ভাড়াটে বউ —পর্ব –০৪
রিয়ান থাপ্পড়টা খেয়ে কিছুসময় রাইসার
পানে তাকিয়ে
রইলো তারপর সিংহর মতো গর্জন করে
বলে
উঠলো — আপনি কী পাগল,
— কে, কে কেন?
— কেন মানে আমাকে থাপ্পড় মেরে
আবার
কেন বলছেন।
— আসলে কী বলুন তো আমার না, ঘুম না
আসলে
যাকে সামনে পাই কিংবা আমার
আশেপাশে পাই তাকে
ইচ্ছেমতো মারতে থাকি।
— আজিব মানুষ তো আপনে,
তো ঘুমান আপনাকে কী কেউ বলেছে রাত
জাগতে?
— মানেটা কী? কীভাবে আমি ঘুমোবো।
— কেন চোখ বন্ধ করে ঘুমাবেন।
— আরে আমি সেটা বলিনী, আমি বলছি
আপনে
তো পুরো বিছানায় ফুল ছিড়ে এক অবস্থা
করে
রেখেছেন, ও গুলো পরিষ্কার না করলে
আমি
কিভাবে ঘুমোবো।
— তা পরিষ্কার করে ফেলুন।
— ইশ শখ কত, শুনুন যে ফুল ছিড়েছে তারেই
পরিষ্কার করতে হবে।
— মানেটা কী?
— দেখুন, না পরিষ্কার করলে কিন্তু এখন
আপনে
আর ও একটা থাপ্পড় খাবেন, তখন কিন্তু
আমায়
দোষ দিতে পারবেননা।
— ওকে ফাইন আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি
, বাট আমার
একটা শর্ত আছে।
— কী শর্ত।
— বিছানা পরিষ্কার করে দেওয়ার পর এক
মিনিট ও
দেরি না করে আপনে ঘুমিয়ে যাবেন।
— ঠিক আছে।
।
রাইসা চুপচাপ বসে থাকে আর,
রিয়ান প্রচন্ড তাড়াতাড়ি করে
বিছানাটা পরিষ্কার করে
ফেলে।
তারপর রাইসাকে গম্ভীর কন্ঠে বললো– এই
যে
ম্যাডাম – পরিষ্কার করে দিয়েছি,এবার
দয়া করে গিয়ে
একটু ঘুমান,আর আমাকে ও একটু শান্তি দিন।
— কিন্তু স্যার আমার যে ঘুম পাড়ানির
গান না শুনলে ঘুম
আসেনা।
— সেটাআপ, আপনে কিন্তু এবার আমাকে
অতিরিক্ত
বিরক্ত করছেন। দেখুন আমার এগুলো একদম
পছন্দ না।
— আপনে তো একটা ছাগল, এগুলো আপনার
পছন্দ হবে কী করে, যতসব।
এই বলে রাইসা মুখটাকে ভার করে
বিছানায় গিয়ে
শুয়ে পড়ে।
রিয়ান ও তখন আর কোনো কথা না
বাড়িয়ে শুয়ে
পড়ে।
আর অবাক দৃষ্টিতে দেওয়ালের সেই
ছবিগুলোর
পানে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ ,
তারপর দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠে—
রিয়া
কেন আমায় ছেড়ে চলে গেছো আমি যে
বড্ড বেশি একা হয়ে গেছি,বড্ড বেশি।
রোজ
রাতে রিয়ান এক হাতে নিকোটিন আর
আরেক হাতে
মদের বতল নিয়ে রিয়ার ছবির দিকে
তাকিয়ে এরকম
নানা কথা বলতে থাকে,কখনো বা
চোখগুলো
কষ্টের স্পর্শে লাল করে ছবিগুলোর দিকে
তাকিয়ে থেকে এক- একটা রাতকে
বেহিসাবেই
পার করে দেয় ।
কেননা রিয়ান যখন ছবিগুলোর দিকে
তাকিয়ে থাকে
কিংবা ছবিগুলোর সাথে কথা বলে তখন
ওর
মনে হয় ফ্রেমে বন্ধ থাকা ছবিটির
মানুষটি ও নিশ্চুপ
ভাবে ওর কথাগুলো শুনছে,ওর জন্য
কাঁদছে।
।
আজ ও তার ব্যতিক্রম কিছু হয়নি,
সারারাত নির্ঘুম চোখে ছবির পানে
তাকিয়ে থাকার
কারনে ভোরের দিকে রিয়ানের চোখে
একটু
ঘুম নেমে আসে।
কিন্তু ঠিক ৫.৩০ হাল্কা পানির স্পর্শে
রিয়ানের সেই
ঘুমটা ও ভেঙ্গে যায়,
একটু অস্বস্তিকর ভাব নিয়ে চোখ কচলাতে
—
কচলাতে তাকাতেই রিয়ান দেখতে
পেলো,
রাইসা এক হাতে পানির গ্লাস নিয়ে
দাড়িয়ে আছে।
—এসব কী?
—- স্যরি, দেখুন
এতো বেলা অবদি মুসলিমজাতির ঘুমোতে
নেই,
আর তাছাড়া আপনাকে সেই কখন থেকে
আমি
ডাকছি কিন্তু আপনার কোনো সাড়াশব্দ
নেই তাই
বাধ্য হয়ে এটা করতে হয়েছে।
এবার দয়া করে যান গিয়ে ওজু করুন তারপর
নামাজ
পড়তে যান।
রাইসার কথায় রিয়ান কোনো উওর না
দিয়ে বিছানা
থেকে উঠে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়।
রিয়ানকে ওয়াশরুমে যেতে দেখে
রাইসার
চোখে- মুখে আনন্দোৎসব নেমে আসে।
কিন্তু পরক্ষণে তা নিমিষেই আবার
মেঘের কাছে
হার মানে।
রিয়ান ওয়াশরুম থেকে এক জগ পানি এনে
সোজা
রাইসার মাথায় ঢেলে দেয়।পানিটা
এতোটাই ঠান্ডা
ছিলো যে তার স্পর্শে রাইসা কাঁপতে
লাগলো।
কিন্তু রিয়ান রাইসার কাঁপুনিকে গুরুত্ব
না দিয়ে অনায়াসে
রাইসাকে বলে উঠলো– ভাড়াটে বউ
হিসেবে
এসেছেন, ভাড়াটে বউ হয়ে থাকুন, একদম
আমার
উপরঅধিকার ফলাতে চাইবেন না, আর
হ্যা ভুল করে
ও দ্বিতীয় বার এসব কাজ করার আগে
একবার হলে
ও ভাববেন যে আপনে কার সাথে এসব
করছেন,
Understand.
।
এই বলে,
চোখে – মুখে একরাশ রাগ নিয়ে,
রিয়ান ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আর
রাইসা রিয়ানের
চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে -,
তারপর চোখ
থেকে এক ফোটা বৃষ্টি জড়িয়ে বলে
উঠলো —
আসলে পৃথিবীর মানুষগুলো বড়ই অদ্ভুত,
এদের
চেনা বড় দায়। এরা যখন – তখন বদলে
যেতে
পারে, যখন, তখন।
এই বলে রাইসা অঝোর দ্বারা কাঁদতে
লাগলো,
কিন্তু পরক্ষনে রাইসার কান্নাটা হঠ্যাৎ
বন্ধ হয়ে যায়
একটা কথাই ভেবে– আসলে আমাদের
উচিত
মানুষের বদলে যাওয়াটা না দেখে তার
বদলে যাওয়ার
কারনটা খোজা। আর আজ থেকে সেটাই
আমি
করবো।
।
চোখের জলগুলোকে মুছে মুখে একগাল
হাসি
নিয়ে রাইসা লাকেজ থেকে জামা-
কাপড় বের
করলো,
মেরুন কালারের একটা শাড়ি নিয়ে
ওয়াশরুমে গিয়ে
চেন্জ করে।
তারপর নামাজ পড়ে, পুরো ঘরটাকে
পরিপাটি করে
সাজাতে শুরু করলো, আলমারিতে তাকের
একপাশে
নিজের জামাকাপড়গুলো, অন্যপাশে
রিয়ানের শার্ট-
প্যান্ট গোছাতে লাগলো, হঠ্যাৎ রাইসার
চোখে
পড়লো রিয়ানের শার্ট- প্যান্টের নিচে
তিনটে
মদের বতল।
বতলগুলো পেয়ে রাইসা অবাকদৃষ্টিতে
বতলগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর
নিজেই
নিজেকে বলে উঠলো– মানুষ নাকি
সৃষ্টির
সেরাজীব, অথচ এই সম্মান পাওয়ার পর ও
এরা সামান্য
কষ্টতে কেন এভাবে ভেঙ্গে পড়ে, ক্রমশ
নিজেকে কেন এভাবে শেষ করে দেয়,
কিন্তু
একবার কী তাদের মাথায় এটা আসেনা
যে— জিবন
মানে সমস্ত সিশুয়েশনের সাথে
নিজেকে মানিয়ে
নেওয়া, জিবন মানেই এক- একটা আঘাত
থেকে
নতুন করে শিক্ষা নেওয়া।
না, এই ভাবে শেষ হতে আমি আপনাকে
দিবোনা
রিয়ান সাহেব, এই বলে রাইসা মদের
বতলগুলো
আলমারি থেকে সরিয়ে ফেলে।
।
— ভাবি, ভাবি।
— কে?
— আমি।
— ও মিথিলা এসো ভিতরে এসো।
মিথিলা ঘরে ঢুকতেই একগাল হাসি
নিয়ে রাইসাকে
বলে উঠলো– ভাবি প্রথমদিনেই তো তুমি
বাজিমাত
করে ফেলেছো।
— মানে?