ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 09
আপুর চেম্বার থেকে বেড়িয়ে আসতেই মিনি, নিশি, প্রিয়া ঘিরে ধরলো আমায়।টানতে টানতে আমায় সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো। বলতে লাগলো আমায়,
-তোর কি হয়েছে ফুল আগে তো এমন ছিলি না।আজকাল এতো শান্ত কেন হয়ে গেলি? চল আমাদের সাথে।
ওরা আমাকে নিয়ে একটা ফাঁকা রুমের মধ্যে আনলো।বলল আমায়,
-এবার বল কি হয়েছে তোর?
আমি কাল রাত থেকে আজ পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে সব খুলে বললাম ওদের।ওরা সবটা শুনে ভীষণ রেগে আছে হৃদের উপর।আমি ওদের বললাম,
-কাল সকালে হৃদ আর আপুর বিয়ে।মাম্মাম ফোন করেছিলো।আমাকে বাড়িতে যেতে হবে এখন।তোরা একটু ভাব কোনো প্লান মাথায় আসে নাকি।আমাকে ফোন করে জানাবি প্লিজ।
ওদের সাথে কথা বলে বাড়িতে চলে আসলাম আমি।সারাদিন ভাবলাম কিন্তু কিছুই মাথায় আসলো না।রাতে মিনি, নিশি, প্রিয়ার সাথে ভিডিও কলে কথা বললাম ওদের মাথাতেও কোনো প্লান আসলো না।মাঝ রাত।না খেয়েই শুয়ে পরেছি।বিছানায় পা গুটিয়ে বসে পরে ভাবছি কি করবো।এমন সময় খাবার নিয়ে হৃদ আমার রুমে ঢুকলো।ওকে দেখা মাত্র আমি পাশের ফল কাটা ছুরিটা নিজের হাতে নিলাম।সেটা দেখে দূর থেকেই খাবারটা আমার সামনে রাখলো।খাবারটা আমার দিকে ঠেলে দিয়ে বলল,
-খেয়ে নে।
আমি রেগে উঠে গিয়ে হৃদের সামনে দাড়ালাম।ওর কলারটা টেনে ধরে বললাম,
-মজা করতে এসেছেন এখানে? লজ্জা করে না আপনার? আর কতো নিচে নামবেন আপনি? ইচ্ছে করছে আপনাকে আমি নিজের হাতে খুন করি।একজন নির্দোষ মানুষকে এইভাবে ফাঁসিয়েছেন আপনি। কেন? কি দোষ করেছিলো মেঘ স্যার। উত্তর দিন?
হৃদ রেগে আমার গালটা চেপে ধরে।আমি ছাড়াতে গেলেই খাবারটা রেখে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়।রাগি দৃস্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।আমি কিছু বলতে যাবো আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট খুব শক্ত করে চেপে ধরে রাখে।কিছুক্ষণ পর ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বুকে মাথা রেখে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস ফেলে।সুযোগ বুঝে আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিই।ছিটকে গিয়ে খাটের পায়াই লেগে হৃদের কপালটা কেটে যায়।ও ঘুরে এসে আমার দুই হাত মুচড়ে ধরে পেছনে নেয়। ওড়না টেনে নিয়ে আমার হাত বেঁধে বিছানার উপরে ছুরে ফেলে আমায়।রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে বলে,
-কাল রাতে যেটা করি নি।ইচ্ছে করছে সেটা এখন করতে।কি ভেবেছিস তুই? তুই সুখি হবি? তোর মতোন একটা রাস্তার মেয়েকে এবাড়িতে আশ্রয় দেওয়াটাই আমাদের ভুল হয়েছে। তোর ভালোবাসার মানুষকে পাঠিয়ে দিয়েছি তার নিজ স্থানে।এবার তাকে কাছে না পেয়ে কস্ট পেতে পেতে একটু একটু করে মরবি তুই। বুঝবি কাউকে ভালোবেসে কাছে না পাওয়ার যন্ত্রণাটা কতোটা ভয়নক।
হৃদ এগিয়ে এসে আরেকটা ওরনা দিয়ে আমার মুখটা বেঁধে ফেললো যেন আমি চিৎকার করতে না পারি।তারপর আমার কাছে একটু একটু করে এগিয়ে এসেই বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরলো।আমি চেস্টা করছি নিজের হাতের বাঁধন খুলতে।কিন্তু পারছি না।খেয়াল করলাম হৃদের চোখের পানিতে আমার জামাটা ভিজে যাচ্ছে।আমি বুঝতে একটু উঁচু হলেই হৃদ এবার শব্দ করে কেঁদে উঠে আমাকে বিছানার সাথে চেপে ধরলো।
কিছুক্ষণ পর উঠে বসে আমার হাতের বাঁধন খুলে দিলে আমি রেগে ওকে ধাক্কা দিয়ে আমার রুম থেকে বের করে দিলাম।দরজাটা আটকানোর সময় দেখলাম চোখদুটো ওর লাল হয়ে আছে।নিজেকেই নিজে বললাম আমি,
-তারমানে কাল রাতে আমার সাথে হৃদ কিছুই করে নি।শুধু আমাকে কস্ট দেবে বলে ওসব কথা বলেছিলো।কিন্তু মেঘ স্যার।উনার তো কোনো দোষ নেই।এমন একটা নোংরা কাজ উনার সাথে কেন করলো হৃদ। কত ভালোবেসেছিলাম ওকে আমি।বারোটা বছর ধরে একটু একটু করে ওর প্রতি তৈরি হওয়া এই ভালোবাসাটাকে ও নিজের নোংরা কাজগুলোর দ্বারা ঘৃণায় পরিবর্তন করে দিলো।ঘৃণা করি ওর এসব নোংরামোকে আমি।
সকাল আটটা,,
মাম্মামকে বলে মিনি, নিশি, প্রিয়াকে বাড়িতে ডেকে নিলাম।মাম্মামও বলল আমার বোনের বিয়েতে আমার বান্ধবীরা থাকবে না সেটা কি হয়?
আমি ওদেরকে নিয়ে আমার রুমে গেলাম।একটা প্লান বললাম ওদের।ওরা শুনে প্রথমে দ্বিধাবোধ জানালেও পরে রাজি হয়ে গেলো।
প্লান মোতাবেগ আপুর রুমে আসলাম।দেখতে পেলাম পার্লালের মেয়েরা আপুকে সাজাচ্ছে।ওদিকে নয়টায় আপুর ডিউটি।সাড়ে নয়টায় একটা সার্জারি অপারেশনও আছে।তাই বিয়েটা সাড়ে আটটার মধ্যে হবে।আবার মেঘ স্যারকেও নয়টায় কোর্টে তোলা হবে।আমি খুব ভয়ে ভয়ে অক টানার ট্রাই করে ওয়াশরুমে দিলাম দৌড়।আমার অধ্যেক কাজ শেষ।বাকিটা ওরা তিনজন করবে।আপু চিন্তিত হয়ে উঠে দাড়ালে মিনি, নিশি, প্রিয়া নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলো ডা.মেঘ স্যারের জেল হলে আমাদের ফুলের যে কি হবে? সাথে বেবিটাও।সারা জীবন সবাই বলে বেড়াবে একটা জেল খাটা আসামির সন্তান।আপু ওদের কাছে ধমকের স্বরে কিসব বলছে জানতে চাইলে ওরা বলল মেঘ স্যারের সাথে আমার ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো।মাঝে মাঝে রাত করে হোস্টেলে ফিরতাম আমি।মেঘ স্যার হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে যেতো আমায়। আজ আমি প্রেগনেন্ট।আর এই সন্তানটা মেঘ স্যারের।আপু সব শুনে খুব চিন্তায় পরে গেলো।কিছুক্ষণ ভেবে বেলকনিতে শাড়ি বেঁধে নিচে নেমে গেলো।ওরা হেল্প করলো আপুকে নিচে নামতে।আর ওদের বলে গেলো পরিস্থিতি সামলে নিতে। আমাকেও দেখতে।ফিরে এসে আপু বিয়ে করবে।
আপু যাওয়ার পর আমি ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে পার্লালের মেয়েদের টাকা খাইয়ে মুখবন্ধ রাখতে বলে আপুর শাড়ি, গহনা পরে ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে বসে রইলাম।কাজি আসলো।বিয়ে পরালো।আর ওদিকে আপু আমার প্রেগনেন্সির কথা আবির চৌধুরীকে জানিয়ে তাকে নিয়ে থানায় গেল।কোর্টে যাওয়ার আগেই মেঘ স্যারের উপর থেকে কেসটা তুলে নিলো।
মেঘ স্যার কিছু জানে না।তবে খুশি হয়েছে খুব নূর আপু আর তার বাবা নিজে এসে তার উপর থেকে কেসটা তুলে নিয়েছে বলে।দু’জনে শুধু বলেছে তাকে,
-একমাত্র ফুলের জন্য তোমাকে থানা থেকে ছাড়ানো হচ্ছে।
স্যারও কথাটা শুনে বুঝলো হ্যাঁ ফুল নিজের কথা রাখতে পেরেছে।তাই আমার প্রতি কৃতজ্ঞ স্যার খুব।তিনজন থানা থেকে সোজা আমাদের বাড়িতে আসলো।স্যার আর আবির চৌধুরী দরজা দিয়ে ঢুকলো।আর আপু শাড়ি বেয়ে বেলকনিতে এসেই একটা স্বস্থির নিশ্বাস ছাড়ল।তারপর রুমে এসে যেটা দেখলো তারজন্য আপু কিছুতেই প্রস্তুত ছিলো না।বাইরে থেকে মাম্মাম আর কাকিমণি দুজনকে বিয়েটা ভালোই ভালোই হয়ে গেছে বলতে শুনে আপু অনেক বড় একটা ধাক্কা খেলো।আমাকে বধূ বেসে ঘোমটা টেনে থাকতে দেখে রেগে আমার হাত ধরে হেঁচকা টেনে বিছানা থেকে নিচে নামিয়ে আমার গালে নিজের সর্বচ্চো শক্তি দিয়ে মারলো একটা চড়।আমি ছিটকে পরলাম ফ্লোরে।
চলবে,,,,,