00

চন্দ্রাবতী !! Part- 05

পড়ার টেবিলে বসে খুব লুকিয়ে চুরিয়ে মাহমুদের ফোনে কল দিতেই ও পাশ থেকে জানালো,’দুঃখিত। এই মুহূর্তে আপনার কাঙ্খিত নাম্বারে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
একবার দুবার এবং তিনবার করে কল দিলো চন্দ্রা। তারপর মাহমুদের উপর বড্ড অভিমান নিয়ে ফোন রেখে দিল চন্দ্রা।তার হঠাৎ করে মন খারাপ হয়ে গেল।আজ আর মোটেও পড়তে ইচ্ছে করছে না তার।সে বইপত্র এলোমেলো করে রেখেই বিছানায় ঘুমোতে গেল।

মাঝরাত।চন্দ্রা ঘুমিয়ে আছে একা তার ঘরে। তখন কেউ এসে তার দরজায় ঠক ঠক করে শব্দ করলো।চন্দ্রা হুড়মুড়িয়ে ঘুম থেকে উঠলো। ভয়ে তার গলা কাঠ হয়ে যেতে লাগলো।এমনিতে সে তার মামী ভূবনের সাথে ঘুমোতে যায়। কিন্তু আজ সে কী এক চাপা অভিমানে মামীকে বলেছে আজ থেকে আমি একাই থাকবো। ভূবন প্রথম প্রথম রাজি না হলেও পরে রাজি হলেন। ভাবলেন ও এখন বড় হয়েছে। এখন ওর যা ভালো লাগে তাই করুক। এতো টুকু স্বাধীনতা তাকে দেয়া যায়।
দরজায় আবার শব্দ হলো।চন্দ্রা ভাবলো হয়তো মামী এসেছেন। কিন্তু মামী আসলে দরজায় নক না করে ডাক দেয়ার কথা। ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেল চন্দ্রা। তারপর দরজা খুলে চমকে উঠলো সে।বারিষ দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।চন্দ্রা মৃদু হেসে বললো,’আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!’
‘কেন?’

‘ভেবেছিলাম ভূত টুত এলো কি না!’
‘আসলে ঘুম আসছিলো না।আর একাও ভালো লাগছিলো না।তাই তোর কাছে এলাম।’
বারিষের এমন কথায় তার অবাক হওয়ার কথা। কিন্তু চন্দ্রা মোটেও অবাক হলো না।সে বললো,’বেশ ভালো করেছো।আসো দুজন মিলে ছাদে যাই। আমি জানলা দিয়ে দেখেছি এত্তো বড় চাঁদ উঠেছে আকাশে।’
বারিষ বললো,’চল।’
তারপর ওরা দুজন লোহার সিঁড়ি ডিঙিয়ে উঠে গেল উপরে। ওখানে গোলাপ বনের পাশে কামিনীর ঝাড়।কী মুহিত গন্ধ ভাসছে ওখান থেকে!ওরা দুজন কেমন মাতাল হয়ে যেতে থাকলো তখন।
চন্দ্রা বললো,’বারিষ‌ দা।’
‘হুম।’

‘দ‍্যাখো চাঁদটা দ‍্যাখো।’
বারিষ তাকালো। তবে চাঁদটার দিকে নয় চন্দ্রার দিকে।
চন্দ্রা বললো,’তাকাও!’
বারিষ বললো,’তাকিয়েছি তো।’
‘তুমি তো আমার দিকে তাকিয়েছো!’
‘তুই চাঁদ বলেই তো তোর দিকে তাকিয়েছি।’
চন্দ্রা খিলখিল করে হেসে উঠলো। সেই হাসি গিয়ে বারিষের বুকে কাঁটার মতো বিঁধলো।
চন্দ্রা এবার বললো,’বারিষ দা,আমরা যদি ছাদের উপর এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে থাকি আর সকাল বেলা মামী এসে এভাবে দেখে তখন কেমন হবে বলো তো?’
‘খুব ভালো হবে। দুজনকে–‘
‘কী?’
‘না থাক। আচ্ছা তোর কী কোন পছন্দের মানুষ আছে রে চন্দ্র?’
‘আছে।’

‘কে সে।’
চন্দ্রা ফটফট করে বলে দিলো,’তুমি,মামা আর মামী।’
বারিষ ঠিক এভাবে শুনতে চায়নি।তাই সে অন‍্যরকম ভাবে প্রশ্নটা করলো,’আচ্ছা চন্দ্র,তোর কোন ভালোবাসার মানুষ আছে ?’
‘হুম।আছে তো।’
‘কে সে?’
‘তুমি,মামা আর মামী।’
‘ইশ শ্! এভাবে বলতে বলিনি।’
‘তাহলে কীভাবে?’
‘তোর ওইসব ভালোবাসা আছে নাকি?ওই যে দুজন ছেলে মেয়েতে হয়। তারপর বিয়ে করে।’
‘ধুর যা। আমি এসব চিনিই না!’
বারিষের এখন কী যে ভালো লাগছে।সে মনে মনে ভাবলো মাহমুদের সাথে শুধু শুধু ঝগড়া করেছে সে।কাল সকাল বেলা ওদের বাসায় গিয়ে প্রথমেই ও সরি বলবে। তারপর মাহমুদকে সাথে করে একেবারে বাসায় নিয়ে আসবে।
বারিষ এবার বললো,’চন্দ্র?’
‘হুম।’
‘আচ্ছা,তোর কী মনে আছে আমাদের ছেলেবেলার কথা?’
‘ওমা! থাকবে না কেন? আমার খুব মনে আছে। আমরা কত ঝগড়া করেছি। একবার তো তুমি আমার হাত ভেঙে দিলে!’
‘আর ওই যে ওই খেলেটা খেলতাম ওটার কথা?’
‘কোন খেলাটা?’
‘বর কনে?’
খুব লজ্জা নিয়ে কথাটা বললো বারিষ।
চন্দ্রা শুনে মোটেও লজ্জা পেলোনা।সে মৃদু হেসে বলল,’এই বয়সে এরকম সবাই খেলে।’
‘আচ্ছা আরেকটা কথা চন্দ্র।’
চন্দ্রা বললো,’বলো।’
‘আচ্ছা তোর সিঁথিতে যদি কেউ সিঁদূর পড়িয়ে দেয় তবেই কী তার বউ হয়ে যাবি তুই?’
এবার চন্দ্রা লজ্জা পেলো।উড়নায় মুখ লুকোতে লুকোতে সে বললো,’হুম।’
‘আমি যদি পড়িয়ে দেয় তবে?’
চন্দ্রা ফিক করে হেসে উঠে বললো,’তুমি পড়ালে হবে না।শাস্ত্রে তোমার সাথে বিয়ে হওয়ার নিয়ম নেই ‌।থাকলে হয়ে যেতাম।’
চন্দ্রার কথাটা শুনে বারিষের বুকে দগদগে আগুন জ্বলে উঠলো।সে আগুনে তার বাঁ বুক পুড়ে ছারখার হয়ে যেতে লাগলো।আর গলা ঠেলে আসতে লাগলো কান্না।
বারিষ আর কথা বলতে পারছে না।চন্দ্রা বললো,’বারিষ দা, তুমি কী জানো ভালোবাসা কী?’
বারিষ অতি কষ্টে নিজের কান্না চেপে বললো,’কী?’
‘কাউকে মনে রাখা।আর তুমি কাকে মনে রাখবে চিরদিন জানো?’
‘কাকে?’

‘যাকে তুমি হারাবে। মানুষ পেয়ে যাওয়া জিনিসের কথা কোনদিন মনে রাখে না। কারণ সে থাকে সর্বদাই পাশে ।সে মনে রাখে না পাওয়া জিনিসের কথা। কারণ না পাওয়া জিনিসটা তাকে রোজ দিন মনে করিয়ে দেয় তাকে না পাওয়ার কথা।’
বারিষের বুকটা ফেটে যাচ্ছে কান্নায়।সে নিজেকে খানিক সামলে নিয়ে বললো,’তুই ও কী কাউকে হারিয়েছিস চন্দ্র?’
চন্দ্র এই কথার কোন উত্তর দিলো না।সে বললো,’চলো ঘরে ফিরি। অনেক রাত হয়েছে।মামা মামী দেখলে বিপদ হবে।’
বারিষের ইচ্ছে ছিল আরো অনেক্ষণ দুজন মিলে ছাদে বসে থাকার। কিন্তু পারছে না। তার খুব রাগ হচ্ছে নিজের উপর।রাগ হচ্ছে এই জন্য যে সে কেন চন্দ্রার রক্তের কেউ হতে গেল!সে কেন তার দূরের কেউ হলো না। দূরের কেউ হলে তো সে আজ স্বার্থক হতো!
তারপর দুটো ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর কামিনীর গন্ধ দূরে ঠেলে দিয়ে ওরা স্বতর্ক পায়ে নেমে যেতে লাগলো নীচে।আর আকাশের চাঁদটা ঢলে পড়ে ঝিমুতে লাগলো বেঘোর ঘুমে।

———————————————————————
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে চমকে উঠলো চন্দ্রা।ফ্রেশ হতে বাথরুমের দিকে যখন সে হেঁটে যাচ্ছে তখন আচমকা ধাক্কা লেগে গেল একজনের সাথে তার ‌।যার সাথে ধাক্কা লেগেছে সেও বাথরুম থেকেই বের হয়ে এসেছে।চন্দ্রা দু চোখ উপরের দিকে তুলে চমকে উঠলো।এতো সকালে মাহমুদ——

#চলবে