The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 107

→রুহীর চিৎকার আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে।আর ততোবারই রোয়েনের বুক কেঁপে কেঁপে উঠছে।শেষমেষ না পেরে রুহীর মাথা ওর বুকে চেঁপে ধরে রোয়েন।হুঁহুঁ করে কাঁদছে মেয়েটা।রোয়েনের পরনের পাঞ্জাবি টা ভিজে যাচ্ছে।এ্যাম্বুলেন্স থামলো হাসপাতালের সামনে।এ্যাম্বুলেন্সে রোয়েন আর রুহী।অপর গাড়িতে আনিলা আসছে। বাকি দের খবর দেয়া হয়ে গেছে।ফাহমিন আজ রোয়েনের কলোনির হাসপাতালের ইনচার্জে আছে।প্রায়শই এখানে বসে ফাহমিন।রোয়েনের সেকেন্ড বেস্টফ্রেন্ড হিসেবে এখানে অনেক দায়িত্ব ও আছে ফাহমিনের।গাড়ি থামতেই ফাহমিন ওয়ার্ড বয় দের ইশারা করে স্ট্রেচার নামাতে।গাড়ির ভিতর রুহীকে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় রোয়েনকে দেখতে পায় ফাহমিন।রোয়েনের মন খারাপ বেশ ভালো করেই বুঝতে পারে ফাহমিন।গাড়ির ভিতর ঢুকে রোয়েনের কাঁধে হাত রাখে ফাহমিন।রুহী তখন ও চিৎকার করে কাঁদছে।ফাহমিন বলল,
”ভাবিকে নিতে দে।টেনশন করিসনা সব ঠিক হয়ে যাবে।”
ফাহমিন বেশ অবাক হলো।ওর বন্ধু এতোটা নরম না।রোয়েনকে অনেক শক্ত মনের মানুষ হিসেবে জানে ফাহমিন কিন্তু ও অবাক যখন রোয়েন ভাঙ্গা গলায় বলল,
”ও এভাবে কাঁদছে।খুব কষ্ট হচ্ছে ওর।আমি ওর পাশে থাকতে পারবো?”
ফাহমিন রোয়েনের মুখের দিকে তাকায়।এভাবে থাকার রুলস নেই।এটা বাহিরে হয় বাংলাদেশে নয়।তারকর ও বন্ধু বলছে ফাহমিন বলল,
”তুই নাম আমি দেখছি কি করা যায়।”
”প্লিজ দেখ। আমার ভাল লাগছেনা।”
ফাহমিন রোয়েনের কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে বলল,
”আজ ডেলিভারির রুমে ফারিয়া আপা থাকবে। তুই আসিস তাহলে। ওরে বলে দিবো আমি।।”
”ওকে।”
রুহীকে নামিয়ে আনা হলো।আনিলা এসে রোয়েনের পাশে দাঁড়ান।রুহীর চিৎকারে বাকি ভিজিটররা কেমন করে তাকাচ্ছে।কিন্তু রোয়েনকে দেখে তারা সরে গেলো।রামীনকে এভাবে উঠতে দেখে ভয় পেয়ে গেলো আশফিনা। পাশের ল্যাম্প জ্বেলে বলল,
”কি হলো?”
”রুহীকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে চলো আমার সাথে।”
আশফিনা ধড়ফড় করে উঠে গেলো।তারপর এক দৌড়ে বাথরুমে।ওরা রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো।রেজোয়ান মাহবুব ও চলে এসেছেন।আনিলা রুহীর সাথে কাঁদতে শুরু করেছে।মেয়ে কাঁদছে তো মা ও কাঁদছে।রোয়েনকে নিয়ে ডেলিভারির রুমে ঢুকা হলো।রুহীর খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু বাবু আসছেনা।শেষমেষ ফারিয়া বলল,
”রোয়েন সিজার করতে হবে।পানি শুকিয়ে গেছে।বাবু খুব বড় হয়ে গেছে।”
”ওর তো কষ্ট হচ্ছে বেশি।তাহলে সিজার করিয়ে দেন।”
”হুম।তাহলে তুমি থেকোনা এখানে।বাহিরে সবার সাথে বসো।আর আমি ফাহমিনকে কল দেই।রুহীকে ওটিতে নিতে হবে।সিদ্ধান্ত মোতাবেক রুহীকে ওটিতে নেয়া হয়।ফাহমিন ঢুকে যায় ভিতরে।রুহীর ব্যাথা কমানোর ইনজেকশন পুশ করে বেরিয়ে এলো রামীন।ব্যাথা না কমা পর্যন্ত অপারেশন করা যাবেনা।ইনজেকশন দেয়ার কিছু সময়ের মাঝেই ব্যাথা কমে আসে।অপারেশন শুরু হয়।এরই মাঝে রামীন আশফিনা আর মামা মামী এসেছেন সামায়রা কে নিয়ে।
সামায়রা যখন শুনলো ফাহমিন ও আছে।ভীষন খুশি হলে ও সেটা দেখায়নি ও।মিটমিটিয়ে হাসছিলো।রোয়েনের সাথে রামীন আর আরমান হামিদ দাঁড়িয়ে আছেন।এটা ওটা বলছেন ওকে।রোয়েন সব কিছু বর্ননা করছিলো।একটু পর শামীমকে আসতে ও দেখা গেলো।আনিলা রেজোয়ানের সাথে দাঁড়িয়ে আছেন।আশফিনা নীরা হামিদের সাথে।কিছুক্ষন পর ফাহমিন বেরিয়ে এলো তবে খালি হাতে।রোয়েন হেঁটে ফাহমিনের কাছে আসতেই নার্সকে দেখতে পায় সবাই সাদা চাদরে ছোট্ট একটা জানকে।রোয়েন সেদিকে পলক হীন ভাবে চেয়ে আছে।ফাহমিন বলল,
”বলতো ছেলে না মেয়ে?”
”মেয়ে!!”
”হুম।প্রিন্সেস হয়েছে তোর।”
”রুহী কেমন আছে?”
”ভালো।মেয়েকে কোলে নে।”
রোয়েন বাবুকে কোলে নেয়।কেমন তাকিয়ে আছে বাবু।সামায়রা এসে রোয়েনের পাশে দাঁড়ায়।ফাহমিন এবার দেখতে পায় ওকে।ঠোঁটে হাসি ফুঁটে উঠে ওর।সামায়রা ফাহমিনকে একবার দেখে মুচকি হেসে বাবুকে দেখতে থাকে।ফাহমিন ভিতরে ঢুকে গেলো।সামায়রা বাবুর গালে আলতো করে ছুঁয়ে নীরা হামিদের দিকে চেয়ে বলল,
”আমি খালামনি হয়েছি মা।
নীরা হামিদ এগিয়ে এলেন।সাথে আনিলা ও।বাবুকে সবাই রোয়েনের কোল থেকে দেখছে।নীরা হামিদ একটু কোলে নেয়।নার্স দাঁড়িয়ে আছে বাবুর জন্য।রেজোয়ান মাহবুব ভীষন খুশি নাতনীকে দেখে।কিছুক্ষন পর নার্স নিয়ে গেলো বাবুকে।রেজোয়ান মাহবুব জানতে চান কে থাকবে।আনিলা জানায় ওনি থাকবে।কিন্তু রোয়েন না করে দেয়।ও বলল,
”আপনি ঘরে চলে যান।ঘরে রামীলা ছাড়া কেউ নেই।কাল সকালে আসবেন।”
”কিন্তু আমার মন পড়ে থাকবে এখানে।আপনার রেস্ট নিতে হবে।”
”সমস্যা নেই।আপনি যান বাসায়।”
এদিকে সামায়রা জেদ করছে ও বাবুর সাথে কিছুক্ষন থাকবে।নীরা হামিদ বললেন বাবুর সাথে আর দেখা করা যাবেনা।কাল বিকেলে ওরা আসবে আবার।সামায়রা রাজি হয়ে গেলো।ও ফাহমিনের দেখার আশায়।তবে দেখা পায়নি আর।রোয়েন থেকে যায়।সবাই চলে গেছে।কিছু ঔষধ কিনে রাখে রোয়েন ফাহমিনের কথা মতো।সেদিন ঘরে ফেরেনি ফাহমিন ও। রোয়েনের সাথে থেকে যায় ও। দুই বন্ধ মিলে গল্প করে রাত কাঁটায়।
পরদিন সকালে রুহীকে কেবিনে শিফট করা হয়।রোয়েন রুহীর কাছে আসে তখন। কোলে ফুঁটফুটে মেয়েটা।রুহী একবার চোখ খুলে বাবু আর রোয়েনকে দেখে।রোয়েন বাবুকে ওর খাটে রেখে রুহীর পাশে দাঁড়িয়ে ওর মাথায় হাত রাখে।
রুহী আস্তে করে বলল,
”মাথা টা ফেঁটে যাচ্ছে।”
রোয়েন তৎখনাৎ মাথা চাঁপতে শুরু করে।রুহী বলল,
”আমাদের মেয়েকে কেমন লাগলো তোমার?”
”বলে বুঝাতে পারবোনা রুহী যে কতোটা ভাল লেগেছে।”
”রোয়েন!! ”
”বলো!!!”
”ধন্যবাদ। তোমার জন্যই মেয়েকে পেলাম। ”
”তোমাকে ও ধন্যবাদ আমাকে পরিপূর্ন করার জন্য।”
রুহী চোখ বুজে একটু হাসলো।তখনই রোয়েন ওর কপালে চুমু খায়।রুহী চোখ খুলে বলল,
”ওকে কোলে নিয়ে আমার সামনে ধরো।একটু দেখি।”
”আচ্ছা।”
রোয়েন মেয়ের কাছে আসে।তাকিয়ে আছে মেয়েটা।রোয়েন দুহাত বাড়িয়ে বলল,
”আসো মাম্মার কাছে যাই আমরা।”
মেয়েকে কোলে নিয়ে রুহীর সামনে আসলো রোয়েন।রুহী হেসে দেয়।তারপর বলল,
”যেভাবে তাকিয়ে আছিস এখনই।সামনে তো বাকি বয়স পড়ে আছে তোর।”
”দেখবে না ওর মাম্মাকে?তাইনা আম্মু?”
মেয়ের গালে চুমু খেয়ে বলল রোয়েন।রুহী হেসে বলল,
”হুম এমন হ্যান্ডসাম বাবা থাকতে মাম্মাকে দেখবেনা। সে তো বাবার প্রিন্সেস।”
”অবশ্যই।তুমি কি জেলাস?”
”না একদম না। বাট আমি যে রানী সেটা আমি ভালো করেই জানি।”
রোয়েন মেয়েকে অনেক গুলো চুমু খেয়ে শুইয়ে দিলো। তারপর এসে রুহীর মাথার কাছে দাঁড়ায় আলতো হাতে চুল টেনে দিতে থাকে।
এদিকে সেখান থেকে গিয়ে আশফিনার মন ভীষন খারাপ হয়ে যায়।আর ঘুমোতে পারেনি ও। রামীন আবার ও কিছু ডাক্তারের এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিলো।
কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সামায়রা।
একটু পরই সে আসবে।ফাহমিনকে আসতে দেখা গেলো তার কিছুক্ষন পরই। রোদে সামায়রার গাল দুটো লাল হয়ে আছে। ফাহমিন ওকে নিয়ে ছাউনির নিচে এলো।তারপর বলল,
”কাল বাবুকে দেখেছিলে?”
”হুম।”
”পছন্দ হয়েছে?”
”খুব।”
”তোমার লাগবে না?”
”নাহ।”
”কেন?”
”বলতে পারিনা।”
লজ্জায় চুপসে গেলো সামায়রার সুন্দর মুখ। ফাহমিন হেসে বলল,
”কাল কেন যেন জানের পানি শুকিয়ে গিয়েছিলো।”
”আরো অনেক অপারেশন করেছেন।তাহলে কাল ভয় পেলেন কেন?”
”জানিনা।তবে রোয়েনের জন্য।ওর জানটা তো আমার হাতে ছিলো।কোন ভুল হয়ে গেলে নিজেকে মাফ করতে পারতামনা।”
”ভুল হতো কেন?”
”কাল ভাবির অবস্থা খারপ হচ্ছিলো।এমনিতেই বাবুর ব্রেদিং প্রবলেম শুরু হয়ে গিয়েছিলো।মনো হচ্ছিলো একজন বাঁচবে।রোয়েনকে কি জবাব দিতাম আমি?”
”কিন্তু আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছে।”
”হুম।”
সামায়রা হালকা হেসে ফাহমিনের হাত ধরলো। ফাহমিন ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো।ফাহমিন খেয়াল করলো সামায়রা ঘামছে।ফাহমিন বলল,
”চলে যাও নাহলে।গরম অনেক।”
”না একটু পরে।”
”তুমি ঘামছো।”
”আপনি ও গরমে দাঁড়িয়ে আছেন।আমি ও পারবো।”
সামায়রা দেখলো আইস্ক্রীমের গাড়ি যাচ্ছে।সেদিকে তাকিয়ে ও বলল,
”চলুন আইসক্রিম খাই।”
”চলো।”
দুজনে আইস্ক্রীম খেতে যায়।এদিকে ওদের পুরোটাই দেখে নেন আরমান হামিদ।তবে ওনি চুপ ছিলেন।মেয়ের এমন পরিবর্তনের কারন খুঁজে পাননা।বিকেলে আরমান হামিদ নীরা হামিদ, সামায়রা,রামীন আশফিনা, শামীম আর ওর বৌ আসে বাবু কে দেখতে।নানা নানী ও বাদ যায়নি। সবাই বাবুকে আদর করছে। সামায়রা আর আশফিনা দুজনে বাবুর সাথে ছবি তুলছে।আরমান হামিদ আর নীরা হামিদ যাওয়ার সময় সামায়রা জেদ করলো বাবুর সাথে থাকবে।ওনারা ও না করেননি।কেউ গেলে তার সাথে নাহলে চলে যাবে ও।রাতে ফাহমিন আর বাকি বন্ধুরা ও এলো।ফাহমিন হাসপাতালে এসে সামায়রা কে দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।রাজীব কুনুই গুতো দিচ্ছে ওকে বারবার।ফাহমিন চোখ রাঙ্গাতেই হাসলো রাজীব।সামায়রা বাবুকে নিয়ে খেলছে আবার রুহীকে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে।
ফাহমিন ওকে দেখেই যাচ্ছে।সামায়রা ও লজ্জা পেয়ে হাসে।রাত দশটা বেজে গেলো।সামায়রা যাবে কি করে?কারোর বাসাই ওর বাসার এলাকায় না।শেষমেষ রোয়েন ফাহমিন কে বলল,
”সামায়রা কে দিয়ে আয় কষ্ট করে।ওর কলেজ ও আছে।”
সামায়রা প্রথমত লজ্জা পেয়ে না করলে ও পরে রাজি হয় রুহীর কথায়।ফাহমিন আর সামায়রা বেরিয়ে পড়ে।সামায়রা গাড়িতে বসে ফাহমিনের পাশে।ফাহমিন গাড়ি চালাতে শুরু করে।সামায়রা জিজ্ঞেস করলো,
”রাজীব ভাই এমন করছিলো কেন?”
”কেমন করছিলো?”
”ঐযে আপনাকে কি যে বলছিলো।গুতো দিচ্ছিলো।”
”ঐটা মজা করছিলো।”
”আমাকে দেখে হাসছিলো।”
”ভাইয়ের মতো হাসতেই পারে।”
”তাহলে আপনি ও কি ভাইয়ের মতো?”
সামায়রার কথায় রাগ হলে ও নিজেকে দমিয়ে রাখে ফাহমিন।ওকে বকা দেয়ার মতো অধিকার এখনো তৈরি হয়নি।নার্স এসে বাবুকে খাইয়ে দিয়ে আবার চলে গেলো।রোয়েন রুমে আসে।বাবু ঘুমোচ্ছে।রুহী বলল,
”ওর নাম কি রাখবে ভেবেছো?”
মেয়ের কাছে এগিয়ে আসে রোয়েন। তারপর ওর কপালে হাত বুলিয়ে বলল,
”আমার দ্রিধা মামনি।”
”দ্রিধা!!!!বেশ আনকমন।”
”হুম।”
”রুজাইনা চৌধুরী দ্রিধা।কেমন হয়?”
”চমৎকার।আমার আম্মাটার নাম তাহলে ঠিক হয়ে গেলো।”
রুহীর কাছে রোয়েন এসে বসলো।তারপর ওর গালে কপালে চুমু খেয়ে বলল,
”আই লাভ ইউ।”
রুহী মৃদু হাসলো।তারপর হঠাৎ রুহী অনূভব করলো ওর ঠোঁট জোড়ায় আরো একজোড়া ঠোঁটের শীতল স্পর্শ।যা ক্রমশ দৃঢ় হতে থাকে।
চলবে