সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 06

ইশারায় উনি বাঁকা চোখে আমার বোনকে দেখায়।যার অর্থ বোঝায় আমার বোনের সাথে উনি খারাপ কিছু করবেন।
আমার চোখ বেয়ে পানি পরতে থাকে। প্লেটটা উনার হাত থেকে নিয়ে ওনার অক টেনে ফেলে দেওয়া মুখের খাবার নিজের মুখে দিচ্ছি।আমার বোন আমাকে ঝাকিয়ে বলছে,
-এটা কি করছিস আপু? আপু? উনাকে বলছে, দুলাভাই এটা কি করছেন আমার আপুর সাথে?
উনি পৈচাশিক ভাবে হাসছেন…
খাবারটা আমি মুখের কাছে নিয়ে এসেছি।মুখের মধ্যে ভরবো এমন সময় কেউ এসে একটানে প্লেটটা আমার হাত থেকে টেনে দূরে ছুড়ে ফেলেন। আমি মুখ তুলতেই ঠাসসস! করে একটা চর পরল উনার গালে। শ্বাশুড়ি মা উনার কলার টেনে ধরে আছেন।উনাকে একের পর এক চর মেরে চলেছেন।উনার চোখ মুখে এখনো সয়তানি হাসি।কিছুতেই উনার হাসি থামছে না।শ্বাশুড়ি মা উনাকে মারছেন আর উনি হেসে চলেছেন।দেখে বোঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছেন শ্বাশুড়ি মা।বিছানার বালিশের উপরে উনার বেল্টটা পরে ছিলো।সেটা দেখে উঠিয়ে নেন। আর উনাকে খুব মারেন।মাইর খেতে খেতে উনি নিচে পরে যান।উনার চোখ মুখের অবস্থা এখন খুব খারাপ।চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।তবুও হাসছেন।আর শ্বাশুড়ি মা উনাকে মেরেই চলেছেন।
আমার ভেতরটা চিনচিন করছে।যতোই হোক উনি আমার স্বামী। নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে সর্পে দিয়েছি উনার কাছে। আমার জন্য উনি এভাবে মাইর খাচ্ছেন সেটা আমি সহ্য করতে পারছি না।আমার বোন পাশ থেকে বলছে ঠিকই করছে! আরও মারুন! সয়তান একটা! আরও মারুন! আর আমি উঠার চেস্টা করে উঠতে না পেরে বিছানায় বসেই শ্বাশুড়ি মাকে বলছি।
-প্লিজ মা! দয়া করুন! উনাকে আর মারবেন না! ছেড়ে দিন!
আমি উঠে নামতে যাচ্ছি আমার বোন আমার হাতটা চেপে ধরে আছে।শ্বাশুড়ি মা উনাকে মেরে চলেছেন।তার অন্যদিকে হুশ নেয়।যতোই হোক তারই তো সন্তান আহান।রাগটা যেন দুজনেরই এক রকম।আমি আমার বোনকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে নেমে নিচে পা রাখলে পরে যায় নিচে।উঠে দাড়িয়ে হাঁটতে পারছি না।বোন আমার কাছে এসে আমাকে ধরছে আর আমি বোনকে সরিয়ে দিয়ে ফ্লোর ঘেঁষে উনার দিকে আগাচ্ছি।শ্বাশুড়ি মায়ের শরীর থেকে ঘাম ছুটছে।উনাকে মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে।তবুও মারছে।আমি কাছে গিয়ে উনাকে টেনে নিজের বুকে মিশিয়ে নিয়।উনাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছি আমি।আমাকে দেখে শ্বাশুড়ি মা যেন থেমে যায়। হাত থেকে বেল্টটা নিচে ফেলে দেয়। আর আমি উনার শরীর পর্যবেক্ষণ করছি।ট্রি শার্টের উপরে শরীরের ক্ষত, রক্তের ছাপ ভেসে উঠেছে।আমি আলতো ভাবে উনার শরীরে নিজের হাত বুলাচ্ছি।আর উনি ব্যাথা পেয়ে চোখ বুজে ওঠছেন।
-আহান! খুব কস্ট হচ্ছে আপনার?
উনি আমাকে এক ধাক্কায় নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। রাগি দৃস্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-আমার মা আমাকে মারবে, কাটবে, যা খুশি তাই করবে তাতে তোর কি? কেন এসেছিস আমার কাছে তুই?
কথাটা বলে উনি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেন।উনার কথার কোনো উত্তর দিচ্ছি না আমি।বোন এসে আমাকে ধরে উঠিয়ে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়। উনি ফ্লোরে অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে আছেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনার কন্ঠের কুনকুন শব্দের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।শ্বাশুড়ি মা আমার পাশে এসে বসলেন।আমার মুখ ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন আর বললেন,
-এতো অন্যায় করার পরও তুই ওর কাছে গিয়েছিস মা? এতো ভালো কেন রে তুই? তোর মা’টাও একদম এমন ছিলো।স্বামীর অনেক অত্যাচার সহ্য করেছে মিরা।কখনো প্রতিবাদ করে নি।
এটুকু বলেই শ্বাশুড়ি মা জোড়ে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লেন।কেমন যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলেন উনি।কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা। আমার মায়ের উপর তো কখনো বাবা অত্যাচার করেন নি।আর মিরা কে? আমার মায়ের নাম তো সুইটি ভানু।আমার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে শ্বাশুড়ি মা আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বললেন,
-কি ভাবছিস আরু?
আমি চোখ তুলে উনার দিকে তাকালাম।মনে আসা প্রশ্ন উনার সামনে রাখলাম।উনার কাছে জানতে চাইলাম,
-আচ্ছা মা মিরা কে? আমি কি তাকে চিনি?
মুহূর্তেই শ্বাশুড়ি মায়ের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। কথাটা আমার সামনে বলে উনি যেন অপরাধ করে ফেলেছেন এমন ভাবে মুখ লুকাচ্ছেন।উনি হালকা নড়েচড়ে বসেন।আমি আর কিছু বলবো তার আগে উনি উঠে দাড়ান।শাড়ির আঁচল টেনে নিজের মুখ ঢেকে ছুটে রুম থেকে বেড়িয়ে যান।
আমি তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকি।কিচ্ছু বুঝি না তার ইঙ্গিত। ভাবতে যাবো কিছু তার মধ্যে বোন আমার সামনে একটা ব্যাগ রেখে আমার কাছে মুখ নিয়ে আসে।রুমের মধ্যে আহান থাকায় বোন আমার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
-মা যেগুলো নিয়ে গিয়েছিলো এই ব্যাগটাতে চুপিচুপি সব নিয়ে এসেছি আপু।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.🌼🌼🌼
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.🌼🌼
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.🌼

..
.
দুপুর গড়িয়ে রাত হয়েছে।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত নয়টা বাজে।উনি এখনো সেখানে সেই অবস্থাতেই পরে আছেন।সার্ভেন্টরা এসে লাঞ্চ দিয়ে গিয়েছিলো।উনি খান নি।এখন ডিনারও দিয়ে গিয়েছে।ব্যাথার ইনজেকশন আর স্যালাইনে আমার শরীর আগের থেকে একটু সতেজ হয়েছে।আমি উঠে উনার কাছে এসে ডাকছি,
-আহান! আহান! আপনি কি আমাকে শুনতে পারছেন?
উনি ঘুমন্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছেন।আমার হাতটা টেনে নিজের বুকে রাখলেন।আর ঘুম জড়িত কন্ঠে ভেঙে ভেঙে বললেন,
-আমার এই বুকটাই…খু্ব কস্ট হয় আরু।
আমি তৎক্ষণাৎ খেয়াল করলাম উনার শরীর প্রচন্ড আকারে গরম।জ্বরে শরীর উনার পুরে যাচ্ছে।
-আহান! আহান! আপনার তো জ্বর হয়েছে।চলুন বিছানায় গিয়ে ঘুমোবেন!
আমি উনাকে উঠাতে যাচ্ছিলাম উনি টেনে উল্টো ঘুরিয়ে আমাকে শুইয়ে দিলো।তারপর আমার বুকে নিজের মাথা চেপে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো আমাকে।জ্বরে উনার কাপুনি শুরু হয়েছে। ঠান্ডায় আমার বুকের ভেতরে যেন মিশে যাচ্ছেন উনি।উনাকে না উঠিয়ে এভাবেই নিজের শাড়ির আঁচলে উনাকে মুড়ে নিলাম।উনি হালকা উঁচু হয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো।আমাকে বলল,
-তুই আমার বুকে কি করছিস? যা এখান থেকে।
-আহান আমি! আসলে আপনি আমার বুকে।আমি তো আপনার নিচে আছি দেখুন।
-কোথায়? আমি তো দেখছি তুই আমার উপরে।ওঠ! আমার উপর থেকে।
জ্বরে হয়তো উনার মাথাটা গেছে।কি বলছেন নিজেও জানে না।
-না আহান! আমি সত্যি বলছি। একটু ভালোভাবে দেখুন।
চলবে,,,,,,