তোমার জন্য ফিরে আসা !! Part- 05
“আজকে বাসায় কেউ নেই তাহলে বুঝতে পারছো তোমার সাথে কি হতে পারে ”
“আপনাকে আমি অনেক বার বলেছি আপনার মতো খারাপ মানুষের সাথে আমি রিলেশন করবো না তারপরেও আপনি কেনো আমার ক্ষতি করতে চাইছেন?”
“আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি তোমার জন্য মারামারি করা বাদ দিয়েছি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করেছি। তুমি আমার ভালোবাসা গ্রহন না করে উল্টো অপমান করেছো ”
“হ্যাঁ হ্যাঁ আপনাকে অপমান করেছি বেশ করেছি।এখন বুঝলাম থাপ্পড় মারা কম হয়ে গেছে আপনার যদি সত্যি আমার জন্য ভালোবাসা থাকতো তাহলে ভালোবাসার মানুষের ক্ষতি করতে চাইতেন না ”
“আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না শুধু একবার ভালোবাসি বলো ”
“মরে গেলোও বলবো না ”
“তুমি নিজের ক্ষতি নিজে ডেকে আনতে আছো ”
“আমি চিৎকার করবো, আমার কাছে আগাবেন না ”
“বাইরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে তোমার চিৎকার কেউ শুনবে না আর শুনলেও কেউ আসবে না ”
সায়ন্ত ইভার কাছে এগিয়ে গেলো। ইভাকে দেয়ালে সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দিলো। ইভা গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে সায়ন্তকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিয়ে দৌঁড় দিলো। পুরো বাসা অন্ধকার হয়ে রয়েছে, কারেন্টও নেই। মেইন দরজা কোনটা ইভা বুঝতে পারছে না। বিপদে পরলে মাথাও কাজ করে না কি করবে না করবে? ইভা ডাইনিং টেবিলের নিচে গিয়ে বসলো।
সায়ন্ত ফোনের ফ্লাশলাইট অন করে ইভাকে খুঁজছে, ঠিক সেই সময় সায়ন্ত দেখলো কালো ধোঁয়া উড়তে। গ্যাস অন করা না তাহলে ধোঁয়া আসছে কোথা থেকে?ধীরে ধীরে সারা ঘর ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে । সায়ন্ত ভয় পেয়ে গেছে যে ঘরের আশেপাশে আগুন লেগেছে তার জন্য ঘর ধোঁয়ায় ভরে গেছে তাই সায়ন্ত ইভার কথা না ভেবে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।
ইভা টেবিলে নিচে বসে কাঁদছে ওর প্রান এই বুঝি চলে গেলো। সায়ন্ত বাসা থেকে বেড়িয়ে গেছে দেখে ইভা সাহস করে চোখ মুছতে মুছতে টেবিলের নিচে থেকে বেরিয়ে এসে দেখে আলিব ওর সামনে দাঁড়িয়ে।
আলিবকে দেখে যেনো ইভা প্রান ফিরে পেলো সাথে সাথে আলিবকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো।
আবিল ইভার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“আমার মহারানী বিপদে পরেছে আর আমি আসবো তা কি হয়? ”
“আপনি খুব পঁচা, আসতে এতো দেরি করলেন কেনো? ”
“আমি না আসলেই বা কি? তুমি তো রাগ করে আমার দেওয়া আংটি ফেলে দিছো ”
“একজন এসে বলেছে আমাকে হাওয়ায় উড়ে বাগান বাড়ি যেতে দেখে, আমি ভেবেছি আপনি আমার ক্ষতি করছেন নয়তো আমাকে কেউ বাগান বাড়ি যেতে দেখতো না ”
“মহারানী তুমি সাহসী সেটা জানতাম কিন্তু যে বলদীও জানতাম না ”
“কিহ্ আমি বলদী “?
” তা নয়তো কি হ্যাঁ? তুমি মানুষ তোমাকে তো সবাই দেখবেই তোমাকে তো আমি অদৃশ্য করে দেই নি। তোমাকে কেউ যদি অবিশ্বাস্য ব্যাপারে দেখে সেটা নিয়ে আমার সাথে কথা বলে দেখতে আমি তোমাকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত থাকি ”
“আমার ভুল হয়ে গেছে রাগের মাথায় বুঝতে পারি নি ”
“তুমি ভুল করলেও আমার মহারানী। তোমার উপর আমি রাগ করে থাকতে পারবো না। চলো বাসায় পৌঁছে দেই ”
” আপনি অনেক বেশি ভালো ”
আলিব মুচকি হাসলো। বাসায় গিয়ে আবার আলিব ইভার হাতে আংটি পরিয়ে দিলো। ইভা আলিবকে জিজ্ঞাসা করলো,
“সায়ন্তনের বাড়ির আশেপাশে আগুন লেগেছিলো কিন্তু কোথাও পোড়া গন্ধ পেলাম না কেনো শুধু ধোঁয়া উড়ছে”
“আমি ধোঁয়া তৈরি করেছি যাতে ও ভয় পেয়ে পালিয়ে যায় আর আমি তোমাকে নিয়ে আসতে পারি ”
“হুম, সায়ন্তকে একটা উচিত শিক্ষা দিতে হবে ”
“হ্যাঁ আজকে রাতে ওকে এমন নাকানিচুবানি খাওয়াবো যে ও জীবনেও কোনো মেয়েকে অসম্মান করবে না ”
“আচ্ছা তাহলে রাত কয়কাটায় আসবেন? ”
“এমনিতে তুমি যখন ডাকবে তখন আসবো তাছাড়া রাত বারো টায় ”
“ওক্কে, এবার চলে যান ” আলিব চলে গেলো।
ইভা ফ্রেস হয়ে রান্না ঘরে গেলো, ওর মাকে বললো,,,,,
-মা আজকে খিচুড়ি রান্না করো।
-বৃষ্টি শুরু হলে তুই খিচুড়ি রান্না করতে বলবি নয়তো বিরিয়ানি তাই আমি তোর বলার আগেই খিচুড়ি রান্না করে আছি।
-আচ্ছা, আমি একটু ঘুমাই রান্না হলে ডাক দিও
-এই দাঁড়া দাঁড়া তুই না কলেজ গিয়েছিলি, কখন বাসায় এলি?
-এইতো কিছুক্ষন হলো তুমি রান্নায়,ব্যাস্ত ছিলে তাই ডাক দেই নি।
-তাহলে তোকে দরজা খুলে দিলো কে?
-আরে মা দরজা খোলা ছিলো
ইভা আর কিছু না বলে চলে গেলো। ওর মায়ের কাছে বেশিক্ষণ থাকলে মিথ্যা ধরা পরতো। রুমে গিয়ে ঘুমালো দুপুরে খেয়ে বিছানায় শুয়ে আলিবের কথা ভাবছে যে ” ও না থাকলে আজ অনেক বড় ক্ষতি হতো। আলিব সত্যি অনেক ভালো নয়তো ও আমার জন্য এতো ভাবতো না। ওকে বিশ্বাস করে ভুল করছি না ”
ইভার খালাতো বোন হিয়া এসে ইভার গাল টেনে বললো,
-কি রে কার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস যে আমি এসেছি সেদিকে খেয়াল নেই
-আমি আবার প্রেমে হাবুডুবু খাবো সেই কপাল আমার হয় নি যাই হোক তুই কখন এসেছিস?
-এতো সবার সাথে দেখা করে তোর রুমে এসেছি।
-এসে ভালোই করেছিস
-দেখি তোর হাতের আংটিটা তো খুব সুন্দর, কোথা থেকে কিনেছিস
-ফুটপাত থেকে
-যাহ্ এসব ফুটপাতে পাওয়া যায় নাকি?
-যায় তো তুই খুঁজে দেখিস
-আচ্ছা তোকে নিয়ে খুঁজবো।
ওরা দুজনে একসাথে আছে,কথা যেনো ফুরাচ্ছে না। হিয়া আসাতে ইভা আলিবের কথা ভুলে গেলো বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো আলিবের সাথে কথা হলো না। ইভা বেশ কিছুক্ষণ বই পড়ে রাতে খাওয়ার জন্য ডাইনিং টেবিলের কাছে যেতে ওর মনে পরলো আলিবের কথা তখন সাথে সাথে রুমে এসে আলিবকে ডাকলো। আলিব মুখ গোমড়া করে বলছে,
“তোমার সাথে আমার কোনো কথা নেই ”
“কেনো কেনো?”
“এতোক্ষণ আমার কথা মনে পড়লো, সবাইকে পেলে আমাকে ভুলে যাও হুহ ”
“না মানে হিয়া অনেক দিন পরে এসেছে তাই আর কি ”
“হুম বুজেছি ”
“আজকে রাতে হিয়া আমার সাথে ঘুমাবে তাহলে কি করে আপনার সাথে গিয়ে সায়ন্তকে শাস্তি দিবো ”
আলিব ইভার হাতে একটা চকলেট দিলো আর বললো,
“এটা হিয়াকে খাওয়াবে তাহলে ও সকালের আগে ঘুম থেকে উঠবে না ”
“আচ্ছা এবার আপনি যান ”
আলিব চলে গেলো। রাতে খেয়ে ইভা হিয়াকে চকলেট খাওয়ালো তাতে ও ঘুম মগ্ন হলো। রাত বারোটায় আলিব এসে ইভাকে সায়ন্তের বাসায় গেলো। রুমে দরজা খোলার শব্দ শুনে সায়ন্ত শোয়া থেকে উঠে বসে বলে,
-কে তুমি?
-আমি তোর জম (বলে ইভা রুমে দরজা লক করে দেয়)
-একি দরজা লক করো কেনো?
ইভার চুলগুলো এলোমেলো করে রাখা, মুখ দেখা যায় না।রুমে ধোঁয়া ভরে গেছে। ইভ মোমবাতি জ্বালিয়ে হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে সায়ন্তনের দিকে এগিয়ে যায়। আলিব সায়ন্তকে শূন্য ভাসিয়ে পুরো রুম জুড়ে ঘুরায় আর ইভা হাসতে হাসতে বলে,
-তোকে এখানে মেরে লাশ গুম করে দিবো আজ তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। তুই মেয়েদের অসম্মান করিস তার শাস্তি তো তোকে পেতে হবে।
আলিব সায়ন্তকে ধপাস করে নিচে ফেলে দেয়। কোমরে, মাথায়, হাতে পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছে। কোনো মতে কাকুতি মিনতি করে বলে তাকে যেনো এবারের মতো মাফ করে দেয় আর কোনো দিন কোনো মেয়েকে অসম্মান করবে না।
ওরা সায়ন্তের ওখান থেকে চলে আসে। বাসায় ফিরে ইভা ঘুমালো।
চলবে,,,,,,,