ভালোবাসার অন্যরুপ

ভালোবাসার অন্যরুপ ! Part- 07

আমান– তোমার কোনো ধারনা নেই মীরা আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি, ১ মাস আগে থেকে নয়, অনেক আগে থেকে আমি তোমাকে ভালোবাসি। এই আমান খান নতুন করে বাঁচার উপায় খুঁজে পেয়েছিল তোমাকে দেখে। আমি ভেবেছিলাম জোর করে হলেও তোমার ভালোবাসা আদায় করে নেবো বাট নাহ! তোমার মনে তো কোনো ফীলিংসই নেই আমার জন্য, যা আছে তা সব তুর্যর জন্য। তুমি জানো আমার কতটা খারাপ লেগেছিল যখন.. আমি তোমাকে প্রথম একটা অন্য ছেলের কাছাকাছি দেখেছিলাম, সেদিনই বুঝেছিলাম আমি তোমাকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছি, তাই জন্যই ঐ ছেলেটা যখন তোমার চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছিল তখন আমার ইচ্ছে করছিল ওখানেই পুতে দি ছেলেটা কে আর তোমায় নিজের বুকের সাথে জড়িয়েনি।
#ফ্লাশব্যাক 🌸
আমান– ১০ টা বাজতে আর কিছুক্ষণ সময় বাকি আছে, মীরা আসবে তো? না..নাহ ওকে আসতেই হবে। এট এনি কস্ট শি হ্যাভ টু কাম।
__মে আই কাম ইন স্যার?
আমান নিজের ডেস্কে বসে এসব ভাবছিলো তখনই ওর কেবিনে কেউ নক করলো, আমান তাড়াহুড়া করে বলে দিলো।
আমান– কাম ইন।
__ইটস নীতা আহমেদ।

আমান– তুমি!! তুমি এখানে কি করছো? ইন্টারশিপ তো এখন নয়।
নীতা– আমি ইন্টারশিপের জন্য আসিনি স্যার। আমাকে মীরা..মীরা চৌধুরি এখানে পাঠিয়েছে।
আমান– মীরা তোমাকে পাঠিয়েছে?
নীতা– ইয়েস স্যার, আপনি নাকি ওকে জব অফার করেছিলেন অ্যাস আ ডিজাইনার। মীরা বললো ও জব টা করবে না, তাই আপনার এই কার্ড টা আমায় দিয়ে বললো জানো আজ সকাল ১০ টায় ৫ টা নিউ ডিজাইন নিয়ে এখানে চলে আসতে। আমি ওর ফুপাতো বোন।
আমান– (হাউ ডেয়ার শি? আমাকে…আমান খান কে রিজেক্ট করার সাহস কি করে হলো মীরার? এটা তুমি ঠিক করলে না মীরা, শাস্তি পেতে হবে এর জন্য তোমায়। ইউ হ্যাভ টু পে ফর দিস।) মনে মনে।
নীতা– স্যার মীরা আজকে সকালে আমি বেড়ানোর পরেই বেরিয়ে গেছে, নিজের লাভারের সাথে ঘুরতে।
আমান– হোয়াটটটট!! এতো বড়ো সাহস ওর? কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করে অন্য একজন কে নিজের পরিবর্তে পাঠানোর শাস্তি কি হতে পারে ওর জানা নেইইইই?
নীতা– (গ্রেট! আমান স্যারের মনে আরেকটু বিষ ঢালতে হবে যাতে মীরা কাজ করতে চাইলেও আর কাজে না নেয়, ঐ মেয়ের তো ডিজাইন অনেক সুন্দর, কে বলতে পারে ডিজাইন দেখে চান্স দিয়ে দিলো।) মনে মনে। আব, স্যার ও অনেক ডেসপারেট। এইসব শাস্তির ভয় মীরা পায় না। আমাকে তো কালকে ডাইরেক্ট বলে দিলো, আপনাকে এসে জানো এসব বলে দিই।
আমান– মীরা কোথায় গেছে জানো?
নীতা– (এই রেহ এখন মীরা কে ডেকে সব জিজ্ঞেস করবে নাকি? তাহলে তো সব প্লানে জল পরে যাবে। কি করি এখন? অবশ্য এটা একটা সেরা সুযোগ তুর্য আর মীরা কে একসাথে দেখানোর। আম্মি তো বললো আম্মির লোক দেখেছে ওরা একসাথে আছে, তাহলে আমান স্যারের কাছেও প্রুফ হয়ে যাবে যে আমি মিথ্যে বলিনি।) মনে মনে।
আমান– অ্যান্সার মি ড্যাম ইটটটট!! (চিৎকার করে)
নীতা– হ..হ্যাঁ স..স্যার কোম্পানি থেকে বেরিয়ে কিছুটা গেলেই যে লেকটা আছে সেখানেই ওরা মীট করে অলয়েস। হি ইস হার লাভার। ওখানেই বসে ওরা প্রে…
আমান– কীপ ইউর মাউথ শাট! যতটুকু কোয়েশ্চণ করবো ঠিক ততটাই অ্যান্সার দেবে, গট ইট!! (দাঁতে দাঁত চেপে।)
নীতা ভয়ে ভয়ে হ্যাঁ বোধক মাথা নারাতেই আমান বেরিয়ে গেলো নিজের কেবিন থেকে, আর নীতা একটা শয়তানি হাসি দিয়ে আমানের পিছু পিছু বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে।
🥀

__মীরা দেখ এভাবে কেঁদে কি কোনো লাভ আছে? তুই তো বোকার মতো ওদের কে কার্ডটা দিয়ে দিলি, নাম্বার টা তো নোট করে রাখতে পারতিস অন্তত।
মীরা– আমি কি করে বুঝবো ” তুর্য ” যে ওরা এভাবে আমার থেকে কার্ডটা ছিনিয়ে নেবে। ওরা আমায় বিশ্বাস করছিল না তাই তো আমি কার্ডটা দেখিয়ে ছিলাম। আ..আমি তো ভা..ভার্সিটি তেও য..যেতে পারবো ন..না, এখন আ..আমি কি ক..করবো তুর্য? আমার যে ক..কাজ টা ক..করা খুব জ..জরুরী। (মীরা ফোঁপাতে লাগলো)
তুর্য– (আমি আর পারবো না মীরা কে এভাবে কাঁদতে দেখতে, এভাবে কাঁদতে থাকলে ওর শরীর খারাপ করবে।) মনে মনে।
তুর্য আর কিছু না ভেবে হঠাৎ করেই আমায় জড়িয়ে ধরলো, আর আমিও এসময় খুব কান্না করছিলাম নিজেকে অনেক অসহায় মনে হচ্ছিল তাই তুর্য আমায় জড়িয়ে ধরতেই আমিও ওকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে কাঁদতে লাগলাম। তুর্য আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, আমি ওকে নিজের ভাইয়ার চাইতেও বেশি মনে করি। ও সব সময় আমাকে সাহায্য করে কোনো বিপদে পড়লে, এমন কি ফুপির হাত থেকেও অনেকবার রক্ষা করেছে।
তুর্য– এই পাগলি মেয়ে এতো কেনো কাঁদছিস বোকার মতো? (আমাকে সোজা করে চোখের জল মুছিয়ে)
মীরা– তাহলে আমি কি করবো এখন?
তুর্য– শোন! ইসমি ভার্সিটি তে যায় তো?
মীরা– হ্যাঁ।
তুর্য– ওকে বলবি তোদের ট্রাস্টির নাম্বার টা নিয়ে আসতে কোনো ভাবে ম্যানেজ করে, ট্রাস্টির ভাই তো বললি ঐ ভার্সিটি তেই পরে।
মীরা– হ্যাঁ, পরে তো। অর্নিল।
তুর্য– হম হয়ে গেলো, প্রব্লেম সলভ।
আমি আর কিছু বলতে যাবো তার আগেই হাত তালির আওয়াজ শুনতে পেলাম, পাশে তাকাতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম, আমান স্যার দাঁড়িয়ে আছেন আর তার পাশ থেকে বেরিয়ে এলো নীতা, মুখে শয়তানি হাসি নিয়ে, আমার বুঝতে বাকি রইলো না নীতাই আমান স্যার কে কিছু একটা বলেছে। আমান স্যার পকেটে হাত গুঁজে আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন।
আমান– ওয়াও!! গ্রেট!! নিজের কাজ ছেড়ে এখানে বসে প্রেমলীলা করছো? লিসেন তোমার থেকে আমি কিছু শুনতে চাই না (তুর্যের দিকে হাত বাড়িয়ে থামিয়ে দিলেন)
তুর্য কিছু বলতে যাচ্ছিল তখনই উনি এমন একটা কথা বললেন, আমিও কিছু বলতে নিতে গেলেই উনি আমাকে বললেন।
আমান– আমি তোমার থেকে কোনো সাফাই শুনতে চাই না মীরা। আমি ভেবেছিলাম তুমি যখন বলেছো তখন তুমি ঠিকই কাজ করতে আসবে বাট নো আই অ্যাম রং! তুমি তো তোমার লাভারের সাথে টাইম স্পেন্ড করছো, তোমার জায়গায় অন্য একজন কে পাঠিয়ে দিয়ে। হ্যাভ ইউ এনি আইডিয়া আমি এটার জন্য তোমার নামে পুলিশ কেস করতে পারি?
মীরা– স্যার আমার কথাটা শুনুন একবার।
আমান– আমান খান কাওর সাফাই শোনে না, চুপচাপ গিয়ে আমার গাড়িতে বসো।
আমি অবাক হয়ে গেলাম ওনার কথায়, উনি কি আমাকে পুলিশ স্টেশন নিয়ে যাবেন? নাহ নাহ আমাকে স্যার কে বলতে হবে যে আমি কিছু করিনি, গাড়িতে বসেই না হয় বলবো। আমি আর কিছু না ভেবে ওনার গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম আর উনিও রেগে এসে গাড়িতে বসে পড়লেন। গাড়ি স্টার্ট করতেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম কারণ উনি অনেক স্প্রীডে ড্রাইভ করছেন। আমি কিছু বলার সুযোগ পেলাম না, কারণ আমি জোরে গাড়ি চালালে ভয় পাই। উনি গাড়িটা থামালেন একটা বিশাল বড়ো কোম্পানির সামনে যেখানে বড়ো বড়ো করে #AK_GROUP_OF_COMPANY। আমার কিছু বলার আগেই উনি আমার হাত ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে গেলেন, আর একটা কেবিনের মধ্যে নিয়ে এসে বললেন।
আমান– ২ ঘন্টার মধ্যে আমার ১০ টা ডিজাইন কম্পলীট চাই।
মীরা– স্যার কার্ডটা নীতা আমার থেকে নিয়ে নিয়েছিল, আমি আপনার নাম্বার নোট করে রাখিনি তাই জানাতেও পারিনি আপনাকে। আমি কাজ টা করতে চাই স্যার। (এক নিশ্বাসে বলে ফেললাম)
আমান– তুমি চাও আর না চাও তাতে আমার কোনো যায় আসে না। দেট’স নট আ বিগ ডিল। আমি কি চাই সেটাই বড়ো কথা। সো চুপচাপ আমার নাম্বার তোমার ফোনে সেভ করো আর ১০ টা ডিজাইন রেডি করে আমাকে ২ ঘন্টার মধ্যে দেখাও।
মীরা– স্যার!!
আমান– নাও হোয়াট?
মীরা– ৫ টা ডিজাইন তো আপনি আজ আনতে বলেছিলেন, সেগুলো (পেপার্স হাতে দিয়ে)
স্যার চলে যাচ্ছিলেন তখনই ডিজাইন টা দেখালাম কারণ ওটা আমার ব্যাগেই ছিল, আমি কোম্পানি টা খোঁজার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে ছিলাম আর তখনই তুর্যর সাথে দেখা হয়। স্যারের দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করলাম স্যার মুচকি মুচকি হাসছেন তাই ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম।
মীরা– স্যার ঠিক আছে ডিজাইন গুলো?
আমান– বাকি ৫ টা রেডি করো।
#ফ্লাশব্যাক_এন্ড 🌸
আমান– ইউ নৌ মীরা তোমার করা প্রত্যেকটা ডিজাইন আমি যত্ন করে আগলে রেখেছি। ওগুলো আমার কাছে অনেক দামি, ইনফ্যাক্ট তোমার সব কিছুই আমার কাছে খুব প্রেসাস আন্ড স্পেশাল। অ্যাকচুয়লী তুমি আমার কাছে অনেক দামি, বাট আলাস! তুমি সেটা বুঝলে না।
আমান ছাদে থাকা দোলনায় শুয়ে পরলো আর মুহুর্তেই ঘুমিয়ে পরলো, আমানের চোখের কোণ বেয়ে পানি পড়ছিল। সেটা ও মুছল না কারণ আমান জানে এ পানি বন্ধ হওয়ার নয়।

সকালে ………………………………
মীরা– কেনো ডেকেছো তুমি আমায় ফুপি?
ফুপি– যা টাকা দিস এবার থেকে তার বেশি দিবি, এটা বলার জন্য ডেকেছি।
মীরা– বেশি দেবো মানে? তোমাকে আমি যা টাকা দিই তাতে তোমাদের খুব ভালো মতোন হয়ে যায় তাহলে আবার কেনো টাকা বাড়াতে বলছো?
ফুপি– শোন তোর আর তোর বোনের পিছনে আমরা কম খরচ করিনি, চুপচাপ যা বলছি কর নাহলে কপালে অনেক দুঃখ আছে (হাত মুচরিয়ে ধরে)
মীরা– কেনো এমন করছো ফুপি? প্লিজ রেহাই দাও এবার। (কাঁদতে কাঁদতে)
ফুপি– রেহাই চাস? ঠিক আছে তাহলে আমি তোর আর আমানের বিয়ের কথাটা জানিয়ে দি নী…
মীরা– নাহ!! এমন টা করো না। আমি টাকা দিয়ে দেবো তুমি যা চাও কিন্তু ওকে প্লিজ কিছু জানিয়ো না, ও আমানের ক্ষতি করে দেবে ফুপি।
ফুপি– টাকা টা পাঠিয়ে দিলেই জানাবো না। আমাকে তো ফোন করেছিল আজ।
মীরা– কি বলেছো তুমি? (ভয়ে ভয়ে)
ফুপি– কি আবার বলবো, বললাম তুই যেই কোর্স টা করছিস ৬ মাসের সেটাতে খুব বিসি তাই কন্টাক্ট করতে পারছিস না ওর সাথে, আমার থেকেই খবর নিচ্ছে। তাহ তুই আমান কে ডিভোর্স দিচ্ছিস তো ৬ মাস পর?
মীরা– হ্যাঁ ফুপি দিচ্ছি। (চোখের পানি ফেলতে ফেলতে)
ফুপি– তোদের বিয়ের তো এখনো ১ মাস ও কম্পলীট হয়নি তাই না? তাহলে এতো চোখের জল ফেলার কি হয়েছে?
মীরা– (বিয়ে করার আগের এক মাসেই উনি আমার মন জিতে নিয়েছেন, ভালোবেসে ফেলেছি আমি ওনাকে।) মনে মনে। আমি আসছি ফুপি।
ওখানে আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে বেরিয়ে গেলাম, রাস্তা দিয়ে আপন মনে হাঁটছি তখনই কেউ আমার মুখ চেঁপে ধরে টেনে নিলো।
🌸
অন্যদিকে ………………………….
ইসমি ভার্সিটি তে এসে ক্লাসে যাওয়ার আগে নিজের বান্ধবীদের সাথে কথা বলছে, হঠাৎ ওর চোখ অন্য দিকে গেলো আর চোখে মুখে বিরক্তির ছাঁপ ভেসে উঠলো, ইসমি মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে চলে গেলো।