মিশে আছো আমার অস্তিত্বে

মিশে আছো আমার অস্তিত্বে !! Part-06

তৃষা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না যে তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে তাঁর নিজের চাচাতো বোন রিনা আর তার স্বামী আকাশ।তাহলে কী রিনা ই হল আকাশের সেই রিনা!!ভাবতেই তৃষার সমস্ত শরীর কাপতে শুরু করে দিয়েছে।এতো দিন সে আকাশের মার মুখ থেকে শোনা কথা অনুযায়ী রিনা সম্পর্কিত তথ্য জেনেছিল কিন্তু এখন…
এখন তো সে নিজেই জানে যে রিনার কেমন স্বভাব।না না তৃষা জেনে শুনে আকাশের এতবড়ো ক্ষতি কিছুতেই নিজের চোখে দেখতে পারবে না।নিজের চাচা আর চাচাতো বোন কেমন তা তৃষার থেকে ভালো কেউ জানে না।
তৃষা সামনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল আকাশ আর রিনা শপিং মল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।তৃষা আর কিছু না ভেবে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল,,তাকে এখন তার বাবার সাথে দেখা করাটা অত্যন্ত জরুরি।
.
.
আজ তৃষা একটু হলেও মনের দিক দিয়ে শান্তি পাচ্ছে কারণ তার বাবা আজ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে।হ্যাঁ প্রথমে তিনি অনেক রেগে গিয়েছিলেন তৃষার উপর,,কিন্তু পরে নিজের মেয়ের মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি তার অভিমান ভাঙতে বাধ্য হলেন শেষমেষ।ওখান থেকে বের হতে তৃষা বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল,,তাই বাসায় পৌঁছাতে কিছুটা লেট হল।বাসায় এসে দেখলো তার শাশুড়ি মা তার জন্য বসে আছেন।তৃষা কে দেখেই তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তার বাবা কেমন আছেন??তারপর আরও কিছু কথা জিজ্ঞাসা করলো।তৃষা‌ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে,,নিজের রুমে চলে এলো।আসার সময় বলে এলো যে সে রাতে কিছু খাবে না। শাশুড়ি মা অবশ্যই তাকে জোড় করেছিল একটু কিছু মুখে দেওয়ার জন্য কিন্তু তৃষা নিজের মায়ের হাত থেকে আজ এত খেয়ে ফেলেছে যে তার আর কিছু খেতেই ইচ্ছে করছে না।
রুমে ঢুকে দেখলো আকাশ সোফায় বসে টিভি দেখছে,,আকাশকে এইসময় রুমে দেখে তৃষা‌ কিছুটা অবাক হয়ে ঘড়ির দিকে তাকাতেই তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।রাত দশটা!!এত রাত পর্যন্ত সে বাড়ির বাইরে ছিল ভাবতেই অবাক হয়ে যাচ্ছে।এইসব চিন্তা করতে করতে আলমারি থেকে নিজের ড্রেস বেড় করতে যাবে এমন সময় আকাশ বলে উঠলো-;
-:এত রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলে??
-:বাবার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
-:ও তা তোমার শ্রদ্ধেয় বাবা তোমাকে ক্ষমা করলো‌??(কিছুটা তাচ্ছিল্য ভাবে)
-:মানে কী বলতে চাইছেন??
-:মানে বলতে চাইছি তিনি কী তোমাকে মাপ করেছেন??
-:হ্যাঁ।
-:বাহ্ এত তাড়াতাড়ি মাপ করে দিল।আসলে তোমাদের মতোন মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির মানুষগুলো ঠিক এরকমই হয়।যেই দেখেছে মেয়ে একজন বড়োলোক বিজনেসম্যানের সাথে বিয়ে হয়েছে ওমনি তিনি তার মেয়েকে আপন করে নিলেন।
-:আকাশ!!(চিল্লিয়ে)আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার‌ই বাবাকে অপমান করছেন।আমরা আপনার মতোন বড়োলোক না হতে পাড়ি,,কিন্তু আমাদের বাবা-মা আমাদের এইটুকু শিক্ষা ঠিকই দিয়েছে যে কার সম্বন্ধে কিভাবে কথা বলতে হয়।এখন তো দেখছি আপনার ভিতরে সেই শিক্ষাটার ও অভাব রয়েছে।
তৃষার কথায় আকাশ তৃষাকে নিজের সাথে মিশিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে,, দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো-;
-:কী বললে তুমি আমার মধ্যে শিক্ষার অভাব রয়েছে।ডু ইউ হেভ এনি আইডিয়া এবাউট মাই কোয়ালিফিকেশন??
-:পুঁথি গত বিদ্যাটাই আসল বিদ্যা নয় মিস্টার আকাশ খান। পুঁথি গত শিক্ষার বাইরেও কিছু শিক্ষা থাকে যেটা আপনার মধ্যে নেই।
আকাশের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে,, আবার বলে উঠলো-;
-:আর কথায় কথায় আমার বাবাকে অসন্মান করাটা বন্ধ করে একটু সভ্য মানুষ হ‌ওয়ার চেষ্টা করুন।
এই বলে তৃষা ওয়াশরুমে চলে গেল।আর আকাশ রাগে কটমট করতে করতে তৃষার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকলো।
.
.
পরেরদিন তৃষা সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে,,নিচে নামতেই অবাক হয়ে গেল। সোফায় রিনা বসে আছে আর তার ঠিক পাশেই আকাশ বসে আছে,,দুজনে গল্পে এতটাই ব্যস্ত যে তৃষাকে তারা খেয়ালই করেনি।এত সকালে রিনা এখানে দেখে তৃষা অনেকটাই অবাক হয়।আকাশের মা নিচে নামছিলেন,,তৃষাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে,,বলে উঠলো-;
-:কী ব্যাপার তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন??
আকাশের মায়ের কথায় আকাশ আর রিনা দুজনেই সিড়ির দিকে তাকালো।
-:না মানে এমনি,,তুমি এসো।
-:হ্যা চল।
তৃষাকে দেখে রিনার যেন পায়ের তলা থেকে মাটি সড়ে যাবে এমন অবস্থা।তৃষার দিকে সে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে আকাশকে জিজ্ঞাসা করলো-;
-:বেবি ও..ওই মেয়েটা কে??
আকাশ তৃষার দিকে তাকিয়ে,,রিনার কাছে সড়ে এসে কিছুটা আস্তে বলল-;
-:আরে এটাতো তৃষা,তার সাথে আমার কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ হয়েছে।সেদিন তো তুমি ওর সাথেই ফোনে কথা বললে।
রিনা অবিশ্বাস্য চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে যেন সে বিশ্বাস‌ই করতে পারছে না যে সেদিন ফোনে সে তার নিজের‌ই চাচাতো বোন তৃষার সাথে কথা বলেছে।
আকাশের মা রিনাকে এমনসময় তার বাড়িতে দেখে কিছুটা বিরক্ত হয়। কিন্তু সৌজন্যতার রক্ষার খাতিরে জিজ্ঞাসা করলেন-;
-:কী ব্যাপার তুমি এখানে??
-:আন্টি কেমন আছেন??আসলে কিছুদিন হলো আমি দেশে ফিরেছি,,আর দেশে ফিরে আকাশের কাছ থেকে যখন জানতে পারি যে আপনি অসুস্থ তখন আপনার সাথে দেখা করতে খুব ইচ্ছে করছিল।তাই চলে এলাম আপনার সাথে দেখা করতে।
-:হুম বুঝলাম,,তৃষা এইদিকে এসো।ও হচ্ছে রিনা আকাশের বান্ধবী।আর রিনা ও হচ্ছে তৃষা খান বাড়ির ব‌উ আর আমার মেয়ে।
আকাশের মায়ের কথায় রিনার গা জ্বলে উঠলো।একেই তৃষাকে এ বাসায় দেখে তার মাথা বিগড়ে আছে তার উপর এই মহিলার এইসব গা জ্বালানো কথা!!কিছুতেই রিনা সহ্য করতে পারছে না এইসব।আজ যদি এই মহিলাটা না থাকতো তাহলে এত ঝামেলা তাকে কোনোদিন‌ও পোহাতে হতো না।
এদিকে তৃষা টেবিলে ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে সবাইকে ডাকলো নাস্তা করার জন্য।রিনা হুট করেই উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো-;
-:আচ্ছা আমি এখন আসছি।
-:আরে তুমিতো‌ সকালে না খেয়ে এখানে চলে এসেছো আগে নাস্তা করে নাও তারপর আমি তোমাকে বাসায় দিয়ে আসবো।(আকাশ)
-:না মানে বাপি কল করেছিল,,আমাকে এক্ষুনি বাসায় যেতে হবে।আমি পরে আবার আসবো।এখন আসি।
আকাশের মা আর আকাশকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল।
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]
.