ভালোবাসা এমনও হয় Season 2 !! Part- 02
এইভাবেই তরীর দুষ্টুমি আর মেঘের রাগ আর তরীর প্রতি কেয়ার এ কেটে গেল আরো ৪ টি বছর। তরী আর মেঘ এখন এক স্কুলেই পরে।।বাট ক্লাস আলাদা।।
মেঘ অন্য কোন বাচ্চাদের সাথে কথা না বললেও তরীর ক্ষেত্রে আলাদা।।তরীর সাথে রা করে ঠিকই বাট আবার আদর ও করে দেয়।
।
।
একদিন রাতে –
নেশা তরীকে ঘুম পারিয়ে উঠিতে যাবে নীড় এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
নেশাঃ কি হলো ঘুমাবেন নাহ?
নীড়ঃ উহুম(নেশার গলায় মুখ ডুবিয়ে)
নেশাঃ তো
নীড়ঃ রোমান্স করবো
নেশাঃ তাই নাকি
নীড়ঃ হুম(নেশাকে নিজের দিকে ঘুরালো)
নীড়ঃ একটা কথা বলার ছিল
নেশাঃ কি কথা
নীড়ঃ আগামী মাসে আমাদের ইন্ডিয়া যেতে হবে
নেশাঃ আমাদের?
নীড়ঃ হুম আমাদের মানে আমি, তুমি আর আমার প্রিন্সেস।। কারন আমি তোমাদের ছাড়া একা ওখানে এতোদিন থাকতে পারবো নাহ
নেশাঃ এতোদিন মানে কয়দিনের জন্য
নীড়ঃ কয়দিনের জন্য নাহ কয় বছরের জন্য
নেশাঃ মানে কিন্তু কেন??
নীড়ঃ আসলে নেশা আমি চাই আমাদের বিজন্যাস টা ইন্টারন্যাশনালি বাড়াতে।।বাবাই আগে একা ছিলো তাই এতোদিক পারেনি।।বাট এখন তো বাবাইর সাথে আমি আছি আর তুমিও আছে তাই আমি আর বাবাই প্লেন করেছি ইন্ডিয়া তে আমাদের কোম্পানির একটা ব্রাঞ্চ খুলবো।।তো সেটা সাকসেসফুলি করতে আমাদের তো সেখানে সাথে থাকতে হবে।
নেশাঃ বাট এটা তো অনেক দিনের ব্যাপার।। একটা কোম্পানিকে অন্য একটা দেশে নিয়ে দাড় করাতে হলে অনেকটা বছর লেগে যাবে।।
নীড়ঃ আমি জানি।।বাট আশা করি ৭-৮বছরে হয়ে যাবে।।কারন আমাদের জুয়েলারির মার্কেট খুব ভালো।।
নেশাঃ বাট এটা বাংলাদেশে।।অন্য জায়গায় যে সেইম হবে তার তো গ্যারান্টি নেই
নীড়ঃ হুম তা জানি।।প্রথম প্রথম হয়তো একটু প্রবলেম হবে।। ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।আর তুমি তো সাথে আছো
নেশাঃ বাট সবাইকে ছেড়ে এতোদিনের জন্য??🙁
নীড়ঃ একটু তো সেক্রিফাইজ করতে হবে তাই নাহ যদি বিজনেস টা কে বাড়াতে চাই।।আর ঈশা আর ইশান তো আছে।।ওরা সবাইকে দেখে রাখবে।
নেশাঃ বাট মামনি আর বাবাই??ওরা তো এই বাড়িতে একা হয়ে যাবে
নীড়ঃ প্রবলেম হবে নাহ।।ঈশা কে বলে যাবো মাঝে মাঝে এসে দেখা করে যেতে।।আর বাবাই আমাকে প্লেন টা বললো।।তো বাবাই এর ও মত আছে।।আর মামনিকে ম্যানেজ করে নিবে।
নেশাঃ ওহহ
নীড়ঃ তুমি কি রাজি নাহ।।তুমি নাহ চাইলে ক্যানসেল করে দিবো
নেশাঃ নাহ ক্যানসেল কেন করবে।।এতে যদি তোমাদের কোম্পানির ভালো হয় তাহলে অবশ্যই করা উচিত😞
নীড়ঃ প্লিজ মন খারাপ করো নাহ।।কয়েকটা বছরেরই তো ব্যাপার।
নেশাঃ হুম তা কবে যাবো?
নীড়ঃ এইতো সামনের মাসের ২১ তারিখে।।
নেশাঃ টিকেট?
নীড়ঃ সব রেডি আছে।
নেশাঃ ওহহ।।
ওদের যাওয়ার সব বন্দবস্ত হয়ে গেল।
এইদিকে তরীর চলে যাওয়ার কথা শুনে মেঘের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
মেঘঃ তুই বিদেশ চলে যাবি??
তরীঃ শুধু আমি নাহ তো আম্মু আব্বু ও যাবে।
মেঘঃ বাট আমাকে ছেড়ে তুই চলে যাবি🥺
তরীঃ বেশিদিনের জন্য যাবো নাহ তো।।আম্মু বলেছে যাবো আর আসবো
মেঘঃ আমি জানি অনেক দিনের জন্য চলে যাবি তুই🙁।।প্লিজ আমায় ছেড়ে যাস নাহ
তরীঃ তুমি মন খারাপ করো নাহ।।আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো।।আসার সময় ওখান থেকে অনেক গুলো চকলেট নিয়ে আসবো তোমার জন্য।
মেঘঃ আমার চকলেট চাই নাহ। শুধু তোকে চাই।।তুই থাকলেই চলবে।।তুই ফুপিকে বলে দে তুই যাবি নাহ।।তাহলে আর ফুপি বিদেশ যাবে নাহ
তরীঃ বাট আম্মু তো বলেছে ওখানে গেলে আমায় অনেক চকলেট কিনে দিবে
মেঘঃ আমিও তোকে অনেক গুলো চকলেট কিনে দিবো।।তবুও যাস নাহ
তরীঃ কিন্তু ওখানের চকলেট অনেক মজা
মেঘ গেল রেগে।
মেঘঃ তোকে বলেছি যাবি নাহ মানে যাবি নাহ।।যদি তুই যাস আমার থেকে খারাপ কেউ হবে এটা আমি বলে দিলাম।।(মেঘ বেরিয়ে গেল এটা বলে)
তরীঃ উফফ খালি রাগ আর রাগ।।এখন আমি কি করি😣।।আম্মুকে বলে দেখি।
তরী বাড়িতে এসে সোজা নেশার কাছে গেল।
নেশাঃ আরে আমার আম্মু টা স্কুল থেকে চলে এসেছে
তরীঃ হুম🙁
নেশাঃ কি হয়েছে আমার আম্মুটার??কে কিছু বলেছে
তরীঃ মেঘ ভাইয়া আমাদের বিদেশ যেতে না করেছে
নেশাঃ কেন
তরীঃ জানি নাহ আম্মু।।বাট বলেছে যদি আমি বিদেশ চলে যাই তাহলে ও খুব রাগ করবে।
নেশাঃ ও এই ব্যাপার।। কোন সমস্যা নেই।।যখন আমরা ফিরে আসবো তখন তোমার মেঘ ভাইয়ার জন্য এতোগুলা চকলেট নিয়ে আসবো।।দেখবে তোমার মেঘ ভাইয়া আর রাগ করবে নাহ তখন।
তরীঃ সত্যি (খুশি হয়ে)
নেশাঃ হুম সোনা।।সত্যি।
তরী কি আর ওতোকিছু বুঝে।।৬ বছরে বাচ্চা আর কি বুঝবে।। মেঘের রাগ যে চকলেটে ভাঙবে নাহ তা তো আর তরী জানে নাহ।।।
।
ধীরে ধীরে তরীদের যাওয়ার সময় এগিয়ে আসে।।তরীরা বিদেশ যাবে এটা কনফার্ম হয়ে গেছে শুনে মেঘ ও আর তরীর সাথে দেখা করেনি।।
যেদিন তরীরা চলে যাচ্ছিলো সেদিন সবাই তাদের সাথে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যায়।।কিন্তু মেঘ যায়নি।।কেউ আর সেটা নিয়ে ওতোটা মাথাও ঘামায়নি।
১২ বছর পর
আজ তরীরা দেশে ফিরছে।।১২ বছর পর নিজের দেশে ফিরছে।।ইন্ডিয়াতে নীড়ের কোম্পানি টাকে দাড়া করাতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি।।নেশা আর নীড়ের অক্লান্ত পরিশ্রমে তারা সফল হয়েছে।।
।
এই ১২ বছরে অনেক কিছুই পাল্টে গেছে।।তরী আর সেই বাচ্চাটি নেই।।সে এখন ১৮ বছরের যুবতী।। কিন্তু আগের সেই চঞ্চলতা আর দুষ্টুমি করার স্বভাব কোনটাই যায়নি।।নেশার আরো দুইটা ছেলে হয়েছে। দুইজনের বয়সই ১১ বছর।।অর্থাৎ টুইন বেবি।।একজনের নাম শ্রাবণ আরেকজনের নাম আকাশ।।এই দুইটা ও ভারি দুষ্টু।
।
এইদিকে ইশান আর ঈশারও একটা মেয়ে হয়েছে।।নাম হিয়া।।বয়স ১০।। ছোট মেয়ে।।সবার খুব আদরের।।
আর মেঘ।।তার মাঝে পরিবর্তন বলতে আগের থেকে আরো রাগি আর গম্ভীর হয়ে গেছে।।আগেও চুপচাপ থাকতো এখনো চুপচাপ থাকে।।কথা যতো কম বলা যায়।।কোনকালেই স্কুলের কোন মেয়ে কেন ছেলেদের সাথেই বেশি কথা বলতো নাহ শুধু তরী ছাড়া।।বাট তরী যাওয়ার পর তো আরো ঘুরে তাকায় নাহ মেয়েদের দিকে।।কলেজে কতো মেয়েরা যে তার জন্য পাগল তাতে তার কি।।তার চোখ তো সেই ছোট বেলার তরীর দিকেই আটকে আছে।।
কিন্তু তরীরা চলে যাওয়ার পর আর তাদের দেখেনি মেঘ।।আর না মেঘকে তরী দেখেছে।।ভিডিও কলে সবার সাথে কথা বললেও মেঘ কখনো তাদের সাথে কথা বলেনি।।আর নাহ তাদের দেখেছে।।
।
তরীরা কাল দেশে ফিরে আসবে তা সবাইকে বলাবলি করতে শুনেছে মেঘ।।শুনেই মনটা আনন্দে লাফিয়ে উঠছে।।বাট আপাদত তা নিজের মনের মাঝেই লুকিয়ে রেখেছে।।কারন তাকে ছেড়ে তরী এতো বছরের জন্য চলে গিয়েছিলো তার জন্য একটু তো মজা দেখাতেই হবে তাকে।
এইদিকে তরীর তো আনন্দ আর আটকে নাহ।।অবশেষে সে নিজের বাড়ি যেতে পারবে।।নিজের মেঘ ভাইয়া কে দেখতে পারবে।।ছোট বেলা নাহ বুঝলেও এখন বুঝে।।না জানতেও সে ভালোবেসে ফেলেছে মেঘ ভাইয়াকে।।তা তরী নিজেও জানে।।আর এইবার গিয়েই নো লেট।।সরাসরি মেঘ কে প্রোপজ করে দিবে।
রাতে তরী বসে বসে ভাবছে-
তরীঃ আচ্ছা মেঘ ভাইয়া কি আগের মতোই রাগী আছে। অবশ্যই আছে। না হলে এতো বছর কথা নাহ বলে থাকলো কিভাবে,খচ্চর একটা😒।।আচ্ছা উনি নিশ্চয়ই খুব কিউট হয়ে গেছে আগের থেকে।অবশ্য আগেও কিউট ছিলো🙈।।এখন হয়তো আরো কিউট হয়ে গেছে।।আচ্ছা উনি তো এখন কলেজে পরে।।উনার আবার গার্লফ্রেন্ড নেউ তো(আনমনে কথাগুলো ভেবেই নিজের নখ কামড়ানো শুরু করলো)হায় হায় তাহলে আমার কি হবে😣।।মনে তো হয় নাহ আছে।।ছোট বেলা তো কোন মেয়ের সাথেই কথা বলতো নাহ আমি ছাড়া।।বাট আমি তো এতোদিন ছিলাম নাহ।।তাহলে৷ নিশ্চয়ই এতোদিনে গার্লফ্রেন্ড জোগার করে ফেলেছে।।হায় হায় তাহলে আমার কি হবে,😭।ধুর কাঁদবো কেন।।যদি গার্লফ্রেন্ড থাকে ও কিক মেরে আফগানিস্তান পাঠিয়ে দিবো।।।🤗আমার মেঘের দিকে কেউ নজর দিলে তার চোখ উল্টে রেখে দেব।।আইডিয়া।।এইবার তাহলে আম্মুমে বলবো আমি মেঘের কলেজেই পড়বো।।তাহলে ওর উপর নজর ও রাখতে পারবো।
ইশ কখন যে বাড়ি যাবো,মেঘকে দেখবো।।আমার তো আর তর সইছে নাহ।।কুত্তা টাকে এখনো পর্যন্ত দেখতে ও পারলাম নাহ।।ছি ছি তরী তুই মেঘকে এইসব বলছিস।।কি ভাষা হয়ে গেছে তোর.।।কুত্তা কি ভাষা।।কুকুর বলবি ঠিকাছে🙈(আপন মনে কথা গুলো বলে হেসে দিলো)
।
।
।
চলবে