প্রেমের পাঁচফোড়ন !! Part- 10
আমার কাছে শাড়ী বা ভালো ড্রেস নেই,কি করে যাবো?আর মিরাকে গিফট ও তো দিতে হবে,খালি হাতে তো আর যাওয়া যায় না,সেই টাকা নেই আমার কাছে,তাই যাব না
.
ওহ এই কারন?ধুর বোকা,আমি তোকে আমার একটা জামা দিব,আর গিফট আমি দিয়ে দিব আমার আর তোর হয়ে
.
তাও আমি কিছু না দিলে কেমন হবে ব্যাপারটা,বাদ দে,আমি যাব না,তুই যা
.
দরকার হলে গিফট তুই চুজ করিস,টাকা আমি দিব,তাহলে দুজনের দেওয়া গিফট হবে,তাও প্লিস আমার সাথে বিয়েতে attend করিস
.
আচ্ছা দেখি
শান্ত কি সমস্যা তোমার?তুমি আমাকে ইগনোর করতেসো কেন?কাল রিয়াজকে বললাম তোমাকে বলতে আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে,আর তুমি কিনা কথা না বলেই বাসায় ফিরে গেলা?আমাকে একবার কল ও করলে না
.
শুনো এলিনা আমি আগেও বলেছি এখনও বলতেসি আমরা জাস্ট নরমাল ফ্রেন্ড এর চেয়ে বেশি কিছু না
.
বেশি কিছু আমি জানি,তুমি বলতে চাও না,বলতেও হবে না,আমি শুনতে চাই না
.
শান্ত ভাইয়া!
.
মিরা?কি হইসে বলো
.
ভাইয়া আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে,শুক্রবারে বিয়ে,আপনি প্লিস আসিয়েন,আপনি আসলে আমি অনেক খুশি হবো,প্লিস প্লিস
এলিনা আপু তুমিও আসিও শান্ত ভাইয়ার সাথে
.
congratulations মিরা♥আমি অবশ্যই আসবো
.
থ্যাংকস ভাইয়া,থ্যাংক ইউ সো মাচ,কার্ডটা নিন
.
ওয়াও দেখলে সবাই জানে আমি আর তুমি কাপল আর তাই আমাদের একসাথে ইনবাইট করেছে
সেখানে তুমি কিনা আমাকে অস্বীকার করতেসো?
.
শান্ত কিছু না বলে বিরক্ত হয়ে চলে গেলো
♣
এই তুই সারাদিন কার সাথে এমন কথা বলিস দেখি?
আহানা রুপার হাত থেকে ফোন নিয়ে দেখলো নওশাদ লেখা,ওমা নওশাদ??কে এই নওশাদ?
আহানা ফিক করে হেসে দিয়ে এক দৌড় দিলো
.
দাঁড়া আহানা,মজা করিস না প্লিস,আমার ফোন দে,আহানা!!
.
দিব না,আমি দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলবো
আহানা রুপার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে দৌড়াচ্ছে আর দুম করে এক ধাক্কা লেগে গেলো শান্তর সাথে,দুজনেই নিচে পড়ে গেলো
.
বেয়াদব মেয়ে কোথাকার!এটা কি তোমার বাসা নাকি?এরকম পাগলের মত দৌড়াচ্ছিলে কেন,পুরো জ্যাকেট নোংরা করে দিসে আমার
.
আহানা জিহ্বায় কামড় দিয়ে তাকিয়ে আছে,সে নিজেও ঘাসের উপর পড়ে গিয়ে বসে আছে
.
শান্তর মেজাজ এমনিতেও গরম ছিল তার উপর আহানা আরও গরম করে দিসে
রেগে উঠে দাঁড়িয়ে জ্যাকেট খুলতে লাগলো সে
.
আহানা ভয় পেয়ে ঢোক গিলে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো
শান্ত তার জ্যাকেটটা খুলে আহানার হাতে ধরিয়ে দিলো
.
আহানা ব্রু কুঁচকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই শান্ত বললো এটা ধুয়ে শুকিয়ে কাল এনে আমাকে দিবে
রিং ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুইবা বুঝছো?অন্য ডিটারজেন্টের ঘ্রান আমার পছন্দ না
.
আজব তো!আমি কেন ধুবো?
.
কেন মানে?তোমার জন্য আমি মাটিতে পড়ে গিয়ে আমার জ্যাকেট নোংরা হয়ে গেছে সো তুমি ধুয়ে শুকিয়ে এনে দিবা আমাকে বুঝছো!
.
আহানা ভেঁংচি দিয়ে উল্টো পথে হাঁটা ধরলো
.
শান্ত মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে
শান্ত এদিকে আয় আজকে ফুটবল ম্যাচ আছে,জয়েন হবি না?
.
আসতেসি!
শান্ত গিয়ে নওশাদ,রিয়াজের সাথে ফুটবল ম্যাচে জয়েন দিলো
ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে
আহানা হেঁটে হেঁটে টিউশনির দিকে যাচ্ছে,আজ আর ঐ পথে শান্ত আসেনি,যাক বাবা বাঁচলাম,আহানা খুশিতে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে হেঁটে যাচ্ছে,একটা গলি পার হলেই একটা বিরাট বড় মাঠ পড়ে
শান্ত সেখানেই ফুটবল খেলতেসে
আহানা জ্যাকেটটার দিকে তাকিয়ে শান্তকে বকতে বকতে যাচ্ছে মাঠটার পাশ দিয়ে
.
শান্ত কিক মার!!
.
শান্ত জোরে সোরে কিক মারলো বল গোল পোস্টে না ঢুকে আরেক দিকে গেলো,তাও যে দিকে গেলো সেদিকে আহানা ছিল
বল গিয়ে একদম ওর গায়ে পড়লো,মনে হয় কেউ পাথর মেরেছে
আহানা দুম করে পড়ে গেলো রোডের উপর
.
ইস রে,জনগনরে আঘাত করলি শেষমেষ এবার তুই সামলা,মনে হয় কোনো মেয়ের গায়ে পড়েছে,আমি বল নিতে যামু না,লোকজন ডেকে এবার কেয়ামত করবে
.
তুই চুপ থাক নওশাদ,আমি যাচ্ছি
.
শান্ত মাথার চুল থেকে ঘাম মুছতে মুছতে এগিয়ে গেলো
আহানা বল সরিয়ে জামা ঝাড়তেছে রাস্তায় বসে বসে
.
ওহ তুমি!দাও বল দাও
আপনি?আপনি আমার গায়ে বল মেরেছেন?
ইচ্ছে করেই এমন করেছেন তাই না?সকালের ঘটনার জন্য প্রতিশোধ নিলেন?
.
চুপ!আমার বল দাও
.
আহানা বল নিয়ে উঠে দাঁড়ালো,তারপর নিজের গায়ের ওড়নাটা খুলে শান্তর দিকে বাড়িয়ে ধরলো
.
শান্ত চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছে
ওড়না দিতেছে কেন আমাকে মেয়েটা?
শান্ত এদিক ওদিক তাকিয়ে ব্রু নাচিয়ে বললো কি?তোমার ওড়না আমাকে দিচ্ছো কেন?
.
সকালে আমার জন্য পড়ে গিয়ে আপনার জ্যাকেট নোংরা হয়েছিল তাই আমাকে সেটা ধুইতে দিসিলেন
.
হুম তো?
.
এখন আপনার কিক করা বলের কারনে আমি পড়ে গিয়ে আমার ওড়না নোংরা হয়ে গেছে,আপনি ধুয়ে আনবেন বাসা থেকে,শুকিয়ে আনবেন,কেমন?আর হ্যাঁ যেকোনো ডিটারজেন্ট হলেও চলবে আমার,ইটস ওকে
.
শান্ত রাগে গজগজ করতে করতে এগিয়ে গেলো ওর দিকে
.
আহানা একটু পিছিয়ে গিয়ে বললো নাহলে এক কাজ করেন আপনার জ্যাকেটটা নিয়ে যান,আমিও আমার ওড়না ফেরত নিব
.
শান্ত রেগে দাঁতে দাঁত চেপে আহানার ওড়না মুঠো করে ধরলো
.
গুড বয়!
.
তুমি এই অবস্থায় টিউশনিতে যাবে?ওড়না ছাড়াই?
না তো!আমার তো অন্য উপায় আছে,এক মিনিট!
আহানা তার চুলের খোঁপা থেকে কাঠিটা খুলে ফেললো,সাথে সাথে খোঁপা খুলে গিয়ে ওর পিঠের নিচ পর্যন্ত চুলগুলো মেলে গেলো
আহানা চুল দুভাগ করে সেগুলো তার সামনে নিয়ে আনলো
তারপর হেসে বললো ব্যাস,হয়ে গেলো না?
আহানা হাসতে হাসতে চলে গেলো
শান্ত অবাক হয়ে আহানার চলে যাওয়া দেখতেসে,তারপর বলটা নিয়ে ফিরে আসলো মাঠে
.
রিয়াজ আর নওশাদ ইয়া বড় হা করে তাকিয়ে আছে
.
হোয়াট?
.
কিরে ভাই তোর হাতে মেয়েদের ওড়না কেন?
.
সবাই হাসতে হাসতে মাটিতে বসে পড়লো
.
শান্ত মুখ ফুলিয়ে বললো কিছু না
ওড়নাটা নিয়ে তার স্পোর্টস ব্যাগে ঢুকিয়ে বসে পড়লো চেয়ারে,রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার
.
কিরে বললি না ওড়নাটা পেলি কই,আর সেটা ব্যাগে ঢুকালি কেন?
.
কিছু না বাদ দে,খেলা শেষ,আমি যাই
শান্ত ব্যাগ নিয়ে বাইকে উঠে বাসায় ফিরে আসলো
বাসায় ঢুকেই ওড়নাটা ছুঁড়ে মারলো ফ্লোরে
এই মেয়েটার এত এত সাহস আসে কোথা থেকে,আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দেয়?বেয়াদব মেয়ে
.
আহানা শান্তর কথা মনে করে হাসতেসে বসে বসে
.
ম্যাম কি হয়েছে?হাসতেসেন কেন?
.
না কিছু না,অংকটা লিখে আমাকে দেখাও
♣
বাসায় এসে শান্তর জ্যাকেটটা নিয়ে ভাবলো বাসায় তো রিং পাউডার নেই,ওগুলার দাম যে বেশি,আমি তো সাবান দিয়ে জামা কাপড় ধুই,এখন কি করবো,আচ্ছা থাক সাবান দিয়েই ধুই,কি আর করার
পানিতে ভিজানোর আগেই আহানার মনে হলো জ্যাকেটের পকেটে কিছু একটা আছে
হাত ঢুকিয়ে আহানার চোখ কপালে উঠে গেলো,৫হাজার টাকা,বাপরে বাপ এত টাকা নিয়ে মানুষ ভার্সিটিতে আসে আবার ভুল করে ফেলেও যায়
আহানা টাকা গুলো তার ব্যাগে রেখে দিলো,কাল শান্তকে দিয়ে দিবে
তারপর জ্যাকেটটা ধুয়ে উঠানে মেলে দিয়ে আসলো
আলু ভেজে সেটা দিয়ে গরম ভাত খেয়ে ওযু করে নামাজ পড়ে বিছানায় বই নিয়ে বসলো সে
হঠাৎ পিউর মায়ের নাম্বার থেকে কল আসলো
আহানা কিছুটা ভয় পেয়ে রিসিভ করলো,না জানি বলে আর পড়াতে হবে না,আহানার গা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে
উনি বললেন একটা টিউশনির খোঁজ পেয়েছেন,তার খালাতো বোনের মেয়েকে পড়াতে হবে,ক্লাস ওয়ানে পড়ে,সব বিষয় পড়াতে হবে,২হাজার টাকা দিবে
আহানা তো খুশিতে অবাক,অনেক ধন্যবাদ জানালো পিউর মাকে,উনি ঠিকানাটা বলে দিলেন,আহানা নোট করে নিলো সেটা
আহানা খুশি হয়ে গেলো অনেক,কি যে ভালো লাগতেসে তার,মুখে প্রকাশ করে বুঝানো যাবে না,মনে হচ্ছে ২হাজার না ২লাখ বেতন
উনি বললেন ভোর ৬টায় পড়াতে হবে,যার মেয়েকে পড়াবে সে চায় তার মেয়ে যেন সকাল সকাল উঠা হেভিট করে নেয়,তাই এই টাইম ফিক্সড করেছেন
আহানা হ্যাঁ বলে দিলো
পরেরদিন ভোর ৪:৩০এ উঠে গেলো আহানা,খুশিতে চোখে ঘুম নেই তার
নামাজ পড়ে এসে সব গুছিয়ে ঠিক করে রাখলো,৫টা ৩০এ বাসা থেকে বের হলো,ভয় লাগতেসে একা একা হেঁটে যেতে,এত দূর উফ,একটা টাকাও নেই যে একটা রিকসা নিব,অবশ্য এ সময়ে রিকসা পাওয়াও টাফ,গলির পর গলি হেঁটেই চলেছে আহানা,ঠিকানার বাসাটা আসতেসেই না,মনে হচ্ছে পুরো বাংলাদেশ ঘুরা হয়ে গেছে
অবশেষে বাসাটার সামনে এসে দাঁড়ালো সে,ইয়া বড় ১০তলা বিল্ডিং,কি standard রে বাবা,মনে তো হয় কোটিপতিরা থাকে
পিউর মা বলেছেন ৫তলায় বাসা যাকে সে পড়াবে
লিফটে করে ৫তলায় গিয়ে এবার পড়লো কনফিউশনে
২টা ইউনিট,কোনটা ঐ মেয়েটার বাসা কে জানে,পিউর মা তো বলেন নাই কোন ইউনিট
মনে হয় দরজায় সূর্যমুখির ফুল সহ টব আটকানো এই ইউনিট হবে
আহানা গিয়ে দরজা নক করলো,কারোর কোনো response নাই,আবারও নক করলো,ওমা!এবারও response নাই কোনো
শান্ত হাই তুলতে তুলতে বিছানা থেকে নামলো,উফ নওশাদ,রিয়াজ সূর্য!!গন্ডারের মত ঘুমাচ্ছিস কেন,কলিংবেল বাজতেসে কানে শুনস না তোরা?আমি আমার রুম থেকে শুনতেসি,আর তোরা সামনের রুমে থেকে শুনস না?ধুর!
শান্ত মাথা চুলকাতে চুলাকতে গিয়ে দরজা খুললো
.
আহানা মুচকি হেসে সালাম দিতে গিয়ে চোখ বড় করে ফেললো শান্তকে দেখে
.
তুমি!!
.
আপনি?!
.
তুমি এখানে কি করো?আমার বাসার ঠিকানা পেলে কই?
.
আপনার বাসা এটা আমি জানতাম না,আমি তো এখানে একটা মেয়েকে পড়াতে এসেছিলাম
.
ওহ,তো আমাকে দেখে তোমার মেয়ে মনে হয়?
.
আহানা চোখ বড় করে বললো আপনার সাথে কথা বলা মানেই সময় নষ্ট!
আহানা ঘুরে আরেক ইউনিটে যাওয়া ধরতেই শান্ত ওর হাত ধরে টান দিলো
.
কি?
.
আমার জ্যাকেট কই?
.
আমার বাসায়,এখনও শুকায় নাই,যে বস্তা মার্কা জ্যাকেট আপনার,ভার্সিটিতে আসার সময় নিয়ে আসবো,হাত ছাড়ুন আমার
শান্ত ব্রু কুঁচকে আহানার হাত ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো
আহানা ডান পাশের ইউনিটে নক করতেই একজন মহিলা এসে দরজা খুললেন,তার সাথে একটা ছোট্ট বাবু
বাবুটা মুচকি হেসে বললো তুমি বুঝি আমার মিস?
.
আহানা হেসে দিয়ে বললো হুম
.
তার মা তাকে ধমক দিয়ে বললো আপনি করে বলতে
মেয়েটা ভয় পেয়ে বললো আপনি,তারপর আহানার পিছনে তাকিয়ে দেখলো শান্ত দাঁড়িয়ে আছ
.
Santuuuuuuu
.
ওলে আমার মিষ্টিইইইইইই
শান্ত এগিয়ে এসে মিষ্টিকে কোলে তুলে নিলো
.
মিসেস মিশু হক বললেন আসো ভিতরে আসো
উনি আহানাকে নিয়ে চলে গেলেন
শান্ত ভিতরে এসে মিষ্টিকে সোফায় বসালো,নিজেও বসে গেলো
.
এই বান্দরটার সাথে মিষ্টির এত ভাব?বাপরে,আমি তো ভাবলাম উনার মুখ দিয়ে তেতো কথা ছাড়া আর কিছুই বের হয় না
.
মিস এই হলো আমার Santuuu ভাইয়া,আমাকে প্রতিদিন চকলেট কিনে দেয়
.
হুহ এরে আমি চিনবো না!হারে হারে চিনি
ওকে মিষ্টি তুমি পড়ো আমি যাই
শান্ত বাই বলে চলে আহানার দিকে তাকিয়ে গেলো
.
মিস আপনি বসো,আমি বই নিয়ে আসি
.
আহানা মিষ্টির কথা শুনে হাসতেসে
শান্ত রুমে এসে বিছানায় শুয়ে তো পড়লো কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই,এপাশ ওপাশ করে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো,পকেট থেকে সিগারেট একটা নিয়ে লাইটার দিয়ে ধরালো
সিগারেট বেশি খাওয়া হয় না তার!এটা সম্পূর্ন মনের উপর ডিপেন্ড করে,মন চাইলে খাই নাহলে খাই না,নেশা না যে দিনে ৫/৬বার খাবো
♣
মিষ্টিকে পড়াতে বেশ লেগেছে আহানার,৭টা পর্যন্ত পড়িয়ে বাসা থেকে বের হলো সে
.
শান্ত সিগারেটের ধোঁয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে ছাড়তেসে,ব্রিক ফিল্ড আমি,হাহাহা
তারপর হঠাৎ ওর নজর গেলো নিচের দিকে,আহানা বাসা থেকে বের হয়ে ফোন বের করে কাকে যেন কল করতেসে
শান্ত ৫তলার উপরে দাঁড়িয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে মুখটা গম্ভীর করে সিগারেটটা আহানার সামনে ছুঁড়ে মারলো উপর থেকে
আহানা ফোন নিয়ে রুপাকে ফোন করলো আজ আসবে কিনা জিজ্ঞেস করার জন্য কিন্তু ফকিন্নিটা মনে হয় ঘুমাচ্ছে,হঠাৎ সামনে কিছু পড়েছে বুঝতে পেরে আহানা নিচে তাকালো,একটা সিগারেটের অর্ধেক অংশ পড়ে আছে,এখনও ধোঁয়া বের হচ্ছে,আহানা চমকে উপরে তাকালো
শান্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটা ভাব নিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে আবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে
.
বেয়াদব একটা!
আহানা পা দিয়ে সিগারেটটটা রোডের সাথে পিষিয়ে দিলো দাঁতে দাঁত চেপে
শান্তর মেজাজ গরম হয়ে গেছে
মন চাচ্ছে ৫তলা থেকে নেমে এক ধোলায় দিতে যেভাবে পিষাচ্ছে মনে হয় শান্তকে পিষাচ্ছে
.
হুহ!
আহানা চলে গেলো ওখান থেকে
.
এই মেয়েটার আজকে ভার্সিটিতে গিয়ে ১২টা বাজাবো আমি
এত ভাব আর সাহস দেখানোর শাস্তি ওর পেতে হবে!
শান্ত গিয়ে বিছানায় আবারও শুয়ে পড়লো
.
কতবড় বেয়াদব হলে একটা মেয়ের সামনে উপর থেকে কেউ সিগারেট ফেলতে পারে!অসভ্য লোক একটা,মন তো চায় ওর জ্যাকেটে বিচুটি পাতা লাগাই দিই!
আহানা বাসায় ফিরার সময় দেখলো একটা দোকানের সামনে সবাই লাইন ধরে আছে,মহিলা আবার পুরুষ ও
একজন মহিলা হাতে ইয়া বড় ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
বোরকা পরা
মাঝে মাঝে এদিক ওদিক তাকিয়ে ব্যাগটা ভাঁজ করে হাতের মুঠোয় রাখতেসে আবার কিসব ভেবে ব্যাগটা খুলে রাখতেসে
আহানা একটু এগিয়ে গিয়ে মহিলাটিকে জিজ্ঞেস করলো ব্যাপারটা কি,সবাই এমন লাইন ধরেছে কেন,উনি বললেন এখানে ১০টাকায় ১কেজি চাল দেয়,১০০টাকায় ১০কেজি
আহানা তো অবাক হয়ে গেলো উনার কথা শুনে,ইশ আমার হাতে এখন ১০টা টাকা থাকলে এক কেজি কিনে নিতে পারতাম,কি করবো,বাসায় চাল ও তো কমে আসছে
কানে হাত দিয়ে চুল সরাতে গিয়ে মনে পড়ে গেলো
আরে আইডিয়া!
কানের দুল গুলো খুলে হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো সে
এগুলো সে মেলা থকে ৩০টাকা দিয়ে কিনেছিল,সে আবার ফিরে এসে মহিলাটির পিছনে থাকা একটা যুবতি মেয়েকে দেখতে পেলো,মেয়েটাকে দেখে মনে হয় তেমন বড়লোক না তবে গায়ের পোশাক আশাকে মনে হয় সাজগোজ পছন্দ করে বেশি
আহানা মেয়েটাকে বললো আপু আমার এই কানের দুলটা নিবা?আমি ৩০টাকা দিয়ে নিসিলাম তুমি যত দিবে তাই নিব,প্লিস নাও না,আমি ১০/১২দিন পরেছি,এখনও নতুন আছে দেখো
মেয়েটা কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে দিলো,কারন কানের দুল গুলো অনেক সুন্দর ছিল,আহানার পছন্দ অনেক ভালো
মেয়েটা তার ব্যাগ থেকে ২০টাকা নিয়ে আহানাকে দিলো
আহানা তো মহা খুশি,মেয়েটাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে তাকে দুলটা দিয়ে ২০টাকা নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লো,খুশিতে লাফাতে মন চাচ্ছে তার,চাল কেনা হয়ে গেলে আর কোনো চিন্তা নেই,নুন দিয়ে কচলিয়ে খেয়ে মাস কাটাতে পারলেই হলো😎
২০টাকা দিয়ে ২কেজি কিনে বাসায় ফিরলো আহানা
চালগুলো তার চালের বালতিতে ঢালতে গিয়ে মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো তার,চাল যদি ৫০% হয় বাকি ৫০% পোকাতে ভরা আর নষ্ট,এমন করে ঠকালো আমাকে?
মানুষ গরীব না হলে তো ১০টাকার জন্য লাইনে দাঁড়ায় না,আর ওরা এভাবে ঠকায় আমাদের,এর চেয়ে তো ৩৫টাকার চালই ভালো,ধুর!
মানুষ ঠকানোর জন্য বেছে বেছে গরীব মানুষ খোঁজে এরা
আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল ১০টাকায় ১কেজি চাল কেন দিবে,নিশ্চয় কোনো গণ্ডগোল ছিল,এটা মাথায় ছিল না একদম
থাক এগুলা পরিষ্কার করলে যা পাবো তাও চলবে,কি আর করার,আমার জন্মই হইসে ঠকে যাওয়ার জন্য
কলিংবেল বাজতেসে
শান্ত এখনও ঘুমায়নি, ৮টা বাজে মনে হয়,বলদগুলো ঘুমায় এখনও
শান্ত গিয়ে দরজা খুললো,একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,মুরগী হাতে,সম্ভবত কেটে এনেছে
.
কে তুমি?
.
আপনি শান্ত ভাইয়া?
.
হুম,কেন?
.
আমি আছমার বেগমের মেয়ে,আপনার বাসায় যে কাজ করে
.
ওহ আচ্ছা,কি হইসে বলো?
.
আম্মা কইলো মুরগী এটা রাখতে উনি ১০টার দিকে আসি রাঁধি দিব
.
ওকে
শান্ত মেয়েটার হাত থেকে মুরগী নিয়ে হঠাৎ চোখ তুলে মেয়েটার কানের দিকে তাকালো,মেয়েটার কানের এই দুলটা তো একদম আহানার কানের দুলের মতন
চলবে ♥