Love Right

Love Right ! Part- 07+ 08

নীল ফ্রেশ হয়ে ইশুদের রুমে ঢুকতেই দেখলো নিশু পা ধরে বসে আছে।ইশু আর আয়াত মিলে ওর পায়ে মলম লাগানোর চেষ্টা করছে।তানিম সোফায় বসে বসে ওদের কান্ড দেখছে।
ইশু:নিশু ব্যথা করবে না।আমি আস্তে লাগাবো।ওষুধ না লাগালে ব্যথা কমবে না তো!
নিশু:লাগবে না ওষুধ।এমনিতেই কমে যাবে!
নীল এগিয়ে গিয়ে ইশুকে জিজ্ঞেস করলো….কি হয়েছে রে ইশু?
ইশু:😐তোর হিসুবেবি ওষুধ লাগাতে চাইছে না!
নিশু:😮তুইও??
নীল:তুই ওর কথায় এত পাত্তা দিচ্ছিস কেন?..দেখি মলমটা আমাকে দে!
ইশু নীলের হাতে মলমটা এগিয়ে দিলো।নীল গিয়ে একেবারে নিশুর মুখোমুখি চেয়ারে বসলো।
নীল:দেখি হাত সরাও?(ধমক দিয়ে)
নিশু:না!
নীল:দেখো মেজাজ খারাপ করাবে না!ভালোভাবে বলছি হাত সরাও!
নিশু:বললাম তো আমি ওষুধ লাগাবো না!
নীল:দেখো তুমি কোন সিনেমার হিরোইন নও আমিও সিনেমার কোন হিরো নই যে তোমাকে বারবার কোলে নিয়ে বেড়াবো!…আমাদের ফিরতে হবে!সো ভালোভাবে বলছি ওষুধ টা লাগাতে দাও!
নীলের কথাগুলো নিশুর হজম হলো না।ও হাতটা সরিয়ে নিলো পায়ের ওপর থেকে।আয়াত আর ইশুও থম মেরে গেছে নীলের আচরণ দেখে!
নিশু হাতটা সরাতেই নীল প্রথমে ইচ্ছে করেই একটু জোরে চাপ দিলো।কিন্তু নিশুর কোন রিয়েকশন না দেখে বুঝতে পারলো ওর কথাগুলো ভালোই ইফেক্ট করেছে।ও এবার যথেষ্ট যত্ন করে মলম লাগিয়ে দিলো।
নীল:এখন কেমন লাগছে??
নিশু:ভালো!(গম্ভীর গলায়)
নীল:আমি উঠছি!
নীল বেরিয়ে যেতেই ইশু গিয়ে নিশুর পাশে বসলো।আয়াতও নীলের পিছন পিছন বেরিয়ে গেলো।
ইশু:নিশুপাখি??….ভাইয়ার কথা তুই ধরিস না।ওর কথা বলার ধরনটাই এমন যা বলবে মুখের ওপর বলে দিবে!
নিশু মুখ তুলে ইশুর দিকে তাকিয়ে আছে।ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে!ইশু ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো…আমি তো ভেবেছিলাম তুই এ নিয়ে ওর সাথে ঝগড়া করবি।কিন্তু তুই তো পুরা বোবা হয়ে গেলি!
নিশু:দেখলি না কি বললো??
ইশু:যাই হোক তোর পায়ে ওষুধ লাগানো তো হয়ে গেলো।

আয়াত:নীল তুই ওর সাথে এমন করে কথা বললি কেন?
নীল:কেমন করে বলছি?…শুদ্ধ বাংলা ভাষায়ই তো বললাম।নাকি সাধুভাষায় বলবো!
আয়াত:তুই একদম কথা ঘোরাবি না!
নীল:এত হাইপার হচ্ছিস কেন?
আয়াত:সব ব্যপারে মজা করা ঠিক না নীল!
নীল:😂আচ্ছা ঠিক আছে!কিন্তু তুই এত রাগ করছিস কেন?
আয়াত:রাগ করবো না।আমার খারাপ লেগেছে।তুই যখন কথাগুলো বলছিলি তখন ওর চোখে পানি টলমল করছিলো!
নীল:তাই নাকি?
আয়াত:হ্যাঁ তাই!
নীল:এ তো দেখছি একেবারে ছিঁচকাঁদুনী মেয়ে!
আয়াত:ধ্যাত!

আয়াত বিরক্ত হয়ে চলে গেলো।নীল বসে বসে ভাবছে সত্যিই কি নিশু কাদঁছে নাকি।সামান্য একটা কথাতে কাঁদার কি আছে?তবে ওর হাসির মত ওর কান্নাটাও নিশ্চই অনেক সুন্দর হবে?….ইশস দেখে আসা উচিৎ ছিলো।কালকে রাতের ঘটনাগুলো মনে পড়তেই ওর হাসি পেয়ে গেলো।
ও বসে কালকে রাতের ঘটনাগুলো ভাবছিলো এমন সময় রুশা এসে হাজির।
রুশা:আমি তোমাকে সেই কখন থেকে খুঁজে চলেছি আর তুমি ধ্যান করছো?
নীল:তো কেন খুজঁছো আমাকে?
রুশা:কেন আবার?…আজকে আমরা ঘুরতে যাবো না?
নীল:না তো!…তোমাকে কেউ বলে নি?..আজকে আমারা কোথাও যাচ্ছি না!
রুশা:কেন?
নীল:নিশু পায়ের জন্য হাঁটতে পারবে না।আর ওকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করাটাও ঠিক হবে না!
রুশা:তাহলে ও থেকে গেলেই তো হয়।আমরা ঘুরে আসতে পারি।
নীল:ওকে একা রেখে গেলে টেনশনে কেউ ঠিক মত এঞ্জয় করতে পারবো না।তারচেয়ে আজকে দিন ও রেস্ট নিক আমরা কালকেই ফিরবো!
রুশা:তাই বলে ঘুরতে এসে এভাবে ঘরে বসে থাকবো?
নীল:বিপদ হলে তো কিছু করার নেই তাইনা?
রুশার গেলো মেজাজ খারাপ হয়ে।এই মেয়েটার প্রতি নীলের কনসার্ন বেড়েই চলছে।কই ওকে নিয়ে তো কখনো এমন ভাবে নি।ওকে নিয়ে তো কখনো ছোট ছোট সুন্দর দিকে কিংবা দুশ্চিন্তার কথা বলে নি?
রুশা:তোমার কি মনে হচ্ছে না নীল তুমি ওকে নিয়ে একটু বেশি ভাবছো?
নীল স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো…হচ্ছে!
রুশা:কেন?
নীল:আমার ইচ্ছে!….আমার মনে হচ্ছে আমি ওর প্রেমে পড়ে যাচ্ছি!
রুশা:সেটা কখনোই সম্ভব নয়!
নীল:কেন বলতো?
রুশা:সেটা তুমি জানো না?
নীল:আমি করে জানবো?
রুশা:নীইইইল??
নীল:বলো?
রুশা:তোমার সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে!…আমি তোমাকে ভালোবাসি!
নীল:মানে??
রুশা:হ্যাঁ!
নীল:কিন্তু আমি তো তোমাকে কখনো সেভাবে দেখিই নি!
রুশা:তো কীভাবে দেখেছে??
নীল:তুমি আমার কাছে ইশুর চেয়ে আলাদা নও।তবে বয়সে ছোট হলেও তোমার সাথে সবসময় বন্ধুর মত চলেছি…তুমি যে সেটাকে এমনভাবে দেখবে আমি তো ভাবতেই পারছি না!….তাছাড়া তোমার অনেক বার রিলেশন হয়েছে ব্রেকাপ হয়েছে তাই আমি ভেবেছিলাম তুমি এইসব ব্যপারগুলো ওভাবে নিবে না।জানলে আমি কখনোই তোমার সাথে এতটা ফ্রিভাবে মেলামেশা করতাম না!

রুশা:আসল কথাটা হচ্ছে তুমি নিশুকে ভালোবাসো?
নীল:দেখো রুশা আমি নিশুকে ভালোবাসি কি না আমি জানি না।কিন্তু আমি তোমাকে কখনো ভালোবাসি নি।ছোটবেলা থেকেই দুজন বন্ধুর মত চলে এসেছি।আমার সব কথা তোমার সাথে শেয়ার করি।কিন্তু তারমানে তো এই নয় যে আমি তোমাকে ভালোবাসি!
রুশা কাদঁছে নীলের কথা শুনে!
নীল:আর আমাকে না জানিয়ে সবাই কি করে বিয়ের ডিসিশন নিলো আমি ভাবতেই পারছি না!
রুশা:(আমি তোমাকে নিজের করেই ছাড়বো!)
রুশা আর সেখানে দাঁড়ালো না।রেগে বেরিয়ে গেলো।নীলের মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে।ওকে না জানিয়ে সবাই এমন একটা ডিসিশন নেয় কি করে?…রুশার ওপরও মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।এই মেয়ের পেটেপেটে এত শয়তানি।বাসার সবাইকে নিশ্চই ওই এসব উল্টোপাল্টা কথা বলছে নয়তো ওকে না জানিয়ে সবাই ওর বিয়ে ঠিক করবে কেন?…তবে টেনশনও হচ্ছে ও যা জেদি মেয়ে!

ইশু আর তানিম বসে আছে।দুজনেই চুপচাপ।
তানিম:কি হলো আজকে মুখে তালা মেরেছো নাকি?…চুপচাপ বসে আছো যে?
ইশু:তো কি করবো?
তানিম:আচ্ছা থাক বাদ দাও!….তুমি আমার আর তোমার ব্যপারে কিছু জানো?
ইশু:জানি!….আপনার আমার স্যার আমি আপনার ছাত্রী!
তানিম:😐আমি সেকথা বলছি না!
ইশু:তাহলে কি বলছেন?
তানিম:না মানে…তোমার আর আমার বিয়ের কথা শুনেছো?
ইশু:না তো?(অবাক হয়ে)
তানিম:তোমার পরীক্ষা শেষ হলে তারপর সব ঠিক হবে!!
ইশু:কিন্তু আমি তো আপনাকে বিয়ে করবো না!
তানিম:তার কারন?
ইশু:আমার বয়ফ্রেন্ড আছে!
তানিম:কে সে?
ইশু:আয়াত!

আয়াত সবে এদিকে আসছিলো ইশুর কথা শুনে আবার উল্টোদিকে হাঁটা ধরলো।নির্ঘাত এই মেয়ে ওকে ফাঁসাচ্ছে।কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।ইশু ওকে দেখে ফেললো!
ইশু:আয়াত??
আয়াত এগিয়ে আসতেই তানিম ওর দিকে এটম বোমের মত তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে এখুনি ফাটিয়ে দিবে!
ইশু:তানিম ভাইয়া জিজ্ঞেস করছে তোমার আর আমার রিলেশন কত দিনের?
তানিম:(ভাইয়া??)
আয়াত:( ভাইয়া?)
তানিম:কবে থেকে শুরু এসব?
ইশু:😁আয়াত জানে!…ওই তো আমাকে প্রথম প্রোপজ করেছিলো!
আয়াত:(কূটনী শয়তান!)
ইশু:কি হলো বলো?(শয়তানি হাসি দিয়ে)
আয়াত:আমি সত্যিই ওকে অনেক ভালোবাসি(ভাব নিয়ে)
ইশু:😮
তানিম রাগে সেখান থেকে উঠে চলে গেলো!
ইশু:তুমি উনাকে মিথ্যে বললে কেন?
আয়াত:কে বললো আমি উনাকে মিথ্যে বলেছি?…আমি সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবাসি জান!…বিয়ে করলে তোমাকেই করবো!(আর করবি আমার সাথে বাঁদরামি)
ইশু:একদম মজা করবে না বলে দিলাম!
আয়াত:তুমি এতক্ষন কি করেছিলে?
ইশু:তারজন্য তুমি এমন করবে?…উনি যদি বাসায় বলে দেয়?
আয়াত:তাহলে তো আমার আমাদের কোন কষ্ট করতে হবে না ডার্লিং!
ইশুও রেগে চলে গেলো।আয়াত হাসছে ওর কান্ড দেখে।বেশ হয়েছে! এবার তানিম ভালোমত ডোজ দিবে!

রুশা রেগে গিয়ে নিশুর রুমে ঢুকলো।নিশু খাটের ওপর বসে ছিলো!রুশা গিয়ে ওর সামনে দাঁড়ালো!
রুশা:তুমি কি নাটক করে আমার নীলকে ভুলিয়েছো বলতো?
নিশু:ভদ্রভাবে কথা বলো!…এসব কি ধরনের কথা??
রুশা:আমি ঠিক মানুষের সাথে ঠিক ভাবেই কথা বলছি!
নিশু:যা বলবে ক্লিয়ারলি বলবে!
রুশা:তুমি জানতে না নীল আর আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে?
নিশু:তো??
রুশা:তারপরও কেন এমন করলে?
নিশু:কি কিরেছি আমি??
রুশা:তুমি নীলকে ফাঁসিয়েছো!
নিশু:পাগলের মত কথা বলো না।আমি তোমার কথা আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না!
রুশা:আমি এখানে তোমাকে কিছু বোঝাতেও আসি নি।আমি জাস্ট একটা কথা বলতে এসছি….Stay away from Nil!..Otherwise you have to pay for that!
রুশা রেগে বেরিয়ে গেলো।নিশুর মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না কি বলে গেলো রুশা?..নিশ্চই অসভ্যটা কিছু একটা ঝামেলা বাধিয়েছে!

নিশু সারাদিনে একবারও ঘর থেকে বেরোয় নি।তানিম দুপুরের দিকে রেগে চলে গেছে।রাতের বেলা নীল এসেছে নিশুর পায়ের অবস্থা কেমন জানতে!
নীল:তোমার পায়ের ব্যথা কমেছে?
নিশু:……..
নীল:কি হলো কথা বলছো না কেন?
নিশু:……..
নীল:আমি তোমাকে কিছু বলছি!
নিশু:……..
নীল:তুমি কি আমার ওপর রাগ করেছো?…সকালের ঘটনার জন্য সরি!
নিশু:………..
নীল:কি আজব বললাম তো সরি!
নিশু:……
নীল:এত ডাট ভালো নয়।
ও রেগে বেরিয়ে গেলো।নিশু বসে বসে ভাবছে ওর কি করা উচিৎ?..নীল আর রুশার মধ্যে নিশ্চই ওকে নিয়েই কোন ঝামেলা হয়েছে।ঢাকায় ফিরে হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।আর ওদের বাসায় থাকা যাবে না।কিন্তু ছেড়ে যেতেও মন সায় দিচ্ছে না।কোথাও একটা টান অনুভব করছে।

#Love_Right❤💕❤
#অরিত্রিকা_আহানা
#Part_8

সকালবেলা ওরা সব জিনিসপত্র গুছিয়ে বের হয়ে এলো।না নীল নিশুর সাথে কোন কথা বললো না নিশু নীলের সাথে কোন কথা বললো।
ইশু আর আয়াত আগের মত একসাথে বসে পড়লো।নীলও উঠে আগেই বসে পড়লো।নিশু উঠতেই দেখলো রুশা নীলের পাশে বসে আছে।নিশু গিয়ে একা আলাদা একটা সীটে বসে পড়লো।নীলের মেজাজা গরম হয়ে যাচ্ছে নিশুর সাহস আর তেজ দেখে।
নীল:এই আয়াত?
আয়াত:হ্যাঁ?
নীল:তেজ দেখেছিস?
আয়াত:হায় আল্লাহ!…ও একা কেন?
নীল:উঠে যা না।আমার সাথে তো কোন কথাই বলছে না!…তুই যা!
আয়াত তাড়াতাড়ি উঠে নিশুর কাছে গেলো!
রুশা:ও একা বসতে চাইলে তোমার সমস্যা কোথায় নীল?
নীল:এতটা পথ ও একা যাবে নাকি??…তাছাড়া সিটটাতো আর ফাঁকা থাকবে না।কে না কে এসে ওর পাশে বসবে কে জানে?..আগে জানলে আমি দুটো সীটই বুক করে নিতাম!
রুশা নীলের অগোচরে মুখ বাকিয়ে অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলো।

আয়াত:নিশু চলো তুমি ইশুর পাশে বসবে!
নিশু:লাগবে না আমি এখানেই ঠিক আছি!
আয়াত:কিন্তু আমি ঠিক নেই!
নিশু:তোমার আবার কি হলো?
আয়াত:আমি তোমার ঐ দজ্জাল বান্ধুবীর সাথে বসবো না!
নিশু:তো প্রথমে বসলে কেন?
আয়াত:এতক্ষন ভালো ছিলো একটু আগে ওর সাথে ঝগড়া হয়েছে!
নিশু:তো আমি কি করবো?
আয়াত:তুমি ঐ সীটে গিয়ে বসো আমি এখানে বসবো!
অবশেষে আয়াতের পিড়াপীড়িতে টিকতে না পেরে নিশু গিয়ে ইশুর পাশে বসলো।
ইশু:তুই এসেছিস ভালোই হয়েছে!না হলে শয়তানটা আমার মাথা খারাপ করে দিতো!
নিশু:আমার তো মনে হয় ওর চেয়ে বেশি তুই ওকে জ্বালাস!
ইশু:এই তোর কি হয়েছে বলতো?…ইদানীং আয়াতের হয়ে বেশ সাফাই গাইছিস?..ওর প্রেমে টেমে পড়েছিস নাকি?
ওদের ঠিক সামনের সীটেই নীল আর রুশা বসেছে।নীল কান খাড়া করে রেখেছে নিশু কি বলে শুনার জন্য!
নিশু:ওর মত ছেলের প্রেমে যে কেউই পড়তে পারে!
ইশু:😮
নীল:(তাই নাকি??ফাজিল মেয়ে!)
ইশু:তুই কি সিরিয়াসলি ওর প্রেমে পড়েছিস নাকি?
নিশু ওর কথার কোন উত্তর না দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো।
রুশা:নীল??
নীল:বলো!
রুশা:আমার খারাপ লাগছে তোমার কাধে একটু মাথাটা রাখি?
নীল:হুম!
রুশা নীলের কাধে মাথা রাখতেই নিশুর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।কিন্তু মুখে কিছু প্রকাশ করলো না!
মনে মনে নীলকে হাজারটা গালি দিচ্ছে!

বাসায় পৌঁছেতেই পায়ের ব্যথা আবার বেড়ে গেলো।কিন্তু ও কাউকে কিচ্ছু জানালো না।চুপচাপ রুমে এসে শুয়ে পড়লো।রাতের বেলা ইলারা বেগম ওকে ডাকতে আসলে বারণ করে দিলো যে ও খাবে না।
পরেরদিন সকালবেলা সবার আগে উঠে গেলো।ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ বসে ইলারা বেগমের সাথে গল্প করছিলো!উদ্দেশ্য হোস্টেলে উঠার কথাটা বলা!
নিশু:খালামনি?
ইলারা বেগম:বল?
নিশু:কয়েকদিন ধরে ভাবছি তোমাকে একটা কথা বলবো!
ইলারা বেগম:তো বল না!
নিশু:না মানে এবার তো লাস্ট সেমিস্টার।তাই ভাবছি পরীক্ষা আগে হোস্টেলে উঠে গেলে ভালো হয়।গ্রুপ স্টাডি করা যাবে!
ইলারা বেগম:কে শিখিয়েছে তোকে এসব বাজে কথা?..পরীক্ষা আগে হোস্টেলে উঠে যদি ওখানকার পরিবেশে মানিয়ে নিতে না পারিস?
নিশু:আরে না।আমার অন্য বান্ধবীরা থাকছে না হোস্টেলে?
ইলারা বেগম:এখানে কি তোর পড়ার কোন অসুবিধে হচ্ছে?
নিশু:আরে বাবা সেটা কেন হতে যাবে।বললাম না গ্রুপ স্টাডি করতে সুবিধে হবে তাই!…আর তো মাত্র অল্প কয়েকটা দিন!
ইলারা বেগম:ঠিক আছে আমি মালিহার সাথে কথা বলে দেখি!
নিশু:আমি মায়ের সাথে কথা বলছি।ওরা রাজি আছে!
ইলারা বেগম:আচ্ছা ঠিক আছে!
নিশু ভাবছে আজকেই উঠে যাবে কি না?…ও পিছনে ফিরতেই দেখলো নীল প্যান্টের পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে ওর দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে আছে।ও কিছু বলার আগেই নীল ওকে টেনে ওপরে ওর রুমে নিয়ে গেলো।
নিশু:কি হলো দরজা বন্ধ করলে কেন?
নীল:……..
নিশু:আমাকে কেন নিয়ে এসেছো?
নীল রেগে ওর দুইবাহু চেপে ধরে বললো…সমস্যা কি তোমার বলতো?
নিশু:কই কি সমস্যা?
নীল:বেশি বাড়াবাড়ি করো না নিশু!আমাকে এখনো ভালো করে চেনো নি!…আরেকবার হোস্টেলে যাওয়ার কথা বললে শিকল দিয়ে বেধে রেখে দিবো!
নিশু:আশ্চর্য আমি হোস্টেলে গেলে তোমার প্রবলেম কোথায়?
নীল:সেটা তোমার না জানলেও চলবে?….তার আগে তুমি বলো তুমি কেন হোস্টেলে যেতে চাইছো?
নিশু:আমার ইচ্ছা!
নীল:নাকি আমার থেকে পালাতে চাইছো?…আমাকে আবার ভালোবেসে ফেলো নি তো?
কথাটা একদম নিশুর বুকে গিয়ে বিধলো।সত্যিই তো?…ও কেন পালাতে চাইছে?
নিশু:সেই সুযোগ আমার নেই নীল!
নীল ওর গালে দুহাত রেখে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো…কে বলেছে নেই?
নিশু ওকে ঠেলে সরিয়ে দিলো।
নিশু:আমার তো মনে হয় তোমার নিজের দোষ আমার ঘাড়ে চাপাতে চাইছো?…তুমি আবার আমাকে ভালোবেসে ফেলো নি তো?
ওর এমন আচরণে নীলের মেজাজা খারাপ হয়ে গেলো।কি ভাবে নিজেকে সারাক্ষণ যে ওর পিছনে ঘুরঘুর করছে সেটা ওর চোখেই পড়ছে না?..নীলও সমান তেজে জবাব দিলো…নীলাস হাসানের ভালোবাসা এতটা সস্তা না!
নীলের মনে আসলে ওর জন্য কোন ফিলিংস আছে কিনা সেটাই জানতে চেয়েছিলো।কিন্তু নীলের উল্টো জবাবে ওরও মেজাজ গরম হয়ে গেলো।
নিশু:দেখি ছাড়ো আমাকে!
নীল:তোমার রিয়েকশন দেখে কিন্তু আমার সন্দেহ হচ্ছে!
নিশু:কি?(অবাক হয়ে)
নীল:তুমি মনে হয় আমাকে সত্যিই ভালোবাসো!
নিশু:তোমার মনে হওয়া নিয়েই তুমি থাকো!
নীল:তা না হলে তুমি পালাচ্ছো কেন?
নিশু:বললাম না আমার পরীক্ষা!
নীল:ওসব মিথ্যে কথা!
নিশু:তাহলে সত্যি কি?
নীল:তুমি আমাকে ভালোবাসো!
নিশু:তুমি কি আমাকে জোর করে বলাবে নাকি?
নীল:যদি সেটা না হয় তাহলে তোমাকে আমার বিয়ে পর্যন্ত থাকতে হবে!…বলো,বলো?(ভ্রু নাচিয়ে)
নিশু:পারবো না!
নীল:আমি জানতাম তুমি পারবে না।চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষের বিয়ে কেউ সহ্য করতে পারবে না!(ইচ্ছে করে শয়তানি করছে)
নিশু:আশ্চর্য তো!(বিরক্ত হয়ে)
নীল:কি??…আমি তোমার মনের কথা পড়লাম কি করে তাইতো?
নিশু:ধ্যাত!
নীল:😁না ঠিক আছে তুমি চাইলে আমি বাবা মায়ের সাথে কথা বলে দেখতে পারি?….যদিও আমার আর রুশার বিয়েটা মোটামুটি ফাইনাল!
নিশু:(তুমি কি ভেবেছো আমি এতটাই দুর্বল?আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো আমার যতই কষ্ট হোক না কেন!)ঠিক আছে আমি থাকবো তোমার আর রুশার বিয়ে পর্যন্ত!
নীল ওকে ছেড়ে দিয়ে মিটিমিটি হাসছে কিন্তু নিশু সেদিকে একবারও তাকালো না।ও ঝড়ের বেগে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।
নীল:বিয়ে আমি তোমাকেই করবো মিস নিশিতা জামান!(মুচকি হেসে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *