আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 11

রাজ যদি আমার বোনের সাথে খারাপ কিছু করে তো আজ ওর একদিন তো আমার একদিন।
রাজ আমাকে এখনো চেনেনা আমি কেমন ধরণের মেয়ে।
এমন করে অনু ভার্সিটির এদিক সেদিকে খুঁজতে শুরু করে দেয়।
কিন্তু কোথাও রিদি অথবা রাজের কোনো দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে মাঠের এক কোণায় বসে পড়ে।
এমন সময় অনুর সামনে একটা মেয়ে এসে বলে,”তোমাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে! তুমি কি কাউকে খুঁজছো?”
অনু বলে,”জ্বি আমি রাজ ভাইয়া কে খুঁজছিলাম।”
মেয়েটা বলে,”তুমি একবার ভার্সিটির স্টোর রুমের দিকে গিয়ে দেখতে পারো।”
অনু তাড়াতাড়ি করে ভার্সিটির পেছনের দিকে যেতেই দেখে রিদি অাপু মাঠের মাঝে বসে কান্নাকাটি করছে।
তা দেখে অনু তো ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি রিদির কাছে গিয়ে বলে,”আপু তুমি ঠিক আছো তো? তোমার কি হয়েছে কান্না করছো কেনো? ”
রিদি অনুকে জড়িয়ে ধরে বলে,”অনুরে আমার সব শেষ রাজ আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। ”
অনু রিদিকে সোজা করে ওর গালে দু হাত দিয়ে সোজা করে উঁচু করে বলে,”রাজ তোমার সাথে খারাপ কিছু করেছে? ”
রিদি বলে,”নাহ তবে আমার বিশ্বাস,

আমার ভালোবাসা কে সে অপমান করেছে।”
অনু বলে,”ঐ লুচ্চা কি করছে বলো আমাকে তারপর দেখো আমি ওর কি অবস্থা করি।”
রিদি অনুকে একটু দূরে একটা রুমের দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দিয়ে আবার কান্না করতে শুরু করে।
অনু রিদির দেখানো রুমের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
অনু সে রুমের সামনে এসে ভেতর দেখে রাজের সাথে অন্য একটা মেয়ের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলো।
অনু বুঝতে পারছে না কি করবে সে।
রুমের ভেতর কি প্রবেশ করা আমার উচিৎ হবে? যদি তারা কোনো আপত্তিকর অবস্থায় থাকে তখন তো নিজে লজ্জায় শেষ হয়ে যাবো।
তারপর অনু নিজেকে বলে,”অনু ভেতরে যে আছে সে একটা লুচ্চা।
যাকে আজ ভালো মতো শিক্ষা তোকেই দিতে হবে যাতে সে আর অন্য কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করার সাহস না করে।
বেয়াদব পোলার বিয়ের কথা মুখে নাই এদিকে ওদিকে খালি লুচ্চামি করা আজ বাহির করবো দাড়া শয়তান। ”
অনু সুন্দর করে নিজের ওড়না টা কোমরে বেধে দরজা খুলে দেখে রাজ একটা মেয়েকে কিস করছে।
তা দেখে অনু রাজের পেছন থেকে গিয়ে মাথার চুল ধরে গরুর মতো টেনে বাহিরে মাঠের মাঝে এনে চুল ছেড়ে দিয়ে সোজা রাজের গালে তিন চারটা মানের সুখে থাপ্পড় দিয়ে বসে।
রাজ অনুর হাত ধরে বলে,”তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে থাপ্পড় দেওয়ার? ”
অনু বলে,”বেয়াদব এখন জিজ্ঞাস করিস যে থাপ্পড় কেনো দিয়েছি? জুতা পিটা করি নাই তাই তোর মতো জানোয়ারের সৌভাগ্য। ”
রাজ অনুকে মারতে যাবে তখনি অারিয়ান এসে রাজের হাত ধরে বলে,”আজ তোর প্রেমকাহিনী শেষ হবার দিন।তাই আজ তোকে তো ধোলাই খেতেই হবে আমার ফুপাত ভাই।”
এরপর আরো অনেক মেয়ে সেখানে চলে আসে।
তারা সবাই রিদিকে বলে,”আমাদের সাথেও রাজ প্রেমের ছলনা করেছে।
আমাদের সবাই কে বিয়ে করবে বলে মিথ্যা ছলনা করে ওর সময় পার করার জন্য রিলেশন করতো।চার বছরে আট জনের সাথে বেয়াদব টা রিলেশন করেছে।আটটা মেয়ের মন ভেঙ্গেছে।

আজ তোমার সাথে ঠিক একি কাজ করেছে।”
অনু বলে,”রাজকে আজ এমন শিক্ষা দিবো যাতে আর কখনো কারো সাথে ভুল করে প্রেম করার শখ না করে।”
তাই বলে সব গুলো মেয়ে একসাথে হয়ে রাজ কে আচ্ছা মতো ধোলাই দেয়।
আরিয়ান পেছন থেকে বলে,”এতো মেয়ের হাতে ধোলাই খেতে কেমন লাগছে তোমার আমার ফুফাতো ভাই রাজ?”
রাজ বলে,”সালা তোর জীবনে ভালো হবে না।আমাকে এই ডায়নী দের হাত থেকে বাঁচা বলছি।”
এমন সময় নিরব সিয়াম এসে রাজের এই মেয়েদের হাতে ধোলাই খাওয়ার সিন দেখে আরিয়ানের সাথে অট্ট হাসিতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা হয় ওদের সবার।
এরপর সবাই মারধোর করা থামিয়ে দেই।
অনু বলে,”আজকে যা ধোলাই দিয়েছি এরপর যদি কোনদিন মেয়েদের সাথে প্রেম করতে চাও তাহলে ভাববো তুমি নাক কাটা বেহায়া ছেলে। এতগুলো মেয়ের হাতে মার খেয়েও মেয়েদের সাথে প্রেম করার যদি স্বপ্ন না মিটে।
তাহলে আর কিছু বলার নাই লুচ্চা বেডা বলে রিদির হাত ধরে সেখান থেকে নিয়ে চলে যায়।”
আরিয়ান এসে রাজ কে ধরে নিয়ে হাসপাতালে যায়।
ডাক্তার কে বলে,”সাত আট দিন যাতে ঘুম পারো সেই রকম ঘুমের ইনজেকশন দিবেন। আজ রামধোলাই খেয়েছে বেচারা তাই।”

এদিকে অনু রিদিকে নিয়ে সোজা বাড়িতে না এসে ওখানে একটা নদীতে নিয়ে আসে।
রিদির হাত ধরে নদীর পানির ভেতর নেমে রিদিকে চুবিয়ে চুবিয়ে গোসল করিয়ে দেয়।
তারপর অনু বলে,”আজকের পর থেকে আর কোনোদিন রাজের নাম মুখেও আনবে না।ওর মতো প্লে বয় এর জন্য নিজের জীবনটা অযথা নষ্ট করবে না।”
রিদি বলে,”রাজের জীবনে হয়তো হাজারো মে আসতে পারে কিন্তু আমার জীবনে প্রথম পুরুষ টা তো সেই!তাকে কি আমি চাইলে এত সহজে ভুলে যেতে পারবো আমার সাথে তো কখনো খারাপ কিছু করেনি?”
অনু বলে,”এইতো মেয়েদের দোষ একটা!
যত সময় না কেউ তার সাথে খারাপ কিছু করছেন ততো সময় সে শিক্ষা পায়না।
নিজের চোখের সামনে এতোবড় একটা ধোকা দেখার পরও নিজের মনকে বুঝতে পারছ না যেমন একটা ছেলে তোমার যোগ্য নয়।
নাকি নিজেকে মূল্যহীন ভাবো কোনটা? ”
রিদি বলে,”কাউকে মন থেকে ভালবাসলে তাকে মন থেকে মুছে ফেলা যায় না।
যতই বিশ্বাস নষ্ট করুক তবুও তার স্মৃতি সব সময় মনের কোনে লুকোচুরি খেলতে থাকবে! ”
অনু বলে,”করুক যত খুশি লুকোচুরি খেলা তাতে সমস্যা নাই!
তবুও তুমি কোনদিন রাজকে আর গ্রহণ করবা না।তুমি মুভ ওন করে সুন্দর করে জীবটা কে সাজাবে।
জানি রাজে কে নিয়ে হাজার স্বপ্ন সাজিয়ে রেখেছো।

কিন্তু আজকের পর থেকে না হয় সবটা কোনো খারাপ স্বপ্ন ভেবে ভুলে যাবে।”
রিদি জানে যার মন ভাঙ্গে সেই জানে মন ভাঙ্গার কতটা কষ্ট। অনু তো ছোট সে এসব বুঝবে না।
অনুর তো কোনো স্বপ্ন ভাঙ্গে নাই না তার ভালোবাসার মানুষ তাকে কষ্ট দিয়েছে!
তাহলে অযথা নাই বা করলাম ওর সাথে তর্ক।
নিজের কষ্ট গুলো না হয় মনের গভীরে মাটি চাপা দিয়ে রাখবো।
অনু রিদি আপু কে ধাক্কা দিয়ে বলে,”কি ভাবছো আপু? ”
রিদি বলে,”কিছু না।চল বাড়িতে যাওয়া যাক এবার।”
অনু বলে,”কেনো? ”
রিদি আপু বলে,”আরে বোকা মেয়ে এমন ভেজা অবস্থায় কতো সময় থাকবো?ঠাণ্ডা লেগে যাবে চল তাড়াতাড়ি বাড়িতে।”
দু বোন এরপর বাড়িতে চলে যায়।
রিদি বাড়িতে গিয়ে কারো সাথে কোনো কথা না বলে সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লক করে ফ্লোরে বসে নিরবে কান্না করতে থাকে।
অনুকে ভেজা দেখে খালাম্মা বলে,”তোরা কাক ভেজা হয়ে আসলি কি করে? আজ তো বৃষ্টি নেই তাহলে? ”
অনু বলে,”আর বলো না খালাম্মা! নদীর তীরে গিয়েছিলাম ঘুরতে। নদীর তীরে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলাম।আপু আমাকে উঠাতে গিয়ে সেও পড়ে ভিজে আরেক অবস্থা। ”
খালা মনি হেসে বলে,”দেখো মেয়েদের কি কাজ,একজন কে তুলতে গিয়ে আরেক জন সহ ভিজে চুপসে এসেছে।যাও তাড়াতাড়ি চেঞ্জড করে আসো না হলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে।”

অনু তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে ভেজা কাপড় বদলে চুল মুছতে মুছতে বারান্দায় চলে আসে।
রিমা এসে অনুর হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে পেছন থেকে চুল মুছে দিতে গিয়ে বলে,”সত্যি করে বলতো আজ কি অঘটন ঘটিয়ে এসেছিস? ”
অনু সোজা হয়ে সবটা রিমাকে বলে।
রিমা মাথায় হাত দিয়ে নিচে বসে বলে,”আল্লাহ আমি আমার বোনটকে ঠিকঠাক ভাবে ঢাকাতে নিয়ে যেতে পারবো তো? ”
অনু বলে,”এই জন্য তোকে কিছু বলতে ইচ্ছা করে না।অতিরিক্ত চিন্তার নাটক করিস কেনো।আমি কি সত্যি এতো ছোটো? খারাপ মানুষ কে শিক্ষা দিতে পারি না? ”
রিমা বলে,”সব খারাপ মানুষ কে শিক্ষা দেওয়ার দায়ভার কি তোর? তুই নিজেকে নিয়ে একটু সিরিয়াস কবে হবি বলবি তো?”
অনুর কোনো রিয়াকশন না পেয়ে রিমা মন খারাপ করে নিজের রুমে চলে যায়।
এরপর কয়েকদিন রিদি ঠিকমতো কারো সাথে কথা বলতো না চুপচাপ থাকতো।
ভার্সিটিতে গেলে রাজের সাথে দেখা হতো।
রাজের এমন ভাব যেনো সে রিদি কে চেনে না।
রাজের এমন আচরণ রিদিকে খুব কষ্ট দিতো।
এরপর থেকে রিদি আর রাজের সামনে যেতো না।
এদিকে অনুর এইচ এস সি পরিক্ষা শুরু হয়ে যায়।
আর আরিয়ানদের সামনে মাস্টার্স এর ফাইনাল পরিক্ষা এগিয়ে আসে।
সবাই সবটা ভুলে নিজেদের লেখাপড়া তে মনোযোগ দেয়।
কিন্তু হঠাৎ একদিন…
(গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো সবার থেকে।)



চলবে….