উপন্যাস- রাত

উপন্যাস- রাত ! পর্ব- ১২

রাত্রি- আরে আমাকে একা রেখে কই যাচ্ছ।
আমি প্রহরের হাত চেপে ধরলাম।
প্রহরের হাত টা অনেক ঠান্ডা।
তোমার হাত এতো ঠান্ডা কেনো?

প্রহর – জানিনা চুপচাপ চল।
কি হল থেমে গেলে কেনো?
রাত্রি চোখ দিয়ে কিছু ইশারা করল।
আমি ওর পিছনে ওইদিকে তাকালাম।
আমি রাত্রিকে নড়তে মানা করলাম।
আমাদের সামনে কিছুদুর এ একটা নেকড়ে
আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি রাত্রিকে আড়াল করে ওর সামনে দাড়ালাম।

রাত্রি- প্রহরকে শক্ত করে ধরে আছি।
নেকড়ের চোখ টা আধারে জ্বল জ্বল করছে।

প্রহর -( কিছু করতেও পারছিনা রাত্রি বুঝে ফেলবে
কিছু করলে??)
রাত্রির হাত টা শক্ত করে ধরলাম তারপর ওকে
আস্তে করে বললাম দৌড়াও।

রাত্রি- কি। বলতে না বলতেই হাতে টান অনুভব হল।

প্রহর – আরে পাগল দৌড়াও।
ওকে নিয়ে বেশি জোড়েও দৌড়ানো যাবেনা।
স্বাভাবিক মানুষ এর মতই দৌড়াচ্ছি।

রাত্রি- প্রহর ওটা তত আআমাদের পিছে পিছেই
আসছে।
প্রহর – লুকানো রর জায়গা খুঁজতে হবে। ওকে
নিয়ে জংগল এর ভেতর আধারে মিশে গেলাম।
একটা বড় গাছের আড়ালে, ওকে গাছের সাথে
লাগিয়ে ওর সামনে দাড়িয়ে আছি আড়াল করে।আর
আশে পাশে দেখছি ওইটা আছে নাকি।

রাত্রি- এই আধারের নিরবতা আমাদের গ্রাস করছে।
অপলক ভাবে চেয়ে আছি।
আধারেও আমি প্রহর কে দেখতে পাচ্ছি।
বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে হঠাত হঠাত তখন প্রহর এর চেহারাটা
স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
এর মাঝেই হালকা বৃষ্টি ও শুরু হয়ে গেলো।
অনেক ঠান্ডা লাগছে।

প্রহর – এতক্ষনে আমি রাত্রির দিকে তাকালাম।
দেখে মনে হচ্ছে ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে।
মাথা থেকে গাল, গাল থেকে গলায় বৃষ্টির পানি
বেয়ে বেয়ে পরছে।
চোখের পাপড়ি থেকেও ফোটা ফোটা পানি
পরছে।
ঠোট গুলা কাঁপছে।
আমি জ্যাকেট টা খুলে ওর গায়ে দিলাম।
ওটাকে ও নিজের গায়ে শক্ত করে জরালো।
আমি ওকে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে
ধরলাম।

রাত্রি- আমি শক্ত করে আকড়ে ধরে আছি ওকে।
মিশে যেতে চাচ্ছি ওর বুকের মাঝে।
বৃষ্টির বেগ মনে হচ্ছে বেড়েই চলেছে।
যত বেগ বাড়ছে আমি তত শক্ত করে ওকে
জরিয়ে ধরছি।
কিন্তু বৃষ্টির পানি যতনা ঠান্ডা তার চেয়ে বেশি ঠান্ডা
ওর দেহ।
ও এক হাত দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে আছে।
মনে হচ্ছিল আমি মিশে থাকি ওর মাঝে।যতটা সম্ভব
শক্ত করে ধরে আছি ওকে।

প্রহর – কিছুর আওয়াজ পেলাম।
আমি ওকে নিয়ে নিচে বসে পড়লাম।
আড়াল থেকে দেখলাম ৪-৫ টা নেকড়ে এদিকে
এগিয়ে আসছে।
আমি আশে পাশে তাকিয়ে একটা ইটের টুকরা
পেলাম।সেটা যতটা সম্ভব দুরে ঝোপের মধ্যে
মারলাম।
সবাই ওই দিকে ছুটে গেলো।
আমি রাত্রির হাত ধরে ওইখান থেকে সরে গেলাম।
দৌড়াতে লাগলাম।
রাস্তায় এসে দাড়াতে না দাড়াতেই একটা গাড়ি এএসে
থামল।

রোজ- গাইস গেট ইন।

রাত্রি- তুমি!?
প্রহর – সেসব কথা পরে হবে আগে বসো।
রাত্রি-
বাসায় এসে মনে হচ্ছে জানে জান এল।
জীবনে এমন সিচুয়েশন এ পরিনি।
অন্য রকম অনুভুতি হল।
কিন্তু রোজ ওইখানে গেলো কি করে?!!???

প্রহর – তুমি যেয়ে চেঞ্জ করে নেও আমি
আউট হাউজে যাচ্ছি।

রাত্রি- আচ্ছা রোজ তুমি ওইখানে কি করে
গেলে?.

প্রহর – আমি থমকে দাড়ালাম।
রোজ এখন কি জবাব দিবে??
আসলে আমি ওকে আসতে বলেছি।

রাত্রি- কবে কখন!? তুমি ত আমার সাথেই ছিলে আমিত
তোমাকে দেখলাম না ওকে ফোন দিতে।

প্রহর – মেসেজ দিয়েছিলাম।

রাত্রি- প্রহর ওইখানে কোনো নেটওয়ার্ক ছিল না।
আমি নিজেও আমার ফোন চেক করেছিলাম।

প্রহর – আমি মেসেজ দিয়ে রেখেছিলাম।
হয়ত কোনো এক সময় নেটওয়ার্ক পেয়েছিল
আর মেসেজ সেন্ড হয়ে যায়।

রোজ- হ্যা আমি ও সেটাই দেখে গেলাম।

রাত্রি- ( ওদের কথা আমার কেনো যেনো বিশ্বাস
হচ্ছিল না)
ও আচ্ছা।

রোজ- প্রহর এর সাথে কথা বলতে হবে। আমার
মনে হচ্ছে রাত্রি আমাদের সন্দেহ করছে।

প্রহর – তুমি এখন?
আচ্ছা ওইখানে র খবর পেলে কিভাবে??

রোজ- লাইট দিয়েছে।

প্রহর – ওকে ত দেখলাম না।

রোজ- কি করে দেখবে সামনে আসলে ত
দেখবে।
ও রাত্রির সামনে আসতে চায় নি।
তাছাড়া ও নেকড়ে গুলাকে মারতে সক্ষম
হয়েছে।
আমাকে মেসেজ করেছিল।
কিন্তু আমি অন্য কথা বলতে এসেছি।

প্রহর – কি!?

রোজ- রাত্রি মেবি…

প্রহর – সসস!””!!

রোজ- কি?

প্রহর – কেউ আসছে মনে হচ্ছে।

রাত্রি- প্রহর তোমার জ্যাকেট। ওহ! রোজ
এইখানে!? এই সময়!?

প্রহর – তুমিও ত এসেছ এই সময়।
তাতে কি হয়েছে।

রাত্রি – তুমি ওর সাথে আমার তুলনা করছ?

প্রহর – না আমি তুলনা করছিনা।

রোজ- আমি এখন যাই।
রাত্রি- আমি তোমাকে এটা ফেরত দিতে
এসেছিলাম।
তা ও কি কাজে এসেছিল?

প্রহর – সেটা তোমার না জানলেও হবে।
কেনো তুমি বার বার ওর আর আমার ব্যপারে কথা
বল।
?
রাত্রি- তুমি ওকে ভালবাসো?

প্রহর – (ওর এমন প্রশ্নের কি জবাব দিব আমি??)
প্রহর – সেটা দিয়ে কি করবে তুমি??
রাত্রি- কি করব না করব সেটা আমার ব্যপার তুমি উত্তর
দেও।

প্রহর – আমি বাধ্য নই।

রাত্রি- ওর গেঞ্জি চেপে ধরলাম। তুমি আমার সব
প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য।

প্রহর – ছাড়ো আমাকে।

রাত্রি- উত্তর দিয়ে দেও আমি ছেড়ে দিচ্ছি।

প্রহর – আমি বললাম না আমি …..

রাত্রি- আমিও ত বলেছি উত্তর দেও আমি চলে
যাচ্ছি।

প্রহর – দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে চিতকার
করে বললাম হ্যা বাসি। ভালোবাসি খুশি। এবার খুশি।
!?

রাত্রি- বুকের মধ্যে মনে হল কেউ ছুড়ি বসিয়ে
দিয়ে আমার বুক টা কে ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে।
চোখ ঝাপ্সা হয়ে আসছে।
আমি প্রহরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে
পারছিনা।
এখনি চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরবে।
কিন্তু আমি ওর সামনে কাঁদতে চাচ্ছিনা।

প্রহর – ওর চোখে পানি টলমল করছে।
আমি জানি ও যত টা না কস্ট পাচ্ছে তার থেকে
অনেক বেশি আমি পাচ্ছি।
কিন্তু আমি বুঝতে দিতে চাচ্ছিনা।
আমি সামনে থেকে সরে গেলাম।
ওর চোখের পানি দেখতে আমি পারব না।

রাত্রি- ও সরে যেতেই আমি চোখ মুছে নিলাম।

প্রহর – আর কিছু জানার আছে??

রাত্রি- না।
এখন সব ক্লিয়ার।

প্রহর – রাত্রি চলে গেলো।
নিজেকে ক্ষত বিক্ষত করে ফেলতে ইচ্ছা
করছে।

রোজ- খুব কি দরকার ছিল মিথ্যে টা বলার।?
প্রহর – দরকার ছিল তাই বলেছি।
ভুলে গেলে হবেনা আমরা কি? আর যদি সেটা বাদ
ও দেই কিং! কিং এর কথা ভুললে হবে না!!???

রোজ- কিন্তু এটা করলেই কি ও ভুলে যাবে
তোমাকে??? আর আমার মনে হয় না তুমি কখনও
পারবে।
তুমি কি ভাবো আমি কিছু জানিনা!? কিছু বুঝিনা?? তুমি
পারবে ওকে ছাড়া থাকতে!!!???

প্রহর – আমি এসব কথা এখন বলতে চাচ্চিনা।
তুমি যাও।
রোজ- ( তুমি কি ভেবেছ প্রহর রাত্রি তার পরিচয়
কখনই পাবেনা?? ভুল করছ তুমি। সত্যি কখনই চাপা
থাকবেনা।আর আমি জানি তুমি ওকে অন্য কারো
সাথেও দেখতে পারবেনা।)
এসব ভাবতে ভাবতেই বাড়ি র ভেতরে যেতেই
শুনলাম উপর থেকে অনেক আওয়াজ আসছে।
আমি ছুটে গেলাম উপরে সারা ঘর এর জিনিস ভেংগে
চুড়ে একাকার অবস্থা। হাত কেটে রক্ত পরছে
সেদিকে খেয়াল নেই।
রক্ত দেখে নিজেকে নিজের মধ্যে ধরে
রাখতে পারব না আমি ছুটে গেলাম প্রহর এর কাছে।
চলবে
 


বিঃ দ্রঃ নিচে Next >> ক্লিক করলে পরবর্তী পর্ব পাবেন..!

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *