Psycho is Back

Psycho is Back ! Season- 2 ! Part- 04

—ঠাসসসসসসস!!
কোন এক খামবার সাথে বেজে নিচে পরে গেলাম।।সাথে সাথে চেচিয়ে বলে উঠলাম,,
——কোন গাচ্ছা ইন্দুররে……!!!
বলে সামনে তাকাতেই ভয়ে চুপসে গেলাম।।কারণ সামনে আর কেউ না সাইকো দাড়িয়ে।।তাউ আবার রাগে কটমট করে তার বিলাই চোখের সাদা খানি লাল লাল করে মারবেলের মতো গোল গোল করে তাকিয়ে আছে।।এই বুঝি টুপ করে পানি ছাড়া গিলে ফেলবেন।।
আমি ভয়ে ভয়ে ঢোক গিললাম আর বললাম,,
—-সরি ভাইয়া আমি আপনাকে দেখিনি।।
উনি আমার কথার উপেক্ষা করে দাঁতে দাঁত চাপে বলতে লাগে,,
—–ছেলেটি কে ছিল???
আমি আমতা আমতা করে বললাম,,
—-ভাইয়া উনি আমাদের স্কুলে পরেন সিনিয়র।।
তিনি আমার দিকে আরো দু কদম গিয়ে বলে উঠেন,,
—- কি কথা বলছিলি??
—–উনি আমার বার্থডে উইশ করছিল…!!
—–বাহ্!! পাড়ার সবাই জানে কুহু রানির বার্থ ডের কথা হুম!!!
আমি কিছু বললাম না পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নেই তখনি তিনি আমার বাহুতে চেপে ধরে তার বরাবর দাড় করায়।। তার এমন ভাবে আমার বাহুতে চেপে ধরায় বেথ্যা কুকিয়ে উঠলাম।।সাথে সাথে চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি পড়ে গেল।।তিনি এসব কিছুর গুরুত্ব না দিয়ে আমার দিক ঝুকে শাসিয়ে বলতে লাগে,,
—–আর যেন কোন ছেলের সাথে কথা বলতে তো দূর কাছে ঘেসতে না দেখি….!! তাহলে জানে মেরে ফেলবো তোকে…!! আর তারপর নিজে মরে যাবো।।
আমি উনার কথা শুনে থম মেরে রইলাম।।
সাথে সাথে উনা চোখের দিকে তাকালাম।।আজ তার সুন্দর চোখ জোড়ায় হিংস্রতা দেখতে পাচ্ছি।। তারপর তিনি আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে আঙ্গুল উঁচু করে নাড়াতে নাড়াতে বললেন,,
—–মাইন্ড ইট…!!তারপর চলে গেলেন।।
আমি এখনো তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম।।কিছুক্ষণ আগে যে হাতে টানটান ব্যথা অনুভব হচ্ছিলো।। তা যেন এখন টেরি পাচ্ছি না।।হয়ত তার এমন ব্যবহার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার।।
আমিও দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, নিচে চলে আসলাম।।
নিচে এসে আরেক দফা শক্ড দেখাম।।
মুনতানিছা আপি বলে এক চিৎকার করে জড়িয়ে ধরলাম তাকে।।তিনি হচ্ছেন বড় মামা মানে মিরাজ মামার মেয়ে তারা দুই ভাই বোন।। তার ফ্যামিলিরা ওয়ার্ল্ড ট্যুর গেছিলেন।।আজ ১ মাস পর তার দেখা পেলাম।।উনি গুনে গুনে আমার ২ বছরের বড়।। কিন্তু আমাদের বন্ডিং অনেক ভালো।।মুনতানিশা আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন,,
—–কেমন আছিস পিচ্চি??
—–ভাল আছি তুমি?? আল্লাহ আপি তুমি চুল কালার করসো??
—–ভাল আছি।।হুম করছি সুন্দর লাগতেছেনা??
—–হুম খুব সুন্দর লাগতেসে তোমারে বার্বি ডল মনে হইতেছে।।
মুনতানিশা আপি আমার গাল টেনে বলল,,
—–তাই!! তুই করবি???
আমিও খুশিতে গদ গদ হয়ে বলে উঠলাম,,
——হুম করবো।।
তখনি পিছন থেকে কেউ আমার চোখে হাত দিয়ে ঢেকে ফেলে।।আমি আরো জোরে চেচিয়ে বলি,,
—–বড় ভাইয়া….!!
রাহুল বলল,,
——বাহ ভুলিসনি তাহলে হুম!!
আমি তাকে জড়িয়ে ধরে বলি,,
—–তোমাকে কেমনে ভুলবো ভাইয়া।।তা আমার জন্য কি এনেছো??
রাহুল কুহুর দিক একটি লাগেজ এগিয়ে দিয়ে বলতে লাগে,,
—–এটা তোর।।
—–ধন্যবাদ ভাইয়া এতগুলো।।বড় ভাইয়া মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।।
আমি বড় মামা, বড় মামীর সাথে কথা বলে নিলাম।।আমার ছোট পরিবারে একজন ছাড়া সবাই অনেক ভালবাসে।।আর সে হচ্ছে এক মাত্র ইউসুফ ভাইয়া।।হুহ।।
পরেদিন সকালে,,
খাবার টেবিল সবাই উপস্থিত তখনি কথার ছলে বলে ফেলি বড় মামী, ছোট মামী,,আর নানুমাকে উদ্দেশ্য করে।।
——আমি চুল কালার করবো মুনতানিশা আপুর মতো।।
বড় মামী বলল,,
——কবে করতে চাস আম্মু??
আমি মুখের মাঝে হাসি নিয়ে বলতে লাগি,,
—–আজকেই…!!
ছোট মামী অর্থাৎ ইউসুফের মা বলল,,
—–ঠিক আছে তাহলে আজি করে নিস।।
তখনি পিছন থেকে ইউসুফ খেকিয়ে বলে উঠে,,
—- খবরদার যদি চুলে কালার করিস তাহলে চুল আর একটাও থাকবে না তোর মাথায়।।
আমি আহত চোখে তাদের দিক তাকাতেই বড় ভাইয়া বলল,,
—–ইউসুফ এসব কি কথা?? ছোট মানুষ চাইছে বাঁধা কেন দিচ্ছিস।।
ইউসুফ গম্ভীর ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
——আমি যা বলেছি এটাই ওর মানতে হবে আদারওয়াইজ এদিকে সেদিক হলে আই উইল ডো ওয়াট আই হ্যাভ সেইড।।বলে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে চলে গেল।।
আর আমি কেঁধে দিলাম।।সেদিন দিনটি ামার কাঁদতে কাঁদতে গেল।।এই সাইকো আসার পর থেকে আমার সব কেড়ে নিচ্ছে।।আমার ইচ্ছের দাম দিচ্ছেই না।।
সেদিন রাতে ভাত না খেয়ে অনশনে বসলাম।। কেউ দেখে সেদিন আমাকে ভাত খাওয়াতে ব্যর্থ হয়েছেন।। তখনি রুমে ঢুকে ইউসুফ।। তাকে দেখি আমার কাপাকাপি শুরু।। কারণ তিনি আমাকে একটু ভিলেন মার্কা লোক দিলেন।। তারপর বলতে লাগেন,,
—–কিরে খাবি না কেন??
—–আমার ইচ্ছে।।
—–তোর ইচ্ছে তো জানতে চাইনি।।নে খেয়ে নে বলে ভাত মাখিয়ে মুখের সামনে তুলে ধরলেন।। আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালাম।।নাহ আর যাই হোক এই বজ্জাত হাত থেকে খাব না।। তিনি এবার রাগ নিয়ে বললেন,,
—–ভালোই ভালোই বলছি খেয়ে নে না হিতে বিপরীত হবে।।
তাও আমি পাত্তা দিলাম না।। তিনি এবার আমার গাল চেপে খাবারটা মুখে পুরে দিলেন।।যেই কাবার টা মুখ থেকে ফেলে দিতে নিলাম ওমনি উনি এক বাজখাই ধমক মারলেন।। সাথে সাথে আমি ভয়ে আতকে উঠলাম।। তারপর বললেন,,
—–একটা ভাতও যদি মুখ থেকে বের হয়।। তাহলে তোকে পাবলিক টয়লেটে নিয়ে আটকে রাখব।।
টয়লেটের কথা শুনে আমার বমি আসতে লাগলো।। তারপরও নিজেকে সংযোগ রেখে খাবারটা খেয়ে নিলাম।। খাবার শেষে তিনি আমার মুখ মুছে বলতে লাগলেন।।
—-বাবুই পাখি দেখ আমি তোকে কিছু বলছি,, তোর চুল গুলো আমার খুব ভাল লাগে।। তাই এটাতে কিছু করার ট্রাই করিস না।।জানিস তো আমি একরোখা মানুষ।। সত্যই তোর চুল আর থাকবে না।।
তারপর উনি আমার সামনে পরে থাকা কাঁটা চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বলতে লাগে,,
—–তোর এই কালো কুচকুচে চুল গুলোর উপর আমি খুব দুর্বল রে।। তুই জানিস তোর এই চুলের জন্য তোকে কতটা, কিউট, মায়বী, এন্ড….!!
তিনি আমার কাছে কিছুটা ঝুকে কানের কাছে এসে স্লো ভয়েসে বলল,,হট লাগে??
আমি সাথে সাথে বিষম খেয়ে উঠলাম।। আর তার দিক বড় বড় চোখ করে থাকালাম।।তার একথায় আমার হার্ট বিট করতে লাগল জোরে জোরে।। এ বুঝি লাফবয়ে বেরিয়ে গেল।। তিনি আমার এই অবস্থা দেখে মুচকি হেসে রুম থেকে চলে গেলেন।। আমি তখন তেমনি বসে রইলাম দম আটকে আসচ্ছিল মনে হচ্ছিল।।
পরেদিন সকালে,,
মুনতানিশা আপু আর আমি জয়নাল আবেদিন পার্কে গেলাম ফুচকা খেতে সানন্দার।। ময়মনসিংহের বেস্ট ফুচকা হচ্ছে সানন্দার ফুচকা।। আপু দেশে ছিল যখন তখন প্রতিদিন আসতাম আমরা ফুচকা খেতে।। আপু ঘুরতে যাওয়ার সময় আর আসা হয়নি কখনো।। আজ এক মাস পর ফুচকা খেতে এসেছি।। সাথে সাথে পাঁচ প্লেট ফুচকার অর্ডার দিয়ে দিলাম দুজনে।। এখানে টকদই এত ইয়াম্মী।।ঈদের দিন আসলে সিরিয়াল দিয়ে বসতে হয় এত ফেমাস।।মামা ামাদের এত দিন পর দেখে জিগাসা করলেন,,
—–এত দিন কই ছিলেন মামারা??
—–মামা আপি ছিল না বসায়।।আর আপি কে ছাড়া আমাকে একা ছাড়বে না তাই আসতে পারিনি।।
মুনতানিশা আপি বলতে লাগে,,
এইজন্যই তো গত এক বছরে ফুচকা আজকে সবার করে দিবো আমরা দুজনে।। বলে হাসতে লাগলাম আমরা।।
পুচকা শেষে পার্কের ভিতর দোলনায় গিয়ে বসলাম দুজনে।। তারপর নানান কথাবার্তা বললাম।। আপু কোথায় কোথায় ঘুরেছে সব বলল।। সেখান থেকেই চুল কালার করে এসেছেন সেটাও বললো।। চুল কালার করার কথা শুনে হাসি মুখটা চুপসে গেল।।আপি বিঝতে পেরে বলল,,
—–কুহু তুই সত্যি কালার করবি??
আমি উপর-নিচ মাথা নাড়ালাম।।
আপু বলল,,
—–তাহলে চল দুর্গাবাড়ি!!
—–দুর্গাবাড়ি কেন?
—–দুর্গাবাড়ি ওমেন্স ওয়ার্ল্ড পার্লার থেকে করাবো তোর চুল কালার।।
আমি মন খারাপ করে বললাম,,,
—-ইউসুফ ভাইয়া জানতে পারলে আমার মাথা চুল একটাও থাকবে না আপু…!! জানেও মেরে ফেলতে পারে।।
—–ধুর পাগলি!! শুন একবার কালার করে ফেললে ছোট ভাইয়া কেন তার বাপ ও কিছু করতে পারবে না।।বলেই হেসে দিল।।
——কিন্তু??
——কোনো কিন্তু না চল। বলে টানতে টানতে গাড়িতে উঠালো।।তারপর ড্রাইভার চাচাকে বললো দুর্গাবাড়ি ওমেন্স ওয়ার্ল্ডের সামনে নিয়ে যেতে।।
কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে পার্লারের সামনে থামে।।আমার আটটা ধড়াস ধড়াস করে শব্দ করছে পার্লারে গিয়ে।। আপু বুঝতে পেরে সাহস দিতে লাগলো।। যখন ভয় কম ছিলনা তখন ছোট মামি কে ফোন দিল।। ছোট মামী আমাকে অভয় দিয়ে বললেন তিনি সব সামলে নিবেন।। এবার মনে মনে সাহস নিয়ে করিয়ে ফেললাম।।
তিন ঘন্টা পর,,
নিজের চুল দেখে আমি নিজে ক্রাশ খাইলাম।।
আপু বলল,
—–কুহু তোকে ইরানি মেয়েদের মত লাগছে।।
পার্লারের আপু আমার খুব সুনাম করছিল।।
আমি খুশীতে লাফাতে লাগলাম।।
তারপর বিল পে করে আমরা বাসায় চলে আসলাম।।
বাসায় আসতেই সবাই আমাকে দেখে শক্ড। মামী বলল,,
——আল্লাহ আমার মেয়েকে যে পুতুল লাগছে আজ।।বলে কঁপালে চুমু এঁকে দিল।।
আমি খিলখিল করে হেসে দিলাম।।
তখনি পিছন থেকে রেগে ফুসফুস করতে বলে উঠে,,
—–মানা করেছিলাম না।।
আমি তাকে দেখি জ্ঞান হারিয়ে ফেলার অতিক্রম।। তখনি তিনি এসে আমাকে রুমে নিয়ে আটকে দিলেন।।
তার কিছুক্ষন পর,,,
—-ইউসুফ ভাইয়া প্লিজ আমার এতো বড় সর্বনাশ করবেন না।।
—–আগে মনে ছিল না?? না করেছিলাম না??
—–সরি ভাইয়া,, আর হবে না!! (কাঁদতে কাঁদতে বললাম পায়ে ধরে সাইকোর)
—-তাতো হচ্ছে নারে বাবুইপাখি?? দোষ যখন করেছিস শাস্তিতো পেতেই হবে তো!! এই কে আছিস এরে বানতো চেয়ারের সাথে।।
আমি আরো জোড়ে কাঁদতে কাঁদতে চেঁচিয়ে বললাম,,
—-মামী ও মামী আমাকে বাঁচাও!! তোমার বিদেশ পলাতোক সাইকো আমার চুলের বলি দিয়ে দিচ্ছে গো।।মামী ও মামী।।।
ইউসুফের সাঙ্গু পাঙ্গুরা আমার হাত বেঁধে দিলো চেয়ারের সাথে।।
বাহির থেকে মামা মামি দরজা ধাক্কাতে লাগলেন জোড়ে জোড়ে।।সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে সাইকো এগিয়ে আসলো আমার দিকে।।আর আমার গাল চেঁপে ধরলো জোড়ে।।আর দাঁতে দাঁত পিশে বলতে লাগে,,
—-চুলে কালার করার সময় মনে ছিল না তোর?? বলেছিলাম না কালার না করতে?? শুনিশ নিতো এবার ভোগ কর।।বলেই তিনি কাকে যেন ইশারা করলেন,, সাথে সাথে ইয়া মোটা একটা লোক এসে হাজির,, হাতে তার কেঁচি,,।।
লোকটি এসেই গজ গজ করে আমার হাটু ওবদু সদ্য ব্রাউন কালার চুল গুল কেঁটে দিলো।।আমি ভ্যা করে কেঁদেই যাচ্ছি।।কিন্তু কোনো কাজ হলো না।।চুল ছোট ছোট কাটার পর ব্লেট দিয়ে ঘেজা ঘেজ আদিল করে দিল।।তারপর আয়না সামনে এনে ধরে বলল সাইকো,,
—–দেখ দেখ বাবুইপাখি তোকে আদিল মাথায় আরো হট লাগচ্ছে।।বলে হাসতে লাগলেন।।
আর আমি রাগে দুঃখে এক চিৎকার দিলাম শরীর সর্ব শক্তি দিয়ে।।সাথে সেখানের সবাই গায়েব।। ইউসুফ বাঁদে।।তিনি আমাকে এক রাম ধমক দিয়ে বলতে লাগে,,
—-নেক্সটাইম আমার কথার খেলাপ হবি,, তো এর থেকে করুন হাল করবো বলে রুমের দরজা খুলে বের হয়ে গেলেন তিনি।।।
আমি এখন আর পারলাম না মাটিতে পড়ে থাকা ইয়া লম্বা লম্বা বড় চুল গুলো আমার দেখে বুঁক ফেটে কান্না আসতে লাগলো।।মনে মনে যত বাজে গালি ছিল সব দিয়ে দিলাম।।
চলবে,,