ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 05
আমি জানি না এখন কি করবো।কাউকে বলতেও পারবো না কিছু।নিজের সতিত্ব টুকু হারালে একটা মেয়ের অবস্থা যে কি হয় সেটা নিজেকে দিয়ে উপলব্ধি করছি এখন।কিন্তু আমার তো কোনো দোষ ছিলো না।কেন করলো হৃদ এমনটা আমার সাথে? ওর যদি আমার প্রতি এতো ঘৃণা এতোই রাগ থাকবে তাহলে আমার শরীরটা কেন ভোগ করলো? নাহ এতো অপমান নেওয়া যায় না।সব শেষ হয়ে গেছে আমার।আর থাকবো না এবাড়িতে আমি।চলে যাবো।কখনো আসবো না।কক্ষনো না।
আমি এক ছুটে রাস্তায় বেড়িয়ে আসলাম। আনমনা হয়ে হাটতে লাগলাম।এতো রাতে রাস্তা দিয়ে কোথায় হেটে চলেছি নিজেও জানি না।তবে এই পথটা আমার ভালো লাগছে।ইচ্ছে করছে এভাবেই চলতে থাকি আজীবন। কিছুদূর যেতেই কোথা থেকে চারপাঁচ জন লোক এসে আমায় ঘিরে ধরলো।অন্ধকারে তাদের মুখগুলো দেখতে পারছি না আমি।তারা আমার দিকে আগাচ্ছে আর আমি পিঁছাচ্ছি।কোনো মতে তাদের হাত থেকে বাঁচতে ধাক্কা দিয়ে ছুটলাম আমি।ছুটতে ছুটতে একটা গাড়ির সামনে এসে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি হোস্টেলে।চোখ খুলে মিটমিট করে তাকিয়ে মিনি, প্রিয়া আর নিশিকে দেখতে পেলাম সামনে। আমার চোখ খুলতেই তিনজনে এসে আমার মুখের সামনে হুমড়ি খেয়ে পরলো।বলে উঠলো,
-ওই ছাম্মাকছাল্লো এতো রাতে মাঝ রাস্তায় উহু উহু হ্যাঁ?
আমি উঠে বসে ওদের অনুরোধ সূচক দৃস্টিতে বললাম,
-দেখ মজা করিস না তোরা।আমি এখন পারবো না মজা নিতে।
নিশি আমার কাঁধে হাতের কনুই ঠেকিয়ে থুতনিটা ধরে মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,
-কেসটা কি বলতো? রাত বাজে সাড়ে তিনটা। এতো রাতে মেঘ স্যারের কোলে উঠে হোস্টেলে ফিরলি। তাও আবার জ্ঞান হারানো অবস্থায়।
নিশির মুখ থেকে কথা টেনে নিয়ে প্রিয়া বলে উঠলো,
-আরে চুপ যা তোরা।হেতি ডুবে ডুবে জল,পানি সব খাইছে এতোদিন। আমার তো আগেই সন্দেহ হইছিলো।কোনো পার্টি টার্টি হয়নি ওর বাড়িতে।ও নির্ঘাত মেঘ স্যারের সাথে ডেটিং মারছিলো।ছিঃ ফুল ছিঃ আমাদের তো বলতে পারতি।তুই জানতিস তো মেঘ স্যার আমার ক্রাশ।
আমি সত্যি বুঝতে পারছি না ওরা কি বলছে এসব।তখন আমি একটা গাড়ির সামনে পরলাম তারপর তো কিছুই মনে নেই আমার।
মিনি আমার হাতটা চেপে ধরে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,
-সত্যি করে বলতো কি হয়েছিলো?
আমি সঙ্গে সঙ্গে মিনিকে ঝাপটে ধরে কান্না শুরু করে দিলাম।আমাকে হিচকি তুলে কাঁদতে দেখে কেউ এসে এক গ্লাস পানি আমার মুখের সামনে ধরে বলে উঠলো,
-পানিটা খেয়ে নাও।
কন্ঠ শুনে আমি চোখ তু
লে সামনে তাকাতেই মেঘ স্যারের মুখটা দেখতে পেলাম।আমি কিছু বলতে যাবো আমায় এক ধমক দিয়ে বলল,
-পানিটা নাও।
আমি কেঁপে উঠে ভয়ে ভয়ে গ্লাসটা হাতে নিলাম।আবারও ধমকানো স্বরে বলল আমায়,
-পানিটা খাও।
আমি পানির গ্লাসটা দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে হিচকি তুলে কাঁদতে লাগলাম।আমাকে আস্তে করে বললেন এবার,
-এতো রাতে রাস্তায় কি করছিলে?
উনার মুখে এমন কথা শুনে ঝটপট করে প্রিয়া বলে উঠলো,
-ও কি করছিলো মানে? মানে আপনি জানেন না স্যার? ওর সাথে আপনি ছিলেন না?
প্রিয়াকে উনি দিলেন এক ধমক।প্রিয়া কেঁপে উঠতেই শান্ত গলায় বললেন,
-ইমার্জেন্সির কারণে হসপিটাল থেকে আজ অনেকটা লেট করেই বের হয়েছিলাম।বাড়িতে ফিরছিলাম।কিন্তু মাঝ রাস্তায় চার পাঁচ জন মাতাল ছেলে ছুটছিলো ফুলের পেছনে।আমার গাড়ির সামনে এসে পরেছে।আমি যখন গাড়ি থেকে নামি ফুলের জ্ঞান ছিলো না। ছেলেগুলো পালিয়েছিলো।তাই হোস্টেলে নিয়ে আসলাম ফুলকে।
প্রিয়া ওহহ বলে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো।স্যার চোখ ঘুরিয়ে আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে বললেন,
-এই হসপিটালটা আমার বাবার।আর এই হোস্টেলটাও।হসপিটালের সাথে হোস্টেলেরও কিছু রুলস বলে গিয়েছিলেন তোমাদেরকে আমার বাবা।এতো রাতে রাস্তায় গিয়ে সেই রুলসটা তুমি ভেঙেছো।তোমাকে এর শাস্তি পেতে হবে।
শাস্তির কথা শুনে মাথা কাত করলাম আমি। সম্মতি জানিয়ে বললাম,
-আচ্ছা শাস্তি দিন।
আমার উত্তরে হতভম্ব হয়ে তাকালো ওরা তিনজন।স্যারও কিছুটা আচ করতে পেরে অবাক হলো।পাশ থেকে নিশি হাতের কনুইয়ের ঘা দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
-আজ তোর কি হয়েছে বলতো? তোর কথা শুনতেই বোর লাগছে।
আমি মাথা নাড়িয়ে নিশিকে কিছু না সম্মতি জানালাম।
স্যার পকেট থেকে ফোনটা বের করে আমার সামনে ধরে বললেন,
-তোমার অভিভাবকের নাম্বার ডায়েল করো ঝটপট।
পাশ থেকে মিনি বলে উঠলো,
-এতো রাতে?
নিশিকে স্যার দিলেন এক ধমক।নিশি ভয়ে চুপসে গেলো।আমি আরেকবার বলার সাথেই ফোনটা নিয়ে নূর আপুর নাম্বার ডায়েল করে স্যারের হাতে দিলাম।স্যার ফোনের স্কীনে তাকিয়ে দেখে রাগি দৃস্টিতে বললেন আমায়,
-তোমাকে আমি ড.নূরের নাম্বার ডায়েল করতে বলি নি এতো রাতে।
আমি আস্তে করে বললাম,
-উনিই আমার অভিভাবক।আমার বড় বোন।
কথাটা শুনে স্যারের সাথে ওরা তিনজনও চমকে উঠলো।দু’পাশ থেকে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে তিনজন একসাথে বলে উঠলো,
-হোয়াট? ওই রাগি ড.ম্যাম তোর আপু হয়? এইবার তুই শেষ।
আমাকে আর কিছু না বলে মেঘ স্যার নিঃশব্দে বেড়িয়ে গেলেন হোস্টেল থেকে।কেউ না জানুক আমি তো জানি আপু আর উনার ভেতরের ভুল বুঝাবুঝিটা।একটা সময় দুজন খুব ভালো বন্ধু ছিলো।আপুর ফোনে কত্ত পিক দেখেছি উনার।কিন্তু ডাক্তার হওয়ার পর দুজনের ভেতরে প্রতিযোগীতা ভর করেছিলো।এই হসপিটালটা উনার বাবার ঠিকই।কিন্তু যোগ্যতার খাতিরে আপু উনার সিনিয়র।এটার কারণেই হয়তো দুজনের ভেতরে এতো রেসারেসি।হসপিটালের সব কাজে উনার বাবা আপুর সিদ্ধান্তটাই বেশি গুরুত্ব দেয়।উনি কখনোই আপুর সাথে কথা বলবেন না বিশ্বাস আছে।আমার নামে নালিশ তো দূরের কথা।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আমি বসে পরলাম বেডের উপর।ওদেরকে বললাম আলোটা লিভিয়ে দিতে আমি ঘুমাবো।কিচ্ছু ভালো লাগছে না।ওরা আমার কোনো কথা শুনলো না।কানের কাছে পটরপটর করে ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।
চলবে,,,