The villain lover ।। পার্ট : ১৬
বিছানা থেকে উঠে পা বাড়াতেই ছোয়া দেখতে পেলো, সে একটা অচেনা যায়গায়।
পুরো বাসায় সে একা কেও নেই, ছোয়া বাড়িটাকে দেখতে লাগলো।
হঠাৎ ছোয়ার খুব খারাপ লাগতে শুরু করেছে, শরীরে হাটার মতো শক্তিটুকু পাচ্ছেনা ছোয়া, পাবেই বা কিভাবে দুদিন ধরে না খাওয়া আজ নিয়ে তিনদিন হবে, চোখে যেন বার,বার অন্ধকার দেখে ছোয়া।
মাথা হঠাৎ খুব খারাপ ভাবে চক্কর দিয়ে উঠলো ছোয়ার পরে যাবে ঠিক তখনি কেও এসে তার হাতটা ধরে ফেললো, নিজেকে সামলে মাথা উচু করলো ছোয়া,
২৪/২৫ বয়সি একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছোয়াকে ধরে,
– কে আপনি?
– তুমি ঠিক আছো?
– হ্যা আপু ঠিক আছি, কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না, আর আমি তো জেলে ছিলাম তবে এখানে কিভাবে আসলাম?( কাপা,কাপা গলায় জিজ্ঞেস করলো ছোয়া)
– সব বলবো আগে তুমি রুমে চলো,তোমার শরীর অনেক খারাপ খেয়ে, মেডিসিন নিতে হবে চলো।
ছোয়া আর কথা বাড়ালো না,
সত্যি সে খুব দুর্বল খুধার জ্বালা কিছুটা অনুভব করছে আগে নিজেকে সামলে নেয়া উচিত। তাই ছোয়া মেয়েটির সাথে গেলো।
– ছোয়াকে বিছানায় বসিয়ে কিছু খাবার এনে ছোয়াকে খেতে বললো মেয়েটি। পেটে অনেক খুধার থাকার কারনে খাবারগুলো নিয়ে খেতে লাগলো ছোয়া।
-মেয়েটি তাকিয়ে আছে ছোয়ার দিকে,
– সত্যি তুমি খুব মিষ্টি ছোয়া,
মেয়েটির কথা শুনে খাওয়া বন্ধ করে মেয়েটির দিকে তাকালো ছোয়া,
– আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে? আর আমি এখানে কিভাবে এলাম বললেন না তোহ? আর আপনি আমাকে চিনেন আপু?
– ( মেয়েটি মুচকি হাসলো)
সব উত্তর পাবে, আজ সন্ধ্যায়,আগে খেয়ে নাও।
মেয়েটার কথা কিছুই বুঝতে পারছেনা ছোয়া, এতো হেয়ালি করছে কেনো মেয়েটা বলে দিলেই তো হয়, কে এনেছে আমাকে। শুধু, শুধু এসব হেয়ালি চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছে ছোয়ার। নিজের মনকে কোনোভাবেই যেন শান্ত করতে পারছেনা ছোয়া।
কে এখানে তাকে আনলো,আর কেনই বা সন্ধ্যায় সব প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়ার কথা বললো মেয়েটা,
এসব চিন্তা যেন ছোয়াকে ছিড়ে খাচ্ছে,,,,
সারাটাদিন এসব ভাবতে,ভাবতেই কাটলো ছোয়ার,আর দোহার কথাও জানতে ইচ্ছা করছে। পুলিশ কি মামাকে দোহার ব্যাপারে জানিয়েছি দোহা ঠিক আছে কিনা। এসব ভাবতে,ভাবতে সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা করছে ছোয়া,,,
কারন তার সব প্রশ্নের উত্তর সে সন্ধ্যায়ই পাবে।
সারাদিন বাড়িতে আর কাউকে দেখা গেলো না,
চারিদিকে আধার ঘনিয়ে আসছে সন্ধ্যা নেমে আসছে।
ছোয়া মাথা নিচু করে পা ঝুলিয়ে বসে আছে,
– ছোয়া,
মাথা তুলতেই সকালের সে মেয়েটিকে দেখতে পেলো ছোয়া,
– আপু আপনি?
– হ্যা,আমার সাথে এসো।
– কোথায় যাবো?
– সব প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছো না? তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেতে।
– আচ্ছা, চলুন।
বলেই ছোয়া মেয়েটির পেছনে,পেছনে যেতে লাগলো।
একটা অন্ধকার রুমে নিয়ে গেলো ছোয়াকে, ছোয়াকে দাড় করিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়া হলো,
ছোয়া পেছনে তাকাতেই দেখলো কেও বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, তাই বার বার ছোয়া দরজা ধাক্কাচ্ছে,
– আমাকে এখানে কেনো একা রেখে গেলেন? কি হলো আমাকে প্লিজ বের করুন কেও আছেন। আপু প্লিজ আমাকে বের করুন।
– তুমি একা নও জান, আমি আছি তোমার পাশে আর থাকবো ও।
– হঠাৎ খুব চেনা কণ্ঠস্বর শুনে ছোয়া থমকে গেলো,
ছোয়া ভাবলো হয়তো সে ভুল শুনেছে,এ কন্ঠ কি করে সে শুনতে পারে সে তো নিজের হাতেই, ভাবতে ভাবতে পেছনে তাকালো ছোয়া।
একটা লাইট জোলে উঠলো,সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছেনা ছোয়া।
নিজের অজান্তেই চোখগুলো ছোলছোল করে উঠলো ছোয়ার।
– আপনি???
– কি ভেবেছিলে? মারা গেছি? না জান তোমাকে একা রেখে কোথাও যেতে পারবো না আমি।
-রুদ্র,( ছোলছোল চোখে দাড়িয়ে আছে ছোয়া) রুদ্র আমি আপনাকে
– হ্যা জান তুমি আমাকে মেড়ে ফেলতে চেয়েছিলে,কিন্তু আমি বেচে গিয়েছি। তবে জানো আজ বেচে থেকেও আমি মৃত। কারন আমার ভালোবাসার মানুষ আমার বুকে ছুড়ি চালানোর আগে একটাবার আমার কথা শোনেনি বিশ্বাস করেনি। এই ভেবেই আমি মারা গিয়েছি।
( ছোয়ার চোখ দিয়ে এবার অবাদে পানি পরা শুরু করলো)
ছোয়া আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না, দৌড়ে যেয়ে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরলো।
– বিশ্বাস করুন রুদ্র আমি চাইনি, আমার মাথা ঠিক ছিলোনা,আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। রুদ্র আমাকে মাফ করে দিন। আমাকে দোহা বলেছে যে আপনি ওকে মাড়তে চাননি। আপনি ওকে বাঁচাতে চেয়েছেন।
রুদ্র আমাকে মাফ করে দিন আমি ভুল করে ফেলেছি।( কাঁদতে, কাঁদতে)
রুদ্রের বুকটা ফেটে যাচ্ছে, ছোয়াকে এভাবেই চেয়েছিলো সে। চেয়েছিলো ছোয়া একদিন তার ভুল বুঝতে পারবে আর রুদ্রের ভালোবাসাকে মন থেকে মেনে নেবে।আজ ছোয়া রুদ্রের বুকে রুদ্রের খুব ইচ্ছা করছে নিজের প্রেয়সীকে একবার ছুয়ে দিতে, একবার আকরে ধরে চিৎকার করে বলতে যে সে কতোটা ভালোবাসে তার প্রেয়সীকে। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে রুদ্রের হাত পা কেও বেধে দিয়েছে। রুদ্র পারছেনা ছোয়াকে আকরে ধরতে আবার পারছেনা ছোয়া আকরে ধরতে।
ছোয়া কথা বলে যাচ্ছে, কিন্তু রুদ্র শুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রুদ্রের এমন শুদ্ধতা দেখে ছোয়া রুদ্রের বুকের থেকে মাথা উঠিয়ে রুদ্রের দিকে তাকালো!
– কি হলো, আমাকে মাফ করবেন না?
– মৃত মানুষের মাফ করার ক্ষমতা থাকেনা ছোয়া। আজ আমি বেচে থেকেও মৃত, আমার ভালোবাসায় তো কোনো ছোলনা ছিলোনা ছোয়া,তবে কেনো আমাকে একটু বিশ্বাস করতে পারলেনা তুমি?
– ছোয়া অশ্রু চোখে তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে,
-জানি উত্তরটা তুমি দিতে পারবে,না।
– রুদ্র আমাকে একবার,
– আহহহহ পেটে হাত দিয়ে ব্যাথায় কোকিয়ে উঠলো রুদ্র।
– রুদ্রদ্র কি হলো, আপনি ঠিক আছেন?( রুদ্রের এমন অবস্থা দেখে ছোয়া রুদ্রকে ধরতে যাবে তখনি,
– Don’t touch me choya.(ছোয়াকে ধাক্কা দিয়ে বললো রুদ্র) আমাকে ছুবেনা। তোমার।ছোয়া পাওয়ার জন্য মৃত্য মুখোমুখি হয়েও অনেক আকুতি করেছিলাম,তখন তুমি আমাকে নিয়ে উপহাস করেছো,আমার ভালোবাসাকে অসম্মান করেছো, তাই আজ যখন আমি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেই এসেছি। আজ তোমার কোনো করুনা আমার দরকার নেই।( খুব কড়া ভাবেই কথাগুলো ছোয়াকে বললো রুদ্র)
– ছোয়ার চোখে বাদ ভাঙা জল আজ থামতেই চাচ্ছে না।
– রোজা, রোজা চিৎকার করে এই নামটা ডাকতে শুরু করলো রুদ্র,
দরজা খুলেই সে মেয়েটি দৌড়ে এলো জ্ঞান ফেরার পর থেকে যাকে দেখছে ছোয়া,
রোজা এসেই,
– কি হয়েছে রুদ্র? are you ok? তার পর রুদ্রের এক হাত নিজের কাধে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো রোজা।
ছোয়া দাঁড়িয়ে আছে সেখানেই, আর তাকিয়ে দেখছে রুদ্র আর রোজাকে।
– রোজা ওকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে না করো, আমি ঘুমাবো। ওকে এখানে দেখতে চাইনা( ছোয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো রুদ্র)
-ছোয়া তুমি তোমার রুমে যাও, আর তোমার বোন দোহা তোমার মামার কাছে আছে, কাল সেখানে যেতে পারবে তুমি।
– আপু আমি থাকি এখানে? রাতে ওনার দেখাশোনা করবো।
– রোজা আমার কথা শুনতে পাচ্ছ না, আমি আমার রুমে বাড়তি কাওকে চাইনা( চিৎকার করে বললো রুদ্র)
ছোয়া রুদ্রের কথা শুনে থো হয়ে গেলো,আজ সে বাড়তি কেও হয়ে গেলো?.দুদিন আগেও বউ বউ করে সারাক্ষণ জ্বালাতন করা মানুষটার মুখে এমন কথা আশা করেনি ছোয়া,
তবে এটা আশা করা উচিত তার, সে যেই অন্যায় করেছে তার কাছে এসব অপমান কিছুই না।
ছোয়া আর না দাঁড়িয়ে কাঁদতে, কাঁদতে অন্য রুমে চলে গেলো।
– এটা কি করলে রুদ্র?
– কি করবো বলো, ও আমাকে ছুড়ি দিতে আঘাত করেছে তাতে আমার কষ্ট নেই, ভালোবেসে প্রান নিতে চাইলে তো আমি হাসতে, হাসতে ওর হাতে মরে যেতাম। কিন্তু এতো ভালোবাসার পরও আমাকে বিশ্বাস করতে পারলোনা ও। তাই এতোটুকু শাস্তি যে ওকে পেতেই হবে।
– অনেকক্ষন ধরে বিছানার ওপরে শুয়ে, শুয়ে কাঁদছে ছোয়া, এতোদিন কাদতো রুদ্রের থেকে দূরে যাওয়ার জন্য আর আজ কাঁদছে রুদ্রকে কাছে না পাওয়ার যন্ত্রনায়।
নিজেকে আজ শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে,কিন্তু কেনো এমন হচ্ছে জানেনা ছোয়া, সে তো রুদ্রের থেকে দূরে যেতেই চেয়েছিলো তবে আজ রুদ্র নিজে তাকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলে,এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে ছোয়ার। কথাগুল ভাবতেই যেন কান্নার গতিটা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ কিছু একটা পরে যাওয়ার শব্দ শুনে বাহিরে চোখ গেলো ছোয়ার, রুদ্র পরে আছে ফ্লোরে,
ছোয়া দৌড়ে রুদ্রের কাছে গেলো,
– একি আপনি, পরে গেলেন কিভাবে? বলেই রুদ্রকে উঠাতে চেষ্টা করতে লাগলো ছোয়া,
– ছাড়ো আমাকে হেল্প লাগবেনা তোমার,
ছোয়া রুদ্রের কোনো কথা না শুনে তাকে ওঠানোর চেষ্টা করছে আর রুদ্র বার,বার বাধা দিচ্ছে। দুজনের জোরাজোরিতে তাল সামলাতে না পেরে রুদ্রের হাতের টানে ছোয়া নিচে পরে গেলো, আর রুদ্র নিজে উঠতে যেয়ে ছোয়ার ওপরে পরে গেলো, ব্যাপারটা খুব তাড়াতাড়ি ঘটে যাওয়ায় কেও কিছু বুঝতে পারলো না,
রুদ্র ছোয়ার ওপরে পরে আছে, কান্না করার কারনে ছোয়ার চোখ লাল হয়ে আছে আর ফুলেও গিয়েছে,
রুদ্র তাকিয়ে আছে তার মায়াবতীর দিকে,
অনিচ্ছা সত্ত্বেও রুদ্র ছোয়ার মুখে পরে থাকা কিছু চুল সরিয়ে দিলো,
রুদ্রের প্রতিটা নিশ্বাস ছোয়ার মুখে পড়ছে, তবে আজ এসবের মাঝে ছোয়া ভালোবালাগাএ অনুভূতি খুজে পাচ্ছে।
রুদ্র ছোয়ার ঠোঁটের কাছে এগোতেই, ছোয়া চোখ বন্ধ করে ফেললো,
রুদ্র ছোয়ার ঠোটের খুব কাছে অগ্রসর হচ্ছে,
আর ছোয়ার নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছে,
ঠিক তখনি রুদ্রের মনে পরলো,দুদিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা।
সে ছোয়া এক ঝটকানি দিয়ে সরিয়ে দিলো,
– তুমি আমাকে কেনো ফেলে দিলে? কি ভেবেছো তোমার এই শরীর দেখিয়ে আমাকে আবার মাতাল করবে( অনেক রেগে ছোয়াকে বললো রুদ্র)
– আর ছোয়া, তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে,
সে বুঝতে পারছে কতোটা অন্যায় করেছে সে,,,,
চলবে
( এখন কি হবে? রোজাই বা কে? রুদ্র সাথে রোজার কি রিলেশন)