তোকে চাই

তোকে চাই !! Part- 06

উনার কথাটা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়লাম।।যে মানুষটা আমাকে এক মিনিটের জন্য সহ্য করতে পারে না সে কিনা আমাকে তার সাথে ঘুরতে যেতে বলছে,,,ব্যাপারটা হজম করতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে,,,,

যাবা রোদ???প্লিজজ,,,আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে রোদ,,,(করুন চোখে)

উনার কথায় কি রিয়েকশন দিবো বুঝতে পারছি না।।মস্তিষ্ক বলছে কোথাও গন্ডগোল আছে,,,নো রোদ ডোন্ট গো।।।কিন্তু মনটা তো নাছোড়বান্দা,,,তাই মনটাকে জয়ী করে রাজি হয়েই গেলাম।।।।

গাড়িতে বসে আছি আর উনি ড্রাইভ করছেন।জানি না কোথায় যাচ্ছি,,,কেনো যাচ্ছি?মনের মধ্যে নানা কথা উঁকি দিচ্ছে।।আচ্ছা,, উনি যদি নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে আমাকে মেরে ফেলেন??এসব ভেবে ভয়ে কেঁপে উঠছি কিন্তু ওই যে মন,,যে সবর্দা মস্তিষ্কের বিপরীতে হাঁটে সে বড্ড নিশ্চিন্তে বসে আছে।।কেনো যেনো মনে হচ্ছে উনার সাথে থাকলে কোনো বিপদ আমায় ছুঁতেই পারবে না।।হঠাৎ করে ব্রেক কষাতে ভাবনার সুতো কাটলো।।উনি আমাকে নামতে বলে সামনের দিকে চলে গেলেন।।।একটা নির্জন জায়গায় গাড়ি থামিয়েছেন তিনি।।পরিবেশটাতে বেশ শান্তি শান্তি ভাব আছে,,,,মন ভালো হয়ে যাবার মতো পরিবেশ।।উনার দিকে এগিয়ে গেলাম,,, ঘাসের উপর মাথা নিচু করে বসে আছেন তিনি।।।একদিনেই মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে।।বড্ড মায়া লাগছে,,,,মনে হচ্ছে উনি ভেতরে ভেতরে গুমরে মরছেন।।জানি না কি ভেবে হঠাৎ উনার কাঁধে হাত রাখলাম।।তিনি যদি একঝটকায় আমার হাতটা কাঁধ থেকে সরিয়ে দিতেন তাহলে হয়তো তা আমার জন্য স্বাভাবিক একটা ব্যাপার হতো,, কিন্তু তিনি যা করলেন তার জন্য আমি কোনো কালেই প্রস্তুত ছিলাম না।।।উনার কাঁধে হাত রাখতেই উনি বাচ্চাদের মতো ফুপিয়ে উঠলেন।।আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।।এমন কিছু হতে পারে আমি স্বপ্নেও ভাবি নি।।এই মানুষটাকে হাসতে দেখেছি,,রাগতে দেখেছি,,ধমকাতে দেখেছি কিন্তু কাঁদতে?? দেখি নি কখনো।।এমন পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়ি নি,,কি বলে সান্ত্বনা দেওয়া যেতে পারে তাও জানা নেই,,,,তারউপর উনার এমন অদ্ভূত বিহেভিয়ারের কারণটাও জানি না,,,,তাই চুপ করে রইলাম,,কিছু বললাম না।।এই অসীম নীরবতায় শুধু উনার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে,,,আমার ভেতরটাও দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে,,হঠাৎ উনি আমার হাত উনার বুকে রেখে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলেন,,,

এইখানটাই খুব কষ্ট হচ্ছে রোদ,,,আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না রোদ,,,আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।।বড্ড ভালোবাসি আমি নীলিকে বড্ড ভালোবাসি।।।ওকে ছাড়া আমি বেঁচে থাকতে পারছি না,,,,মরে যাচ্ছি আমি,,মরে যাচ্ছি।।(অঝোরে কাদঁছেন তিনি)জানো রোদ??ভালোবাসার পাল্লায় আমি সবসময় নীলির কাছে হেরে যেতাম।।আমার থেকেও বেশি ভালোবাসতো ও আমায়,,,তবু ধরে রাখতে পারলাম না,,,দেখো এই হাতটা আজ ফাঁকা,,,ও বলছিল কখনো ছাড়ঁবে না এই হাত কিন্তু ও কথা রাখে নি,,,ধোঁকা দিয়েছে আমায়,,,ধোঁকা,,,,,

আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না,,,,উনার কষ্টগুলো আজ বেরিয়ে আসছে সাথে আমাকেও কাঁদিয়ে মারছে।।একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলেন তিনি,,,

ওকে আমার চাই রোদ,,,,এনে দিবে ওকে?দাও না এনে,,,প্লিজ এনে দাও না,,প্লিজজজজ(বাচ্চাদের মতো আবদার করে)

বাচ্চাদের মতো আবদার করে যাচ্ছেন তিনি,,,কিন্তু উনাকে আমি কি করে বুঝাবো,,এটা যে আমার সাধ্যের মধ্যে নেই।। আমিও অঝরে কেঁদে চলেছি,,উনার চোখের জল যে বড্ড পোড়াচ্ছে আমায়,,,,

রোদ,,এই রোদ,,,বলো এনে দিবা??কিছু বলছো না কেন???জানো ওর শেষ কথা কি ছিলো??ও বলেছিলো,,শুভি একটা মিষ্টি মেয়ে দেখে বিয়ে করে নেবে কথা দাও।।।ওর কথা আমি রেখেছি,,ওর পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করেছি।।।তোমাকে খুব ভালোবাসতো নীলি,,,সবসময় বলতো তোমার কাজিনটা বড্ড মিষ্টি শুভি।।।কিন্তু ও আমার কথা রাখেনি,,চলে গেছে,,আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।।।(হেঁচকি দিতে দিতে)আমি বড্ড বাজে রোদ,,,বড্ড বাজে।।।তুমি কাল ঠিকই বলেছিলে,,আমি খুব নিচ একটা মানুষ,, এতটাই নীচ যে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকেও ধরে রাখতে পারি নি।।।তোমার জীবনটাও নষ্ট করে দিয়েছি রোদ,,,সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছি,,,,আমি বাঁচতে চাই রোদ,,,,আমি নীলিকে চাই,,,নীলি,,কে,,,

বলতে বলতেই উনি আমার কাঁধে ঢলে পড়লেন,,,গাঁয়ে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে শরীরে পুড়ে যাচ্ছে।।অনেক ডাকার পরও যখন উনার সাড়া পেলাম না,,তখন আমি রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলাম,,,এই নির্জন জায়গায় আমি কার কাছে সাহায্য চাইবো??হঠাৎ ফোনে বেজে উঠলো,,স্কিনে ভাইয়ার নাম ভাসতেই জানে পানি এলো যেনো,,,,দ্রুত ফোন পিক করে,,,ভাইয়াকে উনার অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা বললাম,,,কিন্তু ঠিকানা??আমি তো নিজেই জানি না কোথায় আছি এই মুহূর্তে,, কি করবো এখন??আর কিছুক্ষণ পরই সন্ধ্যা নেমে আসবে,,ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে আমার।।ভাইয়া হঠাৎ বলে উঠলেন আমি যেনো ফোনের লোকেশন অন রাখি,,,উনারা ট্রেস করে চলে আসবেন।।কথাটা শুনে কিছুটা হলেও শান্তি পেলাম,,,একটা আশার কিরন উঁকি দিয়ে গেল মনে।।।উনার গাঁয়ে হাত দিয়ে দেখলাম,,জ্বর বাড়ছে।।নিজেই তো একটা বাচ্চা আমি,,, মাত্র ১৭ বছর বয়স,,কতই আর বড় হয়েছি??ভয়ে হাত পা কাঁপছে,,, চারপাশে কারো সাড়াশব্দ নেই।।এই সময় আমার সাথে খারাপ কিছু হয়ে গেলে??কে বাঁচাবে আমায়??তারওপর উনি।।কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।।উনার মাথায় পট্টি দেওয়া উচিত,,কিন্তু এখানে কিভাবে??গাড়ি চেক করে একটা ওয়াটার পট পেলাম,,তাতে পানিও ছিলো,,,কিন্তু কাপড়??বাংলা সিনেমার দরদী নায়িকা সাবানার মতো অনেক চেষ্টা করেও শাড়ির আঁচল ছিড়তে পারলাম না,,,,মেজাজটাই বিগরে গেলো,,, ধেৎ,, সামান্য একটা শাড়ির আঁচল ছিড়তে পারি না আমি??শুভ্র ঠিকই বলে আমি আসলেই একটা মগা।।শুভ্রর পাশে বসে একমনে এসব ভাবছিলাম,,,হঠাৎ কি যেনো ভেবে,,উনার পকেটে হাত দিলাম,,অনেক খুজেঁ একটা রুমালও পেলাম,,,ব্যস হয়ে গেলো।।।রুমাল ভিজিয়ে উনার কপালে রেখে,, উনার বলা কথাগুলোই ভাবছিলাম,,,একটা মানুষ এতটা ভালো কি করে বাসতে পারে??নীলিমা আপু বড্ড লাকি,,তাকে ভালোবাসার মতো একটা মানুষ আছে,,যে তাকে পাগলের মতো ভালবাসে।।নীলিমা আপু আর শুভ্রকে দেখে আমারও বড্ড ইচ্ছে হতো শুভ্র ভাইয়ার মতো আমাকেও কেউ এমন করেই যদি ভালোবাসতো।।কিন্তু কে জানতো,,,যে আমি শুভ্র ভাইয়াকেই পাবো,,,আর শুভ্র ভাইয়া হারাবে তার ভালোবাসাকে।।।নিয়তি এতো নিষ্ঠুর কেনো??আমার এখনো সেই দিনের কথা স্পষ্ট মনে আছে,,,কতো হাসি-খুশি ছিলো সবাই।।কিন্তু একটা ঝড় এসে,,, আনন্দমাখা দিনগুলোকে লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেলো,,,,স্বপ্নগুলোকে করে দিলো তছনছ,,,,কি ভয়ঙ্কর ছিলো সেই দিনটা,,,

ফ্ল্যাসব্যাক……

পরীক্ষা দিয়ে বের হতেই দেখি শুভ্র ভাইয়া গেটে দাঁড়িয়ে আছে।।উনাকে আমার কলেজের সামনে দেখে অবাক হলাম।।।উনি এখানে কেন???

#চলবে