মনে একটু মায়া সৃষ্টি করতে …
.
.
.
রিপোর্টে পরিষ্কার করে লেখা আছে …
Negative …
খাবারের অনিয়মে লো প্রেশার …
শীতল আর কিছুই ভাবতে পারছেনা ..
এই একটাই মাত্র উপাই ছিলো রাজকে ঠিক করার ..
এই উপাইয়ে শীতল রাজের চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখেছিলো …
.
.
.
আল্লাহ শীতলকে কেনো বাচিয়ে রেখেছে …
শীতল বেচে থাকা কালিন রাজ নিজের থেকে শীতলকে দূরে যেতে দেবেনা ..
শীতলের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাকে তিলে তিলে মারবে রাজ …
.
.
.
শীতল কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পড়লো …
শীতল একটা সপ্ন দেখছে ..
শীতলের হাত ধরে কে যেনো গান গাইছে …
মানুষটাকে আপন আপন লাগছে …
খুব চেনা চেনা লাগছে তাকে …
হঠাৎ শীতল ফিল করলো তার মুখের উপর কেউ নিঃশ্বাস ফেলছে …
নিঃশ্বাসটা তার খুব চেনা চেনা লাগছে ….
শীতলের চোখ ততক্ষণাক খুলে গেলো ..
বাট তার উপর কাউকে দেখলো না …
পাশে তাকিয়ে দেখলো রাজ বে ঘোরে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে শীতলের ঘুম কেড়ে নিয়ে …
.
.
.
দুই দিন হয়ে গেলো রাজ শীতলের সাথে কথা বলছেনা ..
শীতল কে একবারও টাচও করেনি …
শীতল একটু চুপচাপ হয়ে গিয়েছে …
শীতল হয়ত শোকে মরেই যেতো বাট কাজলের কারণে যেনো বেচে আছে ..
কাজল ভিবিন্ন উপাই করে শীতলের মন ভালো করার চেষ্টা করে ..
ভিবিন্ন গল্পের বই পড়ে শোনায় কাজল শীতলকে ..
কাজল এতটা আহত হয়নি শীতল মা হবেনা বলে কারণ সে আগে থেকে এক্সপেক্ট করেনি এমন কিছু হবে …
বাট শীতলের কষ্ট দেখে তার মন খারাপ হয় ..
অন্য আরেকটা বিষয়েও কাজলের মন খারাপ …
এখনো চিঠির উওর পায়নি কাজল সেই বিজ্ঞাপনের লোকের …
হয়ত লোককে আরো অনেকেই চিঠি পাঠিয়েছেন …
সেখানে কাজলের ছোট হলুদ রংয়ের লাল পেপারে লেখা অগোছালো চিঠি বড়ই বেমানান …
মানুষের মন খুব বিচিত্র …
সহজে পাওয়া জিনিষের প্রতি কোনো মূল্যায়ন করেনা ….
.
.
.
কাজল দুপুরে শীতলকে খাইয়ে দিচ্ছে ...
শীতল খেতে চাচ্ছিলো না ..
রাজকে খাবারের কথা ফোনে জিজ্ঞাসা করতেই রাজ ধমক দিয়ে ফোন কেটে দেয় …
.
.
.
কাজল শীতলকে খাইয়ে দিয়ে একটু ভিসিয়ারে একটা ফানি ভিডিও দেখার জন্য জোর করে সোফায় বসিয়ে রাখে …
ভিডিও টা দেখে কাজল হাসতে শুরু করে …
কাজলের হাসি দেখে শীতলের হাসি পেলোনা…
কাজল সেটা দেখে রেগে শীতলকে গুতগুতি দেয় ..
এইবার শীতল হেসে ফেলে …
_বউরানি কেনো মন মরা হয়ে থাকো তুমি ?? এতোদিন চেষ্টা করেছো আরো কিছুদিন চেষ্টা করো …
দেখবে আল্লাহ তোমায় নিরাশ করবেনা …
তোমার কপালে এতো সুখ লেখা আছে কি বলবো …
খুব শিগ্রই এমন একটা ঘটনা ঘটবে যা তোমার জিবনকে পাল্টে দেবে …
.
.
.
কয়েক দিন হয়ে গেলো ..
শীতল শুয়ে আছে …
রাজ বেডে বসে কাজ করছে …
কাজল জোর করে শীতলকে সুন্দর করে সাজিয়েছে …
গায়ে মন মাতানো পারফিউম লাগিয়ে দিয়েছে শীতলের …
.
.
.
রাজ একটু পর পর শীতলের দিকে তাকাচ্ছে …
শীতল অবশ্য সেটা খেয়াল করছেনা …
শীতল ভাবছে কবে রাজ তাকে আপন করে নেবে ..
শীতলকে অবাক করে দিয়ে রাজ কাজ বন্ধ করে দিয়ে শীতলকে জরিয়ে ধরে তার চুলের সুভাস নিতে শুরু করলো …
শীতলের এমন রাগ উঠলো যে রাজকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো …
রাজ একেবারে বেড থেকে পড়ে গেলো …
রাজ রেগে শীতলের দিকে তাকালো …
শীতল এখন এতটা ভয় পায়না রাজকে ..
সে উল্টো দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লো …
.
.
.
রাজ নরমালি নিচ থেকে উঠে শীতলের পাশে শুয়ে পড়লো ..
শীতল ভেবেছে রাজ অপমান হওয়ার পর তার কাছে আসবেনা ..তাকে ছোবেনা ..
কথায় আছে কুকর কে বিশ্বাস করা যায় তবুও কোনো ছেলেকে না …
রাজ শীতলকে হঠাৎ জোরে জোর করে জরিয়ে ধরলো …
দুই হাত দিয়ে শীতলের হাত চেপে ধরলো ..
পা দিয়ে শীতলের পা আকড়ে ধরলো …
শীতল রাজের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারছেনা ..
শীতল রেগে রাজের গালে একটা কামড় দিলো …
এমন জোরে কামড় খেয়েও রাজ একটু রিয়েক্ট করেনি যেনো তার শরিরীরে ঘন্ডারের চামড়া …
.
.
.
_তোমার তো মা হওয়ার ইচ্ছে ,,,তাহলে এসে তোমাকে মা বানিয়ে দিই ..
তারপর আমি আর আমার বাবু মিলে তোমাকে তিলে তিলে কষ্ট দেবো …
.
.
.
.
আরো দু দিন কেটে গেলো ..
রাজের কোনো পরিবর্তন হচ্ছেনা …
কাজলের কাছে এখনো কোনো চিঠির উওর আসেনি …
.
.
শীতল আর কাজল একদিন শপিং গেলো ..অনেক কেনা কাটার পর গাড়িতে বসেতে গিয়ে শীতলকে কে যেনো ডেকে উঠলো নাম ধরে …
শীতল পেছনে তাকিয়ে দেখে তার মা …
শীতলের মা শীতলকে দেখে জরিয়ে ধরলো …
শীতলের মা জোর করে শীতলকে বাড়ি যেতে বললো …
কাজল শীতলকে অভয় দিয়ে বাড়ি যেতে বললো…
শীতলের হঠাৎ মনে পড়লো বাড়ি গেলে ভাইয়ার কাছ থেকে কোনো ক্লু নিঃশ্চয় পাওয়া যাবে রোজার …
রোদ মাঝে মাঝে মাঝে ডাইরি লিখতো …
আজও টেবিলে বসে একটা একটা ডাইরিতে কি যেনো লিখছে ….
#আমার_অন্ধপ্রেম_
আর কিছু লিখতে পারলো না ..
তার আগেই রোদ তার বাবার চিৎকার শুলো …
.
.
.
রোদ রুম থেকে নিচে নেমেই শীতলকে দেখলো …
শীতলের বাবা শীতলকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাচ্ছে …
শীতল তার বাবার পা ধরে মিনতি করছে তার সাথে একটু কথা বলার জন্য …
শীতলের বাবা : দেখুন মিসেস রাজ ,,,আপনি এখান থেকে চলে যান ।
আপনার স্বামি জানতে পারলে সমস্যা হবে ..
আপনি এখন এই বাড়ির মেয়ে না ..
এখন আপনি অন্য কারো বাড়ির বউ ..
_বাবা এমন করে আমায় পর করে দিয়োনা প্লিজজজ ..
আমার কথা একটু শোনো ..
_কোনো কথা শুনবোনা আপনার ..
আপনার আপনার স্বামির সোসাইটিতে সম্মান না থাকতে পারে বাট আমার আছে ..
আমার এখন একটা সন্তান আর সেটা হলো রোদ …
.
.
কাজল শীতলকে টানছে এখান থেকে চলে যেতে …
শীতলের মা আচল দিয়ে চোখ মুচ্ছে …
এমন সময় রোদ তার বাবাকে বলে সে বাড়ি থেকে চলে যাবে যদি শীতলকে বাড়িতে থাকতে না দেয় ..
পরিবেশ বেশ থমথমে হলো ..
রোদের বাবা কিছু না বলে সিরি দিয়ে উপরে চলে গেলো রোদের দিকে একবার তাকিয়ে …
.
.
.
রোদকে দেখেই শীতল রোদের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে ..
ভাই বোন দুজনেই কাদছেঁ …
_দূর পাগলি কাদছিসঁ কেনো ??রাজ কে আমি চিনি তো ..
সে আমার কলিজার টুকরো বোনের চোখে পানি আসতে দেয়না নিঃশ্চয় ..
সেজন্য তোর চোখের পানি জমিয়ে রেখেছিলি যেনো আমার বুকে এসে কাদতেঁ পারিস তাইনা????
.
.
শীতল মনে মনে বললো …
_ভাইয়ারে তুমি তো জানো না তোমার বন্ধু আমার চোখের পানি বেশি ভালোবাসে ..
আমার মুখে কখনো হাসি আসতে দেয়না ..
কান্না আমার নিত্য দিনের সাথি …
তুমি তো জানো না তোমার বোনকে কিভাবে প্রতিদিন ধর্ষন করা হয় ..
এগুলো জানলে তুমি তো আমার স্বামিকে টুকরো টুকরো করেই ফেলবে …
এজন্য কখনো তোমায় আমার কষ্ট গুলো বলতে পারবো না …
.
.
.
রোদ নিজের ঘরে নিয়ে গেলো শীতল আর কাজলকে …
শীতলের হঠাৎ চোখে পড়লো রোদের ডাইরিটা ..
এই ডাইরিতে রোদ তার সব কথা লেখে ..
নিঃশ্চয় রোজার বিষয়েও কিছু লেখা আছে …
ডাইরিটা নিয়ে এখান থেকে যেতে হবে …
এদিকে রাজ অফিস থেকে এসে পড়েছে ..
সিকিউরিটি জানিয়েছে শীতল আর কাজল এখন কোথায় আছে ….
.
.
.
চলবে ………
( ভুল ত্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে কারণ আমারা আমারাই তো তাইনা???)