ভাড়াটে বউ

ভাড়াটে বউ —পর্ব –০৩

এই বলে রিয়ান বিছানার দিকে যেতেই দেখে
ফুল,দিয়ে পুরো বিছানা সাজানো, ফুল দেখতেই
রিয়ান ক্রমশ আর ও বেশি রেগে যায়।
রাইসার কাছে গিয়ে রাইসাকে বলে উঠলো– এই
ঘর ফুল দিয়ে কে সাজালো, হ্যা কে সাজালো।
রাইসা রিয়ানের আচরন দেখে খুব বেশি ভয়
পেয়ে যায়,ভয়ে- ভয়ে রিয়ানের প্রশ্নের উওর
দিলো –; আমি জানিনা।
ওকে ফাইন আজ থেকে জেনো রাখুন –লিসেন,
আমি পৃথিবীতে সবথেকে বেশি ফুলকে
অপছন্দ করি। আর এসব হয়তো মিথিলার কাজ, যতসব,।

রিয়ান রাইসাকে এই কথা বলে, বিছানার কাছে গিয়ে
পুরো বিছানার চারপাশের ফুলগুলোকে ক্রমশ
ছিড়ে ফেলে দিতে লাগলো আর বলতে
লাগলো— I don’t like flower.
রাইসা রিয়ানের এরুপ ভয়ংকর আচরনে খুব ভয় পেয়ে
যায়,
তারপর ভয়ে- ভয়ে রিয়ানকে থামানোর জন্য ও
রিয়ানের কাছে যায় । রিয়ানের কাছে যেতেই রিয়ান
ওকে জোরেশোরে একটা ধাক্কা মারে, ফলে
রাইসা নিচে পড়ে গিয়ে হাতে প্রচন্ড ভাবে ব্যাথা
পায়।
রিয়ান রাইসার ব্যাথাটাকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না
করে সোজা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
রিয়ানের এরুপ নিষ্ঠুরতার আচরন দেখে রাইসা খুব
বেশি কষ্ট পায় — এতো নিষ্ঠুর কীভাবে একটা
মানুষ হয়, ব্যাথা পেয়েছি অথচ একবার ও
দেখলোনা। এমন কেন ওনি।
তারপর, রাইসা আস্তে- আস্তে
উঠে দাড়ালো, অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থেকে
ধীরে-ধীরে বারান্দার কাছে গিয়ে বাহিরের
দিকে তাকিয়ে রইলো,আর ভাবলো —
নিচে নিয়ন আলোয় ব্যস্ত শহরের পথগুলো এখন
কেমন নির্জন আর এই নির্জনতায় দিনের আলোয়
সুখী হওয়া মানুষগুলো এখন একটু- একটু করে
নিজেদের কষ্ট গুলোকে আকড়ে ধরবে, আর
সাথে কিছু যাযাবর আবেগ আর ক্ষত -বিক্ষত
স্মৃতিকে।
— বাহ, বাচাল হলে ও ভালোইতো কথা বলতে
পারেন।
— কে?
এই বলে রাইসা পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে রিয়ান
দাড়িয়ে রয়েছে, একটু অভিমানী কন্ঠে রাইসা তখন
বলে উঠলো — ও আপনে, হট টেম্পারেচার।
— আমার উপর অভিমান হয়েছে, কিন্তু তাও আমাকে
হট টেম্পারেচার বলাটা গেলো না ?
রাইসা রিয়ানের প্রশ্নের কোনো উওর না দিয়ে,
মুখটাকে নিচু করে দাড়িয়ে থাকে।
রাইসার এই নিরবতা দেখে রিয়ান চুপচাপ অনেকক্ষণ
বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর একটু-
আমতাআমতা করে বলে উঠলো — আসলে আমি
দুঃখিত তখন আপনাকে ও ভাবে ধাক্কা দেওয়ার জন্য।
রাইসা রিয়ানের এই অপরাধী বোধ দেখে একগাল
হাসি দিয়ে সব অভিমানকে আড়ালে রেখে রিয়ানকে
বলে উঠলো — হি,হি,কোনো সমস্যা নেই বক
রাক্ষস।
–কী?
— না, মানে, রিয়ান সাহেব।
— আপনে তো ভারী অদ্ভুত মেয়ে, একটু
আগেই তো দেখলাম একরাশ অভিমান, আর এখন
নিমিষেই সব উদাও।
— ও আমি এরকুমেই।
— ওকে ফাইন আমার সাথে আসুন।
এই বলে রিয়ান রাইসার হাতটি আলতো করে ধরে
রাইসাকে বারান্দা থেকে ঘরে বিছানায় নিয়ে বসায়,
তারপর — রাইসার হাতের মধ্যে মলম লাগিয়ে দেয়।
—রাইসা রিয়ানের এই কান্ড দেখে নিজেই,
নিজেকে বলে উঠলো— কি অদ্ভুত ছেলে, এই
গরম, এই আবার ঠান্ডা। এতো অদ্ভুত কেন ওনি।
— কিছু ভাবছেন আপনে?
— ভাবছি কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম।
— হে মানে?
— মা,মা,মানে আমি বলছি আমি এখন লুডু খেলবো।
— কী?
— আস্তে- আস্তে কানের পর্দাটা তো ফেটে
গেলো, আমার।
—বাজে কথা বলা বন্ধ করুন আর ঘুমিয়ে পড়ুন।
এই কথা বলে রিয়ান উঠে দাড়াতেই রাইসা রিয়ানের
হাতটা শক্ত করে ধরে বললো— সব মেয়ে
বিয়ের রাতে স্বামীর কাছে চাদ দেখার ইচ্ছা
প্রকাশ করে, আর স্বামী ও এমনভাবে বউকে চাদ
দেখায় যে মনে হয় জিবনে এই প্রথম চাদ
দেখেছে, আবার কোনো মেয়ে ছাদে
যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে, আর আমি আপনার ভাড়াটে
বউ দেখে আপনার কাছে লুডু খেলার আবদার
করেছি আর আপনে তা পূরণ করবেন না?
— না, আমি এসব আলতু- পালতু আবদার পূরণ করিনি।
— কী করবো বলুন আমিই মানুষটাই তো আলতু-
পালতু।
রাইসার এমন কথায় রিয়ানের ওর প্রতি একটু মায়া জাগ্রত
হয়, তাই রিয়ান সহানুভূতিশীল কন্ঠে রাইসাকে বলে
উঠলো— সবেইতো বুঝলাম বাট স্যরি আমার কাছে
লুডু নেই।
-ঘুমান।
— আর আপনে কী করবেন? কোথায় ঘুমাবেন,
আমার সাথে নাকি।

— আজ্ঞে না, আর কী করবো আমি? মেয়ে
মানুষ বিধায় আপনাকে বিছানায় ঘুমোতে দিলাম আর
আমি সোফায় গিয়ে ঘুমালাম।
— দূত কার পাল্লায় যে পড়লাম।
রিয়ান রাইসার কথায় কোনো পাওা না দিয়ে সোজা
গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে। রিয়ানের এই অবস্থা
দেখে রাইসা বলে উঠলো — আমি লুডু খেলবই,
এই বলে নিজে- নিজে চিল্লাতে লাগলো— চক্কা,
হুররে।
— পাচ, পাচ ইয়েস।
রাইসার চক্কা- পাচ চিল্লানিতে রিয়ান সোফায় বসে
পড়লো তারপর বলে উঠলো — এই আপনে কী
পাগল হয়ে গেছেন, আর লুডুর কোর্ট নেই,
চক্কা- পাচ পাইছেন কই।
— হি,হি, মনের ভিতর লুডু কোর্টের ছবি একে
খেলছি।
— উফ, প্লিজ দয়া করে আমায় একটু ঘুমোতে দিন।
— ওকে যেহুতো দয়া চেয়েছেন তাই আর কথা
বলবোনা।
— ধন্যবাদ।
এই বলে রিয়ান শুয়ে পড়লো।

রাইসা ও আর কোনো কথা বললোনা।
রিয়ানের মনে হলো রাইসা ঘুমিয়ে পড়েছে,
তাই রিয়ান মনে – মনে বলে উঠলো—
যাক বাবা বাচাল ঘুমিয়ে পেরেছে, যাইহোক আমি ও
এখন একটু ঘুমাই।
এই বলে রিয়ান ঘুমিয়ে পড়লো।
আদঘন্টা পর রিয়ানের মনে হলো তার মুখের উপর
কারো একজনের নিশ্বাস পড়ছে, কেউ একজন
তার মুখের একদম নিকটে এসে জোরে-
জোরে নিশ্বাস ছাড়ছে।
এই অনূভুতিতে একটু চমকে গিয়ে রিয়ান চোখ
খুলতেই দেখে — রাইসা।
ভয়ে রিয়ান যেই মাএ বসতে যাবে, অমনেই রাইসা
রিয়ানকে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে দিলো।
( চলবে)