পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 18

অরূপের বাম হাতে ডিজাইন করা পেকেট ঝুলছে।বাম হাতে গাড়ির চাবি।চাবিটা ঘুরাতে ঘুরাতেই গাড়ির সামনে এসে দাড়ায় অরূপ।গাড়ির ভেতরে একবার উঁকি দিয়েই চমকে উঠে সে।ওয়াসেনাতকে ভিতরে বসে থাকতে বলেছিলো সে।কিন্তু কোথায় গেলো ওয়াসেনাত??দুশ্চিন্তা, ভয় নিয়ে অরূপ চারপাশে চোখবুলিয়ে দেখে।কোথায় গেলো মেয়েটা??অরূপ চারপাশে দৌড়ে একটা রাউন্ড দিয়ে আসে।কোথাও নেই ওয়াসেনাত??ভয়ে তার মুখটা আড়ষ্ট হয়ে উঠেছে।এভাবে মাঝ রাস্তায় একটা মেয়েকে দাড় করিয়ে যাওয়া তার উচিঁত হয় নি।ওয়াসেনাতের বিপদ হলো না তো?কথাটা ভাবতেই অরূপের বুকটা ধড়াস করে উঠে।গোলাপি ঠোঁটজোড়া কালছে হয়ে উঠে।গলা শুকিয়ে কাঠ।ভয়ে সে চেঁচাতে ভুলে গেছে।কিছুসময় শুধু চারদিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে খুঁজার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় সে।চেঁচিয়ে ডাকে,
—” ওয়াসু!!ওয়াসু!!ওয়াসেনাত!!”
কোনো শব্দ ভেসে এলো না তার কানে।অরূপ নিজের ফোন পকেট থেকে নিয়ে ওয়াসেনাতের নাম্বারে কল করে।একবার দেওয়ার পরে রিসিভ করা হয় না।ভয়ে বুক কাঁপছে তার।একটা মেয়েকে একা রাখা উচিঁত হয় নি।আজ তো দারোয়ানও এই সময়ে একটা কাজে গেছে।আশ্চর্য!! বিপদ আসলে সব দিক কি এভাবেই বন্ধ হয়ে যায়??অরূপের শ্বাসরুদ্ধ অবস্থা।
_________
ওয়াসেনাত ক্ষিপ্ত হয়ে বসে আছে।কিছুই বলছে না সে।পাশের ব্যক্তির উপর চরম বিরক্ত হয়েও লাভ নেই।এতো রোবট। কথাই বলবে না।ওয়াসেনাত ভেবে পাচ্ছে না তাকে এভাবে কোলে তুলে হিরোদের মত নিয়ে এসে এখন ভিলেনের মত খুদ্দ হয়ে গাড়ি কেনো চালাচ্ছে এই লোক?আজব তো।ওই দিকে অরূপ ভাই নিশ্চুয়ই তার জন্য অপেক্ষা করছে।তাকে না বলেই এখানে নিয়ে এসেছে কেনো??ওয়াসেনাত দম খিঁচে বললো,
—” আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন??”
অরিত্রান সামনে তাকিয়েই জবাবে বললো,
—” কোথায় যেতে চাও বলো??”
ওয়াসেনাতের চোখ বিস্ময়ে গোল হয়ে এলো।কি বলবে সে খুঁজেই পেলো না।লোকটা তাকে এভাবে তুলে নিয়ে এসে এখন প্রশ্ন করছে কোথায় যেতে চাও??ওয়াসেনাত চরম বিরক্তর রেখা মুখে টানতে চায়।কিন্তু হচ্ছে না।সে বিরক্ত নয়।আজ সারাটা দিনের ছটফটানি মুহূর্তেই কমে শূন্যের কোটায় আছে।তাই চাইলেও সে বিরক্ত হতে পাড়ছে না।ওয়াসেনাত প্রশ্ন ছুঁড়ে,

—” আপনি এখানে কি করছেন??”
অরিত্রান নিস্তব্ধ চোখে কিছুসময় চুপ করে গাড়ি চালায়।তার সাথে আসলে কি হচ্ছে এটা তার মাথায় ডুকছে না।সে তো কখনোই মোটা মাথার ছেলে ছিলো না।উল্টা প্রচণ্ড ব্রিলিয়ান্ট হিসেবেই সে পরিচিত।তাহলে আজ এত বোকা বোকা কাজ কেনো করছে??ওয়াসেনাতের চোখ অরিত্রানের দিকে।চশমাটা না হলে লোকটাকে আরো ভালো লাগতো।কিন্তু এতেও কম লাগছে না।সাদা শার্টে দারুন লাগে অরিত্রানকে।ওয়াসেনাত মুগ্ধ হয়ে দেখে।তার মনেই হচ্ছে না সে একজন অপরিচিত লোকের সাথে গন্তব্য বিহিন গতিপথে চলছে।তার মনে হচ্ছে এটাই তার আসল গন্তব্য।অরিত্রান একবার চোখ বাঁকিয়ে তাকায়।ওয়াসেনাত পরক্ষনেই নিজের চোখ সরিয়ে সামনে চোখ রাখে। অন্ধকারে ল্যাম্পপোস্টের আলোগুলো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে।রাস্তায় অনেক গাড়ি।সেই গাড়ির আবার লাল লাল লাইট।এসবের ভিরে ওয়াসেনাত সব ভুলে শুধু অরিত্রানের চিন্তায় ডুবে আছে।পাশাপাশি বসে থাকা দু’জন মানুষ তাকিয়ে আছে সামনের অন্ধকারের ঝিকিমিকি আলোর রাস্তার দিকে।দূর দূর চোখ বিচরণ করছে তাদের।অথচ মন পড়ে আছে পাশের জনের কাছে।নিস্তব্ধতা ও নিস্তব্ধতা না।শব্দ হচ্ছে নিঃশ্বাসের।দু’জনেই গভীর নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর ফেলছে।কেউ কথা বলছে না।যেন আজ সব কথা ফুরিয়ে গেছে তাদের।মনের মাঝে জমছে শতশত কথা কিন্তু মুখে বলতে পাড়ছে না কেউ।সেকেন্ড সেকেন্ড হার্ট বিট মিস করছে। ভালোবাসা বুজি সব নিশ্চুপ নিস্তব্ধ করে দেয়??যানা নেই কারো।দু’জনেই যে নতুন ভালোবাসায় সিক্ত।শব্দটা নতুন তাদের কাছে।এর পরিচিতি কম।তবুও ভালোবাসে দু’জন দু’জনকে।কিন্তু কেউ জানে না করো কথা।দু’জনেই কান পেতে শুনে অপরের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ।অরিত্রান তো বুঝতেই পারছে না, কি হচ্ছে ওর সাথে।আগে তো কখনো এমন ভয়ংকর অনুভুতি হয় নি তা।তার আশেপাশে আরো কাছেই সে এই অনুভুতির জ্ঞান পায় নি।কেনো এমন হচ্ছে তার?ওয়াসেনাতের ব্যাপারে এত ভাবছে কেনো সে??ওয়াসেনাতের নিস্তব্ধ মন সব ভুলে গুমোট হয়ে আছে।সে ভুলেই গেছে গন্তব্য বিহিন পথ চলার কথা।গাড়িটা হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে উঠতেই ওয়াসেনাত সামনে ঝুঁকে পরে।অরিত্রান দ্রুত নিজের এক হাত বারিয়ে ওয়াসেনাতের ভাঙা হাতে হাত রাখে।চেপে ওয়াসেনাতকে সামনে বারি খাওয়া থেকে বাঁচায়।ওয়াসেনাত অবাক হয়ে একবার মাথা কাত করে তাকায়।ওয়াসেনাতের এতক্ষণে থম মেরে থাকা গুমোট মন অরিত্রানের কাছাকাছি এসে ছোঁয়া লাগায়,তার মনে ভালোলাগার পরশ লাগতে লাগলো।অরিত্রানের চোখ সামনে।ওয়াসেনাতের দিকে তাকালে তার কি যে হয়, শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।এত এত সুন্দর মেয়ে থাকতে এর প্রতি তার কিসের এত টান সে নিজেই জানে না।
ওয়াসেনাত উঠে বসে।অরূপের কথা মনে পড়ায় ফোনটা ব্যাগ থেকে নেয়।কল লিস্টে অনেকগুলো কল দেখে চমকে উঠে সে।অরূপ অনেক বার তাকে কল করেছে। ওয়াসেনাত দ্রুত কল করে।ওপাশ থেকে চিৎকারের শব্দ ভেসে আসে।অরূপ চিৎকার করে বলে উঠে,
—-” আর ইউ ওকে ওয়াসু??তুমি কোথায়??না বলে কোথায় গেলে??আমি টেনশনে শেষ।কল রিসিভ করো নি কেনো??তুমি কি আশেপাশে আছ??আমি তো গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরেছি তোমাকে খুঁজতে।কোথায় তুমি??ওয়াসু??হ্যালো??”
ওয়াসেনাত দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
—” বলার সুযোগ তো দেন। আসলে আপনি যখন উপরে গেলেন তখন এ..”
কথাটা বলেই ওয়াসেনাত অরিত্রানের দিকে তাকালো।অরিত্রান সামনে তাকিয়ে শান্ত মুখে গাড়ি ড্রাইভ করছে।ওয়াসেনাত ভাবে।এখন যদি কিছুক্ষণ আগের ঘটনা অরূপকে বলে দেয় তাহলে এটা সোজা তার বাবার কানে যাবে।অরূপের সাথে বাবার একটা ভালো খাতিল আছে।আর না বললে ও অরূপ উল্টাপাল্টা ভেবে অন্য দিকে ব্যাপারটা চলে যেতে পারে।তাই সে কথা ঘুরিয়ে বললো,
—” একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের কারনে সামনে রিক্সা পেয়েই উঠে পরেছি।তাই আপনাকে আর বলা হয় নি।সরি।”
অরূপ স্তব্ধ হয়ে ভাবে মেয়েটার কি তাকে নিয়ে একটুও চিন্তা নেই।সামান্য একটা কারনে সে কত নার্ভাস হয়ে পড়েছিলো। উল্টাপাল্টা ভেবে হয়রান হয়েছে।আর সে কি না গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য তাকে না জানিয়েই চলে গেলো??অরূপের ভারী কষ্ট হলো।তবুও নিজেকে দমিয়ে সে অসহায় সুরে বললো,
—” একবার বলে যেতে পারতে??কলেরও রিপ্লাই দিতে পারতে??”
ওয়াসেনাতের ও খারাপ লাগছে। একটা লোক তাকে এত উৎসাহ নিয়ে দিয়ে আসতে চেয়েছিলো সে কি না??অরূপ ছেলেটা খুব ভালো।রাগানোর জন্যেই ওয়াসেনাত সব সময় ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকে।রিমিদের বাসায় প্রথম গিয়েছিলো তারা চার বান্ধবী মিলে।সেদিন সবাই অরূপকে এত ভাইয়া ডেকেছে যে সে প্রচণ্ড খুদ্দ হয়েছে।অরূপের সেই বিরক্তির জন্যেই তারা তাকে রাগাতে সব সময় ভাইয়া ডাকে।প্রকৃতপক্ষে অরূপকে ওয়াসেনাত ভাইয়ের চোখেই দেখে।অরূপ মজা করে সব সময়।মজার ছলে অনেক কথা বলে যা ওয়াসেনাতের বেশ ভালো লাগে।তবে ওয়াসেনাত একটু দূরত্ব বজায় রাখে।অরূপের মাঝে মাঝে গভীর কিছু কথা তার ভালো লাগে না।বাকি সব ঠিক ঠাক।
ওয়াসেনাত অপরাধীর মত বললো,
—” সরি। আসলে আমি বুঝতে পারি নি আপনি এত টেনশন করবেন।”
অরূপ হালকা হাসলো।এত নরম স্বর শুনে তার আর রাগ মানায় না।সে বললো,
—” তুমি কখনোই কিছু বুঝো না।আচ্ছা আমি বাসায় যাই তারপর কল দিবো।”
ওয়াসেনাত হাঁসফাঁস করে বললো,
—” না! তার দরকার নেই।আপনি বাসায় যান।অনেক জার্নি করে এসেছেন রেস্টের প্রয়োজন।পরে না হয় কখনো কথা হবে।আগে নিজের শরীরের কথা ভাবা উচিঁত। রাখি।”
ওয়াসেনাত আর কথা বাড়ালো না।অরূপ মহা খুশি।তাকে নিয়ে এত চিন্তিত হয়ে ওয়াসেনাত কথা বলেছে ভাবতেই তার অন্যরকম একটা অনুভুতি হচ্ছে।
ওয়াসেনাত ফোন কান থেকে রাখতে রাখতে বললো,
—” আপনি এমন কেনো করছেন??আমাকে নামিয়ে দেন আমি বাসায় যাবো…”
অরিত্রান রাগে ফুঁসছে ভিতরে ভিতরে।দু’জনের সব কথাই তার কানে এসেছে।অরূপেরটাও হালকা হালকা ভেসে এসেছে।কত বড় সাহস!এত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছে তাও তার পাশে বসে!নূন্যতম মনোযোগ তার দিকে নেই।রাগে অরিত্রানের কপাল ইষৎ কুচঁকালো!মেজাজ যাচ্ছে খিঁচড়ে!কথা শেষ করার আগেই অরিত্রান ওয়াসেনাতের হাতের ফোনটা খপ করে নিয়ে খোলা জানালা দিয়ে ছুঁড়ে দিলো।ওয়াসেনাত স্তব্ধ, পঞ্চবিমুহীত হয়ে হা করে অরিত্রানের দিকে তাকিয়ে আছে।হাতটা এখনো আগের মতই উঁচিয়ে আছে।ঠোঁটজোড়া নিজের শক্তিতে আলাদা হয়ে হা করে আছে।অরিত্রান নিশ্চুপ!ওয়াসেনাত ও নিশ্চুপ!ওয়াসেনাত অরিত্রানের দিকে তাকায়।গাড়ি একপাশে দ্বার করিয়ে অরিত্রান সামনে চোখ রাখে।ওয়াসেনাত ক্ষীণ আওয়াজে বললো,
—” এটা কি হলো??”
অরিত্রান মাথা কাত করে তাকায়।ওয়াসেনাতের দিকে অরিত্রান চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাত নিজের দিকে তাকিয়ে ভাবে,তার উপর চোখ গরম করছে?কিন্তু কেনো?ওয়াসেনাত মাথা তুলে তাকায়।ওয়াসেনাতকে তাকাতে দেখে অরিত্রান চোখ সরিয়ে সমানে তাকায়।ওয়াসেনাতের রাগ হচ্ছে না।সে আশ্চর্য হয়ে বসে আছে।হালকা কেশে গলা ঠিক করছে।এতসব আজগবি কাহিনীর ভীরে তার গলা বসে গেছে মনে হয়।অরিত্রান সামনে মুখ রেখেই গম্ভীরভাব নিয়ে বললো,
—” দম কত??”
ওয়াসেনাত অরিত্রানের ভারী কন্ঠ শুনে আরো অবাক।তাজ্জব হয়ে সে কিছুসময় চুপ থাকে।নিজের কথা হারিয়ে ফেলে।অনেক ভেবে বলে,
—” আপনি কি অসুস্থ??”

অরিত্রান নিশ্চুপ হয়ে সামনে তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাতও নিশ্চুপ! নিশ্চুপতাকে ঠেলে ওয়াসেনাত আবার বললো,
—” আমার মনে হয় আপনি অনেক অসুস্থ।মানে,কেমন দেখাচ্ছে আপনাকে।আমাকে নামিয়ে দেন।আমি চলে যাই।”
অরিত্রান প্রবল রাগ, আক্রোশ নিয়ে ওয়াসেনাতের নীলাভ চোখে চোখ রাখে।ওয়াসেনাতের বুক ধ্বক করে উঠে।ভয়ে সে চুপসে যায়।এতসময়ের সব আবেগ অনুভুতি নেতিয়ে যায় মুহূর্তে।কি হবে চিন্তায় সে মুখ দিয়ে শ্বাস ফেলে।কি লাল চোখ দু’টো!ওই দিনের চাইতেও মনে হচ্ছে আজ বেশি লাল!এত লালের কারন কি?সে তো আর চুপি চুপি জাসুসি করতে যায় নি।তবে এত রাগ কেনো?অরিত্রান আবার মুখ ঘুরিয়ে সামনে রাখে দৃষ্টি। ওয়াসেনাত নিজের বাম হাতের দিকে একবার তাকায়।এই হাতও কি এখন ভেঙে দিবে?ভয়ে ওয়াসেনাত কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়। ঢোক গিলে বলে,
—” আমি কি আবার কিছু করেছি?আমার তো মনে হয় না আমি কোনো দোষ করেছি।আর আজ সারা দিনে আমার আপনার সাথে আর একবারো দেখা হয় নি।বিশ্বাস করেন আমি সত্যি বলছি।ও সরি আপনি তো আবার বিশ্বাস করতে পারবেন না।ডিকশনারিতে তো এই শব্দ নেই।মানে আপনার ডিকশনারিতে।আমি বরং যাই।”
অরিত্রান কিছু নিঃশ্বাস নিঃশব্দে ফেলে শান্ত ভাবে কঠিন গলায় বলে,
—” ছেলেদের কাঁধে হাত দিয়ে কথা না বললে বুঝি ভালো লাগে না?”
ওয়াসেনাত চমকিত চোখ তাকায়।বলে,
—” আমি আবার কার কাঁধে হাত দিলাম?উল্টা আপনি আমার ফোনটা ফেলে দিলেন।”
অরিত্রান রাগে উদ্ভট কিছু কান্ড করে।সে নিজের দু’হাতে চুল টেনে পিছনে নেয়।নিজেকে শান্ত করে আবার বলে,
—” এত দ্রুত ভুলে গেলে?বাহ্ বাকি মেয়েদের চেয়ে দেখি তুমি আরো বেশি ফার্স্ট। তা কয়জন আছে এমন বয়ফ্রেন্ড?ফোনেও তো একজন ছিলো রাইট?”
ওয়াসেনাত স্তব্ধ হয়ে কিছুসময় চুপ থেকে ফঁস করে উঠে।সে যথেষ্ট আত্মসম্মানী। নিজের চরিত্র নিয়ে এমন একটা কথা সে মানতে পারলো না।রেগে বললো,
—” সমস্যাটা কি এমন করছেন কেনো??কখনো হুট করে কোলে তুলে নিচ্ছেন। কখনো আমার ফোনটা ফেলে দিচ্ছেন।কি চাই আপনার?”
রাগে ফঁসফঁস করছে ওয়াসেনাত।অরিত্রান তীক্ষ্ণ চোখে ওয়াসেনাতের লাল হয়ে যাওয়া গালের দিকে একবার তাকায়।আসলেই তো কি চায় সে?কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে তার সব।অরিত্রান চোখ বন্ধ করে আবার খোলে।শান্ত গলায় বলে,
—” এয়ারপোর্টের ছেলেটা কে ছিলো?আর এখন যার সাথে কথা বলছিলে সে কে?”
ওয়াসেনাতের রাগ তুঙ্গে।এত কিছু করে আসছে ছেলের খবর নিতে?ওয়াসেনাত কর্কশ গলায় বললো,
—” কেনো?আপনার বোনকে বিয়ে দিবেন বুঝি?তাহলে বলে রাখি উনি বুকিং হয়ে আছে।যার ভাই এমন রাগি তার বোনও রাগি হবে।আর এমন রাগি মেয়ের সাথে আমার অরূপ ভাইয়ার বিয়ে দিবো না।”
ভাইয়া শব্দ অরিত্রান পর্যন্ত পৌঁছালে ও আমার শব্দে সে আবার আক্রোশ চোখে তাকায়।নিজের ভাই হলে একটা কথা।অন্যের ভাইকে আমার বলার মানে কি?অরিত্রান রাগে ঝাঁঝড়া হচ্ছে ভিতর থেকে।মুখে শান্ত ভাব নিয়েই সে আবার প্রশ্ন ছুঁড়লো,
—” আমার বোন নেই।কিন্তু এই অরূপ কে হয় তোমার?”
—” আপনি যেনে কি করবেন।আমার ফোনটা ভেঙেছেন কেনো সেটা বলেন?এতক্ষণ ভেবেছিলাম আপনি হয় তো অসুস্থ কিন্তু এখন তো দিব্বি আছেন।বলেন কেনো ভেঙেছেন?”
অরিত্রান বিরক্তি মুখে তাকিয়ে বললো,
—” বলতে বাধ্য নই।কত দম তোমার ওই ফোনের?দেখে তো সস্তা মানে হচ্ছে। দাম দিয়ে দিবো এখুনি। কিনে নিবে আবার একটা।ওটা বহু বছর আগের মনে হয়।পুরানো গেলে নতুন আসে ।এত চেঁচামেচির কি আছে?”
ওয়াসেনাত চমকে একবার তাকায়।ছোট মনটা মুহূর্তেই ভেঙে টুকরো হয়।এই লোকটাকে সে নিজের মন দিয়ে বসেছে?যার নূন্যতম কমনসেন্স নেই! আর এত রুড ভাষা!মনে দয়াই হচ্ছে না তার ফোনের জন্য।তার উপর টাকার এত গরম?সে কি জানে ফোনটা তার কাছে এর দামের চাইতেও হাজার হাজার গুন বেশি দামী?ওয়াসেনাতের খুব কান্না পাচ্ছে।ভেবেছিলো বেরিয়ে গিয়ে তুলে নিবে।তাই তো সে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু তার আগেই তার ছোট মন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এমন হার্ট লেস লোকের প্রতি তার ভালোবাসা কেনো জন্মালো ভেবেই তার খারাপ লাগছে।খুব খারাপ লাগছে।কেনো এমন করছে বুঝিয়ে বলা যায় না?ওয়াসেনাতের গলার স্বর ছোট হয়ে আসে।বলে,
—” দরজাটা খুলেন আমি যাবো।”
অরিত্রান অন্য দিকে তাকায়।মুখটা সেদিকে রেখেই গম্ভীর কন্ঠে বলে,
—” আমার উত্তর চাই আগে।”
ওয়াসেনাত অসংখ্য তিক্ততা আর বিরক্তি নিয়ে শব্দ করে বললো,
—” অরূপ ছিলো উনি।রিমিকে চিনেন তো?ওর ভাই।কিন্তু আপনার এত কেনো লাগছে তাকে?সে কে যেনে কি করবেন?যা করছেন, একের পর এক মনে হচ্ছে আপনার ভালোবাসার মানুষ নিয়ে পালিয়ে গেছে।”
অরিত্রান চমকের উপরে চমক খেয়ে ওয়াসেনাতের দিকে তাকায়।মনের মাঝে কিছু একটা প্রবল বেগে খুঁচিয়ে চলেছে।” ভালোবাসার” শব্দে সে অবাক হয়।সে কি কাউকে ভালোবাসে?কাকে?পাশের মেয়েটি যেনো বার বার চোখ থেকে সরে যাচ্ছে।মনতে নারাজ এটা তার মন।সে কিভাবে?অরিত্রান খান আর ভালোবাসা?ইম্পসিবল?অরিত্রান পকেট থেকে wallet বের করে।একটা কার্ড নিয়ে ওয়াসেনাতের দিকে তাক করে বলে,
—” এই নেও।”
ওয়াসেনাত কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখে।তারপর বলে,
—” এটা কি?”
—” কার্ড।”

—” তা তো আমিও দেখতে পাচ্ছি কিন্তু আমাকে কেনো দিচ্ছেন?”
অরিত্রান নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
—” কারন খুব সহজ।তোমার ফোন ভেঙেছি। এখানে ওই সস্তা ফোনের মূল্যর চেয়ে আর বহু গুণ বেশি আছে।সব তোমার।”
ওয়াসেনাতের খুব লাগলো কথাটা।একদম ভয়ংকর ভূমিকম্পের মত কম্পিত করে তার হৃদয়ের প্রতিটি অংশ খণ্ড খণ্ড করে দিচ্ছে।এভাবে তাকে ছোট করে বার বার সস্তা বলার মানে কি?এতটা ছোট সে নয়।আর ফোনটা তার মায়ের কিনে দেওয়া বিশেষ উপহার ছিলো।তার ১৫তম জন্মদিনের গিফট।এটা খুবই মূল্যবান তার কাছে।আর সেই ফোনকে বার বার সস্তা বলার মানে কি?ওয়াসেনাতের খুব কান্না পাচ্ছে।এত অপমান বোধ হচ্ছে যা বলে বুঝানোর মতো না।ওয়াসেনাতের চোখ ভরে আসে।চোখ থেকে টুপ করে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।ভাবে, এভাবে অপমান তো তারাই করে যাদের মনে কোনো ফিলিংস থাকে না।আর তাদের সাথেই করে যাদের নিয়ে কোনো ফিলিংস তৈরি হয় না।ওয়াসেনাত ঝিম ধরে বসে থেকে কাঁদতে থাকে।
কারো হালকা হালকা কান্নার শব্দে অরিত্রান পাশ ফিরে তাকায়।অরিত্রানের চোখে ওয়াসেনাতের কান্নায় লাল হওয়া চোখমুখ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠে।লালচে দু’টি চোখ।পানিতে টইটুম্বুর। হৃৎপিন্ডে হঠাৎ ধ্বক করে উঠে অরিত্রানের।ওয়াসেনাত কি কাঁদছে?কেনো কাঁদছে?কাঁদার মত তো সে কিছুই করে নি।এমন কি ফোনের টাকা ও দিচ্ছে।তাহলে কেনো কাঁদছে?অরিত্রান ভাবে,সে কি একবারো হুমকি ধামকি দিয়েছে?মনে পরেনা কিছুই।তাহলে কেনো কাঁদছে?ইশশ্ কাঁদলে কি মারাত্মক লাগে!মুখশ্রী লাল হয়ে আছে।মায়া মায়া চোখ জোড়া পানিতে ভাসছে।চৌখা নাকটার ডগা লাল হয়ে আছে।অরিত্রান কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে কিছুসময়। মন চায় সময়কে এখানে থামিয়ে দিতে।সব কিছু থামিয়ে সে শুধু তাকিয়ে থাকবে।অরিত্রানের পাশের জানালায় খটখট শব্দ হয়।অরিত্রানের হুঁশ আসে।সাথে অধীক বিরক্তি। এভাবে কে বিরক্ত করলো দেখার জন্য পাশে তাকায়।জানালার কাঁচ নামিয়ে প্রশ্ন করে,
—” কি চাই??”
ভদ্রলোক হেসে বললো,
—” ভাই প্রেম করবেন ভালো কথা।তা মাঝ রাস্তায় কেনো?সবাইরে দেখানের কি বহুত সখ হইতাছে?”
অরিত্রানের খেয়াল হয়।সে গাড়ি রাস্তার মাঝেই একটু সাইড করে থামিয়েছে।অরিত্রান কিছু বলতে যাবে ভদ্রলোক তার আগেই বললো,
—” প্রেম করা কি হইছে?না হইলে একটু পাশে যান।মানুষের তো বাস্তবতা আছে।সব তো আপনাদের মত প্রেমে মরা হয়ে থাকে না।কাজ আছে তো।যেতে হবে।আর এভাবে মাঝ রাস্তায় প্রেম করতে আসবেন না।”
অরিত্রানের রাগ হয়।শান্ত গলায় কঠিন শব্দ তুলে বলে,
—” আমরা প্রেম করছি কে বললো আপনাকে??”
ভদ্রলোক আবার হাসলো।বললো,
—” কিছু জিনিস বলা লাগে না ভাই।দেখলেই বুঝি।পাশের জন হয় বউ নয় গার্লফ্রেন্ড।”
অরিত্রান বিরক্ত মুখে আর কথা বাড়ালো না।পাশে গাড়ি নিয়ে মাথা বের করে বললো,
—” দু’টার একটাও না হলে নিশ্চুয়ই আরো নেগেটিভ ভাববেন।এই দেশ থেকে আর বেশি কিছু আশা করা যায় না।হা করলেই ভাবে খেতে চাচ্ছে। কথা বলার জন্য হা করেছে এটা যেনো মানতেই চায় না।”
ভদ্রলোক বাইক চালিয়ে যেতে যেতে হেসে বললো,
—” কথাটা সত্য ভাই।আর সরি।এদেশের মানুষ দোষ করে আবার সহজে শিকার করে সরি ও বলতে পারে।এটা সবাই পারে না।ভাবে ইজ্জতে লাগে।”
অরিত্রান নিজের দিকে তাকিয়ে ভাবে এটাও তো সত্য।অরিত্রানের জন্ম এই দেশেই তবে তার মা একজন তুর্কি।তবুও ছোট থেকে মাতৃভূমি এই দেশকেই জানে।কারন মানের মুখের বাংলাভাষাই তো সে সহজ ভাবে রপ্ত করতে পেরেছে।অরিত্রান ওয়াসেনাতকে সরি বলবে ভাবে।পাশ ফিরে অবাক হয়।ওয়াসেনাত চাবি নিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ফেলেছে।কান্না মাখা মুখে খোলা দরজার দিকে আর একবার উঁকি দিয়ে সে বললো,
—” আপনার হৃদয় নেই।যা আছে পাথরের হয়েগেছে। টাকার দেমাগটা বড্ড বেশি।টাকা দিয়ে সব হয় না নুহাশ সাহেব।আবেগ অনুভুতির কাছে টাকা মূল্যহীন। টাকা ছাড়া দুনিয়া চলেনা যেমন সত্য ভালোবাসার দুনিয়ায় টাকা চলেনা এটাও সত্য।ফোনটা আপনার কাছে সস্তা হতে পারে।তবে আমার মায়ের দেওয়া উপহার আমার কাছে বহু মূল্যবান। কারন আমি টাকার দুনিয়াতে নয় ভালোবাসার দুনিয়াতে থাকতে পছন্দ করি।”
অরিত্রান স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই ওয়াসেনাত রাস্তার উপরে চলে আসে।ভাগ্য আজ তার সহায় তাই এত ভীরের মাঝেও সে একটা রিক্সা পেয়েই গেলো।ভুল মানুষকে নির্বাচন করে সে তার হৃদয় ভগ্ন করেছে।এত দুঃখ নেওয়ার মত না।সত্যি নেওয়ার মত না।

_______________________
ওয়াসেনাত নিজের বাসার গেটে এসে নেমে পরে।রিক্সার ভাড়া দিয়ে সামনে অগ্রসর হতেই পাশে চোখ পরে।অরিত্রান গাড়িতে ঠেসে দাঁড়িয়ে আছে।বুকে হাত গুঁজে। চোখমুখে হাসি।ওয়াসেনাত কিছুসময় দাঁড়িয়ে থেকে যাওয়ার সময় মনে হলো পিছন থেকে কোমল গলায় সে ডেকে উঠে,
—” ওয়াসু!!”
ওয়াসেনাত চমকে তাকায়।অরিত্রান আবার হালকা হাসে।ওয়াসেনাত অদ্ভুত ভাবে তাকায়।অরিত্রান কয়েক পা এগিয়ে এসে মৃদুল গলায় বলে,
—” তোমাকে আমি কষ্ট দিতে চাই নি।তুমি তো জানো আমি এমন।একদম আকড়ু,রুড।মানিয়ে নেওয়া যায় না?”
ওয়াসেনাত কম্পিত হয়।ঠোঁটজোড়া কেঁপে উঠে।অভিমানী চোখে অরিত্রানের চোখে চোখ রাখে।কি আশ্চর্য! সবুজ চোখ!নুহাশের তো কালো চোখ।ওয়াসেনাত ভারী অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।এই চোখ পরিচিত।খুব পরিচিত!অরিত্রান দু’পা আরো এগিয়ে নিজের ফর্সা ডান হাতটা বাড়িয়ে ওয়াসেনাতের চোখের পানি মুছে দেয়।ওয়াসেনাত আবেশে চোখ বন্ধ করে।শরীরময় শিরশির করে উঠে।কাঁপনি ঝাঁকনি দিয়ে নড়ে উঠে হৃৎপিন্ড।অরিত্রান আবার একটু এসে বললো,
—” সরি!দুঃখিত!আর কখনো কষ্ট দিবো না এই প্রমিস করছি! একদম পাক্কা প্রমিস!!”
কিং কিং করে শব্দ করে উঠে রিক্সা।ওয়াসেনাত চমকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে সামনে তাকায়।সে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ভাবা যায়!রিক্সায় বসে কাঁদতে কাঁদতেই তার ঘুম চলে এসেছে।কাঁদলে ভালো ঘুম হয়।ওয়াসেনাতের বেলায় তো তা শতভাগ নিশ্চিত।ওয়াসেনাত সামনে তাকাতেই রিক্সাচালক বলে,
—” আরে মাইয়া ঘুমাও কা?এত রাইতে বাহিরে আছো তার উপর রিক্সা।রিক্সায় বইসা ঘুমাইতে এই এত বছরের জীবনে আর দেহি নাই মা।এই প্রথম।আমি নেহাত ভালা মানুষ।তোমার বাপের লাহান।খারাপ পোলা পাইন হইলে কি করতা।নামো, বাড়ি আইয়া পড়ছে।”
ওয়াসেনাত ভাবে,সত্যি তো!খারাপ লোক হলে কি করতো সে?ওয়াসেনাত ভয়ে একটু চুপসে যায়।ঢোক গিলে ভাবে এতক্ষণ সে ঘুমিয়ে ছিলো?আর ওটা স্বপ্ন ছিলো?সবুজ চোখটাও স্বপ্ন ছিলো?খুব কান্না পাচ্ছে তার।একটু বাস্তব হলে কি ক্ষতি হতো?খুব তো কিছু হতো না!শুধু তার অশান্ত, ভগ্ন, ছিন্নভিন্ন হৃদয় জুড়ে শীতল হওয়া বইতো।পরক্ষনেই ভাবে ওই লোক আর সরি!ইম্পসিবল?সেদিন ও ভালো করে বলে নি।সরিতে যেনো তার এলার্জি আছে।খারাপ লোক একটা!ওয়াসেনাত নিঃশব্দে কাঁদে।রিক্সা চালক আব্বাস মিয়া তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকে।মেয়েটা কাঁদছে কেনো?সবার আগে খারাপ চিন্তা মাথায় আসে।ভাবে,প্রেমিকের সাথে কিছু হইছে মনে হয়।এত রাতে তো আর জামাইয়ের সাথে বাহিরে দেখা হবে না।আহারে পুতুলের মত মাইয়া মনে হয় ধোঁকা খাইছে।অনেক কথা আব্বাস ভাবে। কিন্তু প্রশ্ন করে না।এটা তাকে সাজে না।সে সামান্য আদার ব্যারি হয়ে জাহাজের খবর নিয়ে লাভ কি?হালকা কেশে আব্বাস মিয়া বলে,
—” মা কিতা হইছে?”

ওয়াসেনাত হুঁশে এসে দ্রুত নেমে পড়ে।ব্যাগের থেকে অনেকগুলো টাকা নিয়ে রিক্সা চালকে দেয়।সে নিতে চায় না।পরে মেয়ের মত বলায় নেয়।লোকটা ভালো।আর ভালোদের সাথে ভালোই হয়।এবং হওয়া উচিঁত। ওয়াসেনাত হেঁটে যায়।তবে পা চলছে না।মনটা যে ক্ষতবিক্ষত হয়ে আছে।বুকটা ভার হয়ে আছে।মায়ের ফোনটা সে চোখবুলিয়ে আশেপাশে খুঁজেছে কিন্তু পায়নি।আর নুহাশের কথাগুলো মনে পরে আরো খারাপ লাগছে।মনে হচ্ছে সব খারাপ লাগা একসাথে ঘিরে নিয়েছে তাকে।চারপাশে শুধুই কষ্ট।আর সে একা অভিমানী!!
.
.
#চলবে____