আলোছায়া

আলোছায়া !! Part- 09

সকল মনমালিন্য চুকে যাওয়ায় চমৎকার একটি রাতের শেষে সকালের স্নিগ্ধতা মেশানো চা বেশ আরাম করে খেলো উল্লাসী। তারপর করিমুন্নেসাকে রাতের জড়ো করা সব থালাবাটি ধোয়ার আদেশ দিয়ে সে মেসবাহ এবং মৈত্রীকে একনজর দেখে এসে বসলো ব্যালকনিতে। বেশ কদিন হলোই মেসবাহকে ঘিরে সব আবোলতাবোল চিন্তাভাবনা মাথায় আসায় পড়াশোনায় একদম মন দিতে পারেনি সে। ওদিকে জাভেদ ভাইয়ের অত্যাচারে ক্লাস করা যেখানে বিলাসিতা হয়ে উঠেছিল তখনই ধারণা পালটে গেল তার। লোকটি খারাপ নয়। আর না তাকে কখনো খারাপ কোনো প্রস্তাব দিয়েছে। তবে কেনো লোকটিকে অযথা সন্দেহ করে বাজে নজরে দেখবে সে? প্রকৃতির স্নিগ্ধতা গায়ে মাখাতে লম্বা একটা শ্বাস নিল উল্লাসী। টেবিলের উপরে থাকা বায়োলজির একটি শিট খুলে তাতে নজর বোলাতেই বেজে উঠলো কলিংবেল।
নিচে গাড়ি এসেছে.. তাদের নতুন গাড়ি! গাড়ির বিষয়টি যে তার অজানা ছিল তেমনটা নয়। তবে এত চটজলদিই যে গাড়ি কেনার সকল কাজ শেষ হয়ে যাবে তা ছিল তার ভাবনার বাইরে। উল্লাসে ফেটে পড়ার মতো চমকপ্রদ একটি উপহার পেয়েও নিজেকে সামলে রাখলো উল্লাসী। ঘুমন্ত মেসবাহকে ডেকে তুলে তারা নেমে এল নিচে। গাড়ির আগাগোড়া পর্যবেক্ষণ করতে করতে মেসবাহ বললো,
“ঠিকঠাক আছে.. তা তুমি গাড়ি ভালো করে চালাতে জানো তো?”
“স্যার আমি আজাদ স্যারের গাড়ি চার বছর চালাইছি।”
বেশ সাহসীকতার সঙ্গে উত্তর করলো আমজাদ আলী।
“সেই ভরসাতেই তো তোমাকে আনা.. তা উঠে দেখি। কী বলো?”
“বসেন স্যার। ম্যাডামরে নিয়া উইঠা বসেন। একটা চক্কর দিয়া নিয়া আইসি।”
গাড়িতে চড়ে বসেই বাতাসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো উল্লাসী। জানালার গ্লাসটা সামান্য নামিয়ে দিয়ে সে তাকালো ড্রাইভিং সিটে বসা লোকটির দিকে। লোকটি একমনে চালিয়ে যাচ্ছে গাড়ি। দৃষ্টি তার সামনের দিকে। সেই সুযোগে মেসবাহর হাত জাপটে ধরলো সে। গলার স্বরে আহ্লাদী ভাব এনে বললো,
“আপনি এত ভালো কেনো বলুন তো?”
ম্লান হাসলো মেসবাহ। রাজকীয় আসনের মতো আরাম করে বসে বললো,
“জানো? নিজের গাড়িতে উঠার পর থেকেই কেমন যেনো রাজা রাজা ফিল হচ্ছে। তোমারও কী একই অবস্থা?”
“না.. তবে আমার নিজেকে রানী রানী লাগছে।”
“ওই তো একই!”
এবারে শব্দ করে হেসে উঠলো মেসবাহ। এই ব্যস্ত শহরের হাজারো মানুষ এবং তাদের কোলাহলের ভীড়ে নিজেকে এ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ বলে মনে হলো তার।
বাড়ি ফিরে মেসবাহ ফ্রেশ হতে যেতেই করিমুন্নেসাকে সকালের খাবার তৈরির জন্য তাড়া দিয়ে শোবার ঘরে ঢুকতেই তার পিছুপিছু এল করিমুন্নেসাও। ঘামেভেজা মুখটা শাড়ির আঁচল তুলে মুছতে মুছতে বললো,
“ভাই তো বলছিলো ভাত রানতে। আর আপনি বললেন রুটি.. আমি এখন কোনডা করমু?”
কপাল কুঁচকে বিছানায় বসলো উল্লাসী। স্থির গলায় বললো,
“আমি যেটা বলেছি সেটা করবে।”
“ভাই যে ভাত খাইবার চাইছে!”
“তাতে কী? আমি যা বলি তা কি তুমি শুনতে পাওনা?”
“শুনমু না ক্যান? তয় ভাই সারাদিন বাইরে বাইরে ঘোরে। ভাইয়ের বেশি শক্তির দরকার। ভাত খাইলে ভাই ভালো শক্তি পাইবো। তাই ভাইরে তিনবেলা না দিনে সাতবেলা ভাত দেওন উচিৎ।”
“তোমাকে কে বলছে এসব? এই মৈত্রীর বাবা.. এই? বের হও..”
বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কাতেই ভেতর থেকে দরজা খুলে দিল মেসবাহ। টাউয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বাইরে বেরিয়ে এসে বললো,
“কী হয়েছে?”
“আপনি ভাত রাঁধতে বলছেন কেনো? সকালে আপনি কবে থেকে ভাত খাওয়া ধরলেন?”
বেশ তাঁতিয়ে উঠলো উল্লাসী।
ধীর স্বরে মেসবাহ বললো,
“রাতে তো ভাত খাইনি.. তাই ভাবলাম সকালে একেবারে ভাত খেয়েই বের হই।”
করিমুন্নেসা অবাক হয়ে বললেন,
“ওমা ভাইজান বলেন কী! রাতে ভাত খান নাই কেন?”
“তুমি চুপ থাকো করিম খালা। কথার মাঝে ঢুকে পড়ো কেনো?”
কপাল কোঁচকালো উল্লাসী।
পূর্ব সুরেই করিমুন্নেসা বললেন,
“হায় হায়! আমি কথার মইধ্যে কখন ঢুকলাম?”
“তো কি কথার সাইডে ঢুকেছো? দেখলেন আপনি? আমার একটা কথাও শোনে না করিম খালা। আমি যে বারবার বলছি রুটি করো সেটি উনি কানেই তোলে না। অথচ আপনি কখন একবার ভাতের কথা বলে এসেছো সেটা নিয়েই পড়ে আছেন উনি!”
“ভাবি আপনি তো একটা তাজা ধরফরা মিথ্যা বললেন! আমি আপনার কথা শুইনা সেদিন কচুর লতি পুরাডা ফালাই দিলাম না?”
“একটা কাজ করেই ক তে কর্মের ঢেঁকি হয়ে গেছো তুমি? আমি যে এখন বললাম রুটি করো তাহলে সেটা কেনো কানে নিচ্ছিলে না?”
“আরেকখান মিথ্যা বললেন! কানে কেন নিমু না? ভাইজানের ট্যাকায় আমি চলি.. তো ভাই ভাত খাইতে চাইলে আমি রুটি বানামু কেন?”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে টাউয়াল বিছানায় রাখলো মেসবাহ। করিমুন্নেসার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বললো,
“চুপ করো তুমি করিম খালা। তোমাকে উল্লাসী রুটি করতে বলেছে তো তুমি যাও আর রুটি করো।”
“আজকাল এ কেমন জামানা আইসা পড়লো? জামাইয়ের কথার উপর দিয়া বউ ক্ষমতাবাজী করে! এদের উপর যে আল্লাহ কোনদিন ঠাডা ফালাইবো! ও আল্লাহ! তুমি ঠাডা ফালাইলে চারটার পরে ফালাইয়ো। আমি থাকা অবস্থায় জানি ফালাইয়ো না। আল্লাহরে আল্লাহ! লা হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!”
করিমুন্নেসা বিরবির করতে করতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই থম ধরে বিছানায় বসে পড়লো উল্লাসী। তার পাশে বসে মেসবাহ শান্ত গলায় বললো,
“আবার কী হলো? রুটি তো করবেই বললো!”
“ওটাও তো আপনার কথা শুনেই সে করতে গেল! আর যাওয়ার আগে কী বলে গেল শুনেছেন?”
“উনার কথা কানে নেয়ার দরকার নেই। উনার স্বামী তো বলেই দিয়েছিলেন উনার একটু মাথায় সমস্যা আছে।”
“তাই বলে যা নয় তাই বলবে! না, আর সহ্য হচ্ছেনা আমার উনাকে। উনাকে আজই টাকা দিয়ে বিদায় করুন।”
“থাকুক না! কাজকর্ম তো খারাপ না। তাছাড়া আজকাল এক বুয়া গেলে আরেকটা খুঁজে পাওয়া প্রচুর টাফ জব!”
মুখ ফুলিয়ে মেসবাহর দিকে তাকালো উল্লাসী। তবে পরক্ষণে ভাতের কথা স্মরণ হতেই সে তীক্ষ্ণ সুরে বললো,
“কিন্তু আপনি এত ভাত ভাত করছেন কেনো? মানে ঠিক কী হয়েছে আপনার? ভাতের প্রতি এত ভালোবাসা আপনার আসলো কোত্থেকে? এই ভাতের সাথে তো কোনোভাবে করিম খালা সম্পর্কিত না? এমন কি হতে পারে করিম খালার হাতের রান্না ভাত আপনার কাছে অমৃত লাগে?”
মাথা চাপড়ে বিরক্ত গলায় মেসবাহ বললো,
“ওই ভুড়িওয়ালা ভাবির ভুড়ি আজ ফাটাবো আমি.. এমন ভাবে ফাটাবো যে আমার বউটার মাথায় আজেবাজে কথা ঢুকাতে পারবে না।”
“আমি গর্দভ না.. কেউ আমার মাথায় কিচ্ছুটি ঢোকায়নি।”
“তা তো বুঝতেই পারছি.. এই উল্লাসী। আমরা না হয় আপাতত ওসব বাদ দেই। এসো আমরা নিজেদের নিয়ে ভাবি। আমার প্রতি তোমার অভিযোগ গুলো একে একে বলো দেখি..”
মেসবাহর এমন কথায় খুশি হলো উল্লাসী। ঠোঁটে মুখে তার আভাস ফুটিয়ে মেসবাহর দিকে খানিকটা ঘেষে বসে সে বললো,
“নাম্বার ওয়ান আপনি আমায় ভালোবাসেন না।”
“আচ্ছা.. তারপর?”
“নাম্বার টু আপনি আমায় বিশ্বাস করেন না.. কিচ্ছু শেয়ার করেন না।”
দু’হাতের বাধনে উল্লাসীকে টেনে নিয়ে মেসবাহ বললো,
“তারপর?”
“নাম্বার থ্রি আপনি আমাকে গুরুত্ব দেননা.. একদমই দেন না। আর নাম্বার ফোর আপনি কেয়ারলেস। আমার দিকে কখনোই ভালোভাবে তাকান না। আমি কি দেখতে খুব খারাপ? তাহলে কেনো আমার প্রসংশা করেন না?”
“তারপর?”
“নাম্বার ফাইভ..”
উল্লাসীর কথা শেষ না হতেই দরজার কাছ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো মৈত্রী। দু’হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“আমাকে ওই ঘরে একা কেনো শুইয়ে দিয়েছিলে তোমরা? আমি যে তোমাদের মেয়ে তা তোমরা বোঝো না?”
অপেক্ষা.. সে তো শুদ্ধতম ভালোবাসার একটি চিহ্ন। চৈতালি বলেছিলো এচরণটি। হাতে ছিল তার অপেক্ষা নামক একটি বই। মেসবাহর বিয়ের উদ্দেশ্যে যেবার গ্রামে গিয়েছিল সে, সেবার তাকে দেখে কথাটি বলেছিল চৈতালি। তার সেই কথায় ছিল একরাশ বেদনা.. ছিল এক বুক তৃষ্ণা। বুকচিরে বেরিয়ে আসা গভীর এক নিঃশ্বাস ছেড়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো মুবিন। কয়েক কদম এগিয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই বেজে উঠলো তার ফোনের রিংটোন।
“কী করছেন?”
“এই তো অফিসে.. কাজ করছিলাম।”
“লাঞ্চ আওয়ারেও কাজ? খুব কাজের মানুষ দেখছি আপনি!”
হেসে উঠে আবারও চেয়ারে বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো মুবিন। ফোনের রিংটোনের শব্দ কানে আসতেই তার মন বলছিল কলটি পুষ্পর..
“শুনেছেন বিয়ের ডেইট কবে ফাইনাল হয়েছে?”
পুষ্প প্রশ্ন করতেই মুবিন বললো,
“ঈদের পরদিন?”
“হ্যাঁ.. বাবারা কোরবানির গরু দিয়ে আমাদের বিয়ে সারা প্লান করছে! তবে আমিও বাবাকে বলে দিয়েছি! গরুর ব্যাপারটা আমি মাফ করবো না। গরু তোমার আলাদা করেই কিনতে হবে। দরকার পড়লে আমি একটা গরু সাথে করে আমার শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যাবো। তবে গরু আমার লাগবেই।”
হেসে উঠলো মুবিন।
“আপনি খুব রসিক মানুষ..”
“আর আপনি গম্ভীর! সকালে আপনার মা আমায় কল দিয়েছিল। জানেন?”
“মা?”
“হ্যাঁ..”
“কী বললো?”
“আপনার গুণগান.. তা একবছরের বেশি হয়েছে বাড়ি যাননি কেনো?”
ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেলে মুবিন বললো,
“ছুটি পাচ্ছিলাম না। এক দিনের ছুটিতে এত বড় জার্নি করতে মন টানেনা। তবে রোযার ঈদে যেতে চেয়েছিলাম.. কিন্তু ছোটভাবির এইচএসসি চলার কারণে ওরা গ্রামে গেলো না। তাই ভাবলাম আমিও না যাই। ওদের সাথেই না হয় ঈদটা করি।”
“তবে কি একদম নিজের বিয়েতেই যাচ্ছেন?”
“আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে.. তা আমার নাম্বারটা কি এখনো ওই নামেই সেইভ করা আছে?”
একমুহূর্ত থেমে ওপাশ থেকে পুষ্প বললো,
“হু..”
“তাইলে বলুন দেখা করছেন কবে!”
“দেখা?”
“হ্যাঁ.. আপনার ফোনটা আমার খুব প্রয়োজন।”
“কেনো বলুন তো?”
“নিজের নামটা চেইঞ্জ করে দেবো।”
হেসে উঠলো পুষ্প। তাই সেই দীপ্তিমান হাসি.. যা দেখলেই প্রাণটা জুড়িয়ে যায় মুবিনের।
গাড়ি থেকে নেমে কোচিংয়ের দিকে পা বাড়াতেই কারো ডাক শুনতে পেয়ে থেমে গেলো উল্লাসী। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে ফিরে তাকাতেই রাস্তা পাড় হয়ে তার দিকে এগিয়ে এল রুমা। তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ভদ্র মহিলার দিকে ইশারা করে বললো,
“আমার ভাবি পিংকি.. আর ভাবি ওই উল্লাসী।”
“ভালো আছো? এটা কার গাড়িতে এলে গো?”
প্রশ্ন করলেন পিংকি রহমান।
নতুন গাড়ি করে আসায় মন অসম্ভব ভালো থাকায় উল্লাসী উৎসুক কণ্ঠে বললো,
“আমাদের।”
রুমা বললো,
“ওদের বলতে ওর সেই ভাইয়ের। তাই না?”
একমুহূর্তের জন্য ভ্রু কোঁচকালেও পরমুহূর্তেই ঘাড় নেড়ে উঠলো উল্লাসী।
“হ্যাঁ..”
প্রচুর খুশি হলেন পিংকি রহমান। চোখেমুখে তা ফুটিয়েই বললেন,
“তোমার ভাই তো ডাক্তার.. তাই না?”
“হ্যাঁ..”
“তোমার ভাইয়ের জন্য কোনো মেয়ে দেখছো টেকছো না?”
“হ্যাঁ.. দেখছে।”
“আমার একটা বোন আছে বুঝেছো। জার্মানি থেকে পিএইচডি করে এসেছে। কোন সাবজেক্ট নিয়ে যেনো পড়েছেরে রুমা?”
রুমা বললো,
“ফিজিক্স..”
“হ্যাঁ.. ওইতো। ঢাকা ভার্সিটি থেকে কমপ্লিট করে জার্মানি গিয়েছিল। সারাজীবন পড়া পড়া করতে করতে জীবনের অর্ধেকটা সময় পাড় করে ফেলেছে। তখন কত বলতাম বিয়েটা করেনে। তারপর যত পড়ার পড়ে নিস। কিন্তু কে শোনে কার কথা!”
আজও কোচিংয়ে ঢোকার মুহূর্তে এমন বাঁধা পেয়ে বিরক্তির সীমা ছাড়িয়ে গেলেও চুপচাপ ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো উল্লাসী। পাশ থেকে পিংকি রহমান বললেন,
“তোমার খালাখালুর সাথে কথা বলতে চাইলে কীভাবে কথা বলতে হবে?”
“কোন খালাখালু?”
“তুমি যাদের বাসায় থাকো..”
চোখমুখ কুঁচকে রুমার দিকে তাকালো উল্লাসী। মেয়েটির কথা বেশি বলা স্বভাব। তাই বলে কি নিজের মতো করে যা খুশি তাই বানিয়ে নেয়?
“কী হলো?”
পিংকি রহমানের ডাকে তার দিকে ফিরে ম্লান হাসলো উল্লাসী।
“অহ হ্যাঁ.. কিন্তু তাদের সাথে কথা কেনো?”
“নয়তো বিয়ের কথাটা এগুবো কীভাবে?”
“বিয়ে? কার বিয়ে?”
“কেনো তোমার সেই ভাইয়ের! আমার বোনের ছবি দেখবে? দাঁড়াও দেখাচ্ছি! আমি আর কী! আমার বোন আমার উপর দিয়ে। রূপে গুণে সর্বগুণান্বিতা!”
চোখ যেনো কপালে উঠে গেলো উল্লাসীর। হতবিহ্বল হয়ে পিংকি রহমানের দিকে তাকাতেই ফোন তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সে আবারও বললো,
“এই যে দেখো..”
বুকের ভেতরের ছটফটানি ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে ঢোক চেপে ফোন হাতে নিল উল্লাসী। সে কেমন বোকার মতো কাজ করে বসলো এটি? ভাই না হয় সে মেসবাহকে বানিয়ে দিয়েছে! তাই বলে এই পিংকি ভাবির কথায় সায় দিয়ে কেনো বললো তার জন্য মেয়ে দেখছে? বললেই হতো সে বিবাহিত! নিজের কর্মে নিজেই হতাশ হলো উল্লাসী। পিংকি রহমানের দেয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে কোনোমতে বললো,
“মেয়ে তো শর্ট। এত শর্ট মেয়ে উনি বিয়ে করবেন না।”
“আরে শর্ট না.. আমার বোন পাঁচ ফিট পাঁচ ইঞ্চি। ছবিতে হয়তো বোঝা যাচ্ছে না।”
“অহ.. তাহলে মেয়েতো প্রচুর লম্বা। এত লম্বা মেয়ে উনি বিয়ে করবেন না।”
“এটা কোনো লম্বা হলো নাকি! এটা হলো পারফেক্ট হাইট! তুমি হচ্ছো শর্ট।”
ভ্রু কোঁচকালো উল্লাসী। মহিলাটি হালকাপাতলা। গায়ের রঙ বেশ ফর্শা। নাকটাও বিশাল। আর ঠোঁটের উপরে পুরুষদের মতো বেশ পরু গোঁফের স্তর। মেসবাহ একে দেখলে নিশ্চিত নাম দিয়ে বসতো গোঁফওয়ালা ভাবি।
“তুমি কি চাওনা তোমার ভাইয়ের ঘরে একটা ভালো পরিবারের মেয়ে আসুক?”
পিংকির রহমানের কথা শুনে বিরক্ত মুখে উল্লাসী বললো,
“আমি চাইলেই কী আর না চাইলেই কী! তাছাড়া বারবার আমার ভাই আমার ভাই করবেন না। উনি আমার আপন মায়ের পেটের ভাই না। উনি আমার দুঃসম্পর্কের ভাই।”
“দুঃসম্পর্কের হোক বা কাছের.. ভাই তো ভাই-ই। তাইনা?”
“জানি না.. তবে আপনার বোনের বয়স বেশি।”
ক্ষুদ্ধ গলায় বললো উল্লাসী।
পিংকি রহমান ঠোঁট বাঁকিয়ে জবাবে বললেন,
“তো তোমার ভাই কি শিশু? ওদের কাছে ওরা ঠিকই আছে। একদম মেইড ফর ইচ আদার। তাছাড়া তুমি বললে না তুমি ওর দুঃসম্পর্কের বোন? তাহলে দুঃসম্পর্কের বোন দূরেই থাকো। দেখি দাও তোমার খালাখালুর নাম্বার।”
একমুহূর্ত ভাবলো উল্লাসী। নিজের বিছানো জালে নিজেই আটকে পড়েছে সে। তবে এ থেকে কী করে নিস্তার পাবে সে?
“ঠিকাছে.. নিন। তবে এখন কল দেবেন না। খালাখালুর মন মেজাজ সবসময় ভালো থাকে না। উনারা এখন হাওয়া খেতে বাইরে বেরিয়েছে। কল দিতে চাইলে দেবেন রাত ঠিক আটটাই। ক’টায়?”
চোখেমুখে একরাশ হাসির ঢেউ নিয়ে পিংকি রহমান বললেন,
“আটটায়..”
“গ্রেট! নিন তুলুন। জিরো ওয়ান সেভেন..
দুরুদুরু বুকে মুন্নি সরকারের নাম্বার দিয়ে উল্লাসী পা বাড়ালো কোচিংয়ের ভেতরের দিকে। মুন্নি ভাবিকে বুঝিয়ে নেবে সে। বাদবাকি রইলো এই গোঁফওয়ালা ভাবি.. শায়েস্তা একে ভুড়িওয়ালা ভাবিই করবে! বাংলার আকাশে গোঁফে ভুড়িতে যুদ্ধ না হলে এ ঝামেলা থেকে নিস্তার মিলবেনা তার।
(চলবে)