প্রেমে পড়া বারণ ( সিজন-2 ) Part- 20
রেহানের যত কাছে যাচ্ছি যত আমার হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। ওর দিকে তাকাতে পারছি না। ওর দিকে তাকাতে নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
অবশেষে সব দ্বিধা দূর করে রেহানের কাছে গেলাম।।
রেহান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
এভাবে তাকিয়ে আছে দেখে একটু লজ্জা পেলাম। কি বলবো বুঝতে পারছি না।
ধুর! এভাবে কিচ্ছু হবে না।
আমাকে একদম নরমাল বিহেভ করতে হবে।নিজেকে সামলে নিয়ে চেয়ার টেনে বসে বললাম
– এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন? আমাকে আগে কোনো দিন দেখিসনি??
– আজকে তো অনেক সুন্দর লাগছে তোকে!
-আমাকে সুন্দর দেখাচ্ছে! একথা রেহান বলছে!! O my goodness!!
এই জীবনে কোনো দিন তোর মুখে কথাটা শুনিনি। আজ শুনে আমি ধন্য!!
– সিরিয়াসলি… এই শাড়িতে তোকে অনেক ভালো মানিয়েছে।
– তাই?
– হুম। কিন্তু…
– কিন্তু কি?
– ক্রেডিট কিন্তু আমার শাড়ির!
যাক এতোদিনে পড়লি শাড়িটা।
– হা… পড়া হয়নি এতাদিন।আজ চোখে পড়লো। ভাবলাম এটাই পড়ি।
– ভালো করেছিস।
– এবার বল কেন ডেকেছিস?
– হুমম…. বলছি।
– বল…
রেহান একটু সময় চুপ করে থাকে।তারপর বললো
– হিয়া… ( আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি রেহান কি বলে তা শোনার জন্য)
তুই কি কখনো আমার কথা ভেবেছিস?
আমি হেসে বললাম – মানে কি?সেদিন ও জিজ্ঞেস করেছিলি! আর তোর কথা ভাববো না কেন? ভাবিতো।
রেহান একটু চমকে উঠে।
– ভাবিস?!
– হা… কেন, তুই ভাবিস না আমার কথা?
রেহান, তুই আমার ছেলে বেলার বন্ধু।তোর কথা, ভালো – মন্দ ভাবাটাই স্বাভাবিক।
তাই না?
– আমি সেটা বলতে চাইছি না।
– তুই কি বলতে চাইছিস? বুঝিয়ে বল।
আমার ভীষণ হাসি পাচ্ছে।
রেহান কি জিজ্ঞেস করেছে সেটা বুঝেও না বোঝার ভাব নিচ্ছি।
– মানে… বন্ধুত্বের বাইরে গিয়ে কি কখনো কিছু ভেবেছিস??
প্রশ্নটা করে গভীর আগ্রহে রেহান আমার দিকে তাকিয়ে উত্তর শোনার অপেক্ষা করছে।
আমার সব ভাবনা মুহুর্তেই এলোমেলো হয়ে গেলো।
জোর করে বললাম – বন্ধুত্বের বাইরে গিয়ে মানে? কি বলছিস একটু ক্লিয়ার করে বলবি??
কখন থেকে কি বলে যাচ্ছিস?!
রেহান একটু দম নিয়ে জিজ্ঞেস করলো
– তুই কি আমাকে ভালোবাসিস?
আমার সব কথারা গলায় আটকে গেছে। আমি বলতে চাইছি.. হে রেহান … অনেক ভালোবাসি….. অনেক… অনেক…… অনেক।
কিছু মুখ ফুটে কিছু বের হচ্ছে না।
– কি হলো? কিছু বলছিস না যে?
আমি তীক্ষ চোখে রেহানকে দেখছি। ওর চোখে মুখে আগ্রহ, প্রবল আগ্রহ।।
আমি বিচলিত হয়ে পড়লাম। মুখ ফসকে বলে ফেললাম – হা, ভালোবাসি!
চমকে উঠে রেহান।
– সিরিয়াসলি? তুই আমাকে ভালোবাসিস?!!
তুই ফাজলামো করছিস তাই না?
রেহানের এই কথায় আমার মন আরও বিচলিত হয়ে গেলো।। একটু কষ্ট ও পেলাম।
আমি মুখ ফুটে বললাম, তবুও রেহান বিশ্বাস করছে না।
আমি হাসতে হাসতে বললাম – আসলেই তুই বুদ্ধু! তোর হঠাৎ কেন এই প্রশ্ন মাথায় আসলো?
রেহান একটু গম্ভীর হয়ে বললো – কারণ আছে।
– কারণটাই জানতে চাচ্ছি। কি হয়েছে বল তো?
– তুই সত্যিই ভালোবাসিস না। তাইতো?
– আরও কি বলবো? যা বোঝার বুঝ গিয়ে।
কারণ কি সেটাই আগে খুলে বল।
– আসলে একটা ঘটনা ঘটেছে।
– কি ঘটনা?
– একজনের সঙ্গে বাজি ধরেছি।
– কিসের বাজি?আর কার সঙ্গে বাজি ধরেছিস??!
– তানিশার।।
তানিশার ধারণা তুই আমাকে ভালোবাসিস।
আমার মনের রঙ যেমন বদলে গেছে, তেমনি হয়তো আমার মুখের রঙও বদলে গেছে। কিন্তু রেহানকে বুঝতে দেয়া যাবে না।
– তানিশার সঙ্গে কথা হয় তোর?
– হুম.. ৫-৬ দিন আগে ও ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়েছিলো,নক ও করেছিলো।
তখন থেকে টুকটাক কথা হয়।
– ওহহ… তো বাজি টা আমাকে নিয়ে??
– তোকে নিয়েই বলতে পারিস।
তানিশার ধারণা তুই আমাকে ভালোবাসিস। শুধু ধারণা না নয়,এটা নাকি ওর বিশ্বাস ।
ও ১০০% শিওর।
– আর তোর ধারণা?
– সেটাই তো বাজি। ও বলেছে ও আমাকে ভালোবাসিস আর আমি বলেছি…
– কি বলেছিস?
আহত চোখে একটা ভয় নিয়ে তাকিয়ে আছি।
– বলেছি… এটা হতেই পারেনা।হিয়া আমার ছেলে বেলার বন্ধু। এমন কিছু থাকলে ও নিজেই আমাকে বলতো।আর আমি বুঝতাম না? এমন কিছু ওর মনে থাকলে আমি ঠিক বুঝতাম।
এটা নিয়ে ও বাজি ধরেছে।আর ও নাকি জানে যে ও জিতবে।
ও জিতে গেলে আমি ওকে ট্রিট দিবো আর আমি জিতে গেলে ও আমাকে দিবে!
– হুমম… বুঝলাম।
– তাছাড়া…
– তাছাড়া কি?
– যদি আমি হেরে যেতাম তাহলে আমাদের এতো দিনের বন্ধুত্ব হেরে যেতো। ওর কাছে ছোট হয়ে যেতাম রে। কারণ অনেক আত্মবিশ্বাস আর বড়াই করেই বলেছি আমার বন্ধুকে আমি ভালো করেই চিনি এবং জানি। আমরা কেউ কিছু হলে আড়াল করিনা কখনো।
আমার মনে কিছু আসলে আমি নিজেই নির্দ্বিধায় ওকে বলে দিতাম।
তারপর পরেও তানিশার আত্মবিশ্বাস দেখে সত্যিই একটু ভয়ে ছিলাম।।
তাই তোকে ডেকেছি।
অনেক বড় একটা বোঝা নামিয়ে দিলি হিয়া।
ভেজা গলায় কথা আটকে আসছে।
তবুও অনেক জোর করে বললাম
– তুই হারবিনা রেহান… তুই জিতে গেছিস।
তানিশাকে জানিয়ে দিস।
– আমি জানতাম… আর জানতাম বলেই আমিই আত্মবিশ্বাসের সাথে চেলেঞ্জ করেছি।
– বুঝলাম.. আরও কিছু বলবি?
– না এইজন্য। এবার কি খাবি বল…
– কিছুই খাবোনা। আরেকটা কাজ আছে সেটা শেষ করে বাসায় ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি।
– কফি খেয়ে যা।
– না… সময় নেই। তুই খেয়ে আয়।
আমি উঠে পড়লাম।
– দাঁড়া আমিও যাবো।তোকে পৌঁছে দিয়ে আসি। কোথায় যাবি বল।
– লাগবে না রে… আমি একাই যেতে পারবো।
তুই কফি খেয়ে আয়।
– পারবি তো? শিওর?
– হে… পারবো।
– আচ্ছা… সাবধানে যাবি।
রেহানকে ওখানে রেখেই আমি চলে এসেছি।
এক পা এক পা করে আমি ফিরে আসছি না,রেহান থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।
রেহান আর আমার নেই। যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে কোনো দিন পাবো না এটার আভাস পেয়ে গেছি। হয়তো ও নিজেও এখনো বুঝতে পারছে না।
‘ বৈকালি ‘ থেকে বের হয়ে আমি হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি। আমার পা চলছে না,পা টেনে টেনে হাঁটছি। আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
কেন রেহান তুই আমার কথা বিশ্বাস করিসনি? কেন একটা বার বুঝতে চাসনি আমার মনে কি আছে?
তোকে আমি কখনো হারতে দিতে পারি? তোকে সবসময় বিজয়ী দেখতে চাই।
একবার তুই নিজে থেকেই হেরে যেতি।কি এমন ক্ষতি হতো?
আমার আকাশ ভেঙে কান্না পাচ্ছে। কাচের গ্লাসের দেয়ালের মতো আমার মন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।
আমার গলা, মুখ ব্যথা করছে। কান্না চাপিয়ে রাখতে পারছিনা।আবার কাঁদতেও পারছি না, কিন্তু আমি চিৎকার করে কাঁদতে চাই।
সন্ধ্যা নেমে আসছে।
একটা অটো ডেকে উঠে পড়লাম। আর একপা হাঁটা সম্ভব না।
বাসায় ফিরতেই দিয়ার সামনে পড়লাম। দরজা খুলে আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো
– আপু? কি হয়েছে তোর? চোখ এমন লাল হয়ে গেছে। তোকে কেমন এলোমেলো লাগছে!
– ভালো লাগছে না আমার। প্রচুর মাথা ব্যথা করছে। রুমে গেলাম। একটু ঘুমাবো।
প্লিজ কেউ ডাকিস না।
দিয়া রোবটের মতো মাথা নেড়ে বললো – আচ্ছা।
রুমে এসে সোজা ওয়াশরুমে গেলাম। বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে। দম আটকে আছে যেন।
ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।
শাওয়ার নিলাম। প্রতিটি ফোঁটা পানি আমার চোখের পানির সাথে মিশে একাকার হয়ে যাই।
আমি চিৎকার করে কাঁদলাম। অনেক কাঁদলাম।
এ আমার মন ভাঙার গল্প। এ কষ্ট কেবল আমার। কান্নাটাও আমার।
চলবে…..