সে কি জানে ! Part- 13
—” মরুভূমি!! এক্ষুনি বারান্দায় আসো।।আমি তোমাকে দেখবো।। ”
ব্যস এতটুকু বলেই ফোনটা কেটে দেয় রেয়ান।।আমাকে কিছু বলার সুযোগও দেয় নি সে।।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত প্রায় ৩টা বেজে ৪৫ মিনিট!! এত রাতে রেয়ান কেন ফোন করেছেন আমাকে??তাছাড়া বারান্দায়-ই বা আসতে বলছেন কেন??
এসব ভাবতে ভাবতেই আমি বারান্দায় চলে যাই।।সেখানে যেতেই দেখি রেয়ান আমার বাসার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।।লেমপোস্টের আলোয় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।তার চাহনী বরাবরের মতোই শান্ত!! কিন্তু মুখে কেমন যেন ক্লান্তির ছাপ।।আমাকে দেখেই মুচকি হাসলেন উনি।।তারপর ইশারা দিয়ে বললে ফোন ধরতে……
ভাবনার জগতে এতই ডুবে ছিলাম যে ফোন কতক্ষন ধরে বাজছে তার কোনো খেয়ালই না।।তাড়াতাড়ি ফোন ধরে হ্যালো বলতেই অপর পাশ থেকে খুবই নরম গলায় রেয়ান বলে উঠেন……..
—” সরি!! এত রাতে তোমাকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য।।আসলে…..”
—” কোনো কি সমস্যা হয়েছে আপনার?? এত রাতে এখানে আসলেন যে?? ”
—” না এমনিই!! তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল।।তাই চলে আসলাম।। ”
কথাটা বলেই আরেকটু হাসলেন তিনি।।খুব মায়াবী সে হাসি।।ভুবন ভুলানো হাসি যাকে বলে!!তার হাসি দেখে আমিও হাসলাম।।হঠাৎ উনি আবার বললেন…….
—” নিচে আসতে পারবা একটু।।কাজ ছিল!! ”
—” এত রাতে?? ”
—” তো?? লুকিয়ে লুকিয়ে আসো তাড়াতাড়ি।। ”
বলেই ফোন কেটে দিলেন।।আমি তার দিকে অসহায় ভাবে তাকাতেই সে আবার ইশারায় একই কথা বললেন।।কি আর করার!! তার কথা মতো লুকিয়ে লুকিয়ে যেতে লাগলাম বাইরে।। বুঝতে পারছি না নিজের বাসায় নিজেই আজকে চোরের মতো চলাফেরা করছি।।ব্যাপারটা সত্যিই হাস্যকর!!কোনো রকম পা টিপে টিপে বাসার বাইরে গেলাম আমি।।সেখানে যেতেই দেখি রেয়ান গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।।হাত দু’টো পেছনে রাখা আর মুখে,,,মুখে রয়েছে গম্ভীরতা!!আমি তার কাছে যেতেই সে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন।।আমি তো অবাক!! উনি আবার কি করতে চাচ্ছেন??পায়ে ব্যথা-ট্যথা পেয়েছেন নাকি?? আমার ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে উনি পেছন থেকে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ ধরলেন আমার সামনে।।আর গম্ভীর কণ্ঠে বললেন…….
—” নাও তোমার ইচ্ছে পূরণ করলাম।।এখন গোলাপগুলো নিয়ে আমাকে উদ্ধার করো!! ”
এতক্ষন অবাক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে থাকলেও এখন আমার মুখে পুরো বিরক্তির ছাপ।।এভাবে কেউ প্রপোজ করে?? লাইক সিরিয়াসলি?? এটা কি ধরণের কথা!! কিছুটা রেগেই বললাম……
—” আপনার গোলাপ আপনার কাছেই রাখেন।।পারলে পানি দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলেন।। ”
বলেই রাগি ভাব নিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে লাগলাম।।কি ভাবে কি সে আমাকে?? প্রপোজের তো একটা সৌন্দর্য আছে তাই না?? আর এ মানুষটা আমাকে বলে নাকি ” গোলাপগুলো নিয়ে আমাকে উদ্ধার করো ” যত্তসব!! কথার কোনো ধাঁঝ নেই উনার।।দু’কদম যেতেই হঠাৎ রেয়ান বলে উঠেন……
—” প্রেয়সী আমার!! এত রাগ করো কেন তুমি?? আচ্ছা,,,আমার প্রেয়সী কি জানে,,, তাকে রাগলে কতটা সুন্দর লাগে।।#সে_কি_জানে তার ও-ই ভ্রু কুঁচকানো,,,রাগে লাল হয়ে যাওয়া নাক আর গাল।।কতটা পাগল করে আমায়??নিজেকে যে নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।।তাকে বলো!! আমার এ-ই গোলাপগুলো নিতে।।তাকে বলো!! গোলাপটা নেওয়ার সময় যখন সে লজ্জা পাবে,,তখন তার সেই লজ্জা মাখা মুখ দেখতে আমার খুব ইচ্ছে করছে।।ইচ্ছেটা কি পূরণ করবে সে?? ”
কথাগুলো শেষ হতেই পেছনে ফিরলাম আমি।।রেয়ান এখনও হাঁটু গেড়ে বসে আছেন।।তার কথা,,, তার চাহনী সবকিছু আমার মনে শিতলতা বইয়ে দিচ্ছে।।সাথে বেশ লজ্জাও লাগছে আমার।।ধীর পায়ে একটু একটু করে এগিয়ে গেলাম তার দিকে।।তারপর গোলাপগুলো নিয়েই সোজা দৌঁড় দিলাম বাসার দিকে।।আর এক মুহুর্তও যে থাকা যাবে না তার সামনে।।আমার লজ্জা যে বেড়েই যাচ্ছে।।আমাকে যেতে দেখে রেয়ান হেসে দিলেন।।আর বললেন…..
—” সকালে রেডি থেকো।।আমি তোমাকে ভার্সিটি নিয়ে যাবো!! ”
.
.
.
.
ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর রেয়ান।।আমি বিরক্তি মাখা চেহারা নিয়ে তাকে চেয়েই যাচ্ছি।।আর সে,,,সে ব্যস্ত তার সানগ্লাস পড়া আর চুল ঠিক করা নিয়ে….…
—” আপনার সমস্যা কি রেয়ান।। আপনি এক্ষুনি যদি এগুলো বন্ধ না করেন।।তাহলে আমি কিন্তু একাই ভার্সিটির ভেতর ঢুকে যাবো।। ”
—” সেটার প্রয়োজন নেই বুঝলে।।এখন চলো!! তোমার জন্য এমনিতেই দেড়ি হয়ে গেছে।। ”
কথাটা বলেই হাঁটা ধরলেন উনি।।আর আমি তার যাওয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি।।লাইক সিরিয়াসলি?? আমার জন্য ভার্সিটির দেড়ি হচ্ছে।।আর উনি যে এতক্ষন কি কতগুলো করলেন তার জন্য কিছু হয় নি।।আসলেই উনি একটা অসভ্য।। চরম অসভ্য!!
তার যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আমিও তার পেছন পেছন যাওয়া শুরু করলাম।।আমি আর রেয়ান একসাথে হাঁটছি হঠাৎ রাফি এসে দাঁড়ালো আমার সামনে।।খুব ভদ্রভাবে বলল…….
—” কেমন আছো মিরা?? ”
—” আলহামদুলিল্লাহ!! আপনি?? ”
—” আমিও।।আচ্ছা উনি কে?? তোমার ফ্রেন্ড?? “(রেয়ানে দিকে ইশারা করে)
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই রেয়ান আমার হাত খুব শক্ত করে ধরলেন।।তারপর রাফির দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন…….
—” ও আমার ওয়াইফ।। ”
কথাটা শুনে আমি আর রাফি দু’জনেই বিষম খেলাম।।রাফি নিজের হাত রেয়ানের দিকে বাড়িয়ে কিছুটা হাসার চেষ্টা করে বলল…..
—” কংগ্রেচুলেসন ”
রেয়ানও হাত মেলালো রাফির সাথে।।তারপর প্রায় সাথে সাথেই রাফি সেখান থেকে চলে গেল।।তা দেখে রেয়ান আমাকে বললেন……
—” ও মেবি তোমাকে পছন্দ করে।। ”
—” কিভাবে বুঝলেন?? ”
—” তার হাবভাব দেখেই বুঝা যাচ্ছে।।শুনো,,,, ওর থেকে দূরে থাকবা।।নাহলে মনে আছে তো আমি কি বলেছি?? ”
—” এখন আপাতত মনে রাখার প্রয়োজন বোঁধ করছি না।।আপনি আমাকে এটা বলুন,,, উনাকে আপনি বললেন কেন আমি আপনার ওয়াইফ?? ”
—” ওয়াইফ হও নি তো কি হয়েছে??হবা!!তাছাড়া কালকে অর্ধেক বউ বানিয়ে ফেলেছি তোমাকে।।বাকি অর্ধেকও বানিয়ে ফেলবো।। ”
—” অর্ধেক না কঁচু!! ওভাবে কোনো বিয়ে হয় নাকি।। ”
—” হুম!! তাই তো এখনও বাসর করি নি।।আসল বিয়েটা হোক।।তারপর নাহয় বুঝবে কিভাবে বিয়ে হয় আর কিভাবে…… ”
বলেই চোখ টিপ মারলেন আমাকে!! আর আমি মাথা নিচু করে আছি।।কেন যেন খুব লজ্জা লাগছে আমার।।উনি কি কিছু বুঝেন না?? এভাবে বাইরে আমাকে লজ্জা দেওয়াটা কি ঠিক হলো তার?? মোটেও না!! মাথা নিচু করেই বিড়বিড় করে বলে উঠলাম……
—” অসভ্য ”
.
.
.
#চলবে