অবশেষে তুমি আমার !! Part- 21
আনিশা রাজের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,’ আর কতো কাঁদবে? কাল সারা রাত তো কেঁদেছ! ভালোবাসই যেহেতু তাহলে অধরা আপুকে কেন কষ্ট দিচ্ছো? তোমাদের দু’জনের কষ্ট যে আমার সহ্য হয় না রাজ।
– এমন সময় আদিল আসলো। আদিলকে দেখেই রাজ বললো,’ ভাইয়া যেভাবে বলেছিলাম ওভাবেই অধরাকে বলেছেন তো? আর এই নেন আপনার টাকা।
– ভাই এতো টাকা? কথা ছিল তো দশ হাজার দিবেন। ত্রিশ হাজার দিলেন যে?
– ভাইয়া তোমার না মা অসুস্থ? আমার তো মা নেই। তাই মনে করো ছেলে হয়ে মায়ের পাশে দাঁড়ালাম। আর শোন মায়ের চিকিৎসার জন্য আরো টাকা লাগে তাহলে আমাকে বলবে। আর এই নাও আমার কাড।
– আদিল রাজকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘ ভাইয়া সত্যি আপনি অনেক ভালো। আল্লাহ আপনার মঙল করবে।” আপনার কথা মাকে অবশ্যই বলবো।
– আচ্ছা মা’কে বলবে যে আজ থেকে তার ছেলে দু’টো।
-হ্যাঁ ভাই। এখন আসি।
-আচ্ছা।
– আদিল চলে গেলে রাজ রুমে গিয়ে বসলো। রাজের পিছে পিছে আনিশাও রুমে গিয়ে বসলো। আনিশা স্পষ্ট বুঝতে পারছে রাজ কাঁদছে।
– আনিশা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। তবুও ভয়ে ভয়ে বললো, ‘ রাজ কেন নিজেকে এভাবে খারাপ বানাচ্ছো অধরার সামনে? এতোই যখন ভালোবাসো তাহলে বুকে টেনে নিলেই তো পারো।
– রাজ চোখের পানি মুছে বললো,’ আনিশা ভালোবাসলেই বুকে টেনে নেওয়া যায় না। আমিও তেমন। অামার চোখের সামনে এখনো মা-বাবার রক্তমাখা চেহারাটা ভাসে। এখনো ফুপির ঝুলানো লাশটা আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না। আমাকে ছোট বেলা থেকেই ফুপি নিজের হাতে খাওয়াতো। আমার মায়ের পরে কেউ যদি আদর করে সেটা ফুপি! মা যখন দুষ্টমির জন্য মারতো তখন ফুপি বুকে আগলে নিতো। আর বাবা সে আমাকে কতো ফ্লরে হামাগুড়ি দিয়ে ঘোড়া সেজে তার উপর বসিয়ে খেলা করত। যে মা আমার একটু জ্বর হলে সারারাত নাময পড়ে দোআ করতো। সে মা আজ নেই আমারি জন্যে। বল এসব স্মৃতি ভুলে কিভাবে অধরাকে আমি বুকে টেনে নিবো?
– এখন একটা স্মৃতি আমাকে কষ্ট দেয় তা হলো অধরাকে যেদিন মা তাদের বাসা থেকে আনতে যায়। সেদিন আমার খুব জ্বর ছিল। সারাদিন কিছু খায়নি। জ্বরের ঘুরে অধরার নামটাই জপে ছিলাম। মা আমার কষ্ট সহ্য করতে পারে নি। আমার কস্ট দেখে মা অধরাকে নিয়ে আসতে তাদের বাড়িতে যায়। মায়ের পিছন পিছন তীব্র জ্বর নিয়ে আমিও যায়। কারণ অধরাকে এক নজর দেখার তৃষ্ণায় যে আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছিল। মা-বাবাকে সেদিন অধরার বাবা অনেক অপমান করেছিল। মা তার কথায় কষ্ট পায়নি ওতো। কিন্তু যখন অধরা বলেছিল আমার মায়ের চরিত্র ঠিক নেই। আমাদের বাসার কাজের লোকের সাথে বাজে সম্পর্ক করেছিল। মা সইতে পারিনি সে বাড়িতেই কান্না করে দেয়। বাবা অধরাকে থাপ্পর দিয়েছিল। অধরা বাবাকেও ছাড়েনি। বাজে কথা শুনিয়ে দিয়েছিল। আমি আর সেখানে থাকতে পারিনি। মায়ের কান্নামাখা মুখটা আমার হৃদপিন্ডে আঘাত করে। আমি দ্রুত সেখান থেকে বাসার পথে রওয়ানা দেয়। কিন্তু বাসায় আসার আগেই শুনতে পায় বিশ্বরোডে মা-আর বাবা একসিডেন্ট হয়ে পড়ে আছে। আমি এতই হতভাগা সন্তান মা -আর বাবার মুখের কথাটাও মরার আগে শুনতে পায়নি। এলাকাবাসী লাশ দাফন করতে দেয়নি। অধরার বাবা সবাইকে বলেছিল পতিতা আর পতিতার স্বামীর লাশ গ্রামে দাফন হলে অমঙ্গল হবে।
– পারিনি ছোট্ট বয়সে বাবার বাপ-দাদার কবরাস্থানে বাবা -মাকে দাফন করতে। তাই আমি চাই অধরা আমার থেকে দূরে থাকুক। জানো আনিশা অধরাকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। তারে যতটা না আঘাত করি তার চেয়ে বেশি কষ্ট আমি পায়। আমি জানি অধরাও আমাকে ভালোবাসে। তাই আমি ওকে দূরে দূরে রাখি। আজ পর্যন্ত কাউকে মনে জায়গা দেয়নি। আর বেঁচে থাকতে অধরার জায়গয় কাউকে বসাতেও পারবো না। বড্ডবেশি ভালোবাসি কলিজাতারে। জানো আনিশা অধরা মা হতে যাচ্ছে যেদিন এ কথাটা শুনি। সেদিনই এতিম খানায় বাচ্চাদের জন্য একলাখ টাকা দিয়ে আসি। অনেক খুশি হয়েছিলাম। আমার পিচ্চি অধরা মা হতে যাচ্ছে। আমার চেয়ে বেশি কে খুশি হবে। আমি খুশিতে কেঁদে ফেলেছিলাম। কিন্তু খুসিটা অদরার সামনে প্রকাশ করতে পারিনি।
আনিশা মানুষ শুধু বাহিরেরটাই দেখে ভেতরের টা কখনো দেখে না। রিফাত অধরার সাথে দুষ্টমি করছিল। ওরে রাতেই মেরে পরের দিন অধরাকে নিয়ে দেখতে গিয়েছি হসপিটালে । অধরাকে হোটেলে বিদেশী ক্লাইন্টদের কাছে পাঠিয়ে নিজের এসআই বন্ধুকে পাঠিয়েছি যেন সেভ থাকে। ও যেখানেই গিয়েছে আমি ছায়ার মতো তাকে ফলো করেছি। যেন কোন ক্ষতি না হয়। ওর কিছু হলে যে কষ্টটা আমার কলিজায় লাগবে। মা-বাবা, ফুপিকে হারিয়ে যে আমি বড্ড অসহায়। এতটা ভালোবাসার পরও আমি চাই আমার কলিজাটা আমার থেকে দূরে থাকুক।
আর ত্রিযামিনী আর খালা আমাদের ভবিষৎত বাচ্চাটাকে নষ্ট করার জন্য উঠে -পুড়ে লেগেছে সেদিন ত্রিযামিনী নিজের মালা লুকিয়ে রেখে অধরাকে চোর ধরেছিল। পরে আমি দেখতে পেয়ে মালাটা ত্রিযামিনীর রুমে রেখে আসি।
– কি করবো বলো আমি যে আর পারছি না। নিজেকে এতোটা খারাপ ভাবে প্রকাশ করার পরও অধরা যাচ্ছে না আমার থেকে দূরে।আমি ওর সামনে গেলে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। রাতে ওরে বুকে নিয়ে ঠিকই ঘুমায়। ও ভাবে ঘুমের ঘরে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকি। কিন্তু না আমি জেগেই ঘুমানোর ভান করে কলিজাটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকি। কখনো কখনো মা-বাবাকে বলা অধরার কথাগুলো মনে পড়ে যায়। তখন আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না। তখন খুব করে চাই আমার কলিজাটা আমার থেকে দূরে থাকুক।
আমি না হয় তার স্মৃতি নিয়েই বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিবো। কিন্তু অধরাকে ভালোবাসলেও নিজের কাছে রাখতে পারবো না। অধরাকে দেখলে আমার মায়ের কথা মনে পড়ে। মাকে বলা অধরার কথাগুলো মনে পড়ে।
-আনিশা কাঁদছিস কেন?
– কই কাঁদছি না তো। কাল তো তুই সারারাত কাঁদছিস। এতোটা নিরবে একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে ভালোবাসতে পারে তোদের না দেখলে জানতাম না। কাল সারাটা রাত ঘুমাসনি। ও পাশে অধরা আপুও ঘুমায়নি। আমি মেয়ে একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের অনুভূতি বুঝতে পারি। সে কম কষ্ট নিয়ে মাঝরাতে দরজা নক করেনি। যাইহোক তোর কথামতোই আপুকে অনেক হার্ড করেছি। কখনো দেখা হলে ক্ষমা চেয়ে নিবো। কি হলো তুই আর কত কাঁদবি?
সব ঠিক হয়ে যাবে ভাবিস না।
– আনিশা খুব টেনশন হচ্ছে
অধরা কী ঠিক-ঠাক মত গাড়িয়ে চড়তে পারলো
– রাজ বাস কাউন্টারে অধরার ছবি মেইল করে খুঁজ নিয়ে জানতে পারলো অধরা টিকেট কেটছিল। কিন্তু সে বাসে উঠেনি।
– কথাটা শুনে বুকের ভেতরটা চিনচিন করে ওঠলো অধরার কোন খবর পাচ্ছে না। রাজের খুব টেনশন হচ্ছে। অন্যান্যদিনের মত আজকেও অধরার পিছন পিছন যাওয়ার দরকার ছিল।
– এদিকে অধরার জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করলো। হাত-পা বাঁধা তার। পাশ থেকে একজনের কথা শুনে চমকে উঠলো অধরা। লোকটা বলছে বস আগে মেয়েটাকে রেপ করবে। তারপর মেরে ফেলবে। আর মারার আগে আমরাও একটু মজা করবো। তারপর মেরে দিব। অধরার খুব ভয় করছে। হঠাৎ অন্ধকার রুমটা আলোকিত হয়ে উঠল!
– অধরা তিয়াস””””’
চলবে”””:::’: