আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 40

পরেরদিন সকালে চৌধুরী বাড়ির কারো ঘুম ভাঙ্গার আগে অনু ঘুম থেকে উঠে নামাজ পরে সবার জন্য নাস্তা রেডি করে ডাইনিং টেবিলে বসে থাকে।
আয়েশা বেগম ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরের দিকে আসছিল।
এমন সময় অনু তার শাশু মা কে দেখে বলে,”আসসালামু আলাইকুম শাশু মা! ”
এমন আচমকা অনুর সালাম শুনে আয়েশা বেগম চমকে ওঠে।কারণ এতো সকালে সে এই বাড়ির কাউকে কখনো উঠতে দেখে নাই।
তারপর আয়েশা বেগম ডাইনিং রুমের প্রবেশ করে তার তো একদম আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা।এই মেয়ে তাহলে কোন কাক ডাকা ভোরে উঠেছে কে জানে।পুরো ডাইনিং টেবিল সকালের নানারকম আইটেম দিয়ে সাজিয়ে রাখা।
আয়েশা বেগম মনে মনে বলে,”পুরো টেবিল তুমি যতোই সাজিয়ে রাখো না কেনো এতোশত আইটেম দিয়ে।একটা আইটেম এর যে স্বাদ নেই তা আমি খুব ভাল করে জানি।”

অনু বলে,”শাশু মা সকালের নাস্তা এ বাড়ির বউদের বানানোর নিয়ম এটা আমি জানি।
তাই শ্বশুরবাড়ির প্রথম সকালে সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে দিনের শুরুটা করেছি।”
আয়েশা বেগম বলে,”থাক থাক এতো বেশি কথা বলার দরকার নেই।সবাই যখন খাবার গুলো মুখে তুলতে পারবে না তখন তাদের জন্য অন্য কিছু তো ব্যবস্থা করতে।যাই আমি সেই ব্যবস্থা করে আসি।”
অনু বলে,”শাশু মা আমি এতোটা খারাপ খাবার বানাই না যে অন্য কেউ মুখে দিতে পারবে না।”
আয়েশা বেগম বলে,”প্রথমে দেখতে সুন্দর হলে কি হবে। এর স্বাদ আছে কি না কে জানে।”
অনু বলে,”আচ্ছা সবাই আসুক তারপর না হয় দেখা যাবে সবাই কে কি বলে খাবার খেয়ে।”
এমন সময় সবাই নাস্তা করার জন্য নিচে ডাইনিং রুমে চলে আসে।
আরিয়ান অনুকে দেখে বলে, “good morning my dear sweet wife! ”
অনু তার উওরে শুধু একটা মিষ্টি হাসি ফেরত দেয় আরিয়ান কে।
রিদি রিমি এসে এতো আয়োজন করা দেখে বলে,”wow কতোদিন পর তোর হাতের তৈরি নাস্তা খাবো তা ভাবতেই জ্বিভে পানি চলে আসছে।”
আরিয়ান বলে, “এই সব কিছু তুমি একা তৈরি করেছো অনু? ”
অনু বলে,”জ্বি আমার স্বাদের বর।”
আয়াত বলে,”আরিয়ান তোর ভাগ্য খুব ভালো বউ বাড়িতে রাতে আসছে সকালে বউ রান্নাঘরে।”
রাজ বলে,”বিয়ের পরেরদিন সকালে বউয়ের হাতের খাবার খাওয়ার ভাগ্য কয়জনের হয়।আরিয়ান তুই তো ভাগ্যবান ব্যক্তি এতো ভালো ভাগ্য তোর।”
আয়েশা বেগম বলে,”এতো বেশি নাচানাচি করার দরকার নেই।এতো রান্না করতে গিয়ে আমার রান্নাঘরের যে কি বেহালদশা করে রাখছে তা আল্লাহ জানে।”
অনু বলে,”শাশু মা আপনি জান আপনার রান্নাঘর পরিষ্কার করে আসেন।সব কাজ আমি করলে হবে না কি বলেন। রান্না করা আমার দায়িত্ব রান্নাঘর পরিষ্কার করা না।”
আয়েশা বেগম বলে,”দেখছো সবাই কি বেয়াদব মেয়ে।রান্না করবে সে আর রান্নাঘর পরিষ্কার করবো আমি? এই মেয়ে আমাকে কি বাড়ির কাজের মেয়ে মনে করো তুমি? ”
অনু বলে,”শাশু মা কাজ করার জন্য কাজের মেয়ে আছে আপনাকে কেনো কাজের মেয়ে ভাবতে যাবো।আপনি তো কাজের নামে শুধু তিন বেলা রান্নাবাড়া পারেন।
তাছাড়া অন্য কোনো কাজ কি কখনো ভুল করেও করেন? ”

আয়েশা বেগম বলে,”তোরা কেউ কিছু বলবি না? এই মেয়েটা কখন থেকে কতো কথা বলছে আমাকে? ”
আরিয়ান বলে,”মা এটা তোমাদের বেপার এখানে বাড়ির ছেলেরা কি বলবে?
আমরা তো রান্নার কাজ করি না তাই সেই বিষয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পারবো না।”
আরিয়ানের মুখে এমন কথা শুনে হনহন করে সেখানে থেকে সোজা রান্নাঘরে চলে যায়।
আয়েশা বেগমের পেছনে পেছনে বাড়ির সবাই চলে যায় রান্নাঘরের দিকে।
আয়েশা বেগম তো রান্নাঘরে এসে একদম হা হয়ে যায়।
অারিয়ান বলে,”কি মা তোমার ছোট বউমা তো সেই রকম কাজের। সে শুধু অফিসে পারফেক্ট না সংসারের কাজেও পারফেক্ট। ”
ফুলি এসে বলে,”অনু ভাবী রান্নাঘর একদম পরিষ্কার করে রাখছে।আমাকে কোনো কাজ করতে দেয় নাই।নিজে নিজে সব কাজ একাই করছে।”
রাজ বলে,”মামী একটা প্রবাদ আছে কি যেনো, হ্যাঁ মনে পরছে যে রাধে সে চুল ও বাধে।”
আয়েশা বেগম বলে,”রান্নাঘর পরিষ্কার করাটা বড় বেপার না।রান্না করে রাখছে তো একগাদা ওগুলো খেয়ে দেখতে হবে খাওয়ার যোগ্য কি না।”
এরপর সবাই আবার ডাইনিং রুমে ফিরে আসে।সবাই যার যার মতো খাবার খেতে শুরু করে দেয়।
খাবার খাওয়ার সময় সবাই অনুর রান্নার অনেক প্রশংসা করে।
আয়েশা বেগম তো অনুর এতো প্রশংসা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলতে থাকে।
রাজের মা বলে,”ভাবী যাই বলেন বউমা কিন্তু সত্যি কাজের অনেক এটা মানতেই হবে।”
আরিয়ানের মা বলে,”রান্নাবান্না করতে পারলেই সব হয় না। ”
আরিয়ানের বাবা এবার বলে,”তুমি তো এক রান্না করা ছাড়া আর কোনো কাজ করতে পারো না।
তাও তোমার অহংকারে পা মাটিতে পড়ে না।”

আয়েশা বেগম বলে,”এই তুমি ঐ পিচ্চি মেয়ের জন্য আমাকে অপমান করছো?”
আরিয়ানের বাবা বলে,”নিজের বউকে কি অপমান করা যায়।বউকে অপমান করা মানে নিজেকে অপমান করা।তুমি যে কি বলো না বউ।”
আয়েশা বেগম বলে,”থাক বুইড়া বয়সে আর বাশ দিয়ে সবার সামনে রোমান্স করতে হবে না।”
অনু বলে,”শাশু মা আমার শ্বশুর কে একটু ডেকোরেশন করে আবারো বিয়ে দেওয়া যাবে।
তার জন্য সুন্দরি মেয়ের লাইন পড়ে যাবে।
কিন্তু আপনাকে ভাঙ্গড়ি হিসাবেও কেউ নিবে কি না সন্দেহ আছে।”
আরিয়ানের মা এই কথা শুনে বলে,”একটা বিয়ে কেনো একশো টা দাও তাতে আমার কি? ”
আরিয়ানের বাবা বলে,”তুমি এই কথা আরো আগে বলবে না।যে আমার দ্বিতীয় বিয়েতে তোমার আপত্তি নেই।”
আরিয়ান বলে,”বাবা তোমার শালা যদি জানতে পারে তার বোনকে ধোঁকা দিতে চাইছো তুমি তাহলে সে তোমাকে জেলের ভাত খাওয়াই ছাড়বে।”
আরিয়ানের বাবা বলে,”হুম এটাই আমার বড় আফসোস। ”
এরপর বাড়ির সব ছেলেরা অফিস চলে যায়।

তাদের সাথে রিমি ও চলে যায় হসপিটালের জন্য।
এদিকে আয়েশা বেগম বলে,”জানো রাজের মা ভেবেছিলাম সকালে উঠে মেয়েটাকে বড় বাঁশ দিবো।কিন্তু মেয়েটা সকালে উঠে আমাকে উল্টা বাশ দিয়ে দিলো ভাবা যায়।”
রাজের মা বলে,”ঠিক বলছেন ভাবী। মেয়েটা মনে হয় জাদু জানে নয়তো আমাদের সকালের প্লানিং এর খবর ওকে তে দিলো।”
আরিয়ানের মা বলে,”থাক সকালের প্লানিং এর উপর পানি পরেছে তাতে কি হয়েছে বিকালে যে সারপ্রাইজ আছে তা তো আর জানতে পারবে না।”
রাজের মা বলে,”ঠিক বলছেন ভাবী বিকালে যারা আসবে তারা এই মেয়েকে একদম নাকানিচোবানি খাওয়াই ছাড়বে।”
আয়েশা বেগম বলে,”হুম এখন বিকাল বেলার অপেক্ষা।”
এদিকে রিদি অনুকে বলে,”কি মনে হয় তোর শাশুড়ি তোকে সহজে মেনে নিবে? ”
অনু বলে,”আমাকে যদি সে ভাল ভাবে মেনে নেয় তা ঠিক আছে।নয়তো আমি কি তা তো শাশু মা জানে না।আমি যেমন সকালে তাকে বাঁশ দিয়েছি বিকালেও ঠিক সে ভাবে বাশ ফেরত দিবো।”

রিদি বলে,”অনু তোর শাশুড়ি কিন্তু আগুন।তুই তাকে নিয়ে খেলা করছিস।”
অনু বলে,”সে আগুন তো আমি পানি নয়তো ঘি ঢালার কাজ করবো।”
রিদি বলে,”জলে থেকে তুই কুমিরের সাথে বিবাদ করছিস। ”
অনু বলে,”খান বাড়ির মেয়ে আমি।চৌধুরী বাড়ির বউ হতে না পারি তাহলে কি হবে বলো।”
রিদি বলে,”তুই ও পারিস অনু।আমি হলে বর কে নিয়ে আলাদা ভাবে সুখে সংসার করতাম। ”
অনু বলে,”সবাই কে একসাথে নিয়ে সংসার করার মজাই আলাদা।কখনো ঝগড়াঝাঁটি হবে কখনো মিষ্টি ভালোবাসার আলাপন এইসব তো সংসারের মজা।একটা সংসারে অনেক রকমের মানুষ থাকে।তাদের চিন্তা ভাবনা কথা বলার স্টাইল সব আলাদা হয়।”
রিদি বলে,”হুম ঠিক বলছিস। ”
অনু বলে,”চলো বিকাল বেলার পিপারেশন নেই।”
রিদি বলে, “হুম চল।”
এদিকে বিকালবেলা..
(সবার থেকে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো)



চলবে….