সে কি জানে ! Part- 06
-” “আ” খাইয়ে দাও আমাকে ”
—” মানে?? ”
—” মানে বুঝো না?? বিরিয়ানি খাইয়ে দাও আমাকে ”
—” কেন?? আপনার নিজের হাত নেই?? ওইটা দিয়ে খান না।। আমাকে বলছেন কেন?? ”
—” আমি বলছি তোমাকে খাইয়ে দিতে ” [ দাঁতে দাঁত চেপে ]
—” পারব না!! ”
—” কি বললা আবার বলো তো ”
উনার কথা শুনে উনার দিকে তাকালাম।।সাথে সাথে কয়েকটা ঢোক গিলে ফেললাম,,,কি ভয়ংকর ভাবে তাকিয়ে আছেন তিনি আমার দিকে।। ভয়ে রিতিমতো হাত-পা কাঁপছে আমার।।কোনোমতে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললাম……
—” ইয়ে মানে বলছিলা কি রিহান আছে এখানে।। আমি কিভাবে কি করব আপনিই বলুন।।”
বলেই কিছুটা হাসার চেষ্টা করলাম।।ভেবেছিলাম কাজ হবে,,,, কিন্তু হলো না।। বলে না ” যা হবার,,, তা শত চেষ্টা করার পরও আটকানো যায় না ” আমার সাথে ঠিক তেমনই হলো।। আমার কথা শুনে রেয়ান রিহানের দিকে তাকালো।। একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো……
—” রিহান,,, তোমার মা যদি আমাকে আর তোমাকে খাইয়ে দেয় তাহলে কেমন হয়?? ”
রেয়ানের কথা শুনে রিহান কি বুঝলো জানি না।। কিন্তু সেও রেয়ানের সাথে তাল মিলিয়ে একটা ক্যাবলা হাসি দিয়ে বলল……
—” মা ভালোই হবে।। বাবা আর আমি এক সাথে তোমার হাতে খাবো।।খাইয়ে দাও না প্লিজ।।”
আমি কি করব বুঝতে পারছি না।। একবার রেয়ানের দিকে তাকাচ্ছি তো একবার রিহানের দিকে।। এবার রেয়ান কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বলল……
—” কি হলো খাইয়ে দিচ্ছো না কেন?? নাকি অন্য কোনো ব্যবস্থা করব?? ”
রেয়ানের কথা শুনে আমি কিছুক্ষন চুপ থাকলাম।।অতপর খাইয়ে দেওয়া শুরু করলাম রেয়ান আর রিহানকে।। প্রথমে রিহানকে খাইয়ে দিলাম।।তারপর রেয়ানকে।।রেয়ানকে খাইয়ে দিতে খুব অসস্তি হচ্ছে আমার।।তাছাড়া রেয়ান বারবার আমার হাতে কামড় দিচ্ছে।। এবার তো খুব জোড়েই কামড়টা দেয়।।সাথে সাথে আমি “আহহ” বলে উঠি।।রেয়ানএকটা বাঁকা হাসি দিয়ে নিজের নখ দেখতে দেখতে বলে……
—” কি হয়েছে মরুভূমি?? কোথাও কি ব্যথা পেয়েছ?? ”
তার কথা শুনে ইচ্ছে করছে হাতের পাশে থাকা প্লেট-টা দিয়ে তার মাথায় জোড়ে একটা বারি দি।।কিন্তু আমি নিরুপায়।।এটা যদি করি তাহলে পড়ে কি-না কি করবে আমার সাথে।। বলা তো আর যায় না,,, সে যদি পুলিশ হতো তাহলে মানা যেত,,,কিন্তু সে তো আস্ত একটা গুন্ডা পুলিশ!!
প্রায় ১ ঘন্টা পর রেয়ান আর রিহানকে খাওয়ানো শেষ হয় আমার।।আমি বুঝতে পারছি না রিহানও কি রেয়ানের সাথে মিলে গেছে নাকি??আজকে ২জনেই একাধারে খাবার খাচ্ছে যে খাচ্ছেই।।পেট যেন তাদের ভরছেই না।। অবশেষে ১ঘন্টা পর তাদের পেট মনে হয় একটু হলেও ভরেছে।। আর আমি মুক্তি পেয়েছি।।
খাওয়ানো শেষ হতেই রেয়ান রিহানকে নিয়ে ড্রইং রুমে চলে যায়,,,টিভি দেখার উদ্দেশ্যে!!
আর আমি মার জন্য খাবার বাড়ছি।। রেয়ান আসার পর থেকে মা একবারের জন্যও রুম থেকে বের হননি।।তার নাকি রেয়ানকে ভালো লাগে না।। খাবার খাওয়ার জন্য যখন মাকে ডাকতে গিয়েছিলাম,,,তখন মা সাফ সাফ মানা করে দেন যে তিনি রেয়ানের সাথে এক টেবিলে বসে খাবার খাবেন না।। যদি খান,, তাহলে নিজের রুমে খাবেন।।তাই আমিও খাবার নিয়ে যাচ্ছি তার রুমে।। সাথে আমার খাবারটাও।।মা আর আমি একসাথেই খাবো।।
মার রুমে ঢুকতেই দেখি মা বসে আছেন বিছানায়।।আমিও মার পাশে গিয়ে বসি।।তারপর মাকে বলি……
—” মা নাও খাবার এনেছি এখন তো খাও প্লিজ।।দেখো খাবারের সাথে রাগ করে থাকা ভালো না।। ”
—” আমি খাবো না ”
—” প্লিজ মা জেদ করো না।। দেখো আমিও খাই নি খাবার।।তোমার সাথে খাবো ভেবেছিলাম।।এখন যদি তুমি না খাও তাহলে আমিও খাবো না।।”
আমার কথাটা শুনে মা খাবারের প্লেট-টা নিতে নিতে বলে……
—” তুই যা করছিস তা কি ঠিক মিরা ”
—” কি করেছি আমি?? ”
—” এ-ই যে ও-ই ছেলেটার সব কথা শুনছিস।। আবার বাসায়ও আসতে দিচ্ছিস।। কেন প্রতিবাদ করছিস না ও-ই ছেলেটার?? আবার আমাকেও করতে দিচ্ছিস না।। ”
—” আমি নিরুপায় মা।। তুমি জানো না রেয়ান ঠিক কেমন।।এমন কি আমিও জানিনা।। ও যা চায় তা আদায় করেই নেয়।।এতদিনে ঠিক বুঝে গেছি ওকে।।আমরা কিছু করতে পারবো না ওর।। ”
—” কেন পারবো না।। ও পুলিশ বলেই যা ইচ্ছে করবে নাকি??”
—” এটাই তো ব্যপার মা।। ও শুধু পুলিশ না।। ও বাংলাদেশের টপ বিজনেস ম্যানদের একজনের ছেলেও।।আমরা চাইলেও কিছু করতে পারবো না।। পরে যদি কিছু বলি তাহলে হয়তো আমাদেরই ক্ষতি হবে!!তাছাড়া তুমি দেখেছো রেয়ানের রিহানের সাথে কত ভালো ভাব হয়েছে,,, ও যদি রিহানের কিছু করে।।আমি চাই না আমার কোনো ভুল সিদ্ধান্তের জন্য রিহানের কিছু হোক।। ”
—” ও যদি তোকে বিয়ে করতে বলে।। তাহলে করবি?? ”
—“…….. ”
—” কি হলো বল?? ”
—” না ”
—” তাহলে?? ”
—” মা প্লিজ এ ব্যপারে আমাকে কিছু বলো না।। এত প্রেসার নিতে পারছি না আমি।।”
কথাটা শুনে মা চুপ হয়ে গেলেন।।হয়তো ভাবছেন,,”আসলেই আমি এত প্রেসার নিতে পারবো না!!”চুপচাপ খেয়ে নিলাম ২জনেই।।খাওয়া শেষে সব ঠিকঠাক করে ড্রইং রুমের দিকে পা বাড়ালাম।।ড্রইং রুমে যেতেই আমি অবাক!! রেয়ান আর রিহান সেই লেভেলের দুষ্টামি করছে।।আজ প্রথম মানুষটাকে হাসতে দেখলাম।।খুব প্রাণবন্ধ ভাবে হাসছে সে।।সাথে আমার ছেলেটাও।।খুব তাড়াতাড়ি আপন করে নিয়েছে সে রেয়ানকে।।
আমি তাদের মাঝে উপস্থিত হতেই রেয়ান হাসি বন্ধ করে দেয়।।আমাকে বসতে বলে,,, রিহানকে বলে…..
—” রিহান,,, তুমি তোমার নানুর কাছে যাও তো।। আমি আর তোমার মা একটা জরুরি কথা বলল ”
—” আচ্ছা বাবা ”
বলেই রিহান দোঁড় দিয়ে মার রুমে চলে যায়।। রিহান যেতেই রেয়ান ঠিক হয়ে বসে।।শান্ত কণ্ঠে আমাকে জিজ্ঞেস করে…..
—” রিহান বলছিল,,ওর নাকি ৪ বছর।। ”
—” হুম ”
—” তাহলে তোমার কি ১৫-১৬ বছরে বিয়ে হয়েছিলো?? ”
কথাটা শুনে আমি রেয়ানের দিকে তাকালাম,,, সে আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।। হয়তো উত্তরের আসায়।।আমি তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে ফেলি।।আমাকে কিছু বলতে না দেখে সে আবারও বলল…..
—” আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস কিরেছি।।উত্তরটা কি দেওয়া যায় না?? ”
—” হুম ”
—” তাহলে বলো,,তোমার কি ১৫-১৬ বছরে বিয়ে হয়েছিল??”
—” হুম ”
—“কেন??”
সে এবার কৌতূহল নিয়ে আমার দিকে ফিরে বসল।।সাথে আছে তার সেই তীক্ষ্ম দৃষ্টি।।আমি মাথা নিচু করেই বলতে লাগলাম…..
—” আমি অনেক গরিব ঘরের মেয়ে।। বাবা টাকার জন্য আমাকে একটা বড় লোক ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন ”
আমার কথা শেষ হতেই রেয়ান সোফার সাথে হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসে।। তারপর বলে…..
—” এবার বুঝলাম,, তোমার মতো একটা মেয়ে ডিভোর্সি কেন??হয়তো তোমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে বুড়ো ছিল।। তোমাকে অনেক মারতোও।।আর তার নারীর নেশা ছিল।।কয়েকদিন যাওয়ার পরও তোমাকে ভালো লাগছিল না তার।। তাই তোমাকে ছেঁড়ে চলে গেছে,,,তাই না??”
কথাটা শুনে আমি রেয়ানের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম….
—” জীবনেও না।। আমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে তার ঠিক বয়সই ছিল,,আর সে অনেক ভালো ছিল ”
—” তাহলে?? ”
—“……… ”
—” তুমি কিছু বলছ না মানে আমি যা ভাবছি ওইটাই সত্যি।। তাছাড়া অন্য কোনো কারন তো দেখছি না আমি।।তোমার এক্স হাসবেন্ড নিশ্চয় খারাপই ছিল।। ”
উনার কথাগুলো শুনে রাগ হচ্ছে আমার।। প্রচুর রাগ।।রাগ সামলাতে না পেরে জোড়ে জোড়ে চিল্লিয়ে বললাম…….
—” আমার শুভ অনেক ভালো,,,বুঝেছেন অনেক ভালো।। ও আমাকে অনেক ভালোবাসতো ”
কথাটা বলতে গিয়ে ২ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে আমার চোখ থেকে।। রেয়ান কিছু বলতে যাবে তখনি তার একটা ফোন আসে,,,স্ক্রিনে থাকা নামটা দেখেই সে কিছু না বলে বের হয়ে যায় বাসা থেকে।। আর আমি,,, আমি সেখানেই বসে আছি।।আসলেই কেন শুভ আমাকে রেখে গিয়েছিল।। কারনটা যে এখনও আমার অজানা!!
সকালে……🍁🍁
কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বাজারে যাচ্ছি আমি।।রাস্তায় অনেক্ষন দাঁড়িয়ে আছি রিকশার অপেক্ষায়।।কিন্তু কোনো রিকশা পাচ্ছি না।। বাধ্য হয়ে ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি।।হঠাৎ মনে হয় আমার পাশে একটা গাড়ি আছে,,আর সেটা আমার সাথে সাথেই এগোচ্ছে।। পাশে তাকাতেই দেখি রেয়ান।।সে গাড়ি চালাচ্ছে।। ঠিক চালাচ্ছে না!! আমি যেভাবে হাঁটছি সে ঠিক সেই ভাবেই গাড়িটা আগাচ্ছে।।আমাকে তার দিকে ফিরতে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে……
—” হাই মরুভূমি ”
কথাটা শুনেও না শুনার ভান করে হাঁটতে থাকি।।তার সাথে কথা বলার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই আমার।।কি ভাবে কি সে আমাকে ??আমার কি কিষ্ট হয় না,, রাগ নেই আমার মাঝে,,, কাল যা হলো তার জন্য খুব রেগে আছি আমি তার উপর।।।আজ যাই করুক না কেন,,, কথা বলব না আমি তার সাথে।।
এদিকে রেয়ান বকবক করেই যাচ্ছে।।কিন্তু তাতে বিন্দু মাত্র পাত্তা দিচ্ছি না আমি।।এবার বেশ বিরক্তি নিয়েই সে বলল…..
—” মরুভূমি গাড়িতে উঠো ”
—“……. ”
—” তোমাকে আমি কি বলেছি।।উঠক গাড়িতে ”
এবার কিছুটা রেগেই বলল কথাটা রেয়ান।।কিন্তু তাও আমি পাত্তা দিলাম না তাকে,,, নিজের মতো হাঁটছি।।হঠাৎ রেয়ান গাড়ি থেকে নেমে আমাকে কোলে তুলে নিলো।।সাথে সাথে আমি আশেপাশে তাকাতে শুরু করি।।রাস্তার সব মানুষ আমাদের দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।। কিছু মানুষ তো মুখ টিপে টিপে হাসছে।। এসব দেখে আমি নিজেকে যথা সম্ভব রেয়ান থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম,,,কিন্তু পারলাম না।। রেয়ান আমাকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি লক করে দিলো।।এতে কিছুটা জোড়েই রেয়ানকে বললাম…..
—” আপনি যা করছেন তা একদমই ঠিক না।। সবসময় আপনি যা চাবেন তা কিন্তু হবে না।।
আমার কথা শুনে রেয়ান আমার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলল……
—” সবসময় আমি যা চাইব তাই-ই হবে।। আজ তোমার অতীতটা জেনেই ছাঁড়বো!! ”
.
.
.
.
#চলবে🍁🍁