একঝাঁক জোনাকির আলো

একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 34

৩৪.
_________________________
সাফা নৌকার বুকে শুয়ে আছে।শাড়িটা গায়ের সাথে সুন্দর ভাবে লেপ্টে আছে।আর আচঁলটা নৌকার মাথা ছাড়িয়ে নিচের দিকে নেমে পানি ছুঁয়েছে।কলাপাতা রং এর শাড়ি।পানির রং সবুজ। দুই রং মিশে এক অদ্ভুত লাবন্যের সৃষ্টি করেছে।যেনো সবুজের বুকে এক অপ্সরী কলাপাতা ভাসছে।হাত ভর্তি কলাপাতা রং এর কাঁচের চুড়ির ঝুমঝুম শব্দ দয় আর নদীর পানির কলকল শব্দ মিলে মিশে এক স্নিগ্ধ ধ্বনির জন্ম দিয়েছে।সাথে এসে মিশছে বাতাসের হালকা ঝঙ্কার।আকাশ ঘন কালো।মেঘের আড়ালে ডাকা নীলাভ আকাশ।চারপাশের সবুজ গাছের রং গাঢ় আকাঁড় ধারন করেছে।চারপাশে রূপ যেনো এই ভাসন্ত কলাপাতাকে নিজেদের রূপে রাঙিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের কোলে থোকা থোকা মেঘ জমেছে।বাতাসে মিশে আছে অমৃত গন্ধ।যা প্রকৃতির এই অপরূপ রূপ রং বাড়িয়ে দিচ্ছে বহু থেকে শত, শত থেকে হাজার লক্ষ গুন।এদিক ওদিক সব দিক যেনো প্রকৃতির প্রেমলতায় ডাকা।হাতছানি দিয়েও ছুঁতে না পাড়ার নামই প্রকৃত।যত দেখবে, যত ছুঁয়ে দিবে তত এর রহস্য সামনে আসবে।প্রকৃতিকে আল্লাহ যত সুন্দর করে সৃষ্টি করেছে কিন্তু এর বর্ণনা দেওয়ার মত ক্ষমতা মানুষকে দেয় নি।সাফার নীলাভ চোখ আকাশের পানে।সে দেখছে প্রকৃতির লীলাখেলা।নৌকার বুকে লেপ্টে এর সৌন্দর্য আরো সুন্দরভাবে দেখা যাচ্ছে। সাফা মুগ্ধ।আসলেই প্রকৃতি দেখলেই মানুষ সবচাইতে বেশি শিখতে পাড়ে।সাফার মনে হচ্ছে প্রকৃতি হাত বাড়িয়ে তাদের ডাকছে।তাদের সৌন্দর্যের মায়া বুঝাতে তাদের কাছে ধরা দিতে চেয়েও দিচ্ছে না।সাফার শীতল নীল চোখ জোড়া আকাশে ভাসছে।মেঘ কালো আকাশটা দারূন লাগছে তার।মেঘলা আকাশ বিষন্ন মনের কারন হলেও তা সাফার মনে হয় না।মনে হয় মেঘলা আকাশ একলা বাতাস একান্ত নিজের।মেঘাল আকাশ ভাবায় তুমি আমি পাশাপাশি।সাফা নিজের ভাবনায় নিজে মৃদু হাঁসে। হাত দুটো দুইদিকে মেলে দেয়।বাতাস নিজের গায়ে মাখিয়ে নেয় আবেশে।নিভ্র সাফার পাশে একহাঁটু ভাঁজ করে বসেছে।হাতে তার ক্যামেরা।আজীবন তো নিজে মডেল হয়েছে আজ না হয় প্রিয় পাখিকে উড়তে দেওয়া যাক।নিভ্র সাফা অনেক ছবি তুলে।সবুজের বুকে ভাসমান কলাপাতা দেখে নিভ্র নিজেই মুগ্ধ হয়।এত রূপ প্রকৃতি কিভাবে ডেলে দিয়েছে এই মেয়ের কাছে তা নিভ্র নিজেই মিলাতে পাড়ছে না।এটা মানুষ সৃষ্ট রূপ না এটা প্রকৃতির মায়া জড়ানো রূপ। যা দিয়ে ডেকে গেছে সাফা নামের সচ্ছ কলাপাতা।নিভ্র উঠে দাঁড়ায়। সাফা শুয়েই দু’হাতে পানি নেয়।এদিক ওদিক মারে।পানির শব্দে আর তার হাঁসির মৃদু শব্দে মিশে এক ভয়ংকর মায়া মাখানো শব্দে রূপ দিয়েছে।নিভ্র কান খাড়া করে।কানের পর্দা ভেধ করে আশে সে শব্দ।পাগল করা মাতালোতা বিরাজমান।নিভ্র ক্যামেরা চোখে ধরে। হাত ভর্তি পানিতে চুড়ি ভিঁজে আছে।বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে চুড়ির খাঁজে খাঁজে। নিভ্র ক্যামেরা বন্ধি করে সাথে মনের ফ্রেমে।নিভ্র এবার সাফার মুখের উপড় ক্যামেরা ধরে।সাফা ঝনঝন শব্দ করে কাঁচের চুড়ি যুক্ত দু’হাত মুখের উপড় রাখে।নিভ্র হাঁসে। মনে মনে পাগলি বলে উঠে।কৌশিক আর ইশানি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে এদের কান্ড দেখে।ভালোবাসায় মাখানো প্রেম দেখে তারা অবাক হয়।তারাও তো এত বছর প্রেম করেছে তবে এত ভালোবাসা মাখানো ছিলো না প্রেমে।তবে কি তারা প্রেমের আসল মাধুর্য ফেলে রেখেছে??ইশানি মনে মনে ইশশ্ করে উঠে।যদি আজ শাড়ি পড়ত তবে কতইনা ভালো হত।শাড়িতে রূপের চেয়ে মায়া বেশি ফুটে উঠে।তাইতো কালো মেয়ে হক বা সাদা সবাইকেই অপূর্ব লাগে।মনে হয় প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে।মনে মনে খুব আফসোস হচ্ছে তার। কৌশিক বলেছিল পড়তে কিন্তু সে পড়লো না।আফসোস নিয়েই সে নিভ্র সাফার দুষ্টুমিষ্ট প্রেম দেখছে।সাফা তড়াত করে উঠে বসে।নিভ্র ক্যামেরা দিয়ে চারপাশের মেঘাল কালো আকাশের ছবি তুলছে।সাফা হাত ভর্তি করে দুমুঠো পানি নিয়েই নিভ্রর দিকে ছুঁড়ে দেয়।নিভ্র প্রথমে চমকায়।তারপর সাফার দাঁত ক্যালানো দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাঁসে। আবার মন দেয় ছবি তোলায়।সাফা চোখবুজে চারপাশ দেখে।নদীর পাশ ঘেঁষে আছে টিয়া রং এর ছোট ছোট ঘাস যুক্ত মাঠ।মাইলের পর মাইল মাঠ দেখা যাচ্ছে। তাদের মাঝে আবার অসংখ্য ছোট বড় গাছও রয়েছে।পানির শব্দ দিগুণ হয়।সাফা হাত দিয়ে পানি ছুঁয়ে দেখে।
.
.
নৌকা থামে পাথরের বিছানায়।জায়গাটা যে এত মারাত্মক হবে সাফা ভাবেনি।বিছানাকান্দি নাম করন কেনো হয়েছে এত সময়ে সাফার মাথায় আসে।বিছানাকান্দি যে আল্লাহর কতটা অপরূপ সৃষ্টি সাফা তা নিজ চোখে না দেখলে বুঝতে পাড়তো না।এর সৌন্দর্য বর্ণনা করার মত কোনো খাতা কলম নেই,কোনো ফ্রেমে বন্ধি করেও এর রূপ ধরে রাখা যাবে না।এর সচ্ছতা কোনো ক্যামেরায় বন্ধী করা যাবে না।গলার শব্দকে কাজে লাগিয়েও এর রূপ প্রকাশ করা যাবে না।শুধু এই চোখ দেখেই যেতে পাড়বে। কান শুধু এর শব্দ নিজের মাঝে নিতে পাড়বে। হৃদয়ে দাগ কাঁটবে এর মাধুর্যযুক্ত প্রকৃতি।আল্লাহর সৃষ্টি এত সুন্দর!!এত মায়া জড়িয়ে!!এত উদারতা লুকিয়ে এর মাঝে!!তা না দেখলে বিশ্বাসই করা যাবে না।কতটা নিঃস্বার্থ এদের রূপ। যা শুধু বিলিয়েই এরা আনন্দ পায়।হাঁসে। প্রকৃতির নিজস্ব হাসির শব্দে মানুষের বুঝা উঁচিত তারা কতটা ব্যর্থ। কতটা অবুঝ।কতটা জানতে হবে তাদের।সাফার ভাবনার শেষ হচ্ছে না।মনে হচ্ছে বিছানাকান্দি তাকে প্রেমালিঙ্গনে আবদ্ধ করেছে দারূপ ভাবে।সাফা চারদিকে তাকায়।চারপাশে পাহাড়, মেঘ,মেঘলা আকাশ,সবুজ প্রকৃতি,নদীর শব্দ তরঙ্গ,আর এই বিছানো পাথর পথ তাদের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসছে।সাফা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ঘ্রান নেয়। কান খাড়া করে লুকায়িত হাসি শুনতে চায়।তার মনে হচ্ছে এই লুকানো হাসির শব্দ, দীর্ঘ গভীর ঘ্রান না নিলে সে এই প্রকৃতির সৌন্দর্যের সাক্ষী হতে পারবে না।সাফা অনেক সময় নিয়ে ভাবে কিভাবে এই দৃশ্যের বর্ণনা দিবে।কিন্তু সব ভাবনার সমাপ্ত হয় না শব্দতে।মানে এর বর্ণনা করার ক্ষমতা তার নেই।এই রূপ নিজের চোখেই দেখা যায় কারো চোখে এর সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা দুষ্কর। তাই সাফা ভাবনা বাদ দেয়।নিভ্র ঝাপাং করে নিচে নামে।পাথরের বুকে পা রাখে সে।সাফার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।সাফা জুতা খুলে নৌকায় রাখে।তারপর নিচে পা রাখে।ঠান্ডা শীতল পানি।সাফার মনে হচ্ছে তার সারা শরীর জুরিয়ে গেছে এই শীতলতায়।মুগ্ধ তার পায়ের তলা। সাফা শাড়ি উঁচিয়ে কোমড়ে গুঁছে নেয়।যার কারনে কোমড়ের কিছু অংশ দৃশ্য মান হয়।নিভ্রর চোখ যায় সেদিকে।সাথে সাথেই সে চোখ সরিয়ে হাত বাড়িয়ে শাড়ি একটু টেনে ডেকে দেয় কোমড়।সাফার কোমড়ে নিভ্রর ঠান্ডা শীতল হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠে সে।শরীরে শিরশিরে অনুভুতি হয়।বুকে তোলপাড় বাড়ে ভয়ংকর মাত্রায়।সাফা মনে মনে আউড়ায় একি ছোঁয়া??সাফা মুখ ঘুড়িয়ে পাশ ফিড়ে তাকায়।দীর্ঘ কিছু শ্বাস নেয়।তারপর বলে,
—-” ডাক্তার সাহেব??”
নিভ্র ওদিকে ফিড়ে ছিলো।সাফার কন্ঠে তার দিকে তাকায়।তারপর বললো,
—-” হুম বলো!!”
—-” এই পাথর গুলো কে এখানে ফেলেছে??মানে এত এত পাথর কিভাবে এখানে?? মনে হচ্ছে পাথরের নদী!!”
নিভ্র সাফার দিকে তাকিয়ে হাসলো।এরপর বললো,
—-” এরা জন্মসূত্রে এখানে।মানে এদের জন্মই এখানে তাই আলাদা করে কিছু আনতে হয় নি।”
সাফা যেনো ভারী অবাক হল।নিভ্রর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সে।তার যেনো বিশ্বাসই হয় নি।তবে পালটা প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে বসে নি সাফা।
বিছানাকান্দির পাথরের জলপ্রবাহের পাশেই একটা উঁচু জায়গা আছে।সামান্যই এর উচ্চতা।তাতেও রয়েছে পাথর আর পাথর।সেখানে কিছু দোকান পাট আছে।বিছানাকান্দি সীমান্ত বর্তি এলাকা।তাই এদিকে ভারতের নানা জিনিস পাওয়া যায়।সাপ্তাহে একবার দুই দেশের ব্যবসায়ীরা উমুক্ত ভাবে ব্যবসা করে।এই নদীর উৎপত্তি স্থান ভারতে।বাংলাদেশ -ভারত সীমান্তে খাসিয়া পাহাড়ের অনেকগুলো ধাপ দুই পাশ থেকে এসে এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে।পাহারের খাঁজে রয়েছে সুউচ্চ ঝর্ণা।যার মুষ্টি শব্দে মোহনিয় করে তুলে মনের সকল প্রান্ত। সাফা পাথরের উপড় পা ফেলে চলে।পাথরের পথ।তার উপর বয়ে চলেছে অসাধারণ একটা জলপ্রবাহ। নদীর পানি এতটাই সচ্ছ যে পায়ের তালু অবদ্ধি দেখা যাচ্ছে। সাফা একবার পা ফেলে আবার তা ডুবিয়ে দেয়।দারূপ আনন্দ লাগছে তার।সাফার শাড়ি অনেকটাই ভিঁজে গেছে।সে দিকে তার ভ্রুক্ষেপ নাই।তার সব দেখতেই ভালো লাগছে।কত রংয়ের পাথর।হালকা বাদামি,গাঢ় বাদামি,কালো,সাদা অসংখ্য পাথরের ডোল আছে এখানে।ছোট বড় মাঝারি বিভিন্ন সাইজের পাথর।সাফা উবু হয়ে হাত ডুবিয়ে কিছু পাথর হাতে নেয়।নিভ্র গভীর ভাবে তা দেখে।সাফা উবু হওয়াই তার চুল পানিতে ডুব দিতে চায় কিছু অংশ।নিভ্র প্যান্টের কিছু অংশ উপড়ে তুলে।সাফার দিকে এগিয়ে এসে ডান হাতে সাফার চুল উঁচিয়ে ধরে যাতে ভিঁজে না যায়।পর্যটক আজ সব জাগায়ই কম।নিভ্রর কপাল ভালো।সাফা বায়নার সরু তুলে। নিভ্রর দিকে ঘুড়ে বলে,
——” চলেন না ওই দিকে যাই।”
নিভ্র একবার সামনে তাকায়।তারপর সাফার দিকে তাকিয়ে বলে,
—-” ওদিকে গিয়ে কি করবে?? এখানে যা ওই দিকেও তাই।”
—-” আরে না ওদিকে পাহাড় দেখা যাচ্ছে। চলেন যাই।প্লিজজ প্লিজজ প্লিজজজ
নিভ্র মনে মনে ভাবে এত নাছোড়বান্দা মেয়ে আল্লাহ।তারপর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সাফার হাত ধরে।সাফাকে বলে,
—-” পাহাড় যতটা কাছে দেখা যায় এরা কিন্তু মোটেও তত কাছে হয় না।এদের ছুঁতে চাওয়া ভুল।দুর থেকেই ভালো লাগে।কাছে গেলে তোমার মনে হবে শুধু শুধু আসা।তবে তুমি এই পাহাড়ের কাছে যেতেই পারবে না।এটা অনেক দুর।
সাফা নাছোড়বান্দা। নাক মুখ খিঁচে সে তার কথা নড়চড় না করে বলে,
—-” উঁহু আমি যাবোই।আপনি না গেলে নাই।
সাফা নিভ্রর হাত ছাড়িয়ে হাঁটতে চায়।নিভ্র হাত টেনে সামনে হাটাঁ দেয়।একজন ফটোগ্রাফার লোক তাদের লক্ষ করে।নিভ্রনীলকে সে চিনে।তাই তাদের পিছন পিছন আসে।কৌতুহল আর আগ্রহে তার মন ভরা।সাফা হাঁটে নিভ্র তার পাশে পাশে।অনেক দূর আসে তারা কিন্তু যত কাছে যায় মনে হয় পাহাড় দূরে।সাফা এবার ক্লান্ত। নিভ্র হাঁসে। ঘাড় ত্যাড়া মেয়েদের এমনই হয়।পাশে মাঝাড়ি একটা পাথরে সাফা বসতে যায়।পাথরে পা লেগে সাফা পায়ে ব্যাথা পায়।নিভ্রর মুহূর্তেই রাগ উঠে।উচ্চস্বরে বলে,
—-” সব সময় এমন করার মানে হয়??এত নাছোড়বান্দা কেনো তুমি??জাস্ট বিরক্ত। দেখি পায়ে কেমন ব্যাথা পেয়েছ??পা দেখি??
নিভ্র শাড়ি তোলে। ভিঁজা পায়ে তার দেওয়া সেদিনের পায়েল দেখে নিভ্র থমকায়।মনে মনে তার সব রাগ উবে যায়।তার মানে সাফা আর পায়েলটা খুলেনি??কথাটা ভেবেই নিভ্রর ঠোঁট জুড়ে হাসি ফুটে।ফোটোগ্রাফার তাদের প্রতিটা মুভমেন্ট ক্যামেরা বন্ধি করে।আকাশ কালো মেঘে ডাকা।হঠাৎ করেই থেকে থেকে আকাশ ফর্সা হয়ে উঠে।আবার কালো মেঘের আড়ালে নিজেকে লুকায়িত করে।বিদ্যুতের ঝলকানিতে আকাশ, পাহাড় নদী সব আলোকিত হয় কিছু সময়ের জন্য।সাফা মুখ তুলে তুলে সব দেখে।তারপর নিভ্রর দিকে তাকয়ে ঠোঁট উল্টে অভিমানের স্বরে বলে,
—-” এমন করেন কেনো??পায়ে ব্যাথা পেয়েছি তো কি হইছে??কোলে নিলেইত হয়।শুধু শুধু এত বকা লাগে?হু!!”
নিভ্র চট করেই সাফার দিকে তাকায়।সাফা পাত্তাই দিলো না।সে কালো সবুজে মিশে থাকা পাহাড় দেখতে ব্যস্ত। নিভ্র হাঁসে। তারপর উঠে দাঁড়ায়।সাফাকে কোমড় পেঁচিয়ে কোলে তুলে নেয়।আকর্ষীক ভাবে পড়ে যাওয়ার ভয়ে সাফা দ্রুত নিভ্রর শার্ট খাঁমছে গলা জড়িয়ে ধরে।ক্যামেরা ম্যান ছবি তুলতেই অবাক হয়।তার তোলা সব ছবির মাঝে এই ছবিগুলোই যেনো বেস্ট হচ্ছে। সাফা ভীতূ চোখে রাগ মিশিয়ে তাকায়।নিভ্র ঠোঁট বাঁকায়। সাফা গলার স্বর উঁচু করে তারপর বলে,
—-” কোলে যখন নিবেনই তবে একটু বলে কয়ে নিলে কি হয়??ভয় দেখানোর দরকার আছে??”
নিভ্র সাফা দিকে একটু ঝুঁকে। এরপর বললো,
—-” আপনার কোলে উঠার সখ, এটা বললেইত হতো এত বাহানা দেওয়ার কি আছে??তুমি জানো আমি তোমার!!
নিভ্র হেঁসে উঠে শব্দ করে।পানির ঝক ঝক শব্দে মিশিয়ে যায় সেই হাসির শব্দ।সাফা প্রচন্ড লজ্জা পায়।মুখ লুকায় নিভ্রর বুকে।মাথা রাখে।তারপর হুট করেই বুকে কামড় বসিয়ে দেয়।নিভ্র যেনো ভূত দেখেছে এমন ভাবে চমকায়।জোড়েই পড়েছে কামড় তাই তার মুখ দিয়ে উহহহ্ শব্দ বেড়িয়ে আসে।পরক্ষনেই নিজেকে সামলায়।সাফার দিকে তাকিয়ে হাঁসে। সাফা নিজের মত মাথা রাখে নিভ্রর বুকে।কৌশিক আর ইশানি একটু দুরে দাঁড়িয়ে। মেয়েরা অন্যকে অনুকরণ করতে পছন্দ করে।সাফাকে কোলে চড়তে দেখে ইশানিও এবার চড়বে।বেচারা কৌশিক তো আর নিভ্রর মত বডিবিল্ডার না।তবুও বউ বলে কথা।সব কিছুর উর্ধ্বে সে।তাই বাধ্য হয়ে কোলে নিলো।এতেই ইশানি অনেক খুশি।খুশিতে তার লাফাতে ইচ্ছে করছে।মেয়েরা জিততে পছন্দ করে।আর স্বামী নামক প্রানীদের হারাতে এদের দারূন লাগে। স্বামী নামের প্রানী রাও এদের কাছে হার শিকার করতে প্রস্তুত থাকে।এর মাঝেও আনন্দ আছে।”হারকে জিতনে ওয়ালাকো বাজিগার কেহতে হে।”টাইপের মনে হয় তাদের।একটা হার যদি হাসি ফুটাতে পারে তবে হারই ভালো।
নিভ্র সাফাকে কোলে নিয়েই হাঁটছে। সাফা থেকে থেকে মাথা তুলে দেখে।বিরক্তি ক্লান্ত কিছুই নিভ্রকে গ্রাস করতে পারছে না।সে আপন মনে হাঁটছে। প্রতিটা পাথরে পা ফেলছে সাবধানে।সাফা মাঝে মাঝে ঝাকি দেয়।নিভ্র তাকিয়ে শুধু হাঁসে। সাফা বিরক্ত নিভ্রর হাসি দেখতে দেখতে।লোকটা এত কিভাবে হাঁসতে পাড়ে।আগে তো মুখ টাকে বাংলার পাঁচের মত করে রাখতো।রাগি রাগি লাগতো।এখন সবার সামনেই রাগি রাগি হয়ে থাকে শুধু তার সামনেই হাঁসে। সাফার ইচ্ছে করছে একটা পাথর তুলে নিভ্রর মাথায় মারতে।এত ভ্যাবলেশহীন লাগে কেনো লোকটাকে??সাফা হাত বাড়িয়ে নিভ্রর চুল টানে।নিভ্র তবুও কিছু বলে না।শুধু হাটছে। পাথরে তার ব্যাথা লাগে তবুও কেনো যেনো তা তার শরীর বা মন স্পর্শ করতে পারছেনা।নিভ্র কেনো যেনো সব কিছুতেই আনন্দ খুঁজে পায়।সাফার একটু অদ্ভুত কান্ড করতে ইচ্ছে করছে।সে এদিক ওদিক চোখ বুলায়।তারপর নিভ্রর চোখের উপড় পড়া লম্বাটে চুল সরিয়ে নিজের মাথা উঁচু করে নিভ্রর কপালে চুমু আঁকে।তারপর আবার নিভ্রর বুক ঘেঁষে মাথা রাখে আকর্ষীক ঘটনায় নিভ্র স্তব্ধ। চোখ বড় বড় করে সাফার দিকে তাকায়।এটা কি হলো??নিভ্র যেনো বাকরুদ্দ হয়ে পড়েছে।সারা শরীর কাপঁনি দিয়ে ঝেকে উঠে।বুকের হৃৎপিন্ড নামক যন্ত্রটা থেমে গেছে মুহূর্তেই।নিভ্রর নিঃশ্বাস রুদ্ধ হয়েগেছে।ক্যামেরা ম্যান নিজেই এই ছবিটা তুলে ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।এদের প্রেম দেখে তার মাথা যেনো মুহূর্তেই ঘুড়ে উঠে।আকাশ আরো কালো হয়ে ঝিড়ি ঝিড়ি বৃষ্টি পড়া শুরু হয়।সাফা মাথা উঁচিয়ে লজ্জিত স্বরে বলে,
—–” ফেলে দিবেন না কিন্তু!! তাহলে পাথরের বিছানায় আমার কোমড় শেষ।”
নিভ্র সাফার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।সাফা বুকে মাথা রেখে শার্ট খাঁমছে মিটমিটিয়ে হাঁসে। লজ্জায় সে মাথা তুলে না আর।নিভ্রর হাত সত্যিই নড়বড়ে হয়েগেছিলো।তাই আরো শক্ত করে সাফাকে জড়িয়ে ধরে।কিন্তু তার মুখের স্তব্ধ ভাব এখনো কাঁটেনি।
.
.
#চলবে_________________

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *