উপন্যাস- রাত

উপন্যাস- রাত ! পর্ব- ১০

প্রহর – নাহ এইভাবে বের করা টা ঠিক হয়নি।
রাগ উঠে গেলে ত আর হুশ থাকেনা।

আমি জানালা দিয়ে রাত্রির ঘরে গেলাম।
ওর সামনে বসলাম।
ওর চোখের কোন দিয়ে পানি বেয়ে পরল।
মনে হয় কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েছে।
নিজের উপর খুব রাগ লাগছে।
ওর মায়াবি মুখ টা কি মলিন দেখাচ্ছে।
কাল কে সরি বলে দিব।
কপালে হালকা একটু ভালোবাসার পরশ দিয়ে চলে
এলাম।

রাত্রি- আমি উঠে বসলাম।
মনে হল কেউ আমার কপালে …. কিন্তু কেউ ত
নেই….।সকালে ঘুম থেকে উঠে পাশে নিমি কে
দেখলাম না।ঘড়ির দিকে তাকালাম।১০ টা বাজে।
মাথা বারি। এত দেরি কিভাবে হল।

ফ্রেশ হয়ে নিচে যাচ্ছিলাম।
সামনে প্রহর।

প্রহর – রাত্রি রাত্রি দাড়াও আমার কথা আছে।দাড়াও।
ও চলে গেলো।

রাত্রি- হুহ।
আমার বয়েই গেছে ওর কথা শুনার।
নিচে নামতে নামতে অনেক হাসাহাসি শুনলাম ।

ইলা – আরে রাত্রি ঘুম হয়েছে? ? আসো আসো।
পরিচয় করিয়ে দেই
ও হচ্ছে আমার দেবর স্বপ্ন।

রাত্রি- হাই।

স্বপ্ন – হাই।
হাত বাড়িয়ে দিলাম হ্যান্ডসেক করার জন্য।

প্রহর – উপরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিলাম।

রাত্রি- হ্যান্ডসেক করলাম।

স্বপ্ন – তুমি রাত্রির ফ্রেন্ড রাইট।

রাত্রি- হ্যা। কিন্তু তুমি জানলে কি করে।

নিমি- আমরা ত তোর কথাই বলছিলাম এতক্ষন।

প্রহর – ওরা নিচে বসে এত হাসাহাসি করছে কি
নিয়ে??

ইলা- আরে প্রহর তুমি উপরে দাড়িয়ে আছো
কেন? ?
নিচে আসো।
আমাদের সাথে বসো।
প্রহর – নিচে এলাম।
রাত্রি আমাকে দেখে মুখ ঘুড়িয়ে নিলো।
সবাই আড্ডা দিচ্ছে আর আমি ওকে দেখে যাচ্ছি।
ছেলেটার সাথে এরি মধ্যে এত ফ্রি হয়ে
গিয়েছে।

স্বপ্ন – আচ্ছা আপনি।

ইলা- রাত্রির বডি গার্ড।

স্বপ্ন – বডি গার্ড! ? তোমার আবার গার্ড লাগে এই
বয়সেই হেহেহে।

রাত্রি- it’s not funny!?
.
স্বপ্ন – ok ok im sorry ।তুমি রেগো না।

রাত্রি- হুম একটা শর্তে।
আমাদের সবাইকে ice-cream খাওয়াতে হবে।

স্বপ্ন- ওকে। ডান।
বিকালেই খাওয়াব।

প্রহর – সারাদিন ও, নিমি আর স্বপ্ন আড্ডা দিল।
রাত্রি আমাকে ইগনোর করছে।
আমাকে সরি বলার ও সুযোগ দিল না।

স্বপ্ন- আচ্ছা তোমরা রেডি হয়ে নেও। বের
হতে হবে ত।
আমি ভাবি আর ভাইকে বলে আসি।

নিমি- তুই রেডি হো।
আমি একটু আসছি।

রাত্রি- হুম।

প্রহর – কি হচ্ছে এসব।

রাত্রি- তুমি!!/??

প্রহর – তো কাকে আশা করছিলে? স্বপ্ন কে?

রাত্রি- করলেও কি? ? তোমার তাতে কি?? তুমি যাও।

প্রহর – তুমি আমাকে ইগনোর করছ! ??

রাত্রি- তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা
আমার।
রাতে যা করেছ।

প্রহর – আমি সেটার জন্য ই সরি বলতে এসেছিলাম।

রাত্রি- তোমার সরি আমার লাগবেনা।
তুমি যাও ত।

প্রহর – ওকে নিজের সাথে জরালাম।
আমি সরি বলছিতো।

রাত্রি – আমার লাগবেনা।
ছাড়ো।

প্রহর – কেনো ছাড়বো?
নিমি-
রাত্রি তোর হয়েছে? ?
( একি দেখছি আমি! !!?)
ওহ সরি পরে আসছি।

রাত্রি- না দাড়া।
প্রহর আমাকে ছেড়ে দাঁড়ালো। নিমি চল।

স্বপ্ন- ও তোমরা রেডি চল।
ও প্রহর তুমিও চল।

নিমি- আরে ও ত যাবেই।
বডি গার্ড বলে কথা।

রাত্রি- ইচ্ছে হলে যাবে না হলে যাবেনা।

নিমি- প্রহর যাচ্ছো ত?
প্রহর – হুম। যাবো।
সবাই মিলে বাইরে মজা করছে।
আর এই ছেলে শুধু ওর পিছনেই ঘুরার কি আছে
বুঝিনা।
ফোন এল। rose ফোন করেছে।

rose আমি বলেছিত কিছুদিন সময় লাগবে আসতে।
কিং কে আমি বলে দিব।
প্লিজ rose.! ok বাই।
ফোন রেখে পিছনে তাকালাম।
রাত্রি ice-cream টা ফেলে চলে গেলো।
হলো টা কি? ? এখন আবার আমি কি করলাম।

রাত্রি-( rose..rose…rose.. আর কিছু নাই দুনিয়াতে)
স্বপ্ন- anything wrong?
রাত্রি- না কিছুনা।
স্বপ্ন-
চল ওইদিক থেকে হেটে আসি।

রাত্রি- না আসলে….

স্বপ্ন – (হাত ধরে) চল ত।

প্রহর – এইসব দেখতে খুব বিরক্ত লাগছে আমার।
না কিছু বলা যায় না সহ্য করা যায়।
তাকিয়ে তাকিয়ে এইসব দেখতে হচ্ছে।
নিমি- সারাদিন খুব ভাল মজা হল তাই না।

রাত্রি- হুম।
কিং – (ফোনে) প্রহর তোমাকে একবার আসতে
হবে।

প্রহর – জি।
রাতে সবাই ঘুমিয়ে পরেছে হয়ত। এখনি কিং এর
কাছে যেতে হবে।জানালা দিয়ে বের হয়ে
গেলাম। জংগল এর পাশে বিশাল একটা পেলেস।
পেলেস এর ভেতরে গেলাম বিশাল অন্ধকার।
হল রুমে প্রবেশ করলাম। ২ পাশের দেওয়ালে
মশাল জ্বালানো। প্রহরিরা দাড়িয়ে আছে।
আমি সামনের দিকে হেটে যাচ্ছি।
সামনে বিশাল সিংহাসনে বসে আছে কিং।
আমি সামনে যেয়ে হাটু গেড়ে বসলাম।

কিং- আমি খুব চিন্তিত প্রহর।
আমি খবর পেয়েছি নাইট এর সৈন্য রা তৈরি।
যেকোনো সময় আক্রমণ করতে পারে।
আমি চাই না এরপর থেকে তুমি আর এক মিনিট ও
রাত্রির থেকে দুরে থাকো।

প্রহর – আমি সব সময় ই শতর্ক আছি।আপনি চিন্তা
করবেন না।
কিন্তু আমি চিন্তা করছি আরেক টা বিষয়।

কিং- কি?

রাত্রি- আমাদের শরীরে যে চিহ্ন সেটা রাত্রির
গায়ে কিভাবে জ্বলছে??? ওর ত রক্তের প্রতি
কোনো টান নেই।
কিং- এটা ও জন্ম থেকেই পেয়েছে।
আর তুমি ত জানো ও মানুষ হয়েও মানুষ না।

প্রহর – কিন্তু ওর স্বভাব ত মানুষ দের মত।

কিং- কারন ওর মধ্যে রক্তের নেশা নেই।
আর তুমি ত জানো ওর বাবা মানুষ ছিল।
আমি ওর থেকে সরে এসেছিলাম কারন আমি জানতাম
আমি কাছে থাকলে হয়ত ওরা তাড়াতাড়ি ওকে চিনে
ফেলবে কিন্তু ওরা রাত্রির খবর বের করে
ফেলেছে।

প্রহর – আপনি চিন্তা করবেন না।
আমি আছি ত

কিং- I know i know.
আমি চেয়েছিলাম যাতে ও ওর এই পরিচয় কখনই না
জানে।
কিন্তু মনে হচ্ছে….

প্রহর – আমি চেস্টা করব যাতে সেটা না হয়।
রাত্রি- এটা কোনো কাজ হল বল?

নিমি- ইশ সেটাই ত ভেবেছিলাম কত মজা করব আজ।
কিন্তু এই বৃষ্টি আর আসার টাইম পেলোনা।

স্বপ্ন – কে বলেছে বৃষ্টির মাঝে মজা করা যায় না।
বা বাইরে যাওয়া যায়না।
রাত্রি- তাই নাকি? সেটা কিভাবে?
স্বপ্ন-
সবাই রেইনকোট পরে আসো।

নিমি- তাতে কি হবে?

স্বপ্ন – আরে আসোই না।
রেইনকোট পরে সবাই বাইরে গেলাম।
বৃষ্টির জোর সামান্য একটু কমেছে।
আমরা এখন হেটে হেটে চা এর দোকানে
যাবো।
দেখ খুব মজা লাগবে।
বৃষ্টির মধ্যেই থাকব কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজব না।
কিন্তু বৃষ্টির প্রতি টা ফোটা ইনজয় করতে পারব
অনুভব করতে পারব।

রাত্রি- আসলেই ভাল লাগছে।
প্রতিটা ফোটা অনুভব করছি। বাতাসের সাথে ঝিরি ঝিরি
বৃষ্টির ফোটা এসে মুখে পরছে।
আমি তাকিয়ে আছি প্রহরের দিকে।
আমি যতই রাগ করি ওর উপর আমার মন ছুটে চলে ওর
দিকে।

প্রহর – রাত্রির দিকে তাকাতেই ও চোখ সরিয়ে
নিল।
আমি বুঝতে পারছি ও আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছে।
স্বপ্ন- আরে দেখে। রাত্রি কে টান মেরে
সরিয়ে দিলাম। আর ও এসে পরল সোজা আমার
উপর।এখনি ত গর্তে পা চলে যাচ্ছিল।
দেখে চলবেনা?? কিছু হয়ে গেলে কি হত।

প্রহর – কোথায় লেগেছে?? ঠিক আছো ত??
বেশি লাগেনি ত?
রাত্রি- আমি প্রহরের দিকে তাকালাম। ও কথা বলতে
বলতে চুপ হয়ে গেলো।ও তাকিয়ে আছে আমার
আর স্বপ্নের হাতের দিকে।
আমার হাত স্বপ্ন শক্ত করে ধরে আছে।
প্রহর – নিজের উপর রাগ লাগছে।
এই সব ভাবতে যেয়ে আমি সত্যি অন্যমনষ্ক হয়ে
পরেছি।
ঠিক মত ওর খেয়াল ই করতে পারছিনা।

স্বপ্ন – ঠিক আছো।

রাত্রি- হুম।কিন্তু পায়ে ব্যথা লাগছে।
নিমি-
মনে হচ্ছে মচকে গেছে।

প্রহর – কোথায় লেগেছে দেখি।
রাত্রি- না না থাক
। বেশি লাগেনি।
স্বপ্ন – রাত্রিকে কোলে তুলে নিলাম।
রাত্রি- কি করছ? ?
স্বপ্ন – ঠিকি করছি ম্যাডাম।
গাড়ি ত আনিনি আর আপনিও হাটতে পারবেন না।
তাই এ ছাড়া আর উপায় নেই।চল এখন বাসায় যাই।
রাত্রি-প্রহর ওইখানেই হাতের মুঠ শক্ত করে
দাড়িয়ে আছে।
মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছেনা রেগে আছে কিনা।
কিন্তু ওর চোখ অন্য কথা বলছে।
প্রহর – একটা ব্যাকুলতা অনুভব করছি।
যেটা না বলা যায় না সহ্য করা যায়।
অন্য কেউ রাত্রি কে স্পর্শ করেছে সেটা আমার
মোটেও পছন্দ হচ্ছেনা।তারপর ও সহ্য করে
নিচ্ছি।
হয়ত এটাই ওর জন্য ভালো।
আফটা অল ধরতে গেলে ও মানুষ ই।
ওর স্বভাব মানুষ দের মতই।

 


বিঃ দ্রঃ নিচে Next >> ক্লিক করলে পরবর্তী পর্ব পাবেন..!

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *