মিশে আছো আমার অস্তিত্বে !! Part-18
তৃষা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে,,তার নজর দূরের আকাশের দিকে হলেও মনের নজর তার আকাশের কাছে আছে।কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পড়তেই তৃষা নিজেরই খুব খারাপ লাগছে।কি দরকার ছিল আকাশকে এমন কড়া কথা বলার?উফ্ ওইসব কথা ভাবতেই তৃষার নিজের উপরই প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।আকাশ তো তার কাছে বারবার ক্ষমা চেয়েছিল,,সে কি পারতো না আকাশকে ক্ষমা করতে।এটা কি করলো সে??রাগের মাথায় আকাশকে কষ্ট দিয়ে দিল না তো।
কিছুক্ষণ আগে,,,
তৃষা ওয়াশরুম থেকে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছিল।ঠিক তখনই আকাশ তৃষাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো-;
-:হেই মিসেস আকাশ খান আপনি পারেন না আপনার এই একমাত্র স্বামিটিকে ক্ষমা করতে।
আকাশের কথায় তৃষা তার কঠিন চাহনি আয়নার মধ্যে ফেলে,,যার মাধ্যমে সে আকাশকে দেখতে পাচ্ছে।আকাশের চোখের উপর চোখ রেখে বলে উঠলো-;
-:আকাশ আপনাকে আমি একটা কথা আজ ক্লিয়ার ভাবে বলে রাখছি আপনি আমার কাছে আসার চেষ্টা কোনোদিনই করবেন না।
আকাশ তৃষা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,,মুখে হাসির একটা চওড়া রেখা টেনে বলে উঠলো-;
-:কেনো করবো না।একশো বার করবো,, হাজার বার করবো।যতই হোক বউ তুমি আমার।আমার অধিকার আছে তোমার উপর।
আকাশের এই শেষের কথাটা তৃষা কোনোভাবেই সহ্য হলো না।তাই তো আকাশকে নিজের কাছ থেকে ঝটকা মেরে সরিয়ে জোর গলায় বলে উঠলো-;
-:কিসের অধিকার?কার উপর আপনার অধিকার আছে মিস্টার আকাশ খান??সম্পর্কে আমি আপনার কেউ লাগি না।আর এমনিতেই আপনি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিতেন,,আপনি শুধু অপেক্ষা করছিলেন মায়ের মরে যাওয়ার,,আর…
-:তৃষষষষষষষা(চিৎকার করে)
তৃষা কে মাঝ পথে থামিয়ে আকাশ বলে উঠলো,,তারপর তৃষার দিকে তাকিয়ে করুন গলায় বলে উঠলো-;
-:প্লিজ এইভাবে বলো না। হ্যাঁ এটা ঠিক আমি তোমাকে ডিভোর্স দিতাম কিন্তু তাই বলে এটা ও তো নয় যে আমি আমার মায়ের মরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।তৃষা আমি আমার মা কে খুব ভালোবাসি এখনও।
তৃষা একটা তাচ্ছিল্য হাঁসি দিয়ে বলে উঠলো-;
-:তাই না কি??তাহলে এটাও নিশ্চয় জানতেন যে মা রিনাপু কে সহ্য করতে পারতেন না। শুধু মা নয় ইনফ্যাক্ট বাবা ও সবসময় আপনাকে রিকোয়েস্ট করতেন রিনা আপুর সাথে কোনো সম্পর্কে না জরানোর জন্য। কিন্তু আপনি কি শুনেছিলেন তাদের কথা??
-:তৃ..তৃষা আ..আসলে আমি তখন রিনাকে খুব বেশি ভালোবাসতাম,,তাই বাবা-মায়ের কথার তেমন গুরুত্ব দিই নি।
-:ওওও তা এখন আপনি রিনাপু কে ভালোবাসেন না??
-:না আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি।তৃষা আই লাভ ইউ সো মাচ।
-:তাই না কি??আপনি এতো তাড়াতাড়ি আমাকে ভালোবেসে ফেললেন?রিনা আপুকে এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন কি করে??
-:তৃষা আমি উপলব্ধি করতে পারছি,,আমি রিনাকে কোনোদিনই ভালোবাসি নি,,রিনা শুধু আমার জীবনের একটা মোহো ছিল আর কিছু নয়। কিন্তু আমি এতটুকু বলতে পারবো এ কয়দিনে তোমাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি।আই লাভ ইউ তৃষা আই লাভ ইউ।
-: কিছুদিন পর আপনার অন্য কোনো মেয়েকে ভালো লাগবে না আর আমার কাছে এসে এটা বলবেন না যে আমিও আপনার জীবনের একটা মোহের অংশ ছিলাম,,তার কি গ্যারান্টি দিতে পারবেন আপনি?
-:তৃষা এমনটা বলো না প্লিজ। তুমি আমার জীবনের মোহ নয়।
-:আসলে কি জানেন আপনার মতোন একজন মানুষ কাউকে ভালোবাসতেই পারে না।আপনি শুধু নিজের স্বার্থ বোঝেন। শুধুমাত্র আপনার জন্য আপনার বাবা মারা গিয়েছেন আর শুধুমাত্র আপনার জন্যেই আজ মাও আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে।এর পড়েও কি করে বলেন আপনি কাউ কে ভালোবাসেন??
আকাশ তৃষার একদম কাছে এসে তৃষাকে শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো-;
-:ওয়াট রাবিশ তৃষা!!তখন থেকে উল্টোপাল্টা কথা বলেই যাচ্ছো।আমি তখন আমার বাবা-মায়ের কথা শুনিনি তাই বলে এটা তো নয় যে তাদের মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী।বাবার ব্রেন স্টোক হয়েছিল আর মা তো ক্যান্সারের জন্য মারা গিয়েছে।তাহলে এতে আমার দোষ কি?
-:দোষ আছে আকাশ,,দোষ আছে। সবথেকে বেশি দোষ আপনার।আপনি এটাই জানতেন যে আপনার বাবার ব্রেন স্টোক হয়েছিল ঠিকই কিন্তু এটা কি জানতেন কেনো বাবার ব্রেন স্টোক হয়েছিল?? আপনার জন্য।বাবা জানতে পেরে গিয়েছিলেন রিনা আপু আর চাচার কথা তাই তিনি চাননি আপনি রিনা আপুর মতোন একজন মেয়ের সাথে নিজের বাকি জীবনটা কাটান।তাই আপনাকে অনেকবার দেশে ফিরিয়ে আনার ট্রাই করেছিলেন কিন্তু আপনি আসেন নি।এই চিন্তা বাবা কে কুরে কুরে খেত প্রতিনিয়ত,,আর একদিন এই চাপ সহ্য করতে না পেরেই ব্রেন স্টোকে তিনি মারা যান।আর মা তো আপনার চিন্তায় খাওয়া দাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল,,তাই তো এই ভয়ঙ্কর রোগ কখন যে তার শরীরে বাসা বেঁধেছিল তা জানতেই পারে নি।এসব মা নিজে আমাকে বলেছে।এবার বলুন আকাশ কে বেশি স্বার্থপর??
বাবা-মা কখনও সন্তানের খারাপ চাই না।বাবা যখন ওতবার বলেছিলেন তখন আপনার উচিৎ ছিল অন্তত একবার বিষয়টাকে খুঁটিয়ে দেখার।জীবনে কাউকে বিশ্বাস এতটা ও করবেন না যাতে সে আপনাকে ক্ষতি করার একটা সুযোগ পেয়ে যায়।
তৃষার কথা শুনে আকাশ স্তদ্ধ হয়ে গেল।তার আজ কোনো কথা বলার ভাষা নেই।নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট সন্তান মনে হচ্ছিল তার। আকাশ একবার ছলছল চোখে তৃষার দিকে তাকিয়ে,, কাঁদো গলায় বলে উঠলো ন-;
-:তৃষা সত্যি বাবা-মা আমার জন্যে মারা গিয়েছে।না না এ হতে পারে না।
এই বলে আকাশ রুম থেকে বের হয়ে গিয়েছিল আর আসেনি এখানে। কথাগুলো মনে পড়তেই তৃষার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।আকাশের নম্বরে অনেকবার কল করেছে সে কিন্তু প্রতিবারই ফোন সুইচ অফ বলছে।তৃষার এবার টেনশন হচ্ছে।
.
.
.
সারারাত আকাশের টেনশানে তৃষা একটুও চোখের পাতা এক করতে পারেনি।সকাল বেলা তৃষা জামা-কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল।ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখলো আকাশ চলে এসেছে।আকাশের চোখগুলো লাল বর্ণ ধারণ করেছে,,মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে,,দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারারাত অনেক কান্নাকাটি করেছে সে।তৃষা কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে,, আকাশ জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল।তৃষা তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে গেল আকাশের জন্য ব্রেকফাস্ট বানাতে,,আকাশ কালরাতে কিছুই খাইনি।
তৃষা চটপট করে রুটি আর ভাজি বানিয়ে ফেলল,,আকাশের জন্য কফি নিয়ে উপরে উঠতে যাবে এমন সময় দেখলো আকাশ অফিস ড্রেস পড়ে নীচে নামছে।আকাশকে ফরমাল গেটআপে দেখে তৃষা জিজ্ঞাসা করল-;
-:আপনি অফিসে যাবেন??
-:হুম।
-:ওও,,আচ্ছা ব্রেকফাস্ট বানিয়েছি খেয়ে নেবেন চলুন।
-: আমার খিদে নেই,,আমি খেয়ে এসেছি।
-: মিথ্যা বলবেন না।আমি জানি আপনি কিছু খাননি,,প্লিজ খাবেন চলুন।
-:আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
এই বলে আকাশ তৃষা কে আর কিছু বলতে না দিয়ে বেরিয়ে গেল।তৃষার এবার কান্না পাচ্ছে কেনো যে সে আকাশকে বলতে গেল কথাগুলো।যদি আকাশের কিছু হয়ে যায় তাহলে সে কখনোই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]